সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ এর সালাত

প্রশ্ন: সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কেন হয়? এই সময় করণীয় কি? এ সময়ে সালাতের হুকুম কি? উক্ত সালাত কিভাবে আদায় করতে হয়?
▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর:

সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কেন হয়: কুসূফ অর্থ সূর্য বা চন্দ্রের আলো চলে যাওয়া, নিভে যাওয়া। এটা মহান আল্লাহ তা‘আলার একটি মহা নিদর্শন। এ সালাত মানুষকে এ জীবনের পরিবর্তনের তথা কিয়ামতের ভয়াবহ দিবসের জন্য প্রস্তুতি, আল্লাহর কাছে বিনীত হওয়া ও মহাবিশ্বের মহাপরিচালনা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে আহ্বান করে। মহান আল্লাহই যে একমাত্র ইবাদতের হকদার এ সালাত তাঁরই অন্যতম আহ্বান। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ শুরু হলে আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও ভীতি সহকারে এর ক্ষতি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে জামা‘আত দুই রাকআত সালাত আদায় করা উচিত,আর এই সালাতের বিশেষ পদ্ধতি হলো এতে দু’রাক‘আত সালাতে (২+২) ৪টি রুকু হয় এবং এটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৮০, ৮২, টীকা-আলবানী দ্রঃ পৃঃ ১/৪৬৯; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮৫)।
.
❑ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে বিজ্ঞানের যুক্তি:
______________________________________
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময় চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় চলে আসে। ফলে সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণী শক্তি বেশী মাত্রায় পৃথিবীর উপরে পতিত হয়। এর প্রচন্ড টানে অন্য কোন গ্রহ থেকে পাথর বা কোন মহাজাগতিক বস্ত্ত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে পৃথিবী ধ্বংসের একটা কারণও হতে পারে। ১৯০৮ সালের ৩০ শে জুন ১২ মেগাটন টিএনটি ক্ষমতা সম্পন্ন ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বিশালাকার জ্বলন্ত পাথর (মিটিওরাইট) রাশিয়ার সাইবেরিয়ার জঙ্গলে পতিত হয়ে ৪০ মাইল ব্যাস সম্পন্ন ধ্বংসগোলক সৃষ্টি করেছিল। আগুনের লেলিহান শিখায় লক্ষ লক্ষ গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। (ঢাকা, দৈনিক ইনকিলাব, ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০০০, পৃঃ ১১। উল্লেখ্য যে, ১০ লাখ টনে এক মেগাটন হয়)। ‘কুসূফ’ ও ‘খুসূফ’-এর সালাত আদায়ের মাধ্যমে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ক্ষতিকর প্রভাব হতে আল্লাহর নিকটে পানাহ চাওয়া হয়। এই সালাতের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর এই সব সৃষ্টিকে পূজা না করা এবং ভয় না করা। আল্লাহ বলেন, لاَ تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلاَ لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا ِللهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ ‘তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না। বরং সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলি সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে তাঁরই ইবাদত করে থাক।’ (হা-মীম সাজদাহ/ফুছসালাত ৪১/৩৭)।

উল্লেখ্য যে, ঘটনাক্রমে সূর্য গ্রহণের দিন নবীপুত্র ইবরাহীম ১৮ মাস বয়সে মদীনায় ইন্তেকাল করেন (১০ম হিজরী ২৯ শাওয়াল সোমবার ২৭শে জানুয়ারী ৬৩২ খৃঃ)। সে সময় আরবদের মধ্যে ধারণা প্রচলিত ছিল যে, উচ্চ সম্মানিত কোন মানুষের মৃত্যুর কারণেই সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয়ে থাকে তাদের ভ্রান্ত ধারণার জবাবে রাসূল (ﷺ) থেকে হাদিস রয়েছে। সাহাবি মুগিরা ইবনু শু’বা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনটিতে সূর্যগ্রহণ হলে সকলেই বলাবলি করছিলো যে, নবীপুত্রের মৃত্যুর কারণেই এমনটি ঘটেছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু কিংবা জন্মগ্রহণের ফলে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ হয় না।’’ (বুখারী হা/১০৬৩, ‘কুসূফ’ অধ্যায় ১৭ অনুচ্ছেদ; মুসলিম,১৯৬৩ মিশকাত হা/১৪৮৫; সুলায়মান মানছূরপুরী, রহমাতুল লিল আলামীন,দিল্লী:১৯৮০ খৃঃ, ২/৯৭-৯৮ পৃঃ)।
.
❑ সূর্যগ্রহণের সময় করণীয় আমল:
_____________________________
➤ সূর্যগ্রহণের সময় ৮ টি আমলের কথা সহীহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমের কতিপয় হাদিসে পাওয়া যায়। সেগুলো হল: (১) নামাজ আদায় করা; (২) দু‘আ করা; (৩) তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলা; (৪) সাদাকাহ করা; (৫) যিকর করা; (৬) ইস্তিগফার পাঠ করা; (৭) গোলাম আজাদ করা ও (৮) কবরের আজাব থেকে পানাহ চাওয়া।
.
◉ আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সূর্যগ্রহণের নামাজ আদায়ের পর) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বক্তব্যে বলেন, ‘‘যখন তোমরা তা (সূর্যগ্রহণ) দেখবে, তখন আল্লাহর নিকট দু‘আ করবে। তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা করবে, নামাজ আদায় করবে এবং সাদাকা প্রদান করবে।’’ (বুখারি, আস-সহিহ: ১০৪৪)।
.
◉ সহিহ বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘তোমরা যখন এমন কিছু দেখতে পাও, তখন ভীত হয়ে আল্লাহর যিকর, দু‘আ ও ইস্তিগফারে মশগুল হও।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৫৯; মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৮৯]।
.
◉ আসমা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহনের সময় গোলাম আজাদ (মুক্ত) করার নির্দেশ দিয়েছেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৫৪]।
.
◉ অন্য একটি বর্ণনায় কবরের আযাব থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য বলেছেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৫০]।
.
➤ সূর্যগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সালাত ও দু‘আর মধ্যে লেগে থাকা উচিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে, তখন পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করবে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৭২]।
.
➤ সূর্যগ্রহণের নামাজের সবকিছু দীর্ঘ সময় নিয়ে করাই নিয়ম। আবু মুসা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে একবার সূর্যগ্রহণ হল। তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়ালেন। তিনি কিয়ামত হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। অবশেষে তিনি মাসজিদে এসে সালাতে দাঁড়ালেন এবং অনেক লম্বা কিয়াম, লম্বা রুকু, লম্বা সিজদা-সহকারে সালাত আদায় করতে লাগলেন। আমি কখনও কোন সালাত তাঁকে এত লম্বা করতে দেখিনি।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৮৬]।
.
❑ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাতের সঠিক পদ্ধতি:
______________________________________
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময় দুই রাকআত সালাত আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। উক্ত সালাত আদায়ের সময় অন্যান্য সালাতের ন্যায় পবিত্রতা অর্জন করে কিবলামুখী হয়ে অন্তরে নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলবে। সানা পড়বে। এরপর আউযুবিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহা পড়বে। তারপর দীর্ঘ তেলাওয়াত করবে। এরপর দীর্ঘক্ষণ রুকু করবে। এরপর রুকু থেকে উঠে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলবে।ৎএরপর সূরা ফাতিহা পড়বে এবং দীর্ঘ তেলাওয়াত করবে; তবে পরিমাণে প্রথম রাকাতের তেলাওয়াতের চেয়ে কম। এরপর দ্বিতীয়বার রুকু করবে এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকবে; তবে প্রথম রুকুর চেয়ে কম সময়। এরপর রুকু থেকে উঠে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা, রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে।এরপর দীর্ঘ দীর্ঘ দুইটি সেজদা করবে এবং দুই সেজদার মাঝখানেও দীর্ঘসময় বসে থাকবে। এরপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে এবং প্রথম রাকাতের মত দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরুপ ২ বার ক্বিরাআত ও ২ বার রুকূ করে নামায সম্পন্ন করবেন। কিন্তু, সবকিছুর দীর্ঘতা প্রথম রাকাতের চেয়ে কম হবে। এরপর তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরাবে।(মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৮০, ৮২, টীকা-আলবানী দ্রঃ পৃঃ ১/৪৬৯; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮৫ ইবনে কুদামার রচিত ‘আল-মুগনি’ (৩/৩২৩), নববীর রচিত ‘আল-মাজুম’ (৫/৪৮)। উল্লেখ্য যে, কারো যদি দুই রুকুর একটিও ছুটে যায়, তাহলে রাকআত গণ্য করবে না। কারণ, একটি রুকু ছুটে গেলে রাকআত হবে না। ইমামের সালাম ফিরার পর ২টি রুকু বিশিষ্ট ১ রাকআত নামায কাযা পড়তে হবে। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩৫০, মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্‌ ১৩/৯৮, ২৩/৯৩, মুখতাসারু মুখালাফাতু ত্বাহারাতি অসস্বালাহ, আব্দুল আযীয সাদহান ১২৯-১৩০পৃ:)।
.
সালাত শেষ হতে হতে ইতিমধ্যে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে গেল। সালাত শেষ করে দাঁড়িয়ে মহানবী (ﷺ) খুতবা দিয়েছিলেন এবং হামদ ও সানা শেষে বললেন যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি বিশেষ নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এই গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা ঐ গ্রহণ দেখবে, তখন আল্লাহকে ডাকবে, তাকবীর দিবে, সালাত আদায় করবে ও সাদাক্বা করবে। আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তাহ’ষলে তোমরা অল্প হাসতে ও অধিক ক্রন্দন করতে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের ভয় দেখিয়ে থাকেন। অতএব যখন তোমরা সূর্য গ্রহণ দেখবে, তখন ভীত হয়ে আল্লাহর যিকর, দো‘আ ও ইস্তেগফারে রত হবে। (সহীহ বুখারী ১০৪৭ মিশকাত হা/১৪৮২-৮৪)।

❑ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো জেনে রাখা ভাল:
__________________________________
(১) সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের সময় আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় করা উচিত, সাথে সাথে দু’আ ও যিকির এবং তওবা ইস্তিগফার করা আবশ্যক, সূর্য গ্রহণ লাগার সাথে সাথে লোকজনকে ডেকে সালাতে নিয়ে যাওয়া উচিত।

(২) সূর্যগ্রহণের সালাতের কিরাআত জোরে পড়া হবে নাকি আস্তে পড়া হবে, তা নিয়ে আলেমগণ মতভেদ করেছেন। তবে, জোরে পড়ার পক্ষের হাদিস তুলনামূলক অধিক সহীহ ও স্পষ্ট। আস্তে বা জোরে উভয় অবস্থায় নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। তবে কিরাআত জোরে পড়া সুন্নাহ (বুখারি আস-সহিহ: ১০৪০; ১০৬৫; মুসলিম আস-সহিহ: ৯০১; তিরমিযি আস-সুনান: ৫৬২; মাওসু‘আতুল ফিকহিয়্যাহ: ২৭/২৫৭)।
.
(৩) সূর্যগ্রহণের সালাতে প্রতি রাকাআতে রুকু কয়টি করে করতে হবে, তা নিয়ে আলিমগণের মাঝে মতভেদ আছে। কারণ এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনার হাদীস পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন হাদীসের মাঝে সমন্বয় করে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হল দু’রাক‘আত সালাতে (২+২) ৪টি রুকূ হয় এবং এটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ মিশকাত হা/১৪৮০, ৮২; টীকা-আলবানী দ্রঃ পৃঃ ১/৪৬৯; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮৫)।

(৪) প্রথম রাকআতে রুকূ থেকে উঠে সামিআল্লাহ হুলিমানহামিদা এবং রাব্বানা লাকাল হামদ্ বলার পর আবারো সূরা ফাতিহা পড়বে এবং আরো একটি দীর্ঘ কিরআত পড়বে, অর্থাৎ এ সালাতে দুই রাকাআতে চারটি রুকূ ও চারটি সিজদা রয়েছে, এই সালাতে প্রথম রাকআতে সূরা আনকাবূত এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা রূম কিংবা সূরা লুকমান পড়া সুন্নাত।
.
(৫) জামাতবদ্ধ হয়ে মাসজিদে এই সালাত পড়া উত্তম। তবে, ব্যক্তিগতভাবেও নিজ নিজ ঘরে এই সালাত পড়া যাবে। জামাআতে আদায় করলে নারীরাও এই সালাতে অংশ নিতে পারবেন। আবার, বাসায় একাকিও পড়া যাবে। আয়িশা (রা.), আসমা (রা.) ও অন্যান্য নারীগণ নবিজির সাথে সূর্যগ্রহণের সালাত আদায় করেছিলেন। (সহীহ বুখারি, আস-সহিহ: ১০৫৩; মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৮০ উসাইমীন,মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৬/৩১০)।
.
(৬) এই সালাতের জন্য পবিত্রতা অর্জনে অজু করাই যথেষ্ট। তবে গোসল করতে পারলে, সেটিকে উত্তম (মুস্তাহাব) বলেছেন আলিমগণ।
.
(৭) সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সালাতে কিরাআত ও রুকু-সিজদা দীর্ঘ করা সুন্নাত (তবে, বাধ্যতামূলক নয়) প্রথম রাকআতের তুলনা দ্বিতীয় রাকআতের সময় একটু কম লাগাবে।
.
(৮) এ সালাত দু’রাকআত, এই সালাতের জন্য আজান ও ইকামতের প্রয়োজন নেই।
.
(৯) উত্তম হল, সূর্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে নিয়ে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত সালাতে থাকা। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেও সালাত শেষ করা বৈধ। বাকি সময় যিকর, দু‘আ ও ইস্তিগফারে কাটানো উচিত। (বুখারী ১০৪৪নং, মুসলিম, মিশকাত ১৪৮৩-৮৪)।
.
(১০) পূর্বেই বলা হয়েছে যে, চন্দ্র-সূর্য গ্রহণের সালাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। কিন্তু এর তুলনায় যে সালাতের গুরুত্ব বেশী সেই সালাতের সময়ে এই সালাতের সময় হলে অধিক গুরুত্বপূর্ণ সালাতই পড়তে হবে। যেমন: জুমুআহ বা ঈদের সময় সূর্যগ্রহণ শুরু হলে, অথবা তারাবীহ্‌র সময় চন্দ্রগ্রহণ শুরু হলে গ্রহণের সালাতের উপর ঐ সকল সালাত প্রাধান্য পাবে।
.
(১১) নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যে; যেমন ফজর ও আসরের পর গ্রহণ লাগলেও এই সালাত পড়া যায়। ফরয সালাতের সময় এসে গেলে এই সালাত হালকা করে পড়তে হবে। সালাতের পরও গ্রহণ বাকী থাকলে দ্বিতীয়বার ঐ সালাত পড়া উচিত নয়। যেমন গ্রহণ প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত কেবল পঞ্জিকার হিসাবের উপর নির্ভর করে এই সালাত পড়া জায়েজ নয়। অনুরুপ জায়েজ নয় গ্রহণ দৃশ্য না হলে।
.
(১২) ভূমিকম্প, ঝড়, নিরবচ্ছিন্ন বজ্রপাত, আগ্নেয়গিরির অগ্নি উদগিরণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও গ্রহণের মত সালাত পড়ার কথা আলী, ইবনে আব্বাস ও হুযাইফা সাহাবী কর্তৃক বর্ণিত আছে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৫/২৫৫)।
.
(১৩) সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সময় রাসূল ﷺ ক্রীতদাস মুক্ত করতে এবং কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতেও আদেশ করেছেন। (সহীহ বুখারী ১০৫০ এবং ১০৫৪)।
.
(১৪) পরিশেষে জেনে রাখা ভাল যে, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময়ে যত বিধিনিষেধের কথা বলা হয় যেমন: গর্ভবতী মায়েরা এই কাজ সেই কাজ করতে পারবে না, এই সময়ে কেউ খেতে পারবে না, এই সময়ে সন্তান জন্ম নিলে এই হবে সেই হবে, এই সময়ে বৈধ যৌন-সঙ্গমও করা যাবে না এগুলো সবই কুসংস্কার; এসবে বিশ্বাস রাখা যাবে না। এগুলো শরীয়তে আছে মনে করে এ কথা বলা ও মানা হলে তা বিদআত হবে। তবে খালি চোখে গ্রহণ দেখলে চোখ খারাপ হতে পারে, সে কথা সত্য। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: