মহিলাদের সালাত আদায়ের জন্য সর্বোত্তম স্থান কোনটি এবং জুমার দিনসহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের জন্য মহিলারা মসজিদে যেতে পারবে কি

দুই ঈদের সালাত ছাড়া অন্যান্য সকল সালাতের জন্য মহিলাদের মসজিদের জামাআতে শামিল হওয়ার চাইতে নিজ ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম। প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৩২ হি.] হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন- নারীদের জন্য ঘরের আঙ্গিনায় সালাত আদায়ের চাইতে তার গৃহে সালাত আদায় করা উত্তম। আর নারীদের জন্য গৃহের অন্য কোন স্থানে সালাত আদায়ের চাইতে তার গোপন কামরায় সালাত আদায় করা অধিক উত্তম। (আবু দাঊদ; হা/৫৭০, সনদ সহীহ)। উম্মে হুমাইদ আস-সাআদী (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘একবার তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি আপনার পিছনে সালাত আদায় করতে চাই। নবী করীম (ﷺ) বললেন, আমি ভাল করেই জানি, তুমি আমার পিছনে সালাত আদায় করতে চাও। কিন্তু তোমার জন্য তোমার রুমে সালাত আদায় করা অন্য রুমে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার ঘরের কোন রুমে আদায় করা বাড়িতে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার বাড়িতে সালাত আদায় করা কওমের বা এলাকার মসজিদে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার কওমের বা এলাকার মসজিদে সালাত আদায় করা আমার পিছনে সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। এরপর ঐ মহিলা তার অন্ধকার কুঠরিতে সালাতের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে নেয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই সালাত আদায় করতে থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ হা/২৭১৩৫; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২২১৭, সনদ হাসান)। এই হাদীসগুলো প্রমাণ করে নারীদের বাড়িতে সালাত আদায় করাই অধিক উত্তম।
.
▪️জুমার দিনসহ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের জন্য মহিলারা মসজিদে যেতে পারবে কি?
_____________________________________
নারীদের জন্য বাড়িতে সালাত আদায় করা উত্তম হলেও মহিলারা চাইলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে পরিপূর্ণ পর্দাসহ মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি প্রচলিত মাযহাবীদের মনগড়া ফাতওয়ার কারণে দেশের বহু স্থানে মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা দেয়া হয় এবং মসজিদে সালাত পড়াকে অপছন্দ করা হয়। অথচ এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের বিরোধিতা করার শামিল। কারণ হাদীসে এসেছে, সালেম ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে- إِذَا اسْتَأْذَنَتْ أَحَدَكُمُ امْرَأَتُهُ إِلَى الْمَسْجِدِ فَلَا يَمْنَعْهَا ‘নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কারো স্ত্রী মসজিদে আসার অনুমতি চাইবে, তখন সে যেন তাকে নিষেধ না করে।’ (সহীহ বুখারী, হা/৮৭৩, ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৬৬ এবং হা/৫২৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/৪৪২, ‘সালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩০; মিশকাত, হা/১০৫৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৯৯২, ৩/৪৭ পৃ.)।
.
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, إِذَا اسْتَأْذَنْتَ أَحَدُكُمْ امْرَأَتَهُ إِلىَ الْمَسْجِدِ فَلَا يَمْنَعْهَا ‘যখন তোমাদের কোন মহিলা তোমাদের নিকট মসজিদে যাওয়ার অনুতমতি চায়, তোমরা তাদের নিষেধ কর না।’ (সহীহ বুখারী হা/৮৭৩, ৫২৩৮; মুসলিম হা/৪৪২; সহীহুল জামে‘ হা/৩১৯)। অপর বর্ণনায় আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, তোমরা মহিলাদের রাতের বেলা মসজিদে যেতে অনুমতি দাও। তখন তার ছেলে (বেলাল) বলল, আল্লাহর শপথ! আমি তাদেরকে (রাতের বেলা মসজিদে যেতে) অনুমতি দিব না। এটাকে তারা বাহানা হিসাবে গ্রহণ করবে। আল্লাহর শপথ আমি কখনও তাদেরকে অনুমতি দিব না। একথা শুনে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে বলেন, আমি তোমাকে বলছি, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন; তোমরা মহিলাদের অনুমতি দাও, আর তুমি কিনা বলছ, আমি তাদেরকে অনুমতি দিব না। (সহীহ বুখারী হা/৮৯৯; আবু দাঊদ হা/৫৬৮)। অন্য রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদে গমনে বাধা দিও না।’ (সহীহ বুখারী হা/৯০০; মুসলিম হা/৪৪২; আবু দাঊদ হা/৫৬৬)
.
এমনকি কি মহিলাদেরকে নিয়ে ঈদগাহে যাওয়ার ব্যাপারে রাসূল (ﷺ) থেকে জোরালো নির্দেশ এসেছে। এমনকি তারা ঋতুবতী হলেও। তারা শুধু দু‘আ অর্থাৎ খুৎবা, তাসবীহ, তাকবীর, তাহলীলে শরীক হবে। উম্মু আত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’ঈদের দিনে ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে মুসলিমদের জামা‘আতে ও দু‘আয় অংশ নিতে বের করে নেবার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হলো। তবে ঋতুবতীগণ যেন সালাতের জায়গা হতে একপাশে সরে বসেন। একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো কারো (শরীর ঢাকার জন্য) বড় চাদর নেই। তিনি বললেন, তাঁর সাথী-বান্ধবী তাঁকে আপন চাদর প্রদান করবে। (সহীহ বুখারী, হা/৯৭৫; সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৫; মিশকাত, হা/১৪২৯; সহীহ বুখারী, হা/৩৫১; মিশকাত, হা/১৪৩১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩৪৭, ৩/২১১ পৃ.)।
.
হানাফি মাজহাবের ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম ৮০ হি./৬৯৯ খ্রি. এবং মৃত্যু ১৫০ হি./৭৬৭ খ্রি.] তার মাকে সাথে নিয়ে গিয়ে তারাবিহ পড়তেন মর্মে বিশুদ্ধ বর্ননা রয়েছে। যেমন: হামযাহ ইবনে মুগিরাহ, যিনি ১৮০ হিজরিতে মারা যান আর তার বয়স ছিল ৯০ বছর বা তার কাছাকাছি, বলেন যে: আমরা উমার ইবনে যারের সাথে রমাদান মাসে সালাত আদায় করতাম। আর আবু হানিফা তার মাকে সাথে নিয়ে আসতেন। তার অবস্থান ছিল বেশ দূরে। আর ইবনে যার সাহরির আগ পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন।(ইন্তিকা ১/১৩৯; আখবারু আবী হানীফা ১/৬৩; আল-লামহাত ১/৩৬৬; সনদ বিশুদ্ধ)। এই হাদীস থেকে প্রমাণ হয় ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ-এর যুগ পর্যন্ত নারীদের মসজিদে গমন জায়িয। সুতরাং যারা আম্মাজান আয়িশা রাযিয়াল্লাহু আনহা-এর বর্ণিত হাদীস দিয়ে মহিলাদের মসজিদে গমন নাজায়িয বলেন, তাদের ফাতওয়া ভুল।
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ বলেছেন, মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের যে কোন একটিও জামআতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব নয়, বরং তাদের গৃহে সালাত পড়া তাদের জন্য মসজিদে সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম, সেটা ফরয সালাত হোক আর নফল সালাতই হোক না কেন। কিন্তু যদি কোন নারী মসজিদে সালাত পড়তে চায় তবে তাকে তা করতে বাধা দেওয়া উচিত নয়, এই শর্তে যে সে বাইরে বের হওয়ার সময় এবং সালাত পড়ার সময়, পুরোপুরি পর্দা করে এবং সুগন্ধি ব্যবহার না করে বের হবে, এবং জামআতে পুরুষদের পিছনের কাতারে সালাত পড়ার সময় যথাযথ ইসলামিক শিষ্টাচার পালন করবে। (ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আল-দাইমাহ,খন্ড :৮ পৃষ্ঠা:২২৩)
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির আলেমগন অপর ফাতওয়া আরো বলেন, সালাত আদায় করার জন্য মুসলিম নারীর মসজিদে যাওয়া জায়েয। কোন নারী তার স্বামীর কাছে এ ব্যাপারে অনুমতি চাইলে স্বামী তাকে নিষেধ করতে পারবে না; যদি তিনি পর্দা করে বের হন এবং তার শরীরের এমন কিছু উন্মুক্ত না থাকে যা গায়রে- মোহরেম কেউ দেখা হারাম। এর দলীল হচ্ছে- ইবনে উমর (রাঃ) বলেন; আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- “আপনাদের নারীরা যদি আপনাদের কাছে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়, তাহলে তাদেরকে অনুমতি দিন।” অন্য এক রেওয়ায়েতে এসেছে- “নারীদেরকে তাদের মসজিদে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না, যদি তাঁরা আপানাদের কাছে অনুমতি চায়।” বিলাল বললেন (তিনি হলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এর পুত্র): আল্লাহর কসম আমি তাদেরকে (নারীদেরকে) অবশ্যই নিষেধ করব। তখন তাকে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বললেন; আমি বলছি, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন।” আর তুমি বলছ “অবশ্যই আমি তাদেরকে নিষেধ করব?” (সহীহ মুসলিম; হা/৪৪২)। তবে নারী যদি পর্দা না করে এবং তার শরীরের এমন কোন অংশ উন্মুক্ত থাকে যা গায়রে-মোহরেম পুরুষের দেখা হারাম অথবা নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে; তবে তার জন্য এ অবস্থায় ঘর থেকে বের হওয়াই জায়েয নয়। সালাতের জন্য মসজিদের উদ্দেশ্য বের হওয়া তো আরও দূরের বিষয়। কারণ এতে ফিতনা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন; “আপনি মু’মিন নারীদেরকে বলে দিন যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে এবং নিজ স্বামী… ছাড়া অন্য কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর; ২৪:৩১)। আমরাহ বিনতে আব্দুর রহমান থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন; “বর্তমানে নারীরা যা শুরু করেছে তা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতেন, তবে তিনি মহিলাদের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষেধ করে দিতেন; যেভাবে বনী ইসরাঈলের নারীদের জন্য মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমরাহকে জিজ্ঞেস করা হল: বনী ইসরাঈলের নারীদের জন্য কি মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল? তিনি বললেন: হ্যাঁ। (সহীহ মুসলিম; হা/৪৪৫)। এই দলীলগুলো থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায় যে, মুসলিম নারী যদি তার পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে এবং ফিতনার উদ্রেককারী ও দুর্বল ঈমানদারের মনে আকর্ষণ সৃষ্টিকারী সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে বিরত থাকে, তবে তাকে মসজিদে সালাত আদায় করা থেকে নিষেধ করা যাবেনা। আর যদি সে এমন অবস্থায় থাকে; যা মন্দ লোকদের মাঝে আকর্ষণ তৈরী করে এবং যাদের ঈমান নড়বড়ে তাদেরকে ফিতনায় ফেলে দেয়। তবে তাকে মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়া হবে। বরং তাকে নিজ বাড়ির বাইরে যাওয়া থেকে এবং নারী-পুরুষ সবার জন্য উন্মুক্ত স্থানগুলোতে প্রবেশ করা থেকে বাধা দেয়া হবে। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩৩২)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন: “যদি ফিতনার আশংকা না থাকে তবে তারাবীর সালাতে নারীদের উপস্থিত হওয়াতে কোন সমস্যা নেই। তবে শর্ত হল তারা শালীনভাবে সৌন্দর্য প্রকাশ না করে বের হবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। (উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৪, পৃষ্ঠা: ২১১)

▪️তবে মসজিদে মহিলাদের আসার আগে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখা জরূরী:
______________________________________
(১). মসজিদে গমনের সময় সুগন্ধি ব্যবহার না করা: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,‘যখন কোন মহিলা এশার সালাতে উপস্থিত হতে চায়, সে যেন ঐ রাত্রিতে সুগন্ধি ব্যবহার না করে।’ (সহীহ মুসলিম হা/৪৪৩; নাসাঈ হা/৫১৩৪)। অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে উপস্থিত হয়, সে যেন খোশবু স্পর্শ না করে।(সহীহ মুসলিম হা/৪৪৩)
.
(২). পরিপূর্ণ পর্দা সহকারে বের হওয়া: মহিলাদের সব সময়ই পর্দার সাথে বের হতে হবে। তবে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় আরো সতর্ক থাকতে হবে, যাতে সওয়াব কামাই করতে গিয়ে গুনাহ না হয় এবং সমাজে ফিৎনার সৃষ্টি না হয়।
.
(৩). মহিলাদের জন্য পৃথক দরজার ব্যবস্থা করা: মহিলারা মসজিদে আসলে পুরুষদের সাথে না দাঁড়িয়ে আলাদা জায়গায় দাঁড়াবেন। তারা মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় পৃথক দরজা দিয়ে বের হবেন।
.
(৪). মহিলাগণ পুরুষদের পিছনে দাঁড়াবেন: দাঁড়ানোর সময় অবশ্যই পুরুষরা মহিলাদের আগে থাকবেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ﷺ) উম্মু সুলাইম (রাঃ)-এর ঘরে সালাত আদায় করেন। আমি ও একটি ইয়াতীম ছেলে তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম আর উম্মু সুলাইম (রাঃ) আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন। (বুখারী হা/৮৭৪)। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে প্রথমটি আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাতার হচ্ছে শেষেরটি। পক্ষান্তরে মহিলাদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে শেষেরটি আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে প্রথমটি।’ (সহীহ মুসলিম হা/৪৪০; আবূদাঊদ হা/৬৭৮)
.
(৫). পুরুষ মহিলার একত্রিত জামা‘আতে ইমাম ভুল করলে পুরুষরা ‘সুবহানআল্লাহ’ বলবেন এবং নারীরা হাতের তালুতে মেরে আওয়াজ করবেন। সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন; ‘সালাতের মধ্যে যে ব্যক্তির কাছে কোন কিছু আপতিত হয় সে ব্যক্তি যেন ‘সুব্হানাল্লা-হ’ পড়ে নেয়। আর হাতে হাত মারা কেবল মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট।’ (বুখারী হা/৬৮৩; মুসলিম হা/৪২১; মিশকাত হা/৯৮৮)
.
(৬). মহিলারা মসজিদ থেকে আগে বের হবেন: সালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে মহিলারা বের হবেন। আর মহিলাদের বের হওয়া শেষ হলে পুরুষরা বের হবেন। হিন্দ বিনত হারিছ (রহঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ)-এর স্ত্রী সালামাহ (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন, নারীরা আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সময় ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে যেতেন এবং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ও তাঁর সঙ্গে সালাত আদায়কারী পুরুষগণ, আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা করেন অবস্থান করতেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ﷺ) উঠলে পুরুষরাও উঠে যেতেন। (সহীহ বুখারী; হা/৮৬৬)
.
(৭). মহিলারা মহিলাদের ইমাম হতে পারবেন: মহিলারা পুরুষদের ইমাম হতে পারবেন না। তবে মহিলারা মহিলাদের ইমাম হতে পারবেন। সেক্ষেত্রে মহিলা ইমাম পৃথক কাতারে না দাঁড়িয়ে প্রথম কাতারের মাঝখানে দাঁড়াবেন।
.
🔸বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ সঊদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ বকর আবু যায়েদ তার ‘হিরাসাতুল ফাদ্বিলাহ’ নামক গ্রন্থে নারীদের মসজিদে বের হওয়ার সকল শর্ত একত্রিত করেছেন। সেখানে তিনি বলেন; “নিম্নোক্ত বিধি-বিধানের আলোকে মুসলিম নারীকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে:
.
(১). সে নিজে ফিতনায় পড়া অথবা তার দ্বারা অন্য কেউ ফিতনাগ্রস্ত হওয়া থেকে আশংকামুক্ত হওয়া।

(২). তার সেখানে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ কোন বিষয় সংঘটিত না হওয়া।

(৩). রাস্তায় অথবা মসজিদে পুরুষদের সাথে ভিড় না করা।

(৪). সুগন্ধি ব্যবহার না করে বের হওয়া।

(৫). পরিপূর্ণ হিজাব পরিধান করা; যাতে কোন প্রকার সৌন্দর্য প্রকাশ না হয়।

(৬). নারীদের জন্য মসজিদের আলাদা প্রবেশপথ থাকা। যাতে নারীরা সে পথ দিয়ে প্রবেশ করতে পারে ও বের হতে পারে। এই প্রসঙ্গে সুনানে আবু দাউদ ও অন্যান্য গ্রন্থে হাদীস সাব্যস্ত হয়েছে।

(৭). নারীদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হওয়া।

(৮). নারীদের কাতারের মধ্যে উত্তম হলো সর্বশেষ কাতার। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত।

(৯). যদি ইমাম নামাযে কোন ব্যতিক্রম করে; তবে পুরুষরা তাসবীহ পাঠ করবে এবং নারীরা ডান হাতের তালু দিয়ে বাম হাতের কব্জির উপর তালি দিয়ে শব্দ করবে।

(১০). নারীরা পুরুষদের আগে মসজিদ থেকে বের হবে। নারীরা ঘরে পৌঁছা পর্যন্ত পুরুষরা অপেক্ষা করবে। এ প্রসঙ্গে উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে সহীহ বুখারীতে ও অন্যান্য কিতাবে হাদীস প্রমাণিত হয়েছে।(‘হিরাসাতুল ফাদ্বিলাহ’ পৃষ্ঠা:-৮৬; ইসলামী সওয়াল- জবাব ফাতাওয়া নং-৪৯৮৯৮) আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।