কেমন ছিল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম এর রামাদানের দিনগুলো

প্রশ্ন: কেমন ছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম)-এর রামাদানের দিনগুলো?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি আমাদেরকে বরকতময় পবিত্র রামাদান মাসে উপনীত করেছেন, আল-হামদুলিল্লাহ। দরূদ ও তাসলীম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর প্রতি, যিনি এ মহিমান্বিত মাসের সকল সুসংবাদ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর বাস্তব জীবনে সম্পাদনের মাধ্যমে আমাদেরকে শিখিয়েছেন। আল্ল-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম ‘আলা নাবীয়িনা মুহাম্মাদ। দেখতে দেখতে রামাদানের দিনগুলো চলে যাচ্ছে যানিনা আগামী রমাদান বেঁচে থাকবো কিনা আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আজকের পর্বে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল ﷺ) এর রমাদান কেন্দ্রিক কার্যাবলী সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে রাসূল (ﷺ)-এর রামাযান মাস কেন্দ্রিক আমলগুলোকে চারভাবে ভাগ করা যায়। যেমন:

(১). প্রথমতঃ রামাদান মাসের প্রারম্ভিক আমলসমূহ
(২). দ্বিতীয়তঃ রামাদান মাসে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের আমলসমূহ

(৩). তৃতীয়তঃ রামাদান মাসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবার-পরিজনের সাথে কিভাবে সময় অতিবাহিত করতেন

(৪).চতুর্থত: রামাদান (লাইলাতুল ক্বদর) ই‘তিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্ট অর্জনের প্রচেষ্টা চালাতেন। এবার আমরা একজনের রাসূল ﷺ এর রমাদান কেন্দ্রিক যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
.
(১). রামাদান মাসের প্রারম্ভিক আমল হিসেবে শা‘বান মাসে বেশি বেশি নফল সিয়াম পালন করতেন।(সহীহ বুখারী, হা/১৯৬৯; সহীহ মুসলিম,হা/১১৫৭; মিশকাত, হা/২০৩৬)
.
(২). রামাদান মাসের চাঁদ দেখে ছিয়াম শুরু করতেন। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তাহলে শা‘বান মাসকে ৩০ দিন পূর্ণ করতেন (সহীহ বুখারী, হা/১৯০৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৮২; নাসাঈ, হা/২১১৬।
.
(৩). তিনি রামাদান মাসে শুরুতে সাহাবীদেরকে সিয়ামের হুকুম-আহকাম ও করণীয়-বর্জনীয় বিষয় বর্ণনা করতেন।(নাসাঈ, হা/২১০৬; মিশকাত, হা/১৯৬২, সনদ সহীহ)
.
(৪). রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদান মাসের পূর্ণ সিয়াম পালন করতেন। তিনি দেরিতে সাহরী গ্রহণ করা এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথেই তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৯৫৫, ১৯৫৬, ৫২৯৭ সহীহ মুসলিম, হা/১১০১)

(৪). তিনি ইফতারের শুরুতে এবং শেষে দু‘আ পড়তেন: শুরুতে সাধারণ দু‘আ হিসাবে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৬; মিশকাত, হা/৪১৫৯) অতঃপর বলতেন, ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ ‘যাহাবায যামাউ ওয়াব তাল্লাতিল ‘উরূকু ওয়া ছাবাতুল আজরু ইনশাআল্লাহ। অনুবাদ : ‘পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, শিরা-উপশিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ প্রতিদানও নির্ধারিত হয়েছে’। (আবু দাউদ, হা/২৩৭৫, হাসান সহীহ)
.
(৫). তিনি কাঁচা/পাকা খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতার করতেন এবং সাহরীতে খেজুর খাওয়া।শীতের সময় শুকনো খেজুর দ্বারা এবং গ্রীষ্মের সময় পানি দ্বারা ইফতার করতেন। (আবূ দাঊদ, হা/২৩৫৬, তিরমিযী, হা/৬৯৬; মিশকাত, হা/১৯৯১, সনদ সহীহ)
.
(৬). রামাদানের রাতে কিয়ামুল লাইল তথা তারাবীহর সালাত আদায় করতেন তিনি। রামাদান মাসে এবং অন্যান্য সময় (রাতে) এগার বা তেরো রাক‘আতের অধিক ছালাত আদায় করতেন না। (সহীহ বুখারী,হা/১১৪৭;সহীহ মুসলিম,হা/৭৩৮; আবূ দাঊদ, হা/১৩৪১)
.
(৭). তিনি অল্প পরিমাণ হলেও সাহরী গ্রহণ করতেন কেননা তিনি বলেছেন, তোমরা সাহরী গ্রহণ কর। কেননা সাহরীতে বরকত রয়েছে’(সহীহ বুখারী, হা/১৯২৩ সহীহ মুসলিম, হা/১০৯৫; মিশকাত, হা/১৯৮২) তিনি অন্য বর্ননায় বলেন, আমাদের ও কিতাবীদের সিয়ামের মধ্যে পার্থক্য হল সাহরী খাওয়া।(সহীহ মুসলিম, হা/১০৯৫; আবূ দাঊদ, হা/২৩৪৩; মিশকাত, হা/১৯৮৩)
.
(৮). তিনি সিয়াম অবস্থায় মেসওয়াক করতেন। তিনি সিয়াম ও সিয়ামের বাহিরে এখানে কোন পার্থক্য করেননি। (সহীহ বুখারী, ১ম খ-, পৃ. ২৫৯,সয়াম’ অধ্যায়-৩০)
.
(৯). রামাদানের রাতে তিনি জুনুবী অবস্থায় ফজর করতেন অথচ তিনি সায়েম এটি প্রমান করে রামাযানের রাত্রে স্ত্রী সহবাস করে পবিত্র না হয়ে সাহরী করা ও পরে গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হয়ে ফজর সালাত আদায় করা বৈধ।(সহীহ বুখারী, হা/১৮২৯, ১৮২৬;সহীহ মুসলিম, হা/১১০৯)
.
(১০). তিনি সিয়াম থাকাবস্থায় গরমের উত্তাপে অথবা তৃষ্ণায় সফরে তিনি কখনো কখনো মাথায় পানি দিতেন। (আবু দাউদ/২৩৬৫; মিশকাত, হা/২০১১, সনদ সহীহ)
.
(১১). তিনি ওযুর সময় কুলি করতেন ও নাকে পানি দিতেন। তবে বেশি ভিতরে দিতেন না এখানে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে কারন তিনি বলেছেন,পরিপূর্ণরূপে ওযু করবে, অঙ্গুলসমূহ খিলাল করবে এবং নাকে উত্তমরূপে পানি পৌঁছাবে, তবে সিয়াম অবস্থায় নয়। (আবু দাউদ/১৪২; মিশকাত, হা/৪০৫, সনদ সহীহ)
.
(১২). তিনি সাহরী-ইফতার না করে একাধারে সিয়াম পালন করতেন, যাকে ‘সিয়ামে বেছাল’ বলা হয়। তবে সেটা তার জন্য খাছ, তাঁর উম্মতের জন্য নয় কারন তিনি বলেছেন, তোমরা ‘সাওমে বিছাল’ পালন করবে না। লোকেরা বলল, আপনি যে সওমে বিছাল করেন? তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদের মত নই। আমাকে পানাহার করানো হয় অথবা বললেন, আমি পানাহার অবস্থায় রাত অতিবাহিত করি’(সহীহ বুখারী, হা/১৯৬১,১৯৬৫)

(১৩). সফর অবস্থায় তিনি কখনো রামাদানের সিয়াম পালন করতেন। তবে কষ্টকর হলে কখনো ছেড়েও দিতেন। কেননা সফর অবস্থায় আল্লাহ ছাড় দিয়েছেন কেউ চাইলে রাখতে পারে আবার ছাড়তেও পারে।(সহীহ বুখারী, হা/৪২৭৯ সহীহ মুসলিম, হা/১১২২; আবূ দাঊদ, হা/২৪০৭)
.
(১৪). তিনি শাওয়ালের চাঁদ দেখে রামাদানের সিয়াম ভঙ্গ করতেন। মেঘের কারণে বা অন্য কারণে চাঁদ দেখা না গেলে রামাযান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করতেন। তিনি বলেছেন,তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম পালন কর এবং চাঁদ দেখে সিয়াম ভঙ্গ কর। আর চাঁদ দেখেই কুরবানী কর। তবে হ্যাঁ, (শা‘বান মাসের ২৯ তারিখে) যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে তোমরা মাসের ৩০ দিন পূর্ণ করে নেবে। তবে দু’জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিলে তোমরা সিয়াম পালন করবে এবং ভঙ্গ করবে।(নাসাঈ, হা/২১১৬, সনদ সহীহ)
.
(১৫). তিনি রামাদানে (লাইলাতুল ক্বদর) ই‘তিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রচেষ্টা চালাতেন তিনি প্রতি রামাযানে ই‘তিকাফ করতেন। ফজরের সালাত শেষে ই‘তিকাফের নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করতেন’(সহীহ বুখারী,হা/২০৪১,২০২৬ সহীহ মুসলিম, হা/১১৬৭)
.
(১৬). তিনি রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান করতেন। তাকে স্বপ্নে কদরের রাত দেখানো হয়েছিল আবার পরে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্বপ্নে আমাকে তা কোন এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং আমি যেন সে রাতে কাদা ও পানির মধ্যে ফজরের সাজদাহ করছি (সহীহ মুসলিম, হা/১১৬৭)
.
(১৭). তিনি ফেরেশতা জিবরীল (আলাইহিস সালাম)-কে রামাদানে কুরআন শুনাতেন রামাদানের সর্বশেষ রাত পর্যন্ত জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং কুররান তেলাওয়াত শুনতেন (সহীহ বুখারী,হা/১৯০২ সহীহ মুসলিম, হা/২৩০৮; মিশকাত, হা/২০৯৮)
.
(১৮). তিনি সবসময় তওবা ও ইস্তেগফার করতেন। তওবা ও ইস্তেগফারের মাস হল রামাদান মাস, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে যাও। কেননা আমি দৈনিক একশ’ বার তওবা করি।(আবূ দাঊদ-১৫১৬,মিশকাত-২৩৫২)
.
(১৯).তিনি সবসময় মানুষের সাথে সদাচারণ করতেন তবে রামাদান মাসে বেশি বেশি দান, সাদাক্বাহ করতেন তিনি ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সব চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রামাদানে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন,
তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/১৯০২ সহীহ মুসলিম, হা/২৩০৮; মিশকাত, হা/২০৯৮)
.
(২০). তিনি সর্বদা বিনয়ী ছিলেন রামাদান মাসে বিনয়ী হওয়া এবং ইবাদতে সাধ্যমত চেষ্টা চালান। তিনি বলেন, হে লোক সকল! আল্লাহর শপথ! আল্লাহর প্রশংসা, আমার রাতটি আমি গাফিলভাবে অতিবাহিত করিনি এবং তোমাদের অবস্থাও আমার নিকট গোপন থাকেনি’। (আবূ দাঊদ, হা/১৩৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৭৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩৪৯, সনদ হাসান সহীহ)
.
(২১). তিনি রামাদান মাসে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন,আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রামাদানের ষোল দিন অতিবাহিত হবার পর আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এ সময় আমাদের কেউ সিয়াম পালন করছিলেন, আবার কেউ তা ছেড়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু এতে ছিয়াম পালনকারী সিয়াম ভঙ্গকারীকে কোন দোষারোপ করেনি এবং সিয়াম ভঙ্গকারীও সিয়াম পালনকারীকে কোন প্রকার দোষারোপ করেনি (সহীহ মুসলিম, হা/১১১৬)
.
(২২). তিনি রামাদানে কিছু আমলের মাধ্যমে ইহুদী-খ্রিস্টানদের বিরোধিতা করতেন। অর্থাৎ দ্রুত ইফতার এবং শেষ সময়ে সাহরী গ্রহণ করতেন।(আবূ দাঊদ, হা/২৩৫৩; ইবনু মাজাহ, হা/১৬৯৭; মিশকাত, হা/১৯৯৫)
.
(২৩). তিনি শেষ বয়সে এসে রামাদানে সৎ কাজগুলো বাড়িয়ে দিতেন। যেমন, যে বছর তিনি দুনিয়া থেকে চলে যান, সে বছর জিবরীল আমীনকে ২ বার কুরআন শুনান। (সহীহ বুখারী, হা/৩৬২৪, ৪৯৯৮)
.
(২৪). তিনি মানুষদেরকে রামাদান মাস ও সিয়াম সম্পর্কে বিভিন্ন মাসয়ালা মাসায়েল, আদব, শিষ্ঠাচার শিক্ষা দিতেন।(তিরমিযী, হা/৩৫১৩; মিশকাত, হা/২০৯১, সনদ সহীহ। সহীহ মুসলিম, হা/৩৩৫)
.
(২৫). তিনি রামাদানের শেষ দশকে তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন’(সহীহ বুখারী, হা/২০২৪; মিশকাত, হা/২০৯০)
.
(২৬). তিনি পরিবার-পরিজনকে সৎ ও তাক্বওয়ার কাজে উৎসাহিত করতেন ও তাদেরকে সংশ্লিষ্ট করতেন। তিনি রামাদানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রামাযানের শেষ দশকে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান কর’।(সহীহ বুখারী, হা/২০২০, ২০২৪; তিরমিযী, হা/৭৯৫, ৮০৬)
.
(২৭). তিনি তার স্ত্রী-পরিবারকে সাথে নিয়ে রামাদানের ইবাদতে শামিল করতেন। যেমন ক্বিয়ামুল লাইল, ই‘তিকাফ, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তাঁর কোন এক স্ত্রী ইস্তিহাযা অবস্থায় ই’তিকাফ করেন। (সহীহ বুখারী, হা/৩০৯; তিরমিযী, হা/৮০৬)
.
(২৮). তিনি তার স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ করা ও তাদের প্রতি আন্তরিক হতেন ।তিনি সব সময় তাঁর স্ত্রীদের নিকটে অতীব প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তাদের সাথে উত্তম আচরণ করতেন, রামাযান মাসেও তাদের খোঁজ-খবর ও উত্তম মু‘আমালাত বজায় রাখতেন। (সহীহ বুখারী, হা/২০৩৩; ফাৎহুল বারী শারহু সহীহ বুখারী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩২৪; আল-মুনতাকা লিল বাজী, পৃ. ২)
.
(২৯). তিনি যাকাতুল ফিৎর আদায় করতেন এবং অন্যদের করতে উৎসাহিত করতেন।যাকাতুল ফিৎর একটি অন্যতম ফরয ইবাদত। যা ধনী-গরীব, পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সকলের উপরে তিনি ফরয করেছেন।যেমন আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, আমরা নবী ﷺ এর যুগে এক সা‘ খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করতাম। (সহীহ বুখারী, হা/১৫০৮; সহীহ মুসলিম, হা/৯৮৫)
.
(৩০). তিনি ঈদুল ফিতরের দিন সকাল থেকে তাকবীর পাঠ করবেন তাকবীর হল

اَللہُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ لَا إِ لٰہَ إِلَّا اللهَ وَ اللهُ أَكْبَرُ اَللهُ أَكْبَرُ وَ لِلهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ : ‘আল্ল-হু আকবার আল্লা-হু আকবার লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লাহু আকবার আল্লা-হু আকবার ওয়া লিল্লা-হিল হাম্দ’(মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হা/৫৬৯৭; সনদ সহীহ, ইরওয়াউল গালীল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১২৫)
.
(৩১). তিনি ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টি জাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খেতেন তিনি বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত আহার করতেন।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৯৫৩, তিরমিজী, হাদীস নং-৫৪২, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৬০৩)
.
(৩২). তিনি পায়ে হেটে ঈদগাহে যেতেন। (আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৪৩)
.
(৩৩). তিনি ঈদুল আযহায় সূর্য এক ‘নেযা’ পরিমাণ ও ঈদুল ফিৎরে দুই ‘নেযা’ পরিমাণ উঠার পরে ঈদের সালাত আদায় করতেন। এক ‘নেযা’ বা বর্শার দৈর্ঘ্য হ’ল তিন মিটার বা সাড়ে ছয় হাত (আওনুল মা‘বূদ শরহ সুনানে আবুদাঊদ ৩/৪৮৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৮ পৃঃ)
.
(৩৪). তিনি ১২ তাকবীরে ঈদের সালাত আদায় করতেন। (আবূ দাঊদ, হা/১১৫১; ইবনু মাজাহ, হা/১২৮০;সনদ হাসান) পক্ষান্তরে,৬ তাকবীরের পক্ষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সরাসরি কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি তবে সাহাবিদের থেকে দলিল পাওয়া যায় সেই হিসাবে ৬ তাকবীরে ও ঈদের সালাত আদায় করা জায়েজ।
.
(৩৫). তিনি ঈদের সালাতে প্রথম রাকআতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’ (সূরা আ’লা) এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ‘হাল আতাকা হাদীসুল গাসিয়াহ্’ (সূরা গাশিয়াহ) পাঠ করতেন।(সুনানে নাসাঈ, হাদিস ১৫৫০ সনদ সহীহ-আলবানী) অন্য বর্ণনায় ১ম রাকআতে সূরা ক্বাফ এবং ২য় রাকআতে সূরা ইক্বতারাবতিস্ সা’আহ্’ (সূরা ক্বামার) পড়ার কথাও এসেছে। (নাসাঈঃ হাদিস ১৫৪৯, সনদ সহীহ-আলবানী) উপরোক্ত সূরাগুলো জানা না থাকলে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়লেও সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।
.
(৩৬). তিনি ঈদায়নের সালাত শেষে দাঁড়িয়ে একটি খুৎবা প্রদান করতেন। (সহীহ বুখারী, হা/৯৭৮,ইফাবা হা/৯২৭, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২১৮-১৯); সহীহ মুসলিম, হা/৮৮৫; মিশকাত, হা/১৪২৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩৪৫, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২১০) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কি রাসূল (ﷺ)-এর সাথে ঈদের ছালাতে উপস্থিত ছিলেন? তিনি বলেলেন, হ্যাঁ, ছিলাম। তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) ঈদের ছালাতের আযান ও ইক্বামতের কথা উল্লেখ করেননি। এরপর তিনি মহিলাদের নিকট আসলেন, তাদের ওয়ায নছীহত করলেন, দান-খায়রাত করার জন্য উৎসাহিত করলেন। (সহীহ বুখারী, হা/৯৬৩-৯৭৮; মুসলিম, হা/৮৮৫; মিশকাত, হা/১৪২৯)
.
(৩৭). তিনি যে রাস্তায় ঈদগাতে যেতেন, সম্ভব হলে ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। (বুখারী, হাদীস নং-৯৮৬)

পরিশেষে, আল্লাহ আমাদের রামাদান মাসের বরকত, রহমত ও মাগফিরাতের সুযোগ লাভে ধন্য করুন এবং আমাদেরকে সঠিকভাবে রামাযান মাসের সবগুলো সিয়াম পালনের তাওফীক দান করুন- আমীন। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি
#Jewelmahmudsalafi

Share: