মুনাফিকের উদাহরণ ঐ বকরীর ন্যায় এই হাদীসটির ব্যাখ্যা

প্রশ্ন: হাদীসে এসেছে, মুনাফিকের উদাহরণ ঐ বকরীর ন্যায়, যে দুই বকরীর পালের মধ্যস্থলে থাকে। কখনও এই পালের দিকে আসে, কখনও ঐ পালের দিকে যায়।(নাসাঈ হা/৫০৩৭) এই হাদীসটির ব্যাখ্যা কী?
▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরিপূর্ণ হাদীসটি হচ্ছে, কুতায়বা (রাহিমাহুল্লাহ)…ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَثَلُ الْمُنَافِقِ كَمَثَلِ الشَّاةِ الْعَائِرَةِ بَيْنَ الْغَنَمَيْنِ تَعِيرُ فِي هَذِهِ مَرَّةً وَفِي هَذِهِ مَرَّةً لَا تَدْرِي أَيَّهَا تَتْبَعُ

মুনাফিকের উদাহরণ ঐ বকরীর ন্যায়, যে দুই বকরীর পালের মধ্যস্থলে থাকে। কখনও এই পালের দিকে আসে, কখনও ঐ পালের দিকে যায়, সে বুঝতে পারে না, সে কোন দলের সাথে থাকবে।(সুনানে নাসাঈ হা/৫০৩৭ রওযুন নাযীর হা/৫৫৪ ইমাম আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন)
.
একই ভাবে সহীহ মুসলিমের বর্ননায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَثَلُ الْمُنَافِقِ كَمَثَلِ الشَّاةِ الْعَائِرَةِ بَيْنَ الْغَنَمَيْنِ تَعِيرُ إِلَى هَذِهِ مَرَّةً وَإِلَى هَذِهِ مَرَّةً.

মুনাফিকের উদাহরণ হচ্ছে, ঐ ছাগীর ন্যায়, যে দুই পাঠা ছাগলের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। (প্রবৃত্তির তাড়নায়) কখনও এটার কাছে যায়, কখনও অপরটির কাছে যায়।(সহীহ মুসলিম মুনাফিক্বীন অধ্যায় হা/২৭৮৪)
.
হাদিসটির ব্যাখ্যা: হাদীসটির সরল অর্থ হচ্ছে, মুনাফিকরা এমন এক জাতি তারা নিজেদেরকে মুশরিকও বলতে চায় না। আবার ঈমানদারও হতে চায় না। একথার সমর্থনে কুরআনে আয়াত রয়েছে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,مُّذَبۡذَبِیۡنَ بَیۡنَ ذٰلِکَ ٭ۖ لَاۤ اِلٰی هٰۤؤُلَآءِ وَ لَاۤ اِلٰی هٰۤؤُلَآءِ ؕ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَلَنۡ تَجِدَ لَهٗ سَبِیۡلًا অর্থ :(মুনাফিকরা) দেটানায় দোদুল্যমান, না এদের দিকে, না ওদের দিকে!আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন আপনি তার জন্য কখনো কোন পথ পাবেন না।(সূরা নিসা:৪/১৪৩) উক্ত আয়াতের মর্মার্থ হল,মুনাফিকরা তাদের দ্বীন সম্পর্কে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তারা কোন বিশ্বাসেই স্থির হতে পারে না। না তারা মুমিনদের সাথে জাগ্রত জ্ঞানের উপর আছে, না কাফেরদের সাথে অজ্ঞতার উপর আছে। তারা বরং দুইয়ের মাঝে অস্থিরমতি হয়ে বিরাজ করছে।
.
হাদীসটির ব্যাখায় শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,হাদীসের শব্দ اَلْعَائِرَةُ অর্থ হয়রান,দোদুল্যমান, যে বুঝে উঠতে পারছে না, দু’জনের কার কাছে সে যাবে। আর تَعِيْرُ শব্দের অর্থ, সে কার কাছে যাবে না যাবে তা নিয়ে দোটানায় পড়েছে।(নববী শারহু সুমলিম খন্ড: ১৭ পৃষ্ঠা: ১২৮)
.
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, মুনাফিকরা প্রত্যেকেই দ্বিমুখী আচরণকারী। এক মুখে তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়। অন্য মুখে ভোল পাল্টিয়ে তারা তাদের কাফির ভাইদের সাথে মিলিত হয়। তাদের জিহবাও দু’টো। এক জিহবা দিয়ে তারা মুসলমানদের সাথে উপর উপর কথা বলে, আর অন্য জিহবা তাদের গোপন অবস্থার ভাষ্যকার। কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারীদের সঙ্গে ঠাট্টা-তামশা করা এবং তাদের তুচ্ছ ভাবা ওদের স্বভাব। এ কারণে তারা কুরআন-সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের যে বিদ্যা-বুদ্ধি আছে, তা কেবলই তাদের ঔদ্ধত্য ও অহংকার বাড়িয়ে তোলে। বিনয়-নম্রতা কী তা তারা বোঝে না? ফলে অহংকার হেতু তারা অহি-র বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করে। ফলে প্রিয় পাঠক! আপনি মুনাফিকদের দেখবেন, তারা অহি-র খোলামেলা সহজবোধ্য বিষয়ের সাথেও ঠাট্টা-তামাশা করতেই থাকে। তাইতো আল্লাহ তাদের সাথে ঠাট্টা করেন এবং সীমালংঘনজনিত কাজে যাতে তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় সেজন্য তাদের অবকাশ দেন।(ইবনুল কাইয়ুম মাদারিজুস সালিকীন খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ৩৫০)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: