আপনার যা কিছু প্রয়োজন,আপনার রবের কাছে চান। আল্লাহর ভাণ্ডার পরিপূর্ণ; খরচ করলে সেটা কমে না এবং দিলে বাড়ে না।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের দোয়া কবুল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; যদি তারা একনিষ্ঠভাবে দোয়া করে এবং নিজের দৈন্যতা প্রকাশ করে। তিনি বলেন: “তোমাদের প্রভু বলেন; তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”।(সূরা গাফের, আয়াত: ৬০) আল্লাহ্র কাছে যে ভাণ্ডার ও দান রয়েছে এখানে আলোচনার বিষয়টি সেটা নয়।যেহেতু আল্লাহ্র ভাণ্ডার পরিপূর্ণ; খরচ করলে সেটা কমে না এবং দিলে বাড়ে না। কিংবা এটি আল্লাহ্র দেয়া প্রতিশ্রুতির সাথেও সম্পৃক্ত নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। বরং এখানে মুখ্য বিষয় হল: বান্দা নিজেকে দাসত্ব ও আশার মর্যাদায় পেশ করা, দোয়ার স্বরূপ বাস্তবায়ন ও দোয়া করা; ঠিক আল্লাহ্তাঁর বান্দাদেরকে যেভাবে পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন; এবং দোয়া কবুলের প্রতিবন্ধকতাগুলো ও আল্লাহ্র পথ থেকে বিচ্যুতকারী বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা।দোয়াটাই আল্লাহ্র ইবাদত; বরঞ্চ মহান ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম। যে কোন ইবাদতেরই কিছু আদব, শর্ত ও বিশেষ কাঠামো রয়েছে; বান্দার জন্য সেগুলো মান্য করা মুস্তাহাব। আর প্রত্যেক কারণের বিপরীতে কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকে; যা কারণের ফলাফলকে বাধাগ্রস্ত করে কিংবা কারণের প্রভাবকে দুর্বল করে দেয়।
.
রাসূল ﷺ এর সাহাবী আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন: “যখন তোমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া কর তখন তোমরা তোমাদের চাওয়া পেশ কর। কেননা আল্লাহ্র কাছে যা আছে কোন কিছু (দান) সেটাকে ফুরিয়ে ফেলার নয়। যখন তোমরা দোয়া কর তখন দৃঢ়ভাবে কর। নিশ্চয় আল্লাহ্কে বাধ্য করার কেউ নেই।(জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম: খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ৪৮)
.
উক্ত হাদীসের ব্যাখায় ইবনে বাত্তাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:“এ হাদিসে দলিল রয়েছে যে,মুমিনের জন্য বাঞ্চনীয় হল জোরালোভাবে দোয়া পেশ করা, দোয়া কবুলের ব্যাপারে আশান্বিত থাকা এবং আল্লাহ্র রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া। কেননা সে তো মহানুভবকে ডাকছে। এই মর্মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণিত আছে।
(শারহু সহিহিল বুখারী: ১০/৯৯)
.
অপর বর্ননায় আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কোন মুসলিম যদি দোয়া করে এবং সে দোয়াতে কোন পাপ কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের বিষয় না থাকে তাহলে আল্লাহ্তাকে তিনটি বিষয়ের কোন একটি দিতে পারেন: অবিলম্বে তার দোয়া কবুল হওয়া, কিংবা তার দোয়াটিকে তার জন্য আখিরাতে পুঞ্জীভুত করে রাখা কিংবা অনুরূপ কোন অনিষ্ট তার থেকে দূরীভুত করা। তারা (সাহাবীরা) বলল: তাহলে আমরা প্রচুর দোয়া করব? তিনি বললেন: আল্লাহ্ও অধিক দাতা।”(মুসনাদে আহমাদ:হা/১০৭৪৯ সহিহুত তারগীব ওয়াত তারহীব: হা/১৬৩৩ বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি সহীহ বলেছেন)
এই হাদিসের ব্যাখায় হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ)বলেন: “প্রত্যেক দোয়াকারীর দোয়াই কবুল হয়। তবে কবুলের প্রকার বিভিন্ন: কখনও দোয়াকৃত বিষয়টি দেয়া হতে পারে, কখনও এর বিনিময়ে অন্যটি দেয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে সহিহ হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে।”(ফাতহুল বারী: খন্ড: ১১পৃষ্ঠা: ৯৫)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, ব্যক্তির কর্তব্য হল অনুনয়ের সাথে বারবার দোয়াটি পেশ করা ও আল্লাহ্র প্রতি সুধারণা রাখা এবং এ কথা জেনে রাখা যে, আল্লাহ্হচ্ছেন প্রজ্ঞাবান ও জ্ঞানী। তিনি তাঁর প্রজ্ঞাবলে কখনও দ্রুত সাড়া দেন; আবার কখনও বিলম্বে সাড়া দেন। আবার কখনও কখনও দোয়াকারী যা চেয়েছে এর চেয়ে উত্তমটি তাকে দান করেন।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/৯; পৃষ্ঠা: ৩৫৩)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন: দোয়াকারী কি দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিবে?
.
জবাব: যদি এর দ্বারা উদ্দেশ্য করা হয় আল্লাহ্র সক্ষমতাকে তাহলে আল্লাহ্তাআলা দোয়া কবুল করতে সক্ষম এ দৃঢ়তা ব্যক্ত করা আবশ্যক। আল্লাহ্তাআলা বলেন: “তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”। পক্ষান্তরে, আপনার নিজের দোয়া কবুল হওয়া: আপনার মাঝে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়েছে সে বিবেচনা থেকে কিংবা দোয়া কবুল হওয়ার কারণগুলো পূর্ণ না হওয়ার দিক থেকে আপনি দোয়া কবুলের ব্যাপারে আশংকায় থাকতে পারেন। তদুপরি আপনার উচিত আল্লাহ্র প্রতি সুধারণা রাখা। কেননা আল্লাহ্তাআলা বলেছেন: “তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”। যিনি শুরুতে আপনাকে দোয়া করার তাওফিক দিয়েছেন তিনিই শেষে দোয়া কবুল করে আপনার প্রতি অনুগ্রহ করবেন। বিশেষতঃ ব্যক্তি যদি দোয়া কবুল হওয়ার কারণগুলো বাস্তবায়ন করে এবং প্রতিবন্ধকতাগুলো থেকে বেঁচে থাকে। প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে রয়েছে দোয়াতে সীমালঙ্ঘন করা; যেমন কোন পাপ কাজের কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া করা…।[উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল খন্ড: ১০ পৃষ্ঠা: ৯১৮ এবং ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২১২৬২৯)
(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।