আক্বীকার দিন গণনা শুরু করব কীভাবে? ধরুন একটি শিশু বৃহস্পতিবার রাতে জন্মগ্রহন করল তাহলে তার আক্কীকা কোন দিন হবে?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: ইসলামি শরীয়তের যেসব হুকুম আহকাম দিন-তারিখ,মাস অথবা বছরের সঙ্গে সম্পৃক্ত; সেগুলো চাঁদের হিসাবে গণনা করতে হয়। আক্বীকা ও তেমনি একটি শরীয় বিধান এটি সন্তান জন্মের সপ্তম দিন করতে হয়।কারন রাসূল ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক শিশু তার আকীকার সাথে বন্ধক থাকে। অতএব জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবহ করতে হয়, নাম রাখতে হয় ও তার মাথা মুন্ডন করতে হয়।(আবুদাউদ হা/২৮৩৯; ইবনু মাজাহ হা/৩১৬৫; মিশকাত হা/৪১৫৩) অপর বর্ননায় উম্মু কুরয (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (আক্বীকাহ) ছেলের পক্ষ থেকে সমবয়স্ক দু’টি বকরী এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একট বকরী।(আবূ দাউদ হা/২৮৩৬; মুসনাদ আহমদ হা/২৭৪০৯)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, আমাদের সঙ্গীগন বলেছেনঃ সপ্তম দিনে আক্বীকা করা সুন্নত এবং এটি নিয়ে আলেমদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য সম্পর্কে আমরা জানি না। সপ্তম দিনে আক্বীকা করা মুস্তাহাব। এর প্রমাণ হল সামুরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর হাদিস, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,প্রত্যেক শিশু তার আকীকার সাথে বন্ধক থাকে। অতএব জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবহ করতে হয়, নাম রাখতে হয় ও তার মাথা মুন্ডন করতে হয়’ (আবুদাউদ হা/২৮৩৯; ইবনু মাজাহ হা/৩১৬৫; মিশকাত হা/৪১৫৩ আল-মুগনী খন্ড: ৯ পৃষ্ঠা: ৩৬৪)
.
সুতরাং শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ৭ম দিনে আক্বীকা করতে হলে চাঁদের হিসাব অনুযায়ী করতে হবে। আর চাঁদের হিসাবে দিন-তারিখ সূর্যাস্তের পর থেকেই শুরু হয়।অতএব কোনো সন্তান যদি বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর জন্ম নেয় তবে তার অর্থ হলো সে শুক্রবার জন্ম নিল। সে ক্ষেত্রে ৭ম দিন গণনা শুরু হবে শুক্রবার থেকে বৃহস্পতিবার থেকে নয়। আর চাঁদের এ হিসাব অনুযায়ী (আক্বীকার জন্য নির্ধারিত) সপ্তম দিন হবে পরের বৃহস্পতিবার। যদি কেউ বৃহস্পতিবারকে প্রথম দিন ধরে ৭ম দিন গণণা করে থাকে তবে দিনটি হবে পরের বুধবার। যা চাঁদের হিসাবে ভুল। মনে রাখতে হবে সন্তান যদি সূর্যাস্তের আগে (বৃহস্পতিবার) জন্ম নেয় তবে জন্মের দিন (বৃহস্পতিবার ) থেকে গণনা শুরু হবে। সূর্যাস্তের পরে জন্ম নিলেই পরের দিন থেকেই হিসাব করতে হবে।
.
আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়্যাহ গ্রন্থে বলা হয়েছে: অধিকাংশ ফুকাহাদের মতে জন্মের দিনকে সাতটির মধ্যে একটি হিসেবে গণ্য করা হয়, কিন্তু শিশুর জন্ম রাতে হলে রাতকে গণনা করা হয় না। বরং সেই রাতের পরের দিন গণনা করা হয়।(আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়্যাহ (৩০/২৭৯)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:“সপ্তম দিনে আক্বীকা করতে হবে” শব্দের অর্থ হল সপ্তম দিনে আক্বীকা করা সুন্নত। তাই শনিবারে কোন সন্তানের জন্ম হলে শুক্রবারে অর্থাৎ যেদিন সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে তার একদিন আগে আক্বীকা করতে হবে। এটি মৌলিক নির্দেশিকা। যদি শিশুটি বৃহস্পতিবার জন্মগ্রহণ করে তবে (আকীকা) বুধবার হতে হবে।(উসাইমীন আশ-শারহ আল-মুমতি’ খন্ড: ৭ পৃষ্ঠা: ৪৯৩) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।