যে বিষয় সম্পর্কে আপনার সঠিক জ্ঞান নেই সে বিষয়ের পিছনে পড়ে থাকবেন না

ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর,আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেন:( وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا )“আর যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না; কান, চোখ, হৃদয় এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।”(সূরা বনী ইসরাঈল: ৩৬)
.
উল্লেখিত আয়াত (وَلَا تَقْفُ) শব্দটির সঠিক অর্থ, পিছু নেয়া,অনুসরণ করা। সে হিসেবে আয়াতের অর্থ হবে:যা তুমি জানো না, তা সম্পর্কে কিছু বলো না বা অভিযোগ করো না। একজন ব্যক্তির যে বিষয় সঠিক জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কথা বলাকে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে সবচেয়ে বড় গুনাহের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে।যেমন বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ এবং অসংগত বিরোধিতা এবং কোন কিছুকে আল্লাহর শরীক করা—যার কোন সনদ তিনি পাঠাননি, এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না।”(আল-আরাফঃ ৩৩] অনুরূপভাবে ধারণা করে কথা বলাও এর অন্তর্ভুক্ত। কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনায় ধারনা করে কথা বলা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা বিবিধ ধারনা করা থেকে বেঁচে থাক; কেননা কোন কোন ধারনা করা গুনাহের পর্যায়ে পড়ে।” [সূরা আলহুজুরাতঃ ১২] হাদীসে এসেছে, “তোমরা ধারনা করা থেকে বেঁচে থাক; কেননা ধারনা করে কথা বলা মিথ্যা কথা বলা৷”সহীহ বুখারী হা/ ৫১৪৩, মুসলিম হা/২৫৬৩)
.
উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীতি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:
نهى جل وعلا في هذه الآية الكريمة عن اتباع الإنسان ما ليس له به علم، ويشمل ذلك قوله: رأيت، ولم ير. وسمعت، ولم يسمع، وعلمت، ولم يعلم. ويدخل فيه كل قول بلا علم، وأن يعمل الإنسان بما لا يعلم، وقد أشار جل وعلا إلى هذا المعنى في آيات أخر “
“মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা এই মহৎ আয়াতে মানুষকে নিষেধ করেছেন এমন কিছুর অনুসরণ করা থেকে যে বিষয়ে তার কোনো (নিশ্চিত) জ্ঞান নেই। এর অন্তর্ভুক্ত হলো: কেউ বলল ‘আমি দেখেছি’, অথচ সে দেখে নি; ‘আমি শুনেছি’, অথচ সে শোনে নি; ‘আমি জেনেছি’, অথচ সে জানে নি। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসে প্রতিটি কথা যা অজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা হয়, এবং প্রতিটি কাজ যা অজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে করা হয়। আর মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনের অন্যান্য আয়াতেও এ একই অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।”
(আদ্বওয়াউল বায়ান; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৬৮২)
.
আয়াতটি থেকে মূল শিক্ষা হলো: অজানা বিষয় সম্পর্কে কথা বলা, অনুমান করে বলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কবিরাহ গুনাহের মধ্যে পড়ে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________
✍️জুয়েল মাহমুদ সালাফি
Share: