নিকৃষ্ট রোগ-বালাই ও মহামারী থেকে সুরক্ষার জন্য এই দু’আটি পড়তে পারেন।
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: মহান আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষকে পাঠিয়েছেন তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে। সুতরাং মানুষ আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে, এটা তার জন্য ফরয কর্তব্য। কিন্তু মানুষ বিভিন্ন সময়ে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে, তাঁর অবাধ্য হয়। সে আল্লাহর শাস্তির কথা ভুলে গিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। স্রষ্টার প্রতি তার দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে গিয়ে নিজেকে পৃথিবীতে শক্তিধর হিসাবে যাহির করার চেষ্টা করে। আর এই স্পর্ধা থেকে নানা অনাচার-পাপাচার করে পৃথিবীকে কলুষিত করে তোলে। ফলে তাদের উপরে নেমে আসে আল্লাহর আযাব-গযব হিসাবে নানা ধরনের বালা-মুছীবত। আর এই বিপদাপদ ও মহামারী দেখা দিলে এর প্রতিকার হচ্ছে আল্লাহ্র কাছে তাওবা করা, তার কাছে অনুনয়-বিনয়ের সাথে দোয়া করা,অন্যায় ভাবে মানুষের আত্মসাৎকৃত সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া, বেশি বেশি ইস্তিগফার, তাসবিহ পড়া ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পড়া, আল্লাহ্র কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করা, সুরক্ষামূলক ও চিকিৎসার উপায়গুলো গ্রহণ করা। আজ আমরা এমন একটি দু’আ নিয়ে আলোচনা করবো যে দু’আটি বিভিন্ন ধরনের নিকৃষ্ট রোগ সেসব রোগ থেকে মানুষ পলায়ন করে। সেগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করব যেমনটি রাসূল ﷺ করেছিলেন। হাদীসটি বর্ননা করেছেন প্রখ্যাত সাহাবী আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৯৩ হি.] তিনি বলেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন,
.
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئْ الْأَسْقَامِ
.
উচ্চারণ:‘‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনূনি,ওয়াল জুযা-মি,ওয়ামিন্ সাইয়্যিয়িল আসক্বা-ম’’।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন,পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন,না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেতী রোগ, পাগল হওয়া, কুষ্ঠরোগ ও সকল খারাপ রোগ থেকে।(মুসনাদে আহমাদ হা/১২৫৯২, সুনানে আবু দাউদ হা/১৫৫৪, সুনানে নাসাঈ হা/৫৪৯৩; ইবনু আবী শায়বাহ হা/ ২৯১২৯, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১০৯৭, সহীহ আল জামি‘ হা/১২৮১ মিশকাত হা/২৪৭০ শাইখ আলবানীসহ বেশ কয়েকজন ইমাম হাদীসটি সহীহ বলেছেন)
.
উক্ত হাদীসের ব্যাখায় ইমাম ত্বীবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
وَإِنَّمَا لَمْ يَتَعَوَّذْ مِنْ الْأَسْقَام مُطْلَقًا فَإِنَّ بَعْضَهَا مِمَّا يَخِفُّ مُؤْنَته وَتَكْثُرُ مَثُوبَتُهُ عِنْدَ الصَّبْر عَلَيْهِ مَعَ عَدَم إِزْمَانه كَالْحُمَّى وَالصُّدَاع وَالرَّمَد , وَإِنَّمَا اِسْتَعَاذَ مِنْ السَّقَم الْمُزْمِن فَيَنْتَهِي بِصَاحِبِهِ إِلَى حَالَة يَفِرُّ مِنْهَا الْحَمِيم وَيَقِلُّ دُونهَا الْمُؤَانِس وَالْمُدَاوِي مَعَ مَا يُورِثُ مِنْ الشَّيْن
“তিনি (ﷺ) সাধারণভাবে সকল রোগ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেননি। কারণ কিছু রোগ আছে অস্থায়ী। এতে কষ্ট হালকা; কিন্তু ধৈর্য ধরলে এর সওয়াব অধিক; যেমন- জ্বর, মাথা ব্যথ্যা, চোখ ওঠা। বরঞ্চ তিনি দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। যে রোগগুলোর কারণে ঘনিষ্ঠজন দূরে সরে যায়, সমবেদনা জানানো ও চিকিৎসা দেয়ার লোক কমে যায় এবং দুর্নাম ছড়ায়।”(আল-আযীম আবাদী “আওনুল মাবুদ” গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন দেখুন ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৩৯৫৫৪)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
اللهمَّ
(আল্লা-হুম্মা) অর্থ: হে!আল্লাহ! / হে আমার/আমাদের প্রতিপালক।
.
إِنِّي أَعُوذُ بِكَ
(ইন্নী আ‘ঊযুবিকা) অর্থ: আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।
.
مِنْ الْبَرَصِ
(মিনাল বারাস্বি) অর্থ: শ্বেতী রোগ থেকে,
.
وَالجُنُونِ
(ওয়াল জুনূনি) অর্থ: এবং মস্তিষ্ক বিকৃতি বা পাগল হওয়া (থেকে),
.
وَالجُذَامِ
(ওয়াল জুযা-মি) অর্থ: এবং কুষ্ঠরোগ (থেকে),
.
وَمِنْ سَيِّئْ الْأَسْقَامِ
(ওয়ামিন সাইয়্যিয়িল আসক্বা-ম’) অর্থ: এবং সকল খারাপ রোগ থেকে,
.
প্রিয় পাঠক! অতি ছোট্ট এবং সহজ একটি দু’আ,অথচ এই সহজ দু’আটিতে যাবতীয় খারাপ বা নিকৃষ্ট রোগ অর্থাৎ যেসব রোগ থেকে মানুষ পলায়ন করে, সেসব রোগ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। তাই মহামারি থেকে শুরু করে যাবতীয় রোগ বালাই থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য আমাদের উচিত গুরুত্বপূর্ণ এই দু’আটি মুখস্ত করে আমল করা। দু’আটি চাইলে মাঝে মধ্যে নামাজের সিজদায়,শেষ বৈঠকে কিংবা নামাজের বাহিরেও পড়তে পারেন, নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন দু’আ পড়ার সময় অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখবেন।আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুক।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।