প্রশ্ন: জনৈক আলেম বলেছেন, কবরে কোন প্রশ্ন করা হবেনা। কেননা এটি কুরআনের কোথাও নেই, যে হাদীসগুলোতে কবরে মুনকার- নাকীরের প্রশ্ন করার কথা বলা হয়েছে সেই হাদীস গুলো কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক। উক্ত আলেমের বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: উক্ত আলেমদের বক্তব্য সঠিক নয়। হয় এটি তার মনগড়া কথা অথবা বুঝের ভুল।কেউ যদি এই কথা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলে যে,কবরে মুসলিম,কাফের,মুনাফিক কাউকে কোন প্রশ্ন করা হবেনা তাহলে এটি কুফরি হবে।কেননা কবরের প্রশ্ন করা হবে যা কমপক্ষে ৪০ জন সাহাবী থেকে একাধিক বিশুদ্ধ সনদের মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীস এবং ওলামায়ে কেরামদের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।সুতরাং কেউ যদি সেটা অস্বীকার করে তাহলে নিঃসন্দেহে কুফুরি হবে।আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের ঐক্যমতে হাদীস অস্বীকার করা বড় কুফরি, এটি ঈমান ভঙ্গের একটি কারন। (দেখুন আল-ওয়াসিয়্যাতুল কুবরা লি ইবনি তাইমিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩১৫ ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৯৪ ও ৫ম খণ্ড, পৃ. ১৯-২০ ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৯, ফৎওয়া নং-১১৫১২৫)
.
ইসলামী শরী‘আতের প্রধান দু’টি উৎস হল,পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদীস, যা মুসলিম মিল্লাতের মূল সম্পদ। প্রত্যেক মুসলিমের জানা আবশ্যক যে, কুরআনে কারীম ও সহীহ হাদীস দু’টিই আল্লাহ তা‘আলার ওহী। উভয়ের উপর সমানভাবে ঈমান আনয়ন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। কুরআনকে বলা হয় অহিয়ে মাতলূ, যা পাঠ করা হয়। আর হাদীসকে বলা হয় অহিয়ে গায়রে মাতলূ। দু’টিই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া বিধান। [সূরা আন-নাজম : ৩-৪]
তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম হাদীসকে আল্লাহ প্রেরিত ‘ওহী’ হিসাবেই বিশ্বাস করতেন।[সহীহ বুখারী, হা/৭৩১০; মিশকাত, হা/১৭৫৩] তাই হাদীসের প্রতি আমল না করে কেউ মুমিন হতে পারে না। এজন্য প্রত্যেক মুসলিমকে হাদীস ও তার সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়া অপরিহার্য।[সূরা আল ‘ইমরান : ৩১; সূরা আন-নিসা : ৬৫, ৮০; সূরা আল-হাশর : ৭]
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,আর তিনি মনগড়া কোন কথা বলেন না। তা তো অহী, যা তাঁর প্রতি অহী করা হয়’ [সূরা আন-নাজম : ৩-৪]
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমাত অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না, তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর তোমার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে’ [সূরা আন-নিসা : ১১৩; সূরা আলি ‘ইমরান : ১৬৪]
.
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম ত্বাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমি কুরআনুল কারীমের অগণিত বিশেষজ্ঞের নিকটে শুনেছি, তাঁরা বলেছেন, এখানে ‘কিতাব’ বলতে কুরআনুল কারীমকে বুঝানো হয়েছে আর ‘হিকমাত’ বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাতকে বুঝানো হয়েছে’ [আহকামুল কুরআন, ১/২৮ পৃ.; আর-রিসালাহ, পৃ. ৪৫; তাফসীরে ত্বাবারী, ১/৫৫৭-৫৫৮ পৃ.]
.
তাই ইসলামী শরীয়তের কোন বিধান পবিত্র কুরআনে সরাসরি না থাকলেই যে সেটা মানা যাবেনা এ ধারনা সঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, এতে কোন সন্দেহ নেই যে পবিত্র কুরআনে মূলত শরী‘আতের মূল নীতিমালা বর্ণনা করা হয়েছে এবং কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাও বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু নীতিমালা বা বিধি-বিধানের নিয়মনীতি, পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য, আকার-আকৃতি, ধরণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে কোন আলোচনা করা হয়নি। যদি তাই হয় তাহলে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের রাক‘আত সংখ্যা, উট, গরু, ছাগল, স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাতের নিসাব বা পরিমাণ, সিয়ামের বিধি-বিধান, হজ্জের নিয়ম-কানুন ইত্যাদি কোথায় বলা হয়েছে? যদি রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত না থাকত, তাহলে আমরা এগুলো কোথায় থেকে জানতে পারতাম। সেই জন্যই ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাত-ই হল, আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের ব্যাখ্যাকারী’।(রিসালাতুশ শাফিঈ, ১ম খ-, পৃ. ৭৯; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৯৩১১১)
.
এবার আসি মূলকথায়,কুরআন সুন্নাহর বক্তব্য অনুসারে মৃত্যুর পর কেবলমাত্র আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী শহীদগণ,মুসলিম দেশের সীমান্ত প্রহরী মুজাহিদ প্রমুখ কবরে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন না এবং কবরের যাবতীয় ফিৎনা থেকে রক্ষা পাবেন।(নাসাঈ হা/২০৫৩;সহীহুল জামে‘ হা/৪৪৯৩; সহীহ আত-তারগীব হা/১৩৮০)।আবার কতিপয় ওলামাদের মতে ,নবী-রাসূলগণকেও কবরে এই তিনটি প্রশ্ন করা হবে না। কেননা, তাদের উম্মতদেরকে তাদের সম্পর্কেই প্রশ্ন করা হবে। এছাড়া পৃথিবীর যত মানুষ আছে মুসলিম অমুসলিম,কাফের,মুশরিক মুনাফিক ইত্যাদি সবাই কবরের প্রশ্নের সম্মুখীন হবে এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বীদা। পরকালীন জীবনের সর্বপ্রথম মনযিল কবর।যেনে রাখা ভাল যে,কবর বলতে শুধু সাড়ে তিন হাত মাটি কে বোঝায় না কবর বলতে বারযাখী জীবনে পদার্পণ করা, চাই সে মাটিতে হোক কিংবা মাছের পেটে হোক অথবা আগুনেই পুড়ে যাক মোটকথা মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর তার বারযাখী জীবন শুরু হয়ে যায়। সে যদি শাস্তির উপযুক্ত হয় তাহলে যে কোন অবস্থাতেই সে শাস্তি পাবে এটা আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। এক্ষেত্রে যদি তাকে কবর দেয়া না হয় অথবা হিংস্র জন্তু জানোয়ার তাকে খেয়ে ফেলে বা পুড়ে ছাই হয়ে বাতাসে উড়ে যায় কিংবা পানিতে ডুবে মারা যায় তারপরও তার রূহ ও শরীরে আযাব পৌঁছে যাবে সেটি মাটির কবরে হ’তে পারে কিংবা অন্যত্র, যা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর এখতিয়ারে। এটি ঈমান বিল গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। যে জগতের খবরাখবর ইহজগতে কোনভাবে অনুভূত হওয়ার নয়। কাজেই কুরআন-হাদীসে বারযাখী জীবন সম্পর্কে আমাদেরকে যা অবহিত করা হয়েছে তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে নেয়াই হবে ঈমান বিল গায়েবের দাবী। এটা সুনিশ্চিত যে, প্রত্যেক মানুষকেই কবরে প্রশ্নোত্তরের সম্মুখীন হ’তে হবে [বুখারী, মিশকাত হা/১২৬ ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৩৭৬৯০৬)।
.
মহান আল্লাহ বলেন,তবে কীভাবে সেটা হবে তা আল্লাহই সম্যক অবগত। এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী, ‘যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে অটল বাক্য দ্বারা সুদৃঢ় রাখবেন ইহজীবনে এবং পরজীবনে’
[সূরা ইবরাহীম ২৭] এ আয়াতটি কবরের ফিতনা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।মৃত্যুর পর সৎ বান্দাদের রূহ ইল্লিয়ীনে এবং পাপীদের রূহ সিজ্জীনে অবস্থান করে। অতঃপর তাদের আমল অনুযায়ী তাদের রূহের উপর শান্তি অথবা শাস্তি প্রদান করা হয় (সূরা গাফের ৪০/৪৫-৪৬; আবুদাঊদ হা/৪৭৫৫; মিশকাত হা/১৩১)। মানুষ তার মৃত্যুর পর প্রথম পরীক্ষার সম্মুখীন হবে কবরে। কবরে কেউ যদি মুক্তি পায়, তাহলে সে পরবর্তী সকল জায়গায় মুক্তি পাবে। সেকারণ লাশ দাফনের ব্যস্ততা শেষ হওয়ার পর রাসূল (সাঃ) বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ় থাকার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ কর। কেননা এখন সে জিজ্ঞাসিত হচ্ছে’ (আবুদাঊদ হা/৩২২১; মিশকাত হা/১৩৩;সহীহুল জামে‘ হা/৯৪৫)।
.
রাসূল (সাঃ) কবরের আযাব হতে পরিত্রাণ চাইতেন এবং তাঁর সাহাবীগণকে কবরের আযাব থেকে পরিত্রাণ চাওয়ার নির্দেশ দিতেন। হাদীসে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা এক ইয়াহূদী মহিলা তার নিকট আসল এবং কবরের আযাবের কথা উত্থাপন করে বলল, হে আয়েশা (রাঃ)! আল্লাহ আপনাকে কবরের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। অতঃপর আয়েশা (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-কে কবরের শাস্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ, কবরের শাস্তি সত্য’। আয়েশা (সাঃ) বলেন, তারপর হতে আমি রাসূল (সাঃ)-কে যখনই সালাত আদায় করতে দেখেছি, তখনই তাঁকে কবরের আযাব হতে পরিত্রাণ চাইতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী ৮৩৩, মুসলিম ৫৮৯, আবূ দাঊদ ৮৮০, নাসায়ী ১৩০৯, আহমাদ ২৪৫৭৮।মিশকাত হা/৯৩৯-৯৪০)।
.
প্রতিটি মানুষকে কবরে তিনটি প্রশ্ন করা হবে উত্তর দিতে পারলে চতুর্থ আরেকটি প্রশ্ন করা হবে : কবরে বান্দাকে তিনটি বিশেষ প্রশ্ন করা হবে। তবে কবরের প্রশ্ন ক্বিয়ামতের দিনের প্রশ্ন হ’তে ভিন্ন। বারা বিন আযিব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কবরে বান্দাকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। এক. তোমার রব কে? তারপর তাকে দ্বিতীয় প্রশ্ন করা হবে, তোমার দ্বীন কি? অতঃপর তৃতীয় প্রশ্নটি করা হবে, এই লোকটি কে ছিলেন, যাকে তোমাদের নিকটে প্রেরণ করা হয়েছিল? বান্দা যদি মুমিন হয়, তাহ’লে এগুলির যথাযথ জওয়াব দিতে পারবে। আর যদি বেঈমান বা কাফির হয়, তাহ’লে বলবে, আফসোস আমি কিছুই জানি না’।(আবূদাউদ হা/৪৪৫৩; তিরমিযী হা/৩১২০, সনদ সহীহ।)
.
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার স্থায়ী স্থানটি সকাল-সন্ধায় তার সামনে পেশ করা হয়। সে যদি জান্নাতী হয়, তাহ’লে জান্নাতের স্থান তার সামনে পেশ করা হয়। আর যদি জাহান্নামী হয়, তাহ’লে জাহান্নামের স্থান তার সামনে পেশ করা হয় এবং বলা হয় এ হচ্ছে তোমার আসল স্থান। ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তোমাকে এখানেই পাঠাবেন।’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১২০)।
.
আনাস (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মাইয়েতকে দাফন শেষে যখন তার পরিবারবর্গ ও সঙ্গীসাথীরা ফিরে যায় এবং তাদের জুতার আওয়াজ মাইয়েত অবশ্যই শুনতে থাকে, তখন দু’জন ফেরেশতা আসেন ও তাকে উঠিয়ে বসান।… অতঃপর যদি সে মুনাফিক ও কাফের হয়, তখন তাকে এই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে সে বলবে, আমি জানি না। লোকেরা যা বলত, আমিও তাই বলতাম। তাকে বলা হবে, তুমি তোমার জ্ঞান দিয়েও বুঝনি। পাঠ করেও জানতে চেষ্টা করোনি..(বুখারী হা/১৩৭৪; মুসলিম হা/২৮৭০; মিশকাত হা/১২৬) উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কবরে মাইয়েতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুনর্জীবিত করা হবে। এই কবর মাটিতে হৌক বা অন্যত্র হৌক। কেননা কবর অর্থ মৃত্যুর পরবর্তী বারখাযী জীবন। যা দৃশ্যমান জগতের অন্তরালে থাকে। (মির‘আত ১/২১৭, ২২০)।
.
আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, অতঃপর সে যদি মন্দ লোক হয়, তাহ’লে তাকে বসানো হবে ভীত সন্ত্রস্ত ও দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায়। বলা হবে তুমি কোন দ্বীনের উপরে ছিলে? সে বলবে, আমি জানি না। বলা হবে, এই ব্যক্তি কে? সে বলবে, লোকদের যা বলতে শুনেছি তাই বলতাম। অতঃপর তাকে জান্নাতের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবে। তখন সে তার সুখ-সম্ভার দেখতে থাকবে। বলা হবে, তুমি দেখ যা তোমার থেকে আল্লাহ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অতঃপর তাকে জাহান্নামের দিকের দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে সেখানকার আগুনের ফুলকি সমূহ দেখবে, যা একে অপরকে দলিত-মথিত করছে। তখন তাকে বলা হবে, এটাই তোমার ঠিকানা। যে বিষয়ে তুমি সন্দেহের উপরে ছিলে এবং সন্দেহের উপরেই তুমি মরেছ। আর এই সন্দেহের উপরেই আল্লাহ চাইলে তুমি পুনরুত্থিত হবে।(ইবনু মাজাহ হা/৪২৬৮; মিশকাত হা/১৩৯)
.
বারা বিন ‘আযেব (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, সে তিনটি প্রশ্নেই বলবে, হায় হায় আমি জানি না। তখন আকাশ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা দিয়ে বলবেন, সে মিথ্যা বলেছে। অতএব তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও। জাহান্নামের পোষাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নামের দিকের একটি দরজা খুলে দাও। অতঃপর সেখান থেকে প্রচন্ড গরম হাওয়া তার কবরে প্রবাহিত হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর তার কবরকে তার উপর এমন সংকীর্ণ করা হবে যে, প্রচন্ড চাপে একদিকের পাঁজর অন্যদিকে প্রবেশ করবে। অতঃপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে লোহার বড় হাতুড়ি সহ নিযুক্ত করা হবে, যদি ঐ হাতুড়ি পাহাড়ের উপরে মারা হ’ত, তাহ’লে তা মাটি হয়ে যেত। অতঃপর সে তাকে মারতে থাকবে। এসময় তার বিকট চিৎকার জ্বিন-ইনসান ব্যতীত পূর্ব ও পশ্চিমের সকল সৃষ্টিজগত শুনতে পাবে। অতঃপর সে মাটি হয়ে যাবে, আবার বেঁচে উঠবে’।(আবুদাউদ হা/৪৭৫৩; বুখারী হা/১৩৭৪; মিশকাত হা/১৩১, ১২৬)
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, এভাবেই সে শাস্তি পেতে থাকবে, যতদিন না আল্লাহ তাকে পুনরুত্থান দিবসে তার শয্যাস্থান থেকে উঠান।(তিরমিযী হা/১০৭১; মিশকাত হা/১৩০)
.
উল্লেখ যে,কবরের আযাব শারীরিকভাবে কিংবা আত্মিকভাবে হবে এ প্রশ্নে ওলামায়ে সালাফের মাঝে মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তবে সঠিক কথা হ’ল- কবরের আযাব আত্মা ও শরীর উভয়ের উপরই হবে। শরীর থেকে রূহ বেরিয়ে যাওয়ার পর তা আযাব কিংবা নে‘মত ভোগ করতে থাকবে। আর নির্দিষ্ট সময়ে তা শরীরের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে শরীরও শাস্তির সম্মুখীন হবে; যার প্রমাণ হাদীসে পাওয়া যায় এবং যার নিদর্শন বাহ্যতঃই অনেক মৃত ব্যক্তির কবরে লক্ষ্য করা যায়। ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ ও জমহূর ওলামায়ে সালাফ অনুরূপ মন্তব্য করেছেন।(ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিয়াহ, পৃঃ ১/৪৪৯)
.
পরিশেষে, মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে বেঁচে থাকা অবস্থায় কবরের প্রশ্ন সমূহের উত্তর দেওয়ার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করেন এবং কবরের ভয়াবহ আজাব থেকে রক্ষা করেন এবং আমাদেরকে দ্বীনের ওপরে চলা এবং খাঁটি মুসলিম ও মুমিন হয়ে মৃত্যুবরণ করার তাওফীক্ব দান করেন। সৎ আমল করা এবং কবর সহ পরকালের সকল স্তরে হিসাব সহজ করে দেন। ক্বিয়ামতের দিন যাবতীয় ফিৎনা থেকে আমাদের রক্ষা করে পুলসিরাত পার হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন। তার অশেষ রহমতে আমাদেরকে তাঁর জান্নাত লাভে ধন্য করেন। আমীন।
____________________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।