সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে আগে হাত রাখতে হবে নাকি হাঁটু রাখতে হবে এটি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি প্রসিদ্ধ মত পাওয়া যায়: হানাফি শাফেঈ এবং হাম্ভলী মাযহাবসহ অধিকাংশ আলেমগনের মতে সিজদায় গমনকালে প্রথমে হাঁটু রাখতে হবে তারপর দুই হাত। এই মতের পক্ষে আরো রয়েছেন, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম, শাইখ বিন বায শাইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)।(আবূ দাঊদ হা/ ৮০৮, তিরমিযী হা/২৬৮, নাসায়ী হা/ ১০৮৯, ইবনু মাজাহ হা/ ৮৮২ সনদ জয়ীফ আরো দেখুন মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ ২২/৪৪৯, ইবনে হাজার ফাতহুল বারী, ২/২৯১, উদ্দাহ: ৯৬পৃ:, শাইখ ইবনে বায;কাইফিয়্যাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), মারাসা ১২৭ পৃ:, ইবনে উসাইমীন; রিসালাতুন ফী সিফাতি স্বালাতিন নাবী (ﷺ) ৯ পৃ: উসাইমীন শারহুল মুমতে’ ৩/১৬৫-১৫৭, ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২১০৮)।
.
তবে অধিকাংশ আলেমগন আগে হাটু রাখার পক্ষে মত দিলেও সিজদায় যাওয়ার পূর্বে আগে দুই হাত রাখার হাদীসগুলো অধিক বিশুদ্ধ এবং সহীহ।(দেখুন আবূ দাঊদ হা/ ৮৪০, নাসায়ী হা/১০৯১, দারিমী হা/ ১৩৬০, সহীহ আল জামি‘ হা/৫৯৫ মিশকাত হা/৮৯৯ ইরওয়াউল গালীল হা/ ৩৫৭, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১৪০ পৃষ্ঠা) ইমাম মালিক, শাইখ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) এই মতের পক্ষে রয়েছেন।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,দাবী করা হয়েছে যে,এটি (আগে হাঁটু রাখার হাদীস) আগে হাত রাখাকে মানসূখ করেছে। আমাদের সঙ্গীগনও এর উপর নির্ভর করেছেন।অথচ এ ব্যাপারে কোন দলীল নেই। কেননা এটি যঈফ। এর দুর্বলতা প্রকাশ্য। বায়হাক্বী ও অন্যরা এটি বর্ণনা করেছেন এবং একে দুর্বল বলেছেন। এটি ইয়াহইয়া বিন সালামাহ-এর বর্ণনা হ’তে এসেছে, আর তিনি বিদ্বানদের ঐক্যমতে যঈফ।(খুলাছাতুল আহকাম হা/১২৮৫)।
.
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] তার মাজমূঊল ফাতাওয়ায় গ্রন্থে এই বিষয়ে একটি মূল্যবান মন্তব্য করেছেন: তিনি বলেছেন: আলেমদের ঐক্যমত অনুসারে উভয় উপায়ে সালাত আদায় করা জায়েয। অর্থাৎ যদি কোন ব্যক্তি সিজদায় যাওয়ার পূর্বে প্রথমে হাঁটু রাখতে চায় বা হাত আগে রাখতে চায়, উভয় ক্ষেত্রেই তার নামায বৈধ, এ বিষয়ে সকল আলেমদের একমত, তবে কোনটি উত্তম তা নিয়ে তারা মতভেদ করেছেন। আলেমদের উচিত যে মতামতকে তারা সঠিক বলে মনে করেন তার উপর আমল করা এবং সাধারণ মুসলমানের উচিত একজন আলেমের মতামত অনুসরণ করা যাকে সে সঠিক মনে করে। আর আল্লাহই ভালো জানেন।(মাজমূঊল ফাতাওয়া খন্ড: ২২ পৃষ্ঠা: ৪৪৯)।
.
পরিশেষে, আসুন দলিল ভিত্তিক মতানৈক্যপূর্ণ মাসালায় বাড়াবাড়ি পরিহার করি।দলিলের আলোকে আপনার কাছে যে মতটি অধিক গ্রহণযোগ্য মনে হয় সেটার উপরে আমল করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।