হে আল্লাহ! আমি আপনার অসন্তুষ্টি হতে আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার কাছেই আশ্রয় চাই।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: মহান আল্লাহর নিকট বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের যতগুলো মাধ্যম রয়েছে তন্মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হল সালাত। ক্বিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে তার সালাতের।সালাতের হিসাব সঠিক হলে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে। আর সালাতের হিসাব বাতিল হলে তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে। সালাত প্রথমতঃ দুই ভাগে বিভক্ত যথা- ফরয ও নফল। ফরয ব্যতীত বাকী সকল সালাতই নফল। নফল সালাতের মাধ্যমে বান্দার ফরয সালাতের ঘাটতি পূর্ণ হয়। এটি এমন এক মর্যাদা ও ফযীলতপূর্ণ ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মিত হয়। আলোচ্য পর্বে যে দু’আটি সম্পর্কে আলোচনা করবো সেটি রাসূল (ﷺ) বিতর সালাতে পাঠ করতেন। তিনি (ﷺ) কোন সময় দু’আটি পাঠ করতেন তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে, কেউ বলেছেন বিতির সালাতের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ দরুদ পড়ার পর পাঠ করতেন। অন্যরা বলেছেন, সালাম ফিরিয়ে সালাতের স্থানে বসা অবস্থায় পড়তেন, আবার কেউ বলেছেন,রুকু থেকে দাড়িয়ে কুনুতে এই দু’আটি পাঠ করতেন। যেহেতু রাসূল (ﷺ) কখন পড়তেন বিষয়টি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে, তাই একদল সালাফ তিনটি স্থানই বেছে নিয়েছেন অর্থাৎ চাইলে বিতিরের শেষ বৈঠকে সালাম ফেরানোর পূর্বে বা সালাম ফেরানোর পরে পড়া অথবা কুনুতে পড়া যাবে।(বিস্তারিত জানতে ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৩৫৭৩৬) হাদীসটি বর্ননা করেছেন প্রখ্যাত সাহাবী আলী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৪০ হি.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিতর সলাত শেষে বলতেন,
“ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَأَعُوذُ بِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ ”
মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবি রিদ্বাকা মিন সাখাতিক। ওয়া বিমু’আফাতিকা মিন ‘উক্বুবাতিক। ওয়া ‘আউযুবিকা মিনকা। লা উহসী সানাআন ‘আলাইক। আনতা কামা আসনাইতা ‘আলা নাফসিক।”(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ- “হে আল্লাহ! আমি আপনার অসন্তুষ্টি হতে আশ্রয় চাই আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে। আপনার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই আপনার ক্ষমার মাধ্যমে। আপনার থেকে আপনার কাছেই আশ্রয় চাই। আপনার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পারব না। আপনি সেই প্রশংসার যোগ্য নিজের প্রশংসা আপনি নিজে যেভাবে করেছেন।” (মুসনাদে আহমাদ হা/৭৫১,আবু দাঊদ হা/ ১৪২৭, আত তিরমিযী হা/ ৩৫৬৬, নাসায়ী হা/ ১৭৪৭, ইবনু মাজাহ হা/ ১১৭৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম হা/ ১১৫০, আলবানী, ইরওয়াহ হা/ ৪৩০, মিশকাত ১২৭৬ হাদীসটি বিশুদ্ধ।
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন—
.
“ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ
(আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবি রিদ্বাকা মিন সাখাতিক)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার অসন্তুষ্টি হতে আশ্রয় চাই আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে।
.
وَأَعُوذُ بِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ
(ওয়া বিমু’আফাতিকা মিন ‘উক্বুবাতিক)।
অর্থ: এবং আপনার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই আপনার ক্ষমার মাধ্যমে।
.
وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ
(ওয়া ‘আউযুবিকা মিনকা)
অর্থ: আর আপনার থেকে আপনার কাছেই আশ্রয় চাই।
.
لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ
(লা উহসী সানাআন ‘আলাইক)
অর্থ: আপনার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পারব না।
.
أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ
(আনতা কামা আসনাইতা ‘আলা নাফসিক) অর্থ: আপনি সেই প্রশংসার যোগ্য নিজের প্রশংসা আপনি নিজে যেভাবে করেছেন।
.
সন্মানিত পাঠকবৃন্দ! কি চমৎকার একটি দু’আ।দু‘আটির অর্থের দিকে লক্ষ করলেই এর বিরাট গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায় দু’আটিতে মহান আল্লাহর কাছে তার গুণাবলীর মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়েছে। তাই প্রত্যেকের উচিত দু’আটি মুখস্থ করা নেওয়া এবং বিতির সালাতে কুনুত হিসেবে বা দু’আয় মাসুরা হিসেবে কিংবা সালাত শেষে যিকির হিসেবে পড়তে পারেন। আবার মাঝে মধ্যে অন্য সময়ও পড়তে পারেন ইনশাআল্লাহ। এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।