সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান এবং স্বামী যদি সালাত আদায় না করে তাহলে কি তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে

প্রশ্ন: ইসলামী শরীয়তে সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান কি? স্বামী যদি সালাত আদায় না করে তাহলে কি তার স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কুরআন সুন্নাহর দলিলের আলোকে একজন মুসলিম বেনামাজি তিন প্রকার হতে পারে। যেমন:

▪️১) একজন মুসলিমের দৈনিক সর্বনিম্ন ১৭ রাকাত সালাত আদায় করা ফরয এবং সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন সে সেটা অস্বীকার করে। এই ব্যাক্তি সরাসরি কাফের এতে কারো মধ্যে কোন দ্বিমত নেই সবাই একমত।

▪️২) একজন মুসলিমের দৈনিক সর্বনিম্ন ১৭ রাকাত সালাত আদায় করা ফরয এবং সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন সে সেটা স্বীকার করে কিন্তু কখনো আদায় করেনা বা বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে দুই এক ওয়াক্ত আদায় করে অথবা শুধু জুমার সালাত আদায় করে, এই ব্যাক্তি ও কাফের এটি জমহুর ওলামাদের বিশুদ্ধ মত।

▪️৩) একজন মুসলিমের দৈনিক সর্বনিম্ন ১৭ রাকাত সালাত আদায় করা ফরয এবং সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন সে সেটা স্বীকার করে এবং নিয়মিত আদায় করে তবে মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত ছুটে যায় বা কাযা আদায় করে,এই ব্যাক্তি সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে কারো মতে এটিও কুফরি।তবে অধিকাংশ ওলামাদের মতে এই ব্যক্তি কবিরা গুনাহগার ফাসেক মুসলিম।

◾এবার আমরা উপরোক্ত তিন প্রকার বেনামাজি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
➤প্রথম প্রকার বেনামাজি সম্পর্কে কুরআন সুন্নাহর বক্তব্য হল শরীয়তের দৃষ্টিতে কালেমা পাঠকারী প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞান থাকা পর্যন্ত প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সর্বনিম্ন ১৭ রাকাত সালাত আদায় করা ফরয। এখন কেউ যদি উক্ত সালাতের ফারযিয়্যাতকে অস্বীকার করে এবং তা পরিত্যাগ করে, তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে সে ব্যক্তিকে মুসলিম মিল্লাত ত্যাগকারী ‘মুরতাদ’ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং সে ব্যাক্তি কাফির, জাহান্নামী হবে। এতে কোন মতানৈক্য নেই। সে যদি বিবাহিত হয় তার বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং তিনদিনের মধ্যে তওবা করার জন্য আহ্বান জানানো হবে। তিনদিনের মধ্যে তওবা না করলে তাকে ‘মুরতাদ’ হওয়ার অপরাধে হত্যা করা হবে। তার জানাযা নামায পড়া হবে না। মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা হবে না। সে সম্পত্তির ওয়ারিশ হবেনা। যতক্ষণ না তওবা করে পুনরায় কালেমা পড়ে ঈমান আনয়ন করে। নামায ত্যাগকারীদের সংখ্যা বেশি হোক কিংবা কম হোক; সংখ্যার কম-বেশি হওয়ার কারণে হুকুমের কোন তারতম্য হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাওবায় বলেন: অতএব তারা যদি তাওবা করে সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে দ্বীনের মধ্যে তারা তোমাদের ভাই।” [সূরা আত-তাওবাহ আয়াত: ১১, islam qa]।
.
অপর আয়াতে বলেন, তাদের পরে আসল অযোগ্য উত্তরসূরীরা তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হলো। কাজেই অচিরেই তারা ক্ষতিগ্রস্ততার অর্থাৎ “গাইয়ার”সম্মুখীন হবে। [সূরা মারইয়াম আয়াত: ৫৯]।

আপনি কি জানেন “গাইয়া” কী? গাইয়া হলো, জাহান্নামের একটি নদীর তলদেশ, যার গভীরতা অনেক, যেখানে রয়েছে রক্ত ও পুঁজের নিকৃষ্টতম আস্বাদ। গাইয়ার উক্ত তাফসীর আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ থেকে বর্ণিত হয়েছে, যেমন ইবনুল কাইয়্যেম রহ. কিতাবুস সালাতে উল্লেখ করেছেন। [তাফসীর ইবন কাসীর সূরা মরিয়ম: ৫৯ আয়াতের ব্যাখ্যা]।
.
বেনামাযী জাহান্নামে যাবে, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,তোমাদেরকে কিসে সাকার (জাহান্নাম) এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে আমরা সালাত আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।” [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৪২-৪৩]।
.
সালাত বর্জনের ব্যাপারে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: «إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ বান্দা এবং শিরক-কুফরের পার্থক্য সালাত পরিত্যাগ করা। [সহিহ মুসলিম; ১৪৯ ই.ফা. ১৫০; ই.সে. ১৫৫]।

উক্ত হাদীসে আল-কুফর (الكفر) শব্দটি আলিফ লাম (ال) যোগে ব্যবহার করা হয়েছে যা প্রমাণ করে যে কুফরের অর্থ হচ্ছে প্রকৃত অর্থাৎ বড় কুফুরী এটি ব্যাক্তিকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। কিন্তু আলিফ লাম (ال) ছাড়া কুফর (كفر) শব্দটি যখন নাকেরা (অনির্দিষ্ট) হিসেবে ব্যবহৃত হয় অথবা কাফারা (كَفَرَ ) শব্দটি ফেল (ক্রিয়া) হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন তা প্রমাণ করে যে এটা কূফরীর অন্তর্ভুক্ত অথবা সে এই কাজের ক্ষেত্রে কুফুরী করেছে; আর সেই সাধারণ ছোট কুফুরী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে খারিজ (বের) করে দেয় না।
.
বুরাইদা ইবন হোসাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: আমাদের ও তাদের মাঝে অঙ্গীকার বা চুক্তি হলো সালাতের। সুতরাং যে ব্যক্তি তা বর্জন করল সে কুফুরী করল।”[মুসনাদে আহমেদ: ২২৯৬৭, তিরমিজি: ২৬২১, মিশকাত: ৫৭৪ হাদীসটি সহীহ]।
.
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)এর সাহাবীগণ সালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না। [তিরমিযী হা/২৬২২ মিশকাত হা৫৭৯; আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন
ইবনে উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব ১২৪/৫২ পৃ. শায়খ আলবানী, হুকমু তারিকিছ সালাহ, পৃঃ ৬]।
.
➤দ্বিতীয় বেনামাজি ব্যাক্তি সম্পর্কে অধিকাংশ ওলামাদের বিশুদ্ধ মত হল সেও কাফির। কেননা ঈমান শুধু মুখে স্বীকৃতি দেয়ার নাম নয়,বরং ঈমান হল অন্তরে বিশ্বাস,মুখের স্বীকৃতি এবং কাজে বাস্তবায়ন এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করে।[ইবনু মান্দাহ, কিতাবুল ঈমান ১/৩৩১] সুতরাং কেউ মুখে ঈমানের দাবি করে কিন্তু কাজে বাস্তবায়ন করেনা সে কখনো ঈমানদার হতে পারেনা। অতএব,কেউ সালাত ইসলামের রুকন এটি বিশ্বাস করে,কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিন ছাড়া জীবনে কোন দিন সালাত পড়েনা এই ব্যক্তিও কাফের এটিই শক্তিশালী মত।তাই ইতিপূর্বে সালাত অস্বীকার কারীর বিধান সম্পর্কে প্রথম অভিমতে বিস্তারিতভাবে যেসব হুকুম-আহকাম উল্লেখ করা হয়েছে সেসব হুকুম এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে পুরোপুরিভাবে প্রযোজ্য।এই ব্যক্তি যদি বিবাহিত হয় আর বিবাহের চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর যদি স্বামী পরিপূর্ণ ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত পরিত্যাগ করা শুরু করে তবে তওবা করে ইসলামে ফিরে না আসলে তার বিবাহ ভঙ্গ হয়ে যাবে। কতক বিদ্বান বলেছেন, বিবাহ ভঙ্গের বিষয়টি ঈদ্দতের সাথে সম্পৃক্ত। যদি ঈদ্দত পার হয়ে যায় তারপর সে তওবা করে ইসলামে ফিরে আসে তবে নতুন চুক্তি করে আবার উক্ত স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারবে।উক্ত মহিলার জন্য আবশ্যক হচ্ছে বেনামাযী স্বামী থেকে আলাদা থাকবে। তাকে মেলামেশা করতে দিবে না- যতক্ষণ না সে তওবা করে সালাত আদায় করে। যদিও তাদের সন্তান থাকে। কেননা এ অবস্থায় পিতার কোন অধিকার নেই সন্তানদের প্রতিপালনের,মোটকথা সালাত বর্জনকারী এমন কাফির হিসেবে গণ্য হবে যা তাকে মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ করে দেয়, যেমনটি পরিষ্কারভাবে কুরআন-সুন্নাহতে এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফেরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফেরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফেররা এদের জন্য হালাল নয়।” [সূরা মুমতাহিনাঃ ১০ বিস্তারিত দেখুন ফতোয়ায় আরকানুল ইসলাম ইবনে উছায়মীন, রহঃ]।
.
ইবন আবি হাতিম কর্তৃক তাঁর সুনান বর্ণিত হাদীসের মধ্যে তিনি ‘উবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এই বলে উপদেশ দিয়েছেন: তোমরা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত বর্জন করো না। কারণ, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত বর্জন করবে সে ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।”[ইবনে মাজা: ৪০৩৪, মিশকাত: ৫৮০]।
.
➤তৃতীয় প্রকার বেনামাজি সম্পর্কে যদিও মতানৈক্য রয়েছে, তবে কুরআন সুন্নাহর বক্তব্য অনুসারে ওলামায়ে কেরামগণ বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরজ তা যদি কোন মানুষ বা কারো স্বামী স্বীকার করে এবং উক্ত সালাত নিয়মিত পড়ে অলসতা প্রবৃত্তির তাড়নায় মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত ছুটে যায় বা কাযা করে আদায় করে তাহলে সে কবিরা গুনাহগার ফাসেক মুসলিম। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে আহলে সুন্নাত বিদ্বানগণের মধ্যে ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯ হিঃ), ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হিঃ) এবং প্রাথমিক ও পরবর্তী যুগের প্রায় অধিকাংশ বিদ্বান এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, ঐ ব্যক্তি ‘ফাসিক্ব্’ এবং তাকে তওবা করতে হবে। যদি সে তওবা করে পরিপূর্ণ ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় শুরু না করে, তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০হিঃ) বলেন, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং সালাত আদায় না করা পর্যন্ত জেলখানায় আবদ্ধ রাখতে হবে। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৭৩ পৃঃ ; শাওকানী, নায়লুল আওত্বার (কায়রো: ১৩৯৮/১৯৭৮), ২/১৩ পৃঃ]।
.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (১৬৪-২৪১ হিঃ) বলেন, ঐ ব্যক্তিকে ছালাতের জন্য ডাকার পরেও যদি সে ইনকার করে ও বলে যে ‘আমি ছালাত আদায় করব না’ এবং এইভাবে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়, তখন তাকে কতল করা ওয়াজিব। [নায়লুল আওত্বার ২/১৫; মিরক্বাত ২/১১৩-১৪ পৃঃ]।

অবশ্য এরূপ শাস্তিদানের দায়িত্ব হ’ল ইসলামী মুসলিম সরকারের। ঐ ব্যক্তির জানাযা মসজিদের ইমাম বা বড় কোন বুযূর্গ আলেম দিয়ে পড়ানো যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গণীমতের মালের (আনুমানিক দুই দিরহাম মূল্যের) তুচ্ছ বস্ত্তর খেয়ানতকারী এবং আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়েননি বরং অন্যকে পড়তে বলেছেন। [নায়ল ৫/৪৭-৪৮, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, ‘মুত্যুদন্ডে নিহত ব্যক্তির জানাযা’ অনুচ্ছেদ; এতদ্ব্যতীত আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪০১১; যা-দুল মা‘আদ ৩/৯৮ পৃঃ; আলবানী, তালখীছু আহকামিল জানায়েয পৃঃ ৪৪; মুসলিম হা/২২৬২]।
.
তাছাড়া এক ওয়াক্ত সালাত ছুটে গেলে সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যায় মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যেমন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তির আসর সালাত ছুটে গেল, তার যেন পরিবার ও ধন সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল।”[সহীহ বুখারী: ৫৫২, মুসলিম:৬২৬, আবু দাউদ: ৪১৪, মিশকাত: ৫৯৪]।
.
বেনামাযীকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। যেমন: সহীহ বুখারীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক স্বপ্নের বর্ণনায় রয়েছে: “তিনি চিৎ অবস্থায় শায়িত এক ব্যক্তির নিকট আসলেন, এমতাবস্থায় একটি পাথর হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে অন্য একজন, অতঃপর সে উক্ত পাথর দিয়ে তার (শায়িত ব্যক্তির) মাথায় আঘাত করছে, যার ফলে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, পাথরটি ছিটকে দূরে চলে যাচ্ছে, পুনরায় সে দৌড়ে গিয়ে পাথরটি নিয়ে ফিরা মাত্র উক্ত ব্যক্তির মাথা পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যাচ্ছে। পুনরায় ঐ ব্যক্তি আপন স্থানে ফিরে তাকে ঐ ভাবেই (শাস্তি) দিচ্ছে যেভাবে প্রথমবার দিয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন তখন দুই ফিরিশতা তাঁকে অবহিত করেন যে, এতো ঐ ব্যক্তি যে কুরআন পড়ত, কিন্তু তার প্রতি আমল করত না এবং ফরয সালাত ছেড়ে ঘুমাত। [সহীহ বুখারী,৭০৪৭ সহীহ মুসলিম,২২৭৪ আল লুলু ওয়াল মারজান,১৪৬৭]।

আমার প্রিয় পাঠক! দেখুন কত বড় শাস্তি, শুধু এই জন্য যে বেনামাযী ফরয সালাতকে মাথায় বড় বোঝা মনে করত, শুধু ফজরের সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে থাকত, তাই মাথায় পাথর মেরে মেরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, আল্লাহ আমাদেরকে এ থেকে রক্ষা করুন।
.
সুতরাং যে ব্যক্তি মাঝে মধ্যে দুই এক ওয়াক্ত সালাত ছেড়ে এরূপ অন্যায় করেছে তার উচিত অতিসত্বর আল্লাহর কাছে খাঁটিভাবে তওবা করা। এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত নিয়মিত আদায়ের পাশাপাশি বেশি করে নেক কাজ চালিয়ে যাওয়া। বেশী বেশী তওবা ইস্তেগফার ও অধিকহারে ভাল কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! যারা কুফরী করেছে তারা যদি তা হতে বিরত থাকে তাহলে তাদের পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ [আল-আনফাল, ৮/৩৮]।
.
আল্লাহ্‌ বলেন,“বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো তোমরা আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সমস্ত গুণাহ্‌ ক্ষমা করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।” [সূরা যুমারঃ ৫৩]
.
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তওবা পূর্বের যা কিছু আছে তা মিটিয়ে দেয় আর ইসলাম তার পূর্বের যা কিছু আছে তা মিটিয়ে দেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/১২১; মিশকাত, হা/২৮]।
.
যারা তওবা করতে চায় আল্লাহ্‌ তাদের জন্য এই আয়াতগুলো নাযিল করেছেন। সুতরাং বান্দা যে পাপই করুক না কেন তা যদি শির্কও হয় এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ্‌ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহই সরল সঠিক পথে হেদায়াতদানকারী। [বেনামাজি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত যানতে বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহঃ)ভএর সালাত পরিত্যাগকারীর বিধান বইটি পড়তে পারেন]।
.
অতএব, অভিভাবকের কর্তব্য হল, বিয়ের পূর্বে পাত্র বা পাত্রীর ধন সম্পদ দেখার আগে তারা সালাত আদায় করে কি-না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে দেওয়া। যেন কোনো সালাত আদায়কারীর সাথে সালাত পরিত্যাগকারীর বিয়ে না হয়। কেননা বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। এক্ষেত্রে তারা যেন নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর সাথে কোন আপোষ না করেন। কিন্তু যদি এমনটা অর্থাৎ বেনামাজির সাথে বিবাহ ঘটে গিয়ে থাকে, তাহলে সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করে অপরজনকে বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি তাতে কাজ না হয়, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীর সংসার ত্যাগ করাই উচিত।আল্লাহ সবাইকে নেককার জীবনসঙ্গী দান করুক আমীন। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত আছেন)।
_______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: