সালাতে নিয়ত পরিবর্তন করার বিধান সম্পর্কে কুরআন হাদীসে স্পষ্ট কোন দলিল নেই। তবে আহালুল আলেমগনের ইজতিহাদ থেকে যেটা প্রমানিত হয় তা হল সালাত পড়া অবস্থায় যদি নিয়ত পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়, তাহলে সীমাবদ্ধ কয়েকটি সালাতে সেটি করা যাবে সকল সালাতে নয়। যেমন ফরয পড়তে পড়তে কারো প্রয়োজন হলে তা নফল গণ্য করবে। এরুপ বড় নিয়ত করে ছোটতে পরিবর্তন করতে পারে। তবে এর জন্য শর্ত এই যে, পরে যেন ঐ ফরয পড়ার মত সময় অবশিষ্ট থাকে। অনুরুপ নির্দিষ্ট সুন্নত (মুআক্কাদাহ) পড়তে পড়তে যদি কেউ তা সাধারণ নফল গণ্য করতে চায় তাও জায়েজ রয়েছে। অপরদিকে এক ফরয পড়তে পড়তে অন্য ফরযের নিয়ত করা (যেমন, আসর পড়তে পড়তে মনে পড়ল যোহ্র কাযা আছে, সুতরাং তখনই যোহরের নিয়ত করে ঐ নামাযটাকে যোহরের ধরে নেওয়া) শুদ্ধ হবে না। উভয় নামাযই বাতিল গণ্য হবে। তদনুরুপ সাধারণ নফল পড়তে পড়তে কোন নির্দিষ্ট সুন্নত বা নফল গণ্য করাও শুদ্ধ হবে না। যেমন কোন নির্দিষ্ট সুন্নত পড়তে পড়তে অন্য কোন নির্দিষ্ট সুন্নতের (যেমন এশার সুন্নত পড়তে পড়তে বিতরের) নিয়ত করা শুদ্ধ নয়। কারণ, শুরু থেকে নির্দিষ্ট নামাযের নিয়ত না হলে পূর্ণ নামায শুদ্ধ হয় না। (বিস্তারিত দেখেুন বই সালাতে মুবাশ্বির)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে সালাতের নিয়ত পরিবর্তন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।
তিনি উত্তরে বলেন: নিয়ত পরিবর্তনের অর্থ হয় এটি একটি নির্দিষ্ট জিনিস থেকে অন্যটিতে পরিবর্তন করা বা সাধারণ কিছু থেকে নির্দিষ্ট কিছুতে পরিবর্তন করা। এটি সঠিক নয়, তবে এটি যদি নির্দিষ্ট কিছু থেকে সাধারণ কিছুতে পরিবর্তন করে তবে এতে দোষের কিছু নেই।
উদাহরণ স্বরূপ: একটি নির্দিষ্ট জিনিস থেকে অন্য জিনিসে পরিবর্তন: যেমন ধরুন: একজন ব্যক্তি সালাতুর দু’হার সুন্নত নামাযকে ফজরের নিয়মিত সালাতে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন যেটি তিনি মিস করেছিলেন এবং কাযা আদায় করতে চেয়েছিলেন। তিনি দুই রাকাআত দুহা পড়ার নিয়তে তাকবীর বললেন, তারপর তার মনে পড়ল যে তিনি ফজরের নিয়মিত নামায পড়েননি, তাই তিনি তা পরিবর্তন করে ফজরের নিয়মিত সালাতে পরিনত করলেন। এটা বৈধ নয়, কারণ ফজরের নিয়মিত সালাত হল দুই রাকাআত যার জন্য তার সালাতের শুরু থেকেই নিয়ত করা উচিত ছিল।
আরেকটি উদাহরণ হল: একজন ব্যক্তি যিনি আসরের (ফরজ) নামায পড়তে শুরু করল, কিন্তু নামায পড়ার সময় তার মনে পড়ল যে সে যোহরের ফরজ নামায পড়েনি, তাই সে এই আসরের সালাতটিকে যোহরের জন্য নিয়ত করল। এটাও বৈধ নয়, কারণ নির্দিষ্ট নামাযের নিয়ত শুরু থেকেই হতে হবে। আবার সাধারণ কিছু থেকে নির্দিষ্ট কিছুতে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, যেমন একজন ব্যক্তি সাধারণ নফল সালাত পড়া শুরু করলে, তার মনে পড়ে যে সে ফজরের সুন্নাত পড়েনি, তাই সে তার নিয়ত পরিবর্তন করে ফজরের দিকে নিয়ে গেল। এটাও বৈধ নয়।কিন্তু যদি সে নির্দিষ্ট কিছু থেকে সাধারণ কিছুতে পরিবর্তিত হয়, যেমন সে যদি ফজরের নিয়মিত নামায এই নিয়তে নামায পড়া শুরু করে, তবে নামায পড়ার সময় তার মনে পড়ে যে সে এই নামায পড়ে ফেলেছে, সেক্ষেত্রে সে পরিবর্তন হতে পারে। তার আসল উদ্দেশ্য কেবল একটি নামাজ পড়া।
আরেকটি উদাহরণ হল: একজন ব্যক্তি যে নিজে নিজে একটি ফরয সালাত পড়া শুরু করে, তারপর একটি দল (জামাআত) আসে এবং সে তার ফরয সালাতকে নফল সালাতে পরিবর্তন করতে চায় যাতে সে তা সংক্ষিপ্ত করে নামায পড়তে পারে। শুধুমাত্র দুই রাকাআত, তারপর দলের সাথে ফরয সালাত আদায় করবে। এটি জায়েজ। কারণ তিনি নির্দিষ্ট কিছু থেকে সাধারণ কিছুতে পরিবর্তন করছেন।সুতরাং মূলনীতি হল: একটি নির্দিষ্ট জিনিস থেকে অন্য জিনিস পরিবর্তন করা বৈধ নয়; সাধারণ কিছু থেকে নির্দিষ্ট কিছুতে পরিবর্তন করা বৈধ নয়; নির্দিষ্ট কিছু থেকে সাধারণ কিছুতে পরিবর্তন করা বৈধ (ইমাম উসাইমীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল: খন্ড: ১২ পৃষ্ঠা: ৩৪৭) ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৯৬৮৯)
.
পাশাপাশি ২ রাকআত সুন্নত পড়তে পড়তে ৪ রাকআতের নিয়ত করা অথবা ৪ রাকআত পড়তে পড়তে ২ রাকআত সুন্নতের নিয়ত করা শুদ্ধ নয়। বলা বাহুল্য, তারাবীহর নামাযে ভুলে তৃতীয় রাকআতে উঠে গেলে মনে পড়ার সাথে সাথে বসে গিয়ে নামায পূর্ণ করে সহু সিজদাহ করতে হবে। নচেৎ ৪ রাকআতের নিয়ত করে নামায পড়লে তা বাতিল গণ্য হবে।(সালাতে মুবাশ্বির উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে ৪/১০৯-১১০) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।