প্রচলিত ঈদে মীলাদুন নবী পালন করার শারঈ হুকুম কী

ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি। অতঃপর ইসলামী শরিয়তে “ঈদে মিলাদুন্নবী” বলে কোন কিছু নেই।প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নাবী উদযাপন একটি সুস্পষ্ট বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনো ঈদে মীলাদুন্নাবী পালন করেননি এবং করতেও বলেননি। চার খলীফাসহ জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবীর কেউ এ অনুষ্ঠান পালন করেননি। লক্ষাধিক সাহাবীর কোনো একজনও এ উৎসব পালন করেননি। পরবর্তী যুগের তাবেঈ ও তাবেঈ-তাবেঈগণও পালন করেননি। ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিমসহ হাদীস গ্রন্থ সংকলনকারী মুহাদ্দিসগণও পালন করেননি। এমনকি চার মাযহাবের ইমামগণসহ পরবর্তী মুসলিম উম্মাহর হকপন্থী কোন আলেম এ ধরণের কোন দিবস সম্পর্কে জানতেন না;বরং এ ঈদ বা উৎসবটি উদ্ভাবন করেছে কিছু বিদআতী বাতেনী গোষ্ঠী। এটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মৃত্যুর প্রায় ৫৯৪ বছর পর ৬০৪ হিজরীতে আবিষ্কৃত হয়।এরপর থেকে মানুষ এ বিদআত পালন করে আসছে; অথচ আলেমগণ সর্বকালে ও সর্বস্থানে এ বিদআত সম্পর্কে মানুষকে হুশিয়ার করে আসছেন। তাছাড়া কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল ও মুসলমানদের ইজমার ভিত্তিতে জানা যায় যে, ইসলামে উৎসব শুধু দুটি- ঈদুল ফিতর (রোযা ভঙ্গের উৎসব) ও ঈদুল আযহা (পশু উৎসর্গের উৎসব)। এ দুটি ছাড়া আর যত উৎসব আছে সেটা কোন ব্যক্তির সাথে, কোন গোষ্ঠীর সাথে, কোন ঘটনার সাথে বা বিশেষ কোন ভাবাবেগের সাথে সংশ্লিষ্ট হোক না কেন সেটা বিদআতি (নবউদ্ভাবিত) উৎসব। এ ধরনের কোন উৎসব পালন করা,সেদিনকে কেন্দ্র করে ওয়াজ মাহফিল করা, খাবার বিতরণ করা,কিংবা এসব দিবস পালনে সম্মতি দেয়া বা কোনভাবে সহযোগিতা করা অথবা সেই দিনে খুশি প্রকাশ করা কোন মুসলমানের জন্য জায়েয নয়। কেননা এটি আল্লাহর সীমারেখার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করে সে নিজের উপর নিজেই জুলুমকারী। এই উৎসবে অথবা এ ধরনের অন্য কোন হারাম উৎসবে কোনভাবে সহযোগিতা করা মুসলমানদের জন্য হারাম। সেটা যে ধরনের সহযোগিতা হোক না কেন; যেমন খাবার বা পানীয় গ্রহণ করা, ক্রয়বিক্রয় করা, জিনিসপত্র প্রস্তুত করা, উপঢৌকন প্রদান করা, পত্র বিনিময় করা, প্রচার-প্রচারণা চালানো ইত্যাদি। কারণ এ ধরনের সহযোগিতা পাপ-কাজে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতার ক্ষেত্রে সহযোগিতার মধ্যে গণ্য। “সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ০২]
.
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ দ্বীন। এ দ্বীন পরিপূর্ণ, বিধায় আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বিদআত থেকে বিরত থাকার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর বিদআতকারীর ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ “যে ব্যক্তি আমাদের শরীআতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত”(সহীহ বুখারী,হা/২৬৯৭;সহীহ মুসলিম,হা/১৭১৮) তিনি (ﷺ) আরও বলেন,وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَة ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকো। নিশ্চয়ই প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত ও প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী”।(আবূ দাঊদ,হা/৪৬০৭; তিরমিযী, হা/২৬৭৬)অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,وَكُلَّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ”আর প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম”।(সুনানে নাসাঈ, হা/১৫৭৮)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] আল-বায়ান লি আখতায়ি বাযিল কুত্তাব’ গ্রন্থে বলেন: لا يخفى ما ورد في الكتاب والسنة من الأمر باتباع ما شرعه الله ورسوله والنهي عن الابتداع في الدين ، قال تعالى : ( قُلْ إِنْ كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ) ، وقال تعالى : ( اتَّبِعُواْ مَا أنزل إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ ) ، وقال تعالى : ( وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلاَ تَتَّبِعُواْ السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ) وقال صلى الله عليه وسلم : ( إن أصدق الحديث كتاب الله، وخير الهدي هدي محمد ، وشر الأمور محدثاتها ) ، وقال صلى الله عليه وسلم : ( من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد ) وفي رواية لمسلم : ( من عمل عملًا ليس عليه أمرنا فهو رد ) “কুরআন ও হাদিসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক প্রদত্ত বিধানের অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ধর্মীয় বিষয়ে নতুন কিছু প্রবর্তন করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে- এটি কারো অজানা নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন: “বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি মার্জনা করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীলও দয়ালু।[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১] তিনি আরও বলেন: “তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে কর্তাদের অনুসরণ করো না।”।[সূরা আরাফ, আয়াত: ৩] তিনি আরও বলেন: “তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।”[সূরা আনআম, আয়াত: ১৫৩] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিশ্চয় শ্রেষ্ঠ সত্যবাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে- নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে- নব প্রবর্তিত বিষয়গুলো।” তিনি আরও বলেন: “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে এমন কোন বিষয় চালু করে যা এতে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত”। সহিহ মুসলিমের এ বর্ণনায় এসেছে- “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যা আমাদের দ্বীনে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত”(আল-বায়ান লি আখতায়ি বাযিল কুত্তাব; পৃষ্ঠা: ২৬৮-২৭০)
.
▪️ঈদে মীলাদুন নবী’ সম্পর্কে কতিপয় বিদ্বানের অভিমত:
.
(১).হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ,শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন:الاحتفال بمولد النبي ﷺ بدعة من البدع المحدثة التي لم يفعلها أحد من السلف الصالح”নাবী (ﷺ)-এর জন্মদিন উদযাপন করা একটি বিদ‘আত, যা সালাফে সলেহীনের কেউই করেননি”।(ইবনু তাইমিয়্যাহ মাজমুউ ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৬; পৃষ্ঠা: ৩১৭)
.
(২).বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন:لَا يَجُوزُ الِاحْتِفَالُ بِمَوْلِدِ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا غَيْرِهِ؛ لِأَنَّ ذَٰلِكَ مِنَ الْبِدَعِ الْمُحْدَثَةِ فِي الدِّينِ؛ لِأَنَّ الرَّسُولَ لَمْ يَفْعَلْهُ، وَلَا خُلَفَاؤُهُ الرَّاشِدُونَ، وَلَا غَيْرُهُمْ مِنَ الصَّحَابَةِ رِضْوَانُ اللهِ عَلَيْهِمْ، وَلَا التَّابِعُونَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ فِي الْقُرُونِ الْمُفَضَّلَةِ، وَهُمْ أَعْلَمُ النَّاسِ بِالسُّنَّةِ، وَأَكْمَلُ حُبًّا لِرَسُولِ اللهِ، وَمُتَابَعَةً لِشَرْعِهِ مِمَّنْ بَعْدَهُمْ”রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মীলাদ বা অন্য কারও মীলাদ উদযাপন করা জায়েয নেই। কারণ এটি দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট নতুন বিদআত। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি করেননি, তাঁর খুলাফায়ে রাশেদীনও করেননি, অন্য কোনো ছাহাবীও করেননি এবং মর্যাদাপূর্ণ যুগে তাদের ন্যায়সঙ্গত অনুসরণকারীগণও (তাবেঈ) করেননি। অথচ তারা ছিলেন সুন্নাহ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সর্বাধিক ভালোবাসায় পরিপূর্ণ এবং তাঁর শরীআতের অনুসরণে পরবর্তীদের চেয়ে অধিক অগ্রগামী”।(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৭৮)
.
(৩) সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:إِنَّ الِاحْتِفَالَ بِالْمَوْلِدِ النَّبَوِيِّ لَيْسَ مَعْرُوفًا عَنِ السَّلَفِ الصَّالِحِ، وَلَا فَعَلَهُ الْخُلَفَاءُ الرَّاشِدُونَ، وَلَا فَعَلَهُ الصَّحَابَةُ، وَلَا التَّابِعُونَ لَهُمْ بِإِحْسَانٍ، وَلَا أَئِمَّةُ الْمُسْلِمِينَ مِنْ بَعْدِهِمْ”নিশ্চয়ই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মদিন উদযাপন সালাফে ছালেহীনের মধ্যে পরিচিত ছিল না। আর না খুলাফায়ে রাশেদীন তা করেছিলেন, না সাহাবীগণ তা করেছিলেন, না তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে অনুসরণকারী তাবেঈন তা করেছিলেন আর না তাদের পরবর্তী মুসলিম ইমামগণ তা করেছিলেন”।(ইবনু উসাইমীন; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ২১; পৃষ্ঠা: ৬২)
.
(৪)‌ সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:ঈদে মিলাদুন্নবী, শিশুদের জন্মদিন, মা দিবস, কিংবা বৃক্ষরোপন-সপ্তাহ ইত্যাদি উদযাপন করার বিধান কি? উত্তরে তারা বলেন:
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله، وبعد:
أولا : العيد اسم لما يعود من الاجتماع على وجه معتاد إما بعود السنة أو الشهر أو الأسبوع أو نحو ذلك فالعيد يجمع أموراً منها : يوم عائد كيوم عيد الفطر ويوم الجمعة ، ومنها : الاجتماع في ذلك اليوم ، ومنها : الأعمال التي يقام بها في ذلك اليوم من عبادات وعادات .
ثانيا : ما كان من ذلك مقصوداً به التنسك والتقرب أو التعظيم كسبا للأجر ، أو كان فيه تشبه بأهل الجاهلية أو نحوهم من طوائف الكفار فهو بدعة محدثة ممنوعة داخلة في عموم قول النبي صلى الله عليه وسلم : ” من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد ” رواه البخاري ومسلم ، مثال ذلك الاحتفال بعيد المولد وعيد الأم والعيد الوطني لما في الأول من إحداث عبادة لم يأذن بها الله ، وكما في ذلك التشبه بالنصارى ونحوهم من الكفرة ، ولما في الثاني والثالث من التشبه بالكفار ، وما كان المقصود منه تنظيم الأعمال مثلاً لمصلحة الأمة وضبط أمورها ، وتنظيم مواعيد الدراسة والاجتماع بالموظفين للعمل ونحو ذلك مما لا يفضي به التقرب والعبادة والتعظيم بالأصالة ، فهو من البدع العادية التي لا يشملها قوله صلى الله عليه وسلم : ” من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد ” فلا حرج فيه بل يكون مشروعاً .وبالله التوفيق وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم .
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল ﷺ এর উপর। তারপর,
এক: স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বছর ঘুরে, মাস ঘুরে কিংবা সপ্তাহ ঘুরে যে সম্মিলন বার বার ফিরে আসে সেটাই ঈদ বা উৎসব। ঈদ নিম্নোক্ত বৈশিষ্টগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে: পুনঃ পুনঃ ফিরে আসে এমন দিন; যেমন- ঈদুল ফিতর ও জুমার দিন। ঐ দিনে সম্মিলন ঘটা। ঐদিনে যে কর্মগুলো করা হয় সেগুলো ইবাদত শ্রেণীর কিংবা প্রথাগত।
দুই: এ দিবসগুলোর মধ্যে যে দিবস দ্বারা উদ্দেশ্য হয় ইবাদত ও নৈকট্য হাছিল কিংবা সওয়াব অর্জনের জন্য সম্মান প্রদর্শন কিংবা যে দিবসের ক্ষেত্রে জাহেলি যুগের লোক বা তাদের মত অন্য কাফের গোষ্ঠীর সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায় সেগুলো নব-উদ্ভাবিত ও নিন্দনীয় বিদাত এবং সেটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত বাণীর মধ্যে পড়ে যাবে “যে ব্যক্তি আমাদের শরিয়তে এমন কিছু চালু করবে যা শরিয়তে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] এর উদাহরণ হচ্ছে­– ঈদে মিলাদুন্নবী, মা দিবস, জাতীয় দিবস ইত্যাদি পালন করা। এগুলোর মধ্যে প্রথমটিতে এমন এক ইবাদত এর নবপ্রচলন রয়েছে আল্লাহ্‌ যার অনুমোদন দেননি। এছাড়াও এর মধ্যে খ্রিস্টান ও অন্যান্য কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয়টির মধ্যে কাফেরদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।পক্ষান্তরে, যে সব দিবসগুলো পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে– উম্মতের কল্যাণ সাধনে তাদের কর্মে শৃঙ্খলা আনা, পাঠদানের সময়সূচী বিন্যস্ত করা, কর্মকর্তাদের মিটিং এর সময়সূচী বিন্যস্ত করা ইত্যাদি যেগুলো মূলতঃই আল্লাহ্‌র নৈকট্য, তাঁর ইবাদত, কিংবা সম্মানপ্রদর্শনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় সেগুলো হচ্ছে– অভ্যাসগত বিদাত; যেগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি আমাদের শরিয়তে এমন কিছু চালু করে যা শরিয়তে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত” এর অধিভুক্ত হবে না। তাই সেগুলোতে দোষের কিছু নেই। আল্লাহ্‌ই উত্তম তাওফিকদাতা, আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীবর্গের ওপর আল্লাহ্‌র রহমত বর্ষিত হোক।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৫৯; ইসলাম সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০০৭০)
.
(৫).সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেন,الِاحْتِفَالُ بِمَوْلِدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِدْعَةٌ فِي الدِّينِ.”নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মদিন উদযাপন করা দ্বীনের মধ্যে বিদআত”(আল-ইজলাল আল-ইলমী ওয়াল আমালী; পৃষ্ঠা: ১৫২)
.
এমনকি প্রচলিত মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়ার হুকুম কি?এ সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে,,,।
জবাবে তিনি বলেন:إن كان ذبحها لصاحب المولد فهذا شرك أكبر ، أما إن كان ذبحها للأكل فلا شيء في ذلك ، لكن ينبغي ألا يؤكل منها ، وأن لا يحضر المسلم إنكارا عليهم بالقول والفعل ؛ إلا أن يحضر لنصيحتهم بدون أن يشاركهم في أكل أو غيره “যদি যার মিলাদ (জন্ম বার্ষিকী) তাঁর জন্য এ পশু জবাই করা হয় তাহলে এটি শিরকে আকবার (বড় শিরক)। আর যদি গোশত খাওয়ার জন্য জবাই করা হয় তাতে কিছু নেই। তবে কোন মুসলমানের সে গোশত খাওয়া উচিত নয়; সে অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত নয়; যাতে করে মুসলমান কথা ও কাজের মাধ্যমে বিদআতীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পারেন। আর যদি তাদেরকে নসিহত করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হতে চান সেটা করতে পারেন; তবে তাদের খাবার বা অন্য কিছুতে অংশ গ্রহণ করবে না।'(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ; খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৭৪)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! প্রচলিত ঈদে মীলাদুন্নাবী ইতিহাসনির্ভর আলোচনা হলেও শরীয়তে এর কোনো বৈধতা নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবা ও খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগে এর কোনো দৃষ্টান্ত নেই। ইসলামে ইবাদত ও উৎসব নির্ধারিত হয় কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা; তাই নিজের পক্ষ থেকে নতুন কোনো ইবাদতের পদ্ধতি বা দিন নির্ধারণ করা বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। বিদ‘আত পরিহার করে সুন্নাহর উপর অবিচল থাকাই প্রকৃত ঈমানদারের পরিচয়। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্ম দিবস পালন নয়, বরং পরিপূর্ণভাবে তাঁকে অনুসরণই কাম্য। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ ও সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক্ব দান করুন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
Share: