প্রানীর ছবি অংকন করা বা সংরক্ষণ করার শারঈ হুকুম

প্রশ্ন: যেকোন প্রানীর ছবি অংকন করা বা সংরক্ষণ করার শারঈ হুকুম কী? কোন ধরনের এবং কখন ছবি তোলা ইসলামে অনুমোদিত?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কুরআন-সুন্নাহর দলিল এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মানহাজ হচ্ছে, যেকোনো প্রাণীর ছবি হাত দিয়ে আঁকা কিংবা কাঠে বা অন্য কিছুতে অঙ্কন কিংবা মাটি দিয়ে বা অন্য কিছু দিয়ে পরিপূর্ণ আকৃতি নির্মাণ এগুলো হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এমনকি বর্তমান যুগের প্রিন্ট মেশিনের সাহায্যে অপ্রয়োজনে ছবি প্রিন্ট করে রাখাও ছবি অঙ্কনের শামিল। এগুলো হাদিসের ভাষ্যে উল্লেখিত শাস্তির হুমকির আওতাধীন। চাই সেগুলো মানুষের হোক, জন্তুর হোক বা পাখির হোক। এগুলি সংরক্ষণ করা কিংবা বাড়ীতে রাখা সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ এবং এগুলি ভেঙ্গে ফেলা বা নষ্ট করা ওয়াজিব। আর এ ব্যাপারে এত পরিমাণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে ফকীহগণ বলেন, অর্থের দিক থেকে সেগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রাণীর ছবি অংকন সংক্রান্ত এই হাদীসগুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র কাফের-মুশরিকদেরকে সম্বোধন করেননি; বরং এই সম্বোধন সাহাবীদের থেকে শুরু করে গোটা উম্মাহর প্রতি। এ ক্ষেত্রে মুসলিম হওয়া বা কাফের হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাছাড়া আহলে সুন্নাহের ইমামগন সবাই একমত যে আল্লাহ্‌র সৃষ্টির অনুরূপ কিছুর অস্তিত্ব দেয়ার ক্ষমতা বান্দার নেই। হাদিসে বান্দাকে চিত্রায়ন ও আকৃতিদান থেকে নিষেধ করা হয়েছে; যা আল্লাহ্‌র কর্মভুক্ত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি এ বিষয়টির ক্ষেত্রে অনেক মানুষ অবহেলা করে। অথচ এটাই হচ্ছে এই পৃথিবীতে শির্কের সূচনার কারণ। কেননা কোরআন সুন্নাহ এবং ইতিহাস থেকে জানা যায় সর্বপ্রথম রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের কওম তাদের মধ্য থেকে কিছু নেককার লোকের মৃত্যুর পর তাদের প্রতিকৃতি তৈরী করেছিল (তারা হলেন: ওয়াদ্দ, সুওয়াআ’, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসর) যাতে করে তারা দোয়াতে ও প্রশংসাতে তাদেরকে স্মরণ করতে পারে এবং এটি নেক আমলের প্রতি তাদের উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণ হয়। এভাবে যখন দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেল তখন তারা এদের ইবাদত করা ও আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করা শুরু করল। এই মর্মে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:وَ قَالُوۡا لَا تَذَرُنَّ اٰلِهَتَکُمۡ وَ لَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَّ لَا سُوَاعًا ۬ۙ وَّ لَا یَغُوۡثَ وَ یَعُوۡقَ وَ نَسۡرًا,وَ قَدۡ اَضَلُّوۡا کَثِیۡرًا ۬ۚ وَ لَا تَزِدِ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا ضَلٰلًا“এবং (তারা) বলেছে, ‘তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে, পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া‘আ, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক ও নাসরকে। বস্তুত তারা অনেককে বিভ্রান্ত করেছে; কাজেই আপনি যালিমদের বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করবেন না।”[সূরা নূহ, আয়াত: ২৩-২৪]
.
উপরোক্ত আয়াতে উল্লেখিত শব্দগুলো পাঁচটি মূর্তির নাম। হাদীসে এসেছে এই পাঁচ জন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তা’আলার নেক ও সৎকর্মপরায়ণ বান্দা ছিলেন। তাদের সময়কাল ছিল আদম ও নূহ আলাইহিস সালাম এর আমলের মাঝামাঝি। তাদের নেক ভক্ত ও অনুসারী ছিল। তাদের ওফাতের পর ভক্তরা সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদত ও বিধি বিধানের প্রতি আনুগত্য অব্যাহত রাখে। কিছুদিন পর শয়তান তাদেরকে এই বলে প্ররোচিত করলঃ তোমরা যেসব মহাপুরুষের পদাঙ্ক অনুসরণ করে উপাসনা কর যদি তাদের মূর্তি তৈরী করে সমানে রেখে দাও তবে তোমাদের উপাসনা পূর্ণতা লাভ করবে এবং বিনয় ও একাগ্রতা অর্জিত হবে। তারা শয়তানের ধোঁকা বুঝতে না পেরে মহাপুরুষের প্রতিকৃতি তৈরী করে উপাসনালয়ে স্থাপন করল এবং যখন সম্পূর্ণ নতুন এক বংশধর তাদের স্থলাভিষিক্ত হল। এবার শয়তান এসে তাদেরকে বোঝাল, তোমাদের পূর্বপুরুষের ইলাহ ও উপাস্য মুর্তিই ছিল। তারা এই মূর্তিগুলোরই উপাসনা করত। এখান থেকে প্রতিমা পূজার সূচনা হয়ে গেল। [সহীহ বুখারী: ৪৯২০] উপরোক্ত পাঁচটি মূর্তির মাহাত্ম্য তাদের অন্তরে সর্বাধিক প্রতিষ্ঠিত ছিল বিধায় তাদের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] প্রখ্যাত তাফসীরকারক শাইখ আব্দুর রহমান সা’দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
وهذه أسماء رجال صالحين لما ماتوا زين الشيطان لقومهم أن يصوروا صورهم لينشطوا -بزعمهم- على الطاعة إذا رأوها ، ثم طال الأمد وجاء غير أولئك ، فقال لهم الشيطان : إن أسلافكم يعبدونهم ويتوسلون بهم وبهم يسقون المطر ، فعبدوهم ، ولهذا أوصى رؤساؤهم للتابعين لهم أن لا يدعوا عبادة هذه الآلهة
“এগুলো কিছু নেককার লোকের নাম যারা মারা গিয়েছেন। শয়তান তাদের কওমের কাছে তাদের ছবি আঁকাকে শুশোভিত করেছিল; যাতে করে তারা (তাদের দাবীমত) তাদেরকে দেখে ইবাদতে উদ্যমী হতে পারে। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায় এবং অন্য লোকেরা আসে। তখন শয়তান তাদেরকে বলে: তোমাদের পূর্বপুরুষগণ তাদের ইবাদত করত, তাদের মাধ্যমে ওসিলা দিত, তাদের মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করত। এভাবে ওরা তাদের ইবাদত করা শুরু করল। এ কারণে তাদের নেতারা অনুসারীদেরকে ওসিয়ত করেছিল যাতে করে তারা এদের ইবাদত ত্যাগ না করে।(তাফসিরে সা’দী পৃষ্ঠা: ৮৮৯ থেকে সমাপ্ত)
.
প্রাণীর ছবি আঁকা ও আকৃতি নির্মাণ হারাম হওয়ার দলিল অনেক যেমন: প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: (إِنَّ الَّذِينَ يَصْنَعُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ : أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ )“নিশ্চয় যারা এই ছবিগুলো বানায় কিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং বলা হবে: তোমরা যা সৃষ্টি করেছ সেগুলোকে প্রাণ দাও।”[সহিহ বুখারী হা/৫৬০৭ ও সহিহ মুসলিম হা/২১০৮) অপর বর্ননায় আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بِخَلْقِ اللَّهِ )“কিয়ামতের দিন সর্বাধিক শাস্তিপ্রাপ্ত মানুষ হবে যারা আল্লাহ্‌র সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য তৈরী করে।”(সহিহ বুখারী হা/৫৬১০ ও সহিহ মুসলিম হা/২১০৭) অপর বর্ননায় আবূ যুর‘আহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) এর সঙ্গে (খলীফা) মাওয়ানের গৃহে ঢুকলাম। সেখানে তিনি বহু ছবি প্রত্যক্ষ করে বললেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “সে লোকের চেয়ে অধিকতর অত্যাচারী আর কে আছে, যে আমার সৃষ্টি সমতুল্য মাখলূক সৃষ্টি করতে চায়; (যদি তাই হয়) তাহলে তারা একটি (অনুভূতিশীল) বিন্দু সৃষ্টি করুক? কিংবা তারা (খাদ্য প্রাণ ও স্বাদযুক্ত) একটি শস্যদানা সৃষ্টি করে দেখাক? কিংবা তারা একটি মাত্র যব (এর দানা) সৃষ্টি করুক?(সহিহ মুসলিম হা/৫৪৩৬; ই.ফা. ৫৩৬২, ই.সে. ৫৩৮০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি ,مَنْ صَوَّرَ صُورَةً فِي الدُّنْيَا كُلِّفَ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوحَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَيْسَ بِنَافِخٍ ‏”‏ “দুনিয়াতে যে লোক (প্রাণীর) ছবি অঙ্কন করে, কিয়ামাতের দিন তাতে প্রাণ ফুঁকে দিতে তাকে বাধ্য করা হবে। অথচ সে (তা) ফুঁকে দিতে পারবে না।(সহিহ মুসলিম হা/৫৪৩৪; ই.ফা. ৫৩৬০; ই.সে. ৫৩৭৮) আরেক বর্ননায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী, كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ ‘তথা প্রত্যেক ছবি অঙ্কনকারী জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (সহীহ মুসলিম, ২১১০; মিশকাত হা/৪৪৯৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৮১১) .এ সকল হাদীস থেকে প্রমাণ মেলে যে, মানুষ, পশু ইত্যাকার যে কোনো প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। চাই তার ছায়া থাকুক বা না থাকুক, তা ছাপা হোক, কিংবা খোদাইকৃত হোক, কিংবা অঙ্কিত হোক বা ভাষ্কর্য হোক কিংবা ছাঁচে ঢালাই করা হোক। কেননা ছবি হারাম সংক্রান্ত হাদীসের আওতায় এ সবই পড়ে।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,

قال أصحابنا وغيرهم من العلماء : تصوير صورة الحيوان حرام شديد التحريم ، وهو من الكبائر ؛ لأنه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد المذكور فى الأحاديث ، وسواء صنعه بما يمتهن أو بغيره فصنعته حرام بكل حال ؛ لأن فيه مضاهاة لخلق الله تعالى ، وسواء ما كان في ثوب أو بساط أودرهم أو دينار أو فلس أو إناء أو حائط أو غيرها ، وأما تصوير صورة الشجر ورحال الإبل وغير ذلك مما ليس فيه صورة حيوان : فليس بحرام ، هذا حكم نفس التصوير ”

“আমাদের মাযহাবের আলেমগণ ও অন্যান্য আলেমগণ বলেন: প্রাণীর ছবি চিত্রাঙ্কন কঠিন হারাম। এটি কবিরা গুনাহ। কেননা উল্লেখিত হাদিসগুলোতে এই কর্মের কারণে কঠিন শাস্তির হুমকি দেয়া হয়েছে; চাই সেটা তুচ্ছ-হীন জিনিস দিয়ে বানানো হোক কিংবা অন্য জিনিস দিয়ে বানানো হোক। সর্বাবস্থায় তা বানানো হারাম। কেননা এতে আল্লাহ্‌র সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য করা রয়েছে। চাই সেটি কাপড়ে, চাটাইয়ে, দিরহামে, দিনারে, মুদ্রাতে, পাত্রে কিংবা দেয়ালে ইত্যাদিতে আঁকা হোক কিংবা অন্য কিছুতে আঁকা হোক। আর গাছের ছবি আঁকা, উটের জিনের ছবি আঁকা ইত্যাদি যাতে প্রাণীর ছবি নেই; সেটা হারাম নয়। এটাই চিত্রাঙ্কনের হুকুম।(শারহু মুসলিম খন্ড: ১৪ পৃষ্ঠা: ৮২)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন, আর এটা প্রমাণ করে যে, ছবি অঙ্কন করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, কবীরা গুনাহ ব্যতীত লা‘নতের (অভিশাপের) বিষয়টি আসে না এবং কবীরা গুনাহের প্রসঙ্গ ছাড়া কঠিন শাস্তির হুমকিও প্রদান করা হয় না। কিন্তু শরীরের হাত, পা ও অনুরূপ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ছবি অঙ্কন বৈধ। কারণ, এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রাণ অবস্থান করে না। হাদিসের বক্তব্যসমূহের বাহ্যিক দিক হলো, ঐ ছবি বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অঙ্কন করা হারাম যার মাঝে প্রাণ বা জীবনের অবস্থান সম্ভব। কেননা নবী (ﷺ) বলেন; «من صور صورة في الدنيا كلف يوم القيامة أن ينفخ فيها الروح وليس بنافخ» ( أخرجه البخاري)“যে ব্যক্তি ছবি তৈরি করে, তাকে কিয়ামতের দিন তাতে জীবন দানের জন্য নির্দেশ দেয়া হবে, কিন্তু সে সক্ষম হবে না।” (সহীহ বুখারী হা/৫৬০৬; উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড: ২ পৃষ্ঠা:২৭২)
.
এমনকি যেসকল ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না মর্মে দলিল রয়েছে। আবু তালহা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ، وَلَا صُورَةٌ“ফেরেশতাগণ ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর অথবা ছবি থাকে। (সুনানে আন-নাসায়ী হা/৫৩৪৭; সহীহ আল-জামি’ হা/১৯৬১)
.
উক্ত হাদীসের ব্যাখায় হাদিসের জগৎশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার ইমাম খাত্তাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩৮৮ হি.) বলেন,

“وَإِنَّمَا لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ أَوْ صُورَةٌ مِمَّا يَحْرُمُ اِقْتِنَاؤُهُ مِنْ الْكِلَابِ وَالصُّوَرِ , فَأَمَّا مَا لَيْسَ بِحَرَامٍ مِنْ كَلْبِ الصَّيْدِ وَالزَّرْعِ وَالْمَاشِيَةِ ، وَالصُّورَةِ الَّتِي تُمْتَهَنُ فِي الْبِسَاطِ وَالْوِسَادَةِ وَغَيْرِهِمَا ، فَلَا يَمْتَنِعُ دُخُولُ الْمَلَائِكَةِ بِسَبَبِهِ”

“ফেরেশতারা এমন বাড়িতে প্রবেশ করে না যেখানে কুকুর বা ছবি থাকে, যে কুকুর বা ছবি রাখা হারাম (অপ্রয়োজনীয় ছবি ও কুকুর)। আর যে সমস্ত কুকুর হারাম নয় যেমন শিকারি কুকুর, শস্য ও গবাদি পশু পাহারাদারের কুকুর, আর ওই সমস্ত ছবি যেগুলো পাটিতে, বালিশে বা এরকম কোন জিনিসে থাকে, এগুলোর কারণে ফেরেশতা ঘরে প্রবেশ করতে নিষিদ্ধ নয়”।(তুহফাতুল আহওয়াযী; খন্ড; ৮ পৃষ্ঠা: ৭২)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,قال العلماء : سبب امتناعهم – أي : الملائكة – من بيتٍ فيه صورة : كونها معصية فاحشة ، وفيها مضاهاة لخلق الله تعالى “আলেমগণ বলেন: তারা (ফেরেশতারা) যে ঘরে ছবি আছে সে ঘরে প্রবেশ না করার কারণ এটি নিকৃষ্ট গুনাহ। এতে আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকর্মের সাথে সাদৃশ্য দান রয়েছে।”(নববী শারহু মুসলিম; খন্ড: ১৪ পৃষ্ঠা: ৮৪) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

উপরে উল্লেখ করেছি যে যেকোনো প্রাণীর মাথাসহ ছবি হাত দিয়ে আঁকা কিংবা কাঠে বা অন্য কিছুতে অঙ্কন কিংবা মাটি দিয়ে বা অন্য কিছু দিয়ে পরিপূর্ণ আকৃতি নির্মাণ এগুলো হারাম। এমনকি বর্তমান যুগের প্রিন্ট মেশিনের সাহায্যে অপ্রয়োজনে ছবি প্রিন্ট করে রাখাও ছবি অঙ্কনের শামিল। এগুলো হাদিসের ভাষ্যে উল্লেখিত শাস্তির হুমকির আওতাধীন। চাই সেগুলো মানুষের হোক, জন্তুর হোক বা পাখির হোক। এগুলি সংরক্ষণ করা কিংবা বাড়ীতে রাখা সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ এবং এগুলি ভেঙ্গে ফেলা বা নষ্ট করা ওয়াজিব। আর এ ব্যাপারে এত পরিমাণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে ফকীহগণ বলেন, অর্থের দিক থেকে সেগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এখন আমরা মৃতদের ছবি দেওয়ালে কিংবা মোবাইলে সংরক্ষণ করা কিংবা জীবিত মানুষের যেসকল ছবি মোবাইল ও কম্পিউটার ডিভাইসে রাখা হয় এবং ভিডিওর মাধ্যমে যে ছবি তোলা হয় সেগুলোর হুকুম আহকাম এবং পোশাকের মধ্যে ছবি থাকলে সে পোশাকে সালাত আদায় করার বিধান এবং কখন ছবি তোলা জায়েজ এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
.
▪️মৃতের ছবি সংরক্ষণ করার হুকুম:

মৃত ব্যক্তির ছবি স্মৃতির জন্য দুইভাবে সংরক্ষণ করার পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে প্রিন্ট মেশিনের সাহায্যে ছবি প্রিন্ট করে ঘরের দেওয়ালে কিংবা অন্য কোন উপায়ে সংরক্ষণ করা এটি সন্দেহাতিত ভাবে হারাম। কেননা এটি হাদিসের ভাষ্যে উল্লেখিত শাস্তির হুমকির আওতাধীন। এটি হারাম হওয়ার রহস্য ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে কোন মৃতব্যক্তির ছবিকে মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের মধ্যে প্রিন্ট করা ছাড়া স্মৃতির উদ্দেশ্যে এমনিতেই সংরক্ষণ করা। শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এভাবে ছবি সংরক্ষণ করাও বৈধ নয়। কেননা এতে করে মৃতের জন্য দুঃখ ও বেদনা তাজা হয় কিংবা মৃতব্যক্তি শিক্ষক বা অভিভাবক পর্যায়ের কেউ হলে তার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত সম্মান ও সীমালঙ্ঘন ঘটে। যদিও বাস্তবে এতে অসম্মানও ঘটে থাকে। যেহেতু মোবাইল ডানেবামে পড়ে থাকে। মোবাইল নিয়ে টয়লেটেও যাওয়া হয়। তাই এসব থেকে বিরত থাকতে হবে।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: স্মৃতির (স্মরণীয় করে রাখার জন্য) জন্য প্রাণবন্ত প্রাণীর ছবি সংগ্রহের হুকুম কি?

তিনি উত্তরে বলেছেন:

“لا يجوز جمع صور ذوات الأرواح للذكرى، بل يجب إتلافها; لأن الرسول عليه الصلاة والسلام قال لعلي رضي الله عنه: لا تدع صورة إلا طمستها رواه مسلم .ولما ثبت في حديث جابر عند الترمذي وغيره أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى عن الصورة في البيت، وأن يصنع ذلك.فجميع الصور التي للذكرى تتلف بالتمزيق أو الإحراق، وإنما يحتفظ بالصورة التي لها ضرورة، كالصورة التي في التابعية، وما أشبه ذلك مما يكون هناك ضرورة لحفظه، وإلا فالواجب إتلافها”

“স্মরণের জন্য জীবজন্তুর ছবি সংগ্রহ করা জায়েজ নয় বরং সেগুলোকে ধ্বংস করতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী (রাঃ) কে বলেছেন, তুমি কোন ছবি মূর্তি ছাড়বে না সবগুলোকে ধলিস্যাৎ করে দিবে। (মুসলিম) তিরমিজি এবং অন্যান্যদের নিকটে জাবিরের হাদিসে প্রমাণিত হয় যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ছবি রাখতে এবং ছবি অংকন করতে নিষেধ করেছেন। স্মরণের জন্য সমস্ত ছবি ছিঁড়ে বা পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে। তবে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ছবি রাখা যাবে। যেমন অধীনতার ছবি এবং অনুরূপ যা সংরক্ষণ করা আবশ্যক, সেগুলোও রাখা যাবে। অন্যথায় বাকিগুলো ধ্বংস করতে হবে। (বিন বায; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব; ১/৩০৩)

তিনি আরো বলেছেন,

“لا يجوز لأي مسلم ذكرا كان أم أنثى جمع الصور للذكرى أعني صور ذوات الأرواح من بني آدم وغيرهم بل يجب إتلافها; لما ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال لعلي رضي الله عنه : لا تدع صورة إلا طمستها ولا قبرا مشرفا إلا سويته وثبت عنه عليه الصلاة والسلام أنه نهى عن الصورة في البيت , ولما دخل الكعبة عليه الصلاة والسلام يوم الفتح رأى في جدرانها صورا فطلب ماء وثوبا ثم مسحها , أما صور الجمادات كالجبل والشجر ونحو ذلك فلا بأس به”

“স্মরণের জন্য কোন মুসলমান পুরুষ বা মহিলার জন্য ছবি সংগ্রহ করা জায়েজ নয়। অর্থাৎ মানুষ বা অন্য জীবের ছবি। বরং সেগুলো ধ্বংস করা আবশ্যক। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে বলেছেন তুমি কোন ছবি মূর্তি ছাড়বেনা সবগুলোকে ধুলিস্যাৎ করে দিবে এবং উঁচু কোন কবর রাখবে না সবগুলোকে সমান করে দিবে। এছাড়াও আরও বর্ণিত হয়েছে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ছবি রাখতে নিষেধ করেছেন। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিনে কাবায় প্রবেশ করে তার দেওয়ালে ছবি দেখতে পেলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি এবং কাপড় চাইলেন তারপর সেগুলো মিশিয়ে দিলেন। পাহাড়, গাছ এবং এরূপ অন্যান্য বস্তুর ছবি রাখাতে কোন সমস্যা নাই। (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড; ৪ পৃষ্ঠা: ২২৫)
.
▪️ক্যামেরার মাধ্যমে জীবিত মানুষের ছবি উঠানো এবং সেগুলো সংরক্ষণ করার বিধান কী:
.
ডিজিটাল কিংবা ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলা নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত না হলেও একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাক্বওয়াশীল মুমিনের জন্য বিনা প্রয়োজনে ছবি না তোলাই উচিত। আর ক্যামেরার ছবি নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার কারন সম্পর্কে আলেমগন বলেছেন, মোবাইল বা ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবিগুলো প্রিন্টেড ছবির মতো নয়। স্ক্রিন বন্ধ করে দিলেই তার অস্তিত্ব থাকে না তাই সেগুলো ফটোগ্রাফির মতো একই হুকুমের অধীনে আসে না। কারণ সেগুলো স্থির এবং অবিচল থাকে না। সুতরাং ডিজিটাল বা ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলা ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ যতক্ষণ না এই ছবি তোলা মাঝে শরীয়ত বিরোধী কোন উদ্দেশ্য থাকে। যেমন এর উদ্দেশ্য হয় ছবিকে সম্মান বা শরীয়ত বহির্ভূত কোন কাজে ব্যবহার করা অথবা স্মৃতির জন্য প্রিন্ট এর মাধ্যমে বের করা তা সংরক্ষণ করা ইত্যাদি। সুতরাং উদ্দেশ্য যদি শরীয়ত বিরোধী হয় তাহলে ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলাও নিষিদ্ধ। কারণ নিষিদ্ধ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য মাধ্যম ও উপকরণ ব্যবহার করাও হারাম।
.
শায়েখ ইবনে উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: আধুনিক পদ্ধতি অনুযায়ী (ডিজিটাল ক্যামেরার) মাধ্যমে ছবি দুই ধরনের:

” والصُّور بالطُّرُقِ الحديثة قسمان : الأول : لا يَكُونُ له مَنْظَرٌ ولا مَشْهَد ولا مظهر ، كما ذُكِرَ لِي عن التصوير بِأَشرطة الفيديو ، فهذا لا حُكْمَ له إطلاقاً ، ولا يَدْخُل في التحريم مطلقاً ، ولهذا أجازه العلماء الذين يَمْنَعونَ التّصوير على الآلة الفوتوغرافية على الورق وقالوا : إن هذا لا بأس به ، حتى إنه قيل هل يجوز أن تصوَّر المحاضرات التي تلقى في المساجد ؟ فكان الرأي ترك ذلك ، لأنه ربما يشوش على المصلين ، وربما يكون المنظر غير لائق وما أشبه ذلك .القسم الثاني : التصوير الثابت على الورق ……
ولكن يبقى النظر إذا أراد الإنسان أن يُصوِّر هذا التصوير المباح فإنه تجري فيه الأحكام الخمسة بحسب القصد ، فإذا قُصد به شيءٌ مُحَرَّم فهو حرام ، وإن قُصد به شيءٌ واجب كان واجباً . فقد يجب التصوير أحياناً خصوصاً الصور المتحركة ، فإذا رأينا مثلاً إنساناً متلبساً بجريمة من الجرائم التي هي من حق العباد كمحاولة أن يقتل ، وما أشبه ذلك ولم نتوصل إلى إثباتها إلا بالتصوير ، كان التصوير حينئذٍ واجباً ، خصوصاً في المسائل التي تضبط القضية تماماً ، لأن الوسائل لها أحكام المقاصد . إذا أجرينا هذا التصوير لإثبات شخصية الإنسان خوفاً من أن يُتَّهم بالجريمة غيره ، فهذا أيضاً لا بأس به بل هو مطلوب ، وإذا صوّرنا الصورة من أجل التمتع إليها فهذا حرام بلا شك ”

(১). যার সরাসরি দৃশ্য, উপস্থিতি কিংবা বাহ্যিক/প্রকাশ্য রূপ থাকেনা। যেমনটি আমার নিকট ভিডিও টেপের মাধ্যমে ছবি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছিল। ফলে সাধারণভাবে এগুলোর কোনো বিধান নেই, আর এগুলো সাধারণভাবে হারামের অন্তর্ভুক্ত হবে না। তাই যেসকল আলেমগন কাগজে ফটোগ্রাফিক মেশিনের উপর ছবি অঙ্কন/তৈরি করতে নিষেধ করেছেন তারা এটাকে (ভিডিও ছবি) অনুমতি দিয়েছেন এবং বলেছেন এতে দোষের কিছু নেই। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হলো,যে সকল মসজিদে বক্তৃতা দেওয়া হয় সেগুলো থেকে ছবি তোলা বৈধ রয়েছে? এক্ষেত্রে আলেমগনের মতামত হলো এটি না করাই উত্তম, কারণ কখনো কখনো এগুলো ইবাদতকারী মুসল্লিদেরকে বিরক্ত করে তুলে। আবার কখনো দৃশ্যটি উপযুক্ত নাও হতে পারে। এরূপ আরো যা কিছু রয়েছে ইত্যাদি।

(২). কাগজে থাকা ছবি। কিন্তু দৃশ্যটি অবশিষ্ট/স্থির থাকে কিন্তু যদি কেউ এই ধরনের অনুমতিযোগ্য ছবি তোলতে চায় তবে বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন। কারণ তারা পাঁচটি বিধানের অধীন যা নিয়ত তথা ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। সুতরাং তার দ্বারা যখন হারাম কিছু উদ্দেশ্য হবে, তখন তা হারাম বিধান হবে। আর যখন তার দ্বারা ওয়াজিব কিছু উদ্দেশ্য হবে তখন তা ওয়াজিব হবে। অবশ্যই মাঝে মাঝে ছবি তোলা ওয়াজিব হয়ে যায়, বিশেষ করে চলমান ছবি। উদাহরণস্বরূপ যখন আমরা দেখি যে, একজন ব্যক্তিকে কোন অপরাধের সাথে জড়িত করা হচ্ছে, যা বান্দার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। যেমন হত্যার চেষ্টা ইত্যাদি। আর আমরা তা প্রমাণ করার জন্য ছবি ছাড়া তার কাছে পৌঁছতে পারি না। তাহলে সে সময় ছবি তোলা ওয়াজিব। বিশেষ করে ওই সকল মাসআলা মাসায়েল এর ক্ষেত্রে যেগুলি ছবির উপর মামলার সিদ্ধান্ত/বিচার নির্ভরশীল। কারণ এ মাধ্যমগুলো বিধিবিধানের উদ্দেশ্য হাসিল হয়। যখন আমরা এই ছবি তোলা চালু করব কোন মানুষকে প্রমাণ করার জন্য এ আশঙ্কায় যাকে অপরাধের সাথে জড়িত করা হয় তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই বরং তা কাঙ্খিত একটি বিষয়। কিন্তু আমরা যদি শুধুমাত্র আনন্দ উপভোগের উদ্দেশ্যেই ছবিগুলো তুলি তখন তা নিঃসন্দেহে হারাম হবে। (উসাইমীন; শারহুল মুমতি: খন্ড: ২, পৃষ্ঠা:১৯৭)।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল ক্যামেরা দ্বারা ছবি তোলা কি বৈধ রয়েছে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে ছবি তোলা কি বৈধ রয়েছে এবং টেলিভিশন দেখা কি বৈধ রয়েছে বিশেষ করে সংবাদ এর ক্ষেত্রে? তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,

“لا يجوز تصوير ذوات الأرواح بالكاميرا أو غيرها من آلات التصوير، ولا اقتناء صور ذوات الأرواح ولا الإبقاء عليها إلا لضرورة كالصور التي تكون بالتابعية أو جواز السفر، فيجوز تصويرها والإبقاء عليها للضرورة إليها.وأما التليفزيون فآلة لا يتعلق بها في نفسها حكم وإنما يتعلق الحكم باستعمالها، فإن استعملت في محرم كالغناء الماجن وإظهار صور فاتنة وتهريج وكذب وافتراء وإلحاد وقلب للحقائق وإثارة للفتن إلى أمثال ذلك ، فذلك حرام، وإن استعمل في الخير كقراءة القرآن وإبانة الحق والأمر بالمعروف والنهي عن المنكر وإلى أمثال ذلك ، فذلك جائز، وإن استعمل فيهما فالحكم التحريم إن تساوى الأمران أو غلب جانب الشر فيه

“ক্যামেরার মাধ্যমে অথবা অন্য যেকোনো মাধ্যমে সরাসরি আত্মার ছবি তোলা জায়েজ নয়। আত্মার ছবি তোলা যাবে না এবং তা রাখাও যাবে না। তবে প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা। যেমন এমন কতগুলো ছবি যেগুলো কারো অধীনে থাকার কারণে ছবি দেওয়া আবশ্যক হয় অথবা পাসপোর্ট এর কারণে। তাহলে ছবি তোলা এবং তার সংরক্ষণে রাখা প্রয়োজনের কারণে বৈধ রয়েছে। অতঃপর টেলিভিশন; যে এমন একটি যন্ত্র যার সত্তাগতের সাথে কোন হুকুম সম্পৃক্ত না। বরং তা ব্যবহারের সাথে হুকুমটি সম্পৃক্ত। ফলে যখন তুমি হারাম কোন কাজে ব্যবহার করবে, যেমন গান শোনা , অশ্লীল কোন ছবি প্রকাশ করা, মিথ্যা/ অপ্রয়োজনীয়/ অনর্থক কোনো নাটক , নাস্তিকতা অনুষ্ঠান ইত্যাদি যা ইসলাম বিরোধী… ……. ফলে এগুলো হারাম। আর যদি কল্যাণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যেমন কুরআন তিলাওয়াত, সত্যের ভাব প্রকাশ করা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি তাহলে এটি বৈধ রয়েছে‌। আর যদি দুটি বিষয় সমান হয় অথবা খারাপের দিকে প্রাধান্য পায় তাহলে তা হারাম”।(ফাতওয়া লাজনাতুদ দাইমাহ: খন্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৫৮)।
.
▪️ফেসবুকে নারী পুরুষের ছবি পোস্ট করার বিধান কী:
.
স্বাভাবিক ভাবে নিজের আইডেন্টি [পরিচয়] শনাক্ত করার জন্য পুরুষের চবি ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার হিসেবে রাখা নাজায়েজ নয়। তবে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজের কিংবা অন্যের ছবি প্রোফাইল পিক হিসেবে দেওয়া বা বারবার আইডিতে ছবি আপলোড করা, ছবি পরিবর্তন করা, নতুন নতুন ছবি পোস্ট করা ইত্যাদি শরীয়ত সম্মত নয়। কেননা এতে ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে। আর ইসলাম যাবতীয় ফেতনা থেকে দূরে থাকতে উৎসাহিত করে। তাছাড়া ঈমানদার ব্যক্তিরা যেকোনো ধরনের অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে নিজেরা বিরত থাকবে। আল্লাহ তায়ালা সুরা মুমিনুনের মধ্যে ঈমানদার ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে এরশাদ করেন, আর সেই সমস্ত লোকেরা, যারা বেহুদা কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখে (সূরা মুমিনুনঃ ৩)
.
পক্ষান্তরে কোন অবস্থাতেই নারীদের ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে আপলোড করা কিংবা পোস্ট করা যাবেনা কেননা এটা সরাসরি হারাম। কেননা অধিক বিশুদ্ধ মতে পরপুরুষের সামনে নারীদের মুখমণ্ডল, কান, গলা ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা ফরজ চাই বাস্তবে হোক অথবা ছবি-ভিডিও ইত্যাদি মাধ্যমে হোক।
ইমাম গাজ্জালী রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
-يزل الرجال على ممر الأزمان مكشوفي الوجوه ، والنساء يخرجن متنقبات
.. “পুরুষরা চলাচলের সময় সর্বদায় মুখ/চেহারা প্রকাশ করে রাখবে। আর মহিলারা সর্বদায় ঘোমটা দিয়ে বের হবে। (ইহয়াউ ঊলুমিদ্দীন: খন্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৫৩; ফাতহুল-বারী: খন্ড: ৯, পৃষ্ঠা:৩৩৭) আর হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“ولم تزل عادة النساء قديما وحديثا يسترن وجوههن عن الأجانب
“মহিলারা স্বভাবত সর্বদায় অপরিচিত (নন মাহারাম) পুরুষদের থেকে তাদের চেহারা ঢেকে রাখবে; চাই তারা যুবতী হোক কিংবা বয়স্ক মহিলা হোক”।(ফাতহুল-বারী: খন্ড: ৯, পৃষ্ঠা:৪২৪)।
.
যে সকল কারণে ফেসবুক পেজে, টুইটারে, টেলিগ্রামে, এক কথায় সোশ্যাল মিডিয়ার যেকোনো জায়গায় মেয়েদের ছবি পোস্ট করা নিষিদ্ধ (হারাম): তার অন্যতম কয়েকটি কারন হচ্ছে,

(১): এটি কুরআন এবং সুন্নাতে মহিলাদের যে পর্দার আদেশ দেওয়া হয়েছে তার পরিপন্থী।আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম মহিলাদের অধিকারের কথা বলেছেন, তাদেরকে সন্দেহ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। তারা হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণ। (সুরা আহযাব: ৫৩) তাছাড়া আল্লাহ তাআলা মহিলাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছেন, তার যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া অন্য পুরুষদের সামনে। (সূরা নূর: ৩১)

(২): এটা নারীর জন্য এবং যে নারীকে দেখেছে তার জন্য (প্রেমিক প্রেমিকা) এক নিকৃষ্ট ফিতনার দরজা‌। এ সমস্ত কারণে অনেক কষ্টদায়ক ঘটনা শুনেছি এবং পড়েছি। অনেক সতী মহিলার কথা শুনেছি যারা আল্লাহকে ভয় না করে খারাপ কাজের সাথে জড়িয়ে গেছে। ছেলেরা তাদেরকে নরম নরম কথা বলে, দীর্ঘ জীবনের (বিয়ের) আশা দিয়ে প্রতারণা করেছে। যখন ছেলেরা মেয়েদের কাছ থেকে তাদের প্রয়োজন শেষ করে নেয় তখন তারা তাদের পাগলামিটা মেয়ের জন্য আরও বাড়িয়ে দেয় বা অন্তরে গেথে রাখে। এক সময় তাদের জন্য ক্ষতি কলঙ্ক এবং হতাশা ছাড়া আর কিছুই থাকেনা। এর ফলে তারা ইহকাল-পরকাল হারায়।(নাউযুবিল্লাহ)।
.
▪️প্রাণী অথবা মানুষের ছবি বিশিষ্ট কাপড় পরিধান করে ছালাত আদায় করা যাবে কি?

প্রাণী অথবা মানুষের ছবি বিশিষ্ট কাপড় যেমন পরিধান করা জায়েয নয় তেমনি এগুলো পরিধান করে সালাতও আদায় করা যাবে না। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, أَنَّ الْمَلَائِكَةَ لَا تَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ صُورَةٌ
‘যে ঘরে ছবি রয়েছে, সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না’ (সহীহ বুখারী, হা/৩২২৪; সহীহ মুসলিম, হা/২১০৬)।

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন: لا يجوز لبس ما فيه صور الحيوان من الدواب والطير وغير ذلك ولا يلبسه الرجل ولا المرأة ولا يعلق ستر فيه صورة وكذلك جميع أنواع اللباس إلا الافتراش فإنه يجوز افتراشها ”
“যে সকল পোশাকে চতুষ্পদ প্রাণী, পাখি কিংবা আরো যা কিছু রয়েছে ইত্যাদি; প্রাণীর ছবি থাকে তা পরিধান করা বৈধ নয়। পুরুষ হোক কিংবা মহিলা হোক তা পরিধান করবে না। আর যে সকল পর্দায় ছবি থাকে সেগুলো ঝুলানো যাবে না। অনুরূপভাবে বিছানার চাদর ব্যতিত সকল প্রকার পোশাক (বিছানার চাদর ব্যতীত ছবিযুক্ত সকল পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকবে)। বিছানার চাদরে তা বৈধ রয়েছে। (শারহুল উমদাহ: খন্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ৩৮৭)
.
ইমাম ইবনে উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন: যে কাপড়গুলোতে ছবি আছে সেগুলো পরিধান করার হুকুম কি?

لا يجوز للإنسان أن يلبس ثياباً فيها صورة حيوان أو إنسان ولا يجوز أيضاً أن يلبس غترة أو شماغاً أو ما أشبه ذلك وفيه صورة إنسان أو حيوان وذلك لأن النبي صلى الله عليه وعلى آله وسلم ثبت عنه أنه قال : ( إن الملائكة لا تدخل بيتاً فيه صورة ) ولهذا لا نرى لأحد أن يقتني الصور للذكرى كما يقولون وأن من عنده صوراً للذكرى فإن الواجب عليه أن يتلفها سواء كان قد وضعها على الجدار أو وضعها في ألبوم أو في غير ذلك لأن بقاءها يقتضي حرمان أهل البيت من دخول الملائكة بيتهم وهذا الحديث الذي أشرت إليه قد صح عن النبي صلى الله عليه وعلى آله وسلم ، والله أعلم

উত্তরে শাইখ বলেন: “যে কাপড়গুলোতে প্রাণী বা মানুষের ছবি আছে সেসব কাপড় পরিধান করা নাজায়েয। অনুরূপভাবে যে রুমাল, মাথাবন্ধনী বা এ জাতীয় অন্য কোন পোশাকে প্রাণী বা মানুষের ছবি আছে সেগুলো পরিধান করাও নাজায়েয। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নিশ্চয় যে বাড়ীতে ছবি আছে সে বাড়ীতে ফেরেশতারা প্রবেশ করে না। এ কারণে আমরা স্মৃতি হিসেবে ছবি রাখাকে জায়েয মনে করি না এবং যার কাছে স্মৃতিমূলক কোন ছবি আছে সেটা দেয়ালে টানানো থাকুক কিংবা অ্যালবামে থাকুক কিংবা অন্য কোথাও থাকুক; সেগুলো নষ্ট করে ফেলা আবশ্যকীয়। কেননা এ ছবিগুলো অবশিষ্ট রাখার দাবী হচ্ছে বাড়ীতে ফেরেশতাদের প্রবেশ থেকে বাড়ীর অধিবাসীরা বঞ্চিত হওয়া। আপনি যে হাদিসটির দিকে ইশারা করেছেন সেটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহিহ সাব্যস্ত হয়েছে।আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ”। (শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উছাইমীনের ফতোয়া থেকে, আদ-দাওয়া ম্যাগাজিন, সংখ্যা-৫৪/১৭৬৫; ইসলামি সাওয়াল জবাব ফাতাওয়া নং-১০০৩৯)
.
▪️পরিপূর্ণ আকৃতি ছাড়া প্রানীর ছবি অংকন করা:

যখন কোন ছবির কোন একটা অংশ কেটে নেওয়া হয় যেখানে তার কোন জীবন বাকি থাকে না। হয়তো তার পেট নাই বা পিঠ নাই অথবা প্রকৃতপক্ষে তার মাথা নাই তাহলে সেটা ছবি হিসেবে গণ্য হবে না বরং সেটা হবে চুল, নাক-কানবিহীন একটি বৃত্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
(الصورة الرأس ، فإذا قطع الرأس فلا صورة)
ছবি হলো যার মাথা রয়েছে, মাথা যখন কেটে ফেলা হবে তখন সেটি ছবি থাকে না।(সহীহ আল-জামি হা/৩৮৬৪)। বর্ননাটি ইসমাইলী তার অভিধানে ইবনে আব্বাসের হাদিস থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম বায়হাকী আল-সুনান আল-কুবরা হা/১৪৫৮০ বর্ননা করেছেন। শাইখ আলবানী সিলসিলাতুস সহিহাতে সহিহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। (সিলসিলা সহীহাহ হা/১৯২১)। অপর বর্ননায় জিব্রীল (আঃ) রাসূল (ﷺ)-কে নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘সুতরাং ঐ প্রতিকৃতিগুলোর মাথা কেটে ফেলুন, যা ঘরের দরজায় রয়েছে, তা কাটা হলে তখন তা গাছ-গাছড়ার আকৃতি হয়ে যাবে।’ (আবু দাঊদ হা/৪১৫৮; মিশকাত হা/৪৫০১; সিলসিলা সহীহাহ হা/৩৫৬)। তাছাড়া হানাফী, মালেকী এবং অধিকাংশ শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবসহ অধিকাংশ ফকিহগন বলেছেন যে,
أن الصورة إذا قطع منها ما لا تبقى معه الحياة أنها لا تأخذ حكم الصورة
যখন কোন ছবির কোন অংশ কেটে ফেলা হবে যেটা ছাড়া জীবন বাঁচতে পারেনা তাহলে সেটা ছবির হুকুমে থাকে না।(ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৮৩৫৪৫)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেন:
فإن قطع رأس الصورة , ذهبت الكراهة . قال ابن عباس : الصورة الرأس , فإذا قطع الرأس فليس بصورة . وحكي ذلك عن عكرمة
“নিশ্চয়ই ছবির মাথা কেটে ফেলার মাধ্যমে কারাহাতটা দূর হয়ে যায়। ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন; ছবি বা মূর্তির মূল হলো মাথা। কেননা যখন মাথা কেটে ফেলা হয় তখন সেটা আর ছবি থাকে না। সেটা বর্ণনা করা হয়েছে ইকরিমা থেকে।(ইবনে কুদামাহ আল মুগনী, খন্ড: ৭ পৃষ্ঠা: ২১৬)। এই মাসয়ালার আরো বিস্তারিত আলোচনা দেখতে এবং অন্যান্য মাযহাবের বক্তব্য গুলো জানতে দেখুন, আহকামুত তাসবীর ফি ফিকহিল ইসলামি, পৃষ্ঠা: ২৩৪-২৪০)
.
আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) অন্য জায়গায় বলেন,
إذا لم تكن الصورة واضحة ، أي : ليس فيها عين ، ولا أنف ، ولا فم ، ولا أصابع : فهذه ليست صورة كاملة ، ولا مضاهية لخلق الله عز وجل ” .
যদি ছবিটি পরিষ্কার না হয়, অর্থাৎ: এতে চোখ, নাক, মুখ কিংবা আঙ্গুল না থাকে, তবে এটি সম্পূর্ণ চিত্র নয়, এবং এটি আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য স্থাপন করছে না। (উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, খণ্ড, ২ পৃষ্ঠা: ২৭৮)। অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইক-কমেন্টে ব্যবহার করা ইমোজিগুলো ছবির অন্তর্ভুক্ত নয়।
.
▪️কখন প্রানীর (মানুষের) ছবি তোলা বৈধ:
.
শরীয়া দৃষ্টিকোণ থেকে প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যগত কারণে, জনগুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে, রেকর্ড রাখার স্বার্থে ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য ছবি তোলা জায়েজ। যেমন পাসপোর্ট, ভিসা, আইডেন্টিটি কার্ড, লাইসেন্স, পলাতক আসামী ধরার জন্য, গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড রাখার জন্য ইত্যাদি যরূরী কারণে ছবি তোলা জায়েয। এক্ষেত্রে ছবি তোলা জায়েজ হওয়ার কারন হচ্ছে ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালাসমূহের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে অবৈধ জিনিস তৈরির অনুমতি প্রদান করে। অর্থাৎ الضرورات تبيح الْمَحْظُورَات “তীব্র প্রয়োজন হারামকে হালাল করে দেয়।” [সুয়ুতি রচিত আল আশবাহ ৪৩, আল ওয়াজীয ১৭৫] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন
, فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّ لَا عَادٍ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
‘কিন্তু যে নিরুপায় হয়ে অন্যায়কারী এবং সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে তা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে তার কোন পাপ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ‌ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৭৩; সূরা আন-আন‘আম: ১৪৫; সূরা আন-নাহল: ১১৫)। তিনি আল্লাহ আরো বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (সূরা তাগাবুন ১৬; বাক্বারাহ ২/২৩৩, ২৮৬) উপরোক্ত মূলনীতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা বিন বায (রাহ.)বলেন
,هذه قاعدة معروفة إذا وجدت الضرورة مثلما يباح للمرأة أن تكشف عورتها للطبيب عند الحاجة تكشف وجهها عند الحاجة، ويباح للرجل أن يكشف عورته عند الحاجة للطبيب، ومثلما يأكل الميتة عند الضرورة
“এটি একটি সুপরিচিত মূলনীতি- যদি প্রয়োজন দেখা দেয়। যেমন: একজন মহিলার জন্য প্রয়োজনে তার শরীরের ঢেকে রাখার স্থানগুলো ডাক্তারের কাছে খোলা জায়েজ। প্রয়োজনে তার মুখমণ্ডল খোলাও জায়েজ। অনুরূপভাবে পুরুষের জন্যও ডাক্তারের কাছে প্রয়োজনে তার গোপনাঙ্গ খোলা জায়েজ ঠিক যেমন সে প্রয়োজনে মৃত প্রাণী খেতে পারে।”(বিন বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ফাতওয়া নং-১৭৪২২)

নারীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে আরেকটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি অনুসরণ করতে হবে আর তা হল, الضرورات تقدر بِقَدرِهَا “প্রয়োজন তার সীমায় সীমিত থাকবে।” সুতরাং জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় যতটুকু না হলে নয় ততটুকু খুলে ছবি তুলবে। যেমন: মুখমণ্ডল এবং দু কান। তার অতিরিক্ত তথা পুরো মাথা, চুল, গলা ইত্যাদি অংশ খোলা জায়েজ হবে না। সুতরাং হারাম কাজের প্রতি অন্তরে ঘৃণাবোধ বজায় রেখে জরুরি কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজন বোধে মহিলাদের জন্য মুখমণ্ডল ও দু কান খোলা রেখে ছবি তোলা জায়েজ। তবে যেহেতু কাজটা হারাম কিন্তু বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে তাই আল্লাহর কাছে তওবা করা ছাড়া গত্যন্তর নাই।
.

সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহুসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রশ্নঃ এমন কিছু কি অবস্থা রয়েছে; যেগুলোতে ভাস্কর্য এবং ছবি তোলা বৈধ?

الجواب الحمد لله . “النحت والتصوير لذوات الأرواح محرم على الإطلاق في كل وقت من الأوقات ، إلا ما دعت إليه ضرورة كصورة لجواز سفر ، أو لحفيظة نفوس ، أو لمشبوهين ليتعرف عليهم أو لاختبار أو تعيين في عمل أو نحو ذلك مما يدفع به الغش أو يحفظ به الأمن فيرخص فيه بقدر الضرورة

المصدر: انتهى من “فتاوى اللجنة الدائمة”

উত্তরে তারা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! স্বয়ং সত্তাগতভাবে আত্মার ছবি তোলা ও ভাস্কর্য বানানো প্রত্যেক সময়ে সাধারণভাবে হারাম। তবে যদি জরুরী প্রয়োজন হয় তাহলে ভিন্ন কথা। যেমন পাসপোর্ট ছবি, আত্মরক্ষার জন্য ছবি, সন্দেহপূর্ণ জায়গায় পরিচিতির জন্য ছবি অথবা পরিক্ষার জন্য, অথবা যেকোনো কাজে নিয়োজিত করার জন্য কিংবা অনুরূপ আরো যা কিছু রয়েছে ইত্যাদি যার দ্বারা ধোঁকা প্রতিরোধ করা যায় অথবা নিরাপত্তা সংরক্ষিত হয়, ফলে এক্ষেত্রে জরুরী অনুপাতে ছাড়/অনুমোদন রয়েছে। (ফাতওয়া লাজনাতুদ দাইমাহ: খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৭৮) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)

____________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি:)।

Share: