দব্ব মরুভূমিতে বিচরণশীল গিরগিটির ন্যায় দেখতে অনেকটা গুইসাপের মত এক প্রকার প্রাণী। দব্ব খাওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞ আলিমগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন। রাসূল ﷺ এর একদল সাহাবী এবং জমহুর আলিমগন তা খাওয়ার পক্ষে সম্মতি দিয়েছেন এবং তাদের অন্য এক দল তা খাওয়াকে মাকরূহ বলেছেন। ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, “দব্বের গোশত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দস্তরখানে খাওয়া হয়েছে। সাহাবী খালিদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) উহা খাচ্ছিলেন, কিন্তু রাসূল ﷺ উহাতে তাঁকে কোন নিষেধ করেননি। বরং তিনি ব্যক্তিগত অরুচির কারণে তা পরিত্যাগ করেছেন”তাই বোঝা যাচ্ছে যে, সান্ডার গোশ্ত হালাল। ইমাম তাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) একে হালাল বলেছেন। এমন কি প্রতিটি মাযহাবে একে হালাল বলা হয়েছে।(সহীহ মুসলিম হা/৪৯৩৪ ই.ফা. ৪৮৮৩, ই.সে. ৪৮৮৪ জামে’ আত-তিরমিজি হা/১৭৯০ ও মুয়াত্তা ইমাম মালিক হা/ ১৭৪৭ এর টিকা দ্রষ্টব্য:) সুতরাং বিশুদ্ধ হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে দব্ব খাওয়া হালাল প্রমানিত হয়। যেমন: হাদীসে এসেছে
.
حديث ابْنِ عُمَرَ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الضَّبُّ، لَسْتُ آكُلُهُ، وَلاَ أُحَرِّمُهُ
.
ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যব্ব আমি খাই না, আর হারামও বলি না।(সহীহ বুখারী হস/৫৫৩৬ আধুনিক প্রকাশনী- ৫১২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০২৫ সহীহ মুসলিম ৩৪/৭, হাঃ ১৯৪৩)
.
অপর বর্ননায় খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য ভুনা গুইসাপ এনে তাঁর সামনে পরিবেশন করা হলে তিনি তা খাওয়ার জন্য হাত বাড়ালেন। তাঁর নিকটে উপস্থিত এক ব্যক্তি বললো, এটা গুইসাপের গোশত। তিনি নিজের হাত তুলে নিলেন। খালিদ (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, গুইসাপ কি হারাম? তিনি বলেন, না, কিন্তু তা আমার এলাকার প্রানী নয়। তাই এটাতে আমার রুচি হয় না।খালিদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হাত বাড়িয়ে তা নিলেন এবং আহার করলেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকিয়ে দেখলেন(সহীহুল বুখারী হা/ ৫৩৫১, ৫৪০০, ৫৪৩৭, সহীহ মুসলিম হা/ ১৯৪৬, নাসায়ী ৪৩১৬, ৪৩১৭, আবূ দাউদ হা/৩৭৯৪, মুসনাদে আহমাদ হা/১৬৩৭১, ২৬২৭৪)
আরেক বর্ননায় আবূ যুবায়র (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) -কে দব্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটি তোমরা খেও না। তিনি তা নোংরা হিসেবে অবহিত করলেন। তিনি আরও বলেন, ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এটিকে হারাম করেননি। মহান আল্লাহ এর দ্বারা অনেক লোককে উপকৃত করেছেন। কেননা, জনসাধারণের খাদ্য এ থেকে আসে। আমার নিকট থাকলে আমিও তা খেতাম। (সহীহ মুসলিম হা/৪৯৩৬ ই.ফা. ৪৮৮৫, ই.সে. ৪৮৮৬)
.
উপরোক্ত তিনটি হাদীসে প্রানীটির ক্ষেত্রে আরবী যে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হল,ضب (দব্ব) দব্ব হল মরুভূমিতে বিচরণশীল গিরগিটির ন্যায় এক প্রকার প্রাণী যা হালাল।এরা সাত শত বৎসর পর্যন্ত বাঁচে। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, জীবনে কোন সময় পানি খায় না বা পানির নিকটেও যায় না। বৎসরে দুই একবার এক আধ বিন্দু কুয়াশা খায়। চল্লিশ দিন অন্তর এক বিন্দু প্রস্রাব করে। এরা ঘরে, গাছে কিংবা পাহাড়ে থাকে। এর তৈল সংগ্রহ করে অনেকেই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে। এর গোশত খাওয়া জায়েয আছে। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হা/১৭৪৬ টিকা) তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি হাদীস গন্থে এই প্রানীটির নাম অনেকে গুইসাপ অনুবাদ করেছেন যা সঠিক নয়। গুইসাপ এবং দব্বের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে যেমন প্রসিদ্ধ আরবী অভিধান ‘আল মুজামুল ওয়াসীত’-এ ‘দব’ এর পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবে-
الضب حيوان من جنس الزواحف من رتبة العظاء، غليظ الجسم خشنة، و له ذنب عريض حرش أعقد، يكثر في صحراء الأقطار العربية.
‘দব’ হলো সরীসৃপজাতীয় বুকে ভর দিয়ে চলা একটি প্রাণী। যার শরীরের চামড়া পুরু ও অমসৃণ তার লেজ চওড়া যা রুক্ষ, খসখসে ও অতি গিটবিশিষ্ট। আরব মরুভূমিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।(আল মুজামুল ওয়াসীত পৃষ্ঠা: ৫৩২)
.
আরবী ভাষার সুপ্রাচীন ও নির্ভরযোগ্য অভিধান
লিসানুল আরবে আল্লামা ইবনে মানযুর (রাহিমাহুল্লাহ) বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন তিনি লিখেছেন। দব্ব একটি ছোট প্রানী,যা দেখতে ওয়ারালের মত।আবু মানসুর বলেন: ওয়ারাল হল সুগঠিত দেহের অধিকারী একটি প্রাণী তার লেজ লম্বা; দেখতে সাপের লেজের মতকোনো কোনো ওয়ারাল দুই হাতেরও বেশি লম্বা হয়আর দবের লেজ গিটবিশিষ্ট এবং তা সর্বোচ্চ এক বিঘত লম্বা হয়।আরবরা ওয়ারালকে ঘৃনা করে ও নিকৃষ্ট মনে করে ফলে তা খায় না। আর দব শিকার করতে ও খেতে পছন্দ করে (দ্র:লিসানুল আরাব,খন্ড: ৮ পৃষ্ঠা: ৮ )
.
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, দ্বব বা সান্ডা এর মাংসের ব্যাপারে বলেন, এটির মাংস উষ্ণ ও শুষ্ক হয় এবং এটি যৌন ইচ্ছাকে শক্তিশালী করে। (যাদুল মাআদ খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৯৫)
.
পরিশেষ উপরোক্ত আলোচনা একথা পরিস্কার যে, দব্বের গোশত খাওয়া হালাল। সূুতরাং যার রুচি হবে সে খাবে যার রুচি হবেনা সে পরিত্যাগ করতে পারে। পাশাপাশি এটিও জেনে রাখা ভাল দুব্ব আর গুইসাপ একই প্রানী নয় বরং দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। দব্ব খাওয়া হালাল হলেও গুইসাপ খাওয়া অনেকের মতে নিষিদ্ধ।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_______________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।