হে আল্লাহ! আমার নফস (আত্মা)-কে তাকওয়া দাও। সুন্দর এই দু’আটি শিখতে পারেন।
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: তাকওয়া শব্দের অর্থ বিরত থাকা, বেঁচে থাকা, ভয় করা, নিজেকে রক্ষা করা। ব্যবহারিক অর্থে পরহেজগারি, খোদাভীতি, আত্মশুদ্ধি ইত্যাদি বোঝায়। ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার ভয়ে যাবতীয় অন্যায়, অত্যাচার ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলা হয়। অন্যকথায় সকল প্রকার পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করাকে তাকওয়া বলা হয়। যিনি তাকওয়া অবলম্বন করেন তাঁকে বলা হয় মুত্তাকী। মহান আল্লাহ বলেন,وَ اَمَّا مَنۡ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ وَ نَهَی النَّفۡسَ عَنِ الۡهَوٰی “যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় করবে ও কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকবে, তার স্থান হবে জান্নাত”।”[সূরা আন-নাযিআত: ৪১] আয়াতে রবের অবস্থানের দু’টি অর্থ হতে পারে, (এক). রবের সামনে হাজির হয়ে হিসাব নিকাশের সম্মুখীন হতে হবে- এ বিশ্বাস করে প্রবৃত্তির অনুসরণ হতে যে নিজেকে হেফাযত করেছে তার জন্য রয়েছে জান্নাত। (দুই). রবের যে সুমহান মর্যাদা তাঁর এ উচ্চ মর্তবার কথা স্মরণ করে অন্যায় অশ্লিল কাজ এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থেকেছে সে জান্নাতে যাবে। উভয় অর্থই এখানে সঠিক। [বাদা’ই’উত তাফসীর] এই আয়াতের তাফসিরে আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ, রবী, কাতাদাহ ও হাসান রাহিমাহুমুল্লাহ বলেন, তাকওয়ার হক হল, প্রত্যেক কাজে আল্লাহ্র আনুগত্য করা, আনুগত্যের বিপরীতে কোন কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণে রাখা- কখনো বিস্মৃত না হওয়া এবং সর্বদা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা- অকৃতজ্ঞ না হওয়া। [তাফসীরে ইবন কাসীর] এতে বুঝা যায় যে, পূর্ণ ইসলামই প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ আনুগত্য করা এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন। আয়াতের শেষে মুসলিম না হয়ে যেন কারও মৃত্যু না হয় সেটার উপর জোর দেয়া হয়েছে। দুনিয়াতে ঈমানদারের অবস্থান হবে আশা-নিরাশার মধ্যে। সে একদিকে আল্লাহ্র রহমতের কথা স্মরণ করে নাজাতের আশা করবে, অপরদিকে আল্লাহ্র শাস্তির কথা স্মরণ করে জাহান্নামে যাওয়ার ভয় করবে। কিন্তু মৃত্যুর সময় তাকে আল্লাহ সম্পর্কে সুধারণা নিয়েই মরতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন আল্লাহ সম্পর্কে সু ধারণা না নিয়ে মারা না যায়” [সহীহ মুসলিম:হা/ ২৮৭৭] অর্থাৎ মৃত্যুর সময় তার আশা থাকবে যে, নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন। আজ আমরা তাকওয়া লাভের সুন্দর একটি দু’আ শিখবো হাদীসটি বর্ননা করেছেন সাহাবী যাইদ ইবনু আরকাম (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তিনি বলেন,আমি তোমাদের কেবল তা-ই বলছি, যা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন:
.
اَللّٰهُمَّ آتِ نَفْسِيْ تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا
.
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আ-তি নাফসি তাক্বওয়া-হা, ওয়া যাক্কিহা, আনতা খাইরু মান যাক্কা-হা, আনতা ওয়ালিয়্যুহা ওয়া মাওলা-হা।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, অন্যথায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে)।
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার নফস (আত্মা)-কে তাকওয়া দাও। একে পরিশুদ্ধ করো; তুমিই সর্বোত্তম পরিশুদ্ধকারী। তুমিই তার (নফসের) বন্ধু ও অভিভাবক। (মুসলিম, আস-সহিহ: ২৭২২, ৬৭৯৯ ই.ফা. ৬৬৫৮, ই.সে. ৬৭১১)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
اَللّٰهُمَّ
(আল্লা-হুম্মা)
অর্থ: হে আল্লাহ!
.
آتِ نَفْسِيْ تَقْوَاهَا
(আ-তি নাফসি তাক্বওয়া-হা)
অর্থ: আমার নফসকে তাকওয়া দাও,
.
وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا
(ওয়া যাক্কিহা, আনতা খাইরু মান যাক্কা-হা) অর্থ: একে পরিশুদ্ধ করো; তুমিই সর্বোত্তম পরিশুদ্ধকারী,
.
أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا
(আনতা ওয়ালিয়্যুহা ওয়া মাওলা-হা)
অর্থ: তুমিই তার (নফসের) বন্ধু ও অভিভাবক।
.
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত হাদীসটি তিনটি অংশে বিভক্ত ছিল সেখান থেকে চমৎকার ও অর্থবহ একটি অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই চাইলে সুন্দর এই দু’আটি মুখস্ত করে (বিশেষত নফল) নামাজের সিজদায়, নামাজের সালাম ফেরানোর আগে, দু‘আ কবুলের বিশেষ সময়ে কিংবা যেকোনো দু‘আর মধ্যে পড়তে পারি। আনুষ্ঠানিক দু‘আ ছাড়াও সাধারণভাবে এসব বাক্য পড়তে পারি। নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন দু’আ পড়ার সময় অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখবেন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।