ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর শোক পালন (ইদ্দত) মানে নির্দিষ্ট একটি সময় সাজসজ্জা ও সুগন্ধির ব্যবহার বর্জন করা। এটি নারীদের বৈশিষ্ট্য;পুরুষদের নয়। সুতরাং যে নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন, তার জন্য ইদ্দত পালন ও শোক পালন (ইদ্দত) ওয়াজিব। কিন্তু কোনো পুরুষের স্ত্রীর মৃত্যু হলে তার উপর শোক পালন (ইদ্দত) ওয়াজিব নয়।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন: ” وَتَجْتَنِبُ الزَّوْجَةِ الْمُتَوَفَّى عَنْهَا زَوْجُهَا : الطِّيبَ وَالزِّينَةَ … هَذَا يُسَمَّى الْإِحْدَادَ , وَلَا نَعْلَمُ بَيْنَ أَهْلِ الْعِلْمِ خِلَافًا فِي وُجُوبِهِ عَلَى الْمُتَوَفَّى عَنْهَا زَوْجُهَا“সদ্য বিধবা নারী সুগন্ধি ও সাজসজ্জা বর্জন করবে…। এটাকে শোকপালন বলা হয়। সদ্য বিধবা নারীর উপর এটি ওয়াজিব এ ব্যাপারে আলেমদের কোন মতভেদ আছে মর্মে আমরা জানি না।”(ইবনু কুদামাহ আল-মুগনী; খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ১২৫)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,يجب على المرأة التي مات زوجها عنها العدة والإحداد“যে নারীর স্বামী মারা গেছেন তার উপর ইদ্দত পালন ও শোক পালন ওয়াজিব।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ৪৭৯)
.
পক্ষান্তরে,আলেমদের ইজমা তথা সর্বসম্মতিক্রমে পুরুষের উপর কোন শোকপালন নেই। আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা গ্রন্থে এসেছে: أَجْمَعُوا عَلَى أَنَّهُ لَا إحْدَادَ عَلَى الرَّجُلِ“তারা (আলেমগণ) এই মর্মে ইজমা (মতৈক্য) করেছেন যে, পুরুষের উপরে শোকপালন নেই।”(আল-মাওসুআ আল-ফিকহিয়্যা; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১০৫)
.
সুতরাং কোনো ব্যক্তির স্ত্রী মারা গেলে তার উপর কোনো ইদ্দত আরোপিত হয় না। ফলে স্বামী ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় পুনরায় বিয়ে করতে পারেন। যদিও শরীয়তের দৃষ্টিতে তাৎক্ষণিক বিয়ে সম্পূর্ণ বৈধ, তবুও সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু সময় স্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা এবং মর্যাদা রক্ষা করা উত্তম। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়, বরং ভদ্রতা ও শিষ্টাচারের পরামর্শমাত্র।অতএব, স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী যে কোনো সময় বিয়ে করতে পারেন। এই বিধানের প্রমাণ মহান আল্লাহর বানী:فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ“তোমরা তোমাদের পছন্দমতো নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হও।’ (সূরা আন-নিসা: ৩)। এই আয়াতের মাধ্যমে পুরুষদেরকে বিবাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কোনো বিধিনিষেধ ছাড়া, সেজন্য প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় স্ত্রী জীবিত হোক বা মৃত,তা বিবাহের ক্ষেত্রে বাধা নয়।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:“যদি কোনো ব্যক্তির স্ত্রী মারা যায়, তবে তার মৃত্যুর পর এক মাস, বা এর কম বা বেশি সময়ে কি তার পুনরায় বিবাহ করা জায়েজ? কারণ কিছু ইমাম বলেন যে, তার ইদ্দতকাল অর্থাৎ তিন মাস পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ করা জায়েজ নয়। আমি এই অবস্থা দেখে অবাক হয়েছি যে, এটা কি সঠিক নাকি ভুল?
উত্তরে তারা বলেন:إذا ماتت زوجة الرجل فله أن يتزوج متى شاء، وليس لما ذكره من نقلت عنهم أصل، بل هو باطل. وبالله التوفيق، وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.”যদি কোনো ব্যক্তির স্ত্রী মারা যায়, তবে সে ইচ্ছামতো যখন খুশি পুনর্বিবাহ করতে পারে। যাদের থেকে আপনি এটি শুনেছেন,(অর্থাৎ তিন মাস পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ করা জায়েজ নয়।) তাদের উদ্ধৃতির কোনো সত্যতা নেই; বরং এটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।আল্লাহ্ই তাওফিকদাতা, এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীবর্গের উপর আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ, খণ্ড: ১৮, পৃষ্ঠা: ২৭–২৮; ফাতওয়া নং: ৩৫৬৮)
.
স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:“আমরা যে অঞ্চলে আছি সেখানে একটি প্রথা আছে; তাহলো: কারো স্ত্রী মারা গেলে সে স্বামী ৬ মাস বা তদুর্ধ্ব সময়ের আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে না। আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন: কেন? তারা বলবে: স্ত্রীর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনস্বরূপ। ঘটনাক্রমে এক লোক তার স্ত্রী মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে বিয়ে করে ফেলে। মানুষ তার বিয়েতে যায়নি। এমনকি তারা এ লোককে সালাম পর্যন্ত দেয় না। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে; এমনকি সেটা যদি একদিন পরেও হয় বিয়ে করা কি শরিয়তে অনুমোদিত; নাকি অনুমোদিত নয়?
জবাবে তারা বলেন:هذه عادة جاهلية ، لا أصل لها في الشرع المطهر ، ولذا فإنه ينبغي التواصي بتركها وعدم اعتبارها ، ولا يجوز هجر من تزوج بعد وفاة امرأته مباشرة ؛ لأنه هجر بغير حق شرعي”এটি একটি জাহেলী প্রথা। পবিত্র শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। তাই এ প্রথাটি বর্জন করা ও এটাকে বিবেচনা না করার জন্য একে অপরকে নসিহত করা বাঞ্চনীয়। যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মৃত্যুর পরপর বিয়ে করেছে তার সাথে সম্পর্কচ্ছিন্ন করা জায়েয নয়।কেননা তা শরিয়ত প্রদত্ত অধিকার ছাড়া সম্পর্কচ্ছেদ।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ১৯; পৃষ্ঠা: ১৫৬)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
আপনাদের দ্বীনি ভাই: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।