প্রশ্ন: জুতা পায়ে সালাত আদায় করার হুকুম কী? বিশেষ করে বর্তমান সময়ে যখন মসজিদের ভেতরে কার্পেট বা গালিচা বিছানো থাকে।
▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর জুতা পায়ে সালাত আদায় করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ একটি বিষয়। বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহু-দিদের বিরোধিতা করার উদ্দেশ্যে জুতা পায়ে সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও জুতা পায়ে রেখেই সালাত আদায় করেছেন এবং তাঁর সাহাবাগণও তাঁদের জুতা পায়ে রেখেই সালাত আদায় করেছেন। তিনি তাঁদেরকে বলেন জুতা পায়ে সালাতের আগে যেন তা পর্যবেক্ষণ করে নেয়া হয়, যাতে কোনো অপবিত্রতা বা নাপাক বস্তু লেগে না থাকে এই বিধান নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। আবূ মাসলামাহ সা‘ঈদ ইবনু ইয়াযীদ আল-আযদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর (না‘লাইন) জুতা পরে সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, হাঁ।”(সহীহ বুখারী হা/৩৮৬; ৫৮৫০; মুসলিম হা/৫৫৫) অপর বর্ননায় শাদ্দাদ ইবন আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,خَالِفُوا الْيَهُودَ ؛ فَإِنَّهُمْ لَا يُصَلُّونَ فِي نِعَالِهِمْ، وَلَا خِفَافِهِمْ“তোমরা ইয়াহূদীদের বিরোধিতা করো। তথা জুতা কিংবা মোজা পরেই সালাত পড়ো। কারণ ইয়াহূদীরা জুতা কিংবা মোজা পরে কখনো সালাত পড়ে না”।(আবু দাউদ হা/৬৫২) এমনকি একবার রাসূল (ﷺ) সালাত আদায় করছিলেন, সালাত চলাকালীন তিনি তাঁর জুতা খুলে ফেলেন। সাহাবাগণও তাঁকে দেখে তাঁদের জুতা খুলে ফেলেন। সালাত শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কেন জুতা খুললে?” সাহাবাগণ বললেন, “আমরা আপনাকে জুতা খুলতে দেখেছি, তাই আমরাও খুলে ফেলেছি।” তখন তিনি বললেন,“জিবরাইল (আলাইহিস সালাম) আমাকে জানালেন যে, আমার জুতায় অপবিত্র কিছু লেগে আছে।”(আবু দাউদ হা/৬৫০)
.
উপরোক্ত হাদীসসমূহ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে জুতা পায়ে সালাত আদায় করা বৈধ, এবং এই হুকুমে কোনো তারতম্য নেই সালাত মসজিদে হোক, ঘরে হোক, খোলা মাঠে হোক কিংবা মরুভূমিতে হোক। কারণ হাদীসগুলো এই বিষয়ে সাধারণ ও সর্বব্যাপী দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। বরং কিছু হাদীসে তো সরাসরি মসজিদের কথাও উল্লেখ আছে। যেমন ইমাম আহমাদ ও আবু দাউদ (রহিমাহুমাল্লাহ) আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَلْيَنْظُرْ فَإِنْ رَأَى فِي نَعْلَيْهِ قَذَرًا أَوْ أَذًى فَلْيَمْسَحْهُ وَلْيُصَلِّ فِيهِمَا. “তোমাদের কেউ যখন মসজিদে আসে, সে যেন তার জুতার দিকে তাকায়। যদি সে তাতে ময়লা বা নাপাক কিছু দেখতে পায়, তাহলে তা যেন মুছে ফেলে এবং ওই জুতা পরেই সালাত আদায় করে।”( আবু দাউদ হা/৬৫০; ইমাম আলবানী ইরওয়া হা/২৮৪, সুনানে দারিমী: ১৪১৮) আরেক বর্ননায় ইমাম আবু দাউদ আরও একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন: আবু হুরাইরা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَخَلَعَ نَعْلَيْهِ فَلاَ يُؤْذِ بِهِمَا أَحَدًا لِيَجْعَلْهُمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَوْ لِيُصَلِّ فِيهِمَا “তোমাদের কেউ সলাত আদায়কালে জুতা খুলে যেন এমন জায়গায় না রাখে যাতে অন্যের কষ্ট হয়। বরং জুতাজোড়া যেন দু’ পায়ের মাঝখানে রেখে দেয় অথবা তা পরেই সলাত আদায় করে।”(সুনানে আবু দাউদ হা/৬৫৫)
.
তবে মসজিদে জুতা পরে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন।কারন মসজিদের ভেতরে জুতা পরে সালাত আদায়ের বিষয়টি নির্ভর করে জুতার ধরন ও সে সময়ের মসজিদের কাঠামোর ওপর। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে জুতা পায়ে দিয়ে হোক তা মসজিদের ভেতরে বা বাইরে সালাত আদায় করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিগণ এই পন্থা অবলম্বন করেছেন। তবে সেই সময়কার মসজিদগুলোর অবস্থা ছিল একেবারে ভিন্ন। সেগুলো ছিল মাটি, বালু বা কাঁকর দিয়ে গঠিত, যেখানে জুতা পায়ে প্রবেশ করলে কার্পেট বা গালিচার মতো কিছু অপবিত্র হওয়ার আশঙ্কা থাকতো না। আর তাঁদের জুতা-স্যান্ডেলও ছিল সহজ এবং পবিত্রতা বজায় রাখার ব্যাপারে তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত সচেতন। কিন্তু আজকের মসজিদগুলোর বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। অধিকাংশ মসজিদেই মূল্যবান কার্পেট, গালিচা বা কাপড় দ্বারা মেঝে আবৃত থাকে। এমন অবস্থায়, যদি কেউ জুতা পায়ে মসজিদে প্রবেশ করেন, তবে তা সহজেই কার্পেটকে নোংরা বা অপবিত্র করে তুলতে পারে বিশেষত যদি জুতা ভালোভাবে পরিস্কার না করা হয়। যদি প্রত্যেক মুসল্লি জুতা পায়ে মসজিদে প্রবেশ করেন ও তাতে নামাজ আদায় করেন, তাহলে প্রতিটি ওয়াক্তের নামাজের পরপরই মসজিদ পরিস্কার করার জন্য কর্মী নিয়োগ করা অত্যাবশ্যক হয়ে যাবে। যা বাস্তবতার দিক দিয়ে কষ্টসাধ্য, ব্যয়বহুল এবং অনেক সময় অসম্ভবও বটে। অধিকাংশ মুসল্লিই রাজি হবেন না ধুলাবালি, কাদা বা অপবিত্রতায় ভরা কার্পেটের ওপর নামাজ আদায় করতে।অতএব, শরিয়তের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও মসজিদের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষার স্বার্থে বর্তমান যুগে জুতা পায়ে মসজিদে প্রবেশ এবং তাতে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।(দেখুন: ফাতাওয়া সামাহাতুশ শায়খ ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুমায়দ, পৃষ্ঠা: ৮১)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:মসজিদে জুতা পায়ে প্রবেশ করা এবং তাতে সালাত আদায় করার বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে। শরিয়তের দৃষ্টিতে এর সঠিক হুকুম কী? উত্তরে তারা বলেন:
مِن هدي الرسول صلى الله عليه وسلم دخول المسجد بالنعل والصلاة فيها ؛ فروى أبو داود في سننه بسنده عن أبي سعيد الخدري قال : بينما النبي صلى الله عليه وسلم يصلي بأصحابه إذ خلع نعليه فوضعهما عن يساره فلما رأى ذلك القوم ألقوا نعالهم ، فلما قضى رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاته قال : ( ما حملكم على إلقائكم نعالكم ؟ ) قالوا : رأيناك ألقيت نعليك فألقينا نعالنا ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( إن جبريل عليه السلام أتاني فأخبرني أن فيهما قذراً ) ، وقال : ( إذا جاء أحدكم إلى المسجد فلينظر ، فإن رأى في نعليه قذراً أو أذى فليمسحه وليصل فيهما ) وروى أبو داود أيضا عن يعلى بن شداد بن أوس عن أبيه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( خالفوا اليهود فإنهم لا يصلون في نعالهم ولا خفافهم ) ، وروى أبو داود أيضا عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده قال : ( رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي حافياً ومنتعلاً ) ، وأخرجه ابن ماجه .
لكن بعد أن فرشت المساجد بالفرش الفاخرة – في الغالب – ينبغي لمن دخل المسجد أن يخلع نعليه رعاية لنظافة الفرش ، ومنعاً لتأذي المصلين بما قد يصيب الفرش مما في أسفل الأحذية من قاذورات وإن كانت طاهرة
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ’র অন্তর্ভুক্ত ছিল জুতা পরে মসজিদে প্রবেশ করেছিলেন এবং জুতা পরে সালাত আদায় করেছিলেন। আবু দাউদ তাঁর সুনান এ আবু সাঈদ খুদরি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন:”একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহাবীদের নিয়ে সলাত আদায়কালে তাঁর জুতাজোড়া খুলে তাঁর বাম পাশে রেখে দিলেন। এ দৃশ্য দেখে সাহাবিরাও তাদের জুতা খুলে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষে বললেন; তোমরা তোমাদের জুতা খুললে কেন? তারা বলল, আপনাকে আপনার জুতাজোড়া খুলে রাখতে দেখে আমরাও আমাদের জুতা খুলে রেখেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসে আমাকে জানালেন আপনার জুতাজোড়ায় অপবিত্র বস্তু লেগে আছে। তিনি আরো বললেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন তার জুতাজোড়া দেখে নেয়। তাতে অপবিত্র বস্তু দেখতে পেলে যেন জমিনে তা ঘষে নিয়ে পরিধান করে সালাত আদায় করে।”(আবু দাউদ হা/৬৫০) ইমাম আবু দাউদ আরও বর্ণনা করেছেন ইয়ালা ইবনু শাদ্দাদ তার পিতা ইবনু আউস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“তোমরা ইয়াহূদীদের বিরোধিতা করো। তথা জুতা কিংবা মোজা পরেই সালাত পড়ো। কারণ, ইয়াহূদীরা জুতা কিংবা মোজা পরে কখনো সালাত পড়ে না”।(আবু দাউদ হা/৬৫২) আরেক হাদিসে ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রাঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খালি পায়েও এবং জুতা পরিহিত অবস্থায়ও সালাত আদায় করতে দেখেছি।”(ইবনু মাজাহ হা/১০৩৮) “তবে বর্তমানে মসজিদসমূহে সাধারণত বিলাসবহুল কার্পেট বিছানো থাকে; অতএব, যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তার উচিত জুতা খুলে প্রবেশ করা কারণ এতে কার্পেট পরিচ্ছন্ন থাকবে এবং জুতার নিচে থাকা ধুলোবালি ও ময়লা (যদিও তা নাপাক নয়) থেকে মুসল্লিদের কষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।” (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২১৩-২১৪)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল;জুতা পরে নামায পড়ার হুকুম কী? উত্তরে শাইখ বলেন:
حكمها الاستحباب بعد التأكد من نظافتها ؛ لأن النبي صلى الله عليه وسلم كان يصلي في نعليه ، ولقوله صلى الله عليه وسلم : ( إن اليهود والنصارى لا يصلون في خفافهم ولا في نعالهم فخالفوهم ) ومن صلى حافيا فلا بأس ؛ لأنه قد ثبت عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه كان يصلي في بعض الأحيان حافيا لا نعل عليه .وإذا كان المسجد مفروشا فإن الأولى خلعها ؛ حذراً من توسيخ الفرش ، وتنفير المسلمين من السجود عليها “
“হুকুম হলো, যদি জুতা পবিত্র ও পরিষ্কার থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে জুতা পায়ে সালাত আদায় করা সুন্নাহ এবং পছন্দনীয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জুতা পায়েই সালাত আদায় করেছেন এবং তিনি বলেছেন: “তোমরা ইয়াহূদীদের বিরোধিতা করো। তথা জুতা কিংবা মোজা পরেই সালাত পড়ো। কারণ ইয়াহূদীরা জুতা কিংবা মোজা পরে কখনো সালাত পড়ে না”।(আবু দাউদ হা/৬৫২) তবে যদি কেউ খালি পায়ে সালাত আদায় করে, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ এটা প্রমাণিত যে নবী (ﷺ) কখনো কখনো খালি পায়েও সালাত আদায় করেছেন। আর যদি মসজিদে কার্পেট বিছানো থাকে তাহলে উত্তম হচ্ছে জুতা খুলে প্রবেশ করা, যাতে কার্পেট নোংরা না হয় এবং অন্য মুসল্লিরা বিরক্ত না হন।”(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ২৯; পৃষ্ঠা: ২২৮)
.
বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী আদ-দিমাশক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন: “وقد نصحت إخواننا السلفيين أن لا يتشددوا في هذه المسألة – أي الصلاة بالنعال في المساجد – لما هناك من فارق بين المساجد اليوم المفروشة بالسجاد الفاخر ، وبين ما كان عليه المسجد النبوي في زمنه الأول ، وقد قرنت لهم ذلك بِمَثَلٍ من السنة في قصة أخرى : أن النبي صلى الله عليه وسلم قد أمر من بادره البصاق أو المخاط وهو يصلي أن يبصق عن يساره أو تحت قدميه ، وهذا أمر واضح أن هذا يتماشى مع كون الأرض – أرض المسجد التي سيضطر للبصاق فيها – من الرمل أو الحصباء ، فاليوم المصلَّى مسجد مفروش بالسجاد ، فهل يقولون إنه يجوز أن يبصق على السجاد ؟! فهذه كتلك “
“আমি আমাদের সালাফি ভাইদেরকে নসিহত করেছি যেন তারা এই বিষয়ে অর্থাৎ জুতা পায়ে মসজিদে সালাত আদায় করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কড়াকড়ি বা কঠোরতা না দেখায়। কেননা বর্তমান যুগের মসজিদসমূহে দামী কার্পেট কিংবা উন্নতমানের মাদুর বিছানো থাকে, যা স্পষ্টতই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগের মসজিদে নববীর অবস্থা থেকে ভিন্ন।আমি এই পার্থক্যটি বুঝাতে সুন্নাহ থেকে আরেকটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছি অন্য এক প্রাসঙ্গিক ঘটনার আলোকে। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের সময় কারো থুথু ফেলার প্রয়োজন হলে তাকে বাম দিকে অথবা নিজের পায়ের নিচে থুথু ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে সময় মসজিদের মেঝে ছিল বালিমাটি বা কংকরযুক্ত, তাই এমনটি করা তখনকার পরিবেশে গ্রহণযোগ্য ছিল। কিন্তু আজকের দিনে তো মসজিদগুলো কার্পেট দিয়ে সুসজ্জিত—এখন কেউ কি বলতে পারে যে, সে একই সুন্নাহ অনুসরণ করে কার্পেটে থুথু ফেলবে?! বাস্তবতা ও পরিবেশ বুঝে সুন্নাহর হিকমত অনুধাবন করাই মূল বিষয়।”
.
ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) যেটি বলেছেন সেটিই পূর্বে ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ) ও বলেছেন। ইবনু রজব হাম্বলী (রাহিমাহুল্লাহ) “ফাৎহুল বারী” গ্রন্থে বকর ইবনে মুহাম্মদ হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ অর্থাৎ ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করলাম একজন ব্যক্তি যদি মসজিদে থুথু ফেলে এবং তারপর পা দিয়ে ঘষে ফেলে এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? তিনি বললেন: “এটা হাদিসের সবগুলো রেওয়ায়াতে নেই (অর্থাৎ নির্দিষ্ট পরিস্থিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট)।”তিনি আরও বলেন: “মসজিদে তো এখন বিছানো হয়েছে (বাওয়ারি) চাটাই (যা আগে ছিল না)।” তিনি আরও বলেন: “আমার কাছে পছন্দনীয় হলো, যদি কেউ সালাতের সময় থুথু ফেলতে চায় এবং সে এমন অবস্থানে থাকে যে থুথু বাইরে পড়বে তাহলে সে বাম দিকে থুথু ফেলতে পারে, যতক্ষণ না তা মসজিদের ভেতরে পড়ে। কিন্তু যদি সে মসজিদের ভেতরে এমন স্থানে থাকে যেখানে থুথু বাইরে পড়বে না, তাহলে তার উচিত নিজের কাপড়েই থুথু ফেলা।”(ইবনু রজব ফাৎহুল বারী, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৫১)
সুতরাং ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে মসজিদে থুথু ফেলে তা পায়ে ঘষে দেওয়া তখনকার সময়ের জন্য ছিল, যখন মসজিদে কিছু বিছানো থাকতো না। আর এখন যদি কোন ব্যক্তির জন্য জুতা খোলা কষ্টকর হয় যেমন সামরিক তথা সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেরকম ভারী জুতা পরে থাকেন তাহলে তারা জুতা পায়ে রেখেই সালাত আদায় করতে পারবেন, তবে শর্ত হলো জুতাটি অবশ্যই পরিচ্ছন্ন (পবিত্র) হতে হবে।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল জুতা পরে মসজিদে প্রবেশের হুকুম কী বিশেষ করে যেহেতু সামরিক বাহিনীকে তাদের কাজের কারণে সর্বদা জুতা পরে থাকতে হয়, কিন্তু মসজিদগুলি কার্পেটযুক্ত? উত্তরে তারা বলেন: يجوز دخول المسجد بالحذاء والصلاة به إذا كان طاهراً ، مع مراعاة العناية به عند دخول المسجد حتى لا يكون به أذى“জুতা পরে মসজিদে প্রবেশ করা এবং জুতা পরে সালাত আদায় করা জায়েজ যদি তা পরিষ্কার ও পবিত্র হয়। তবে মসজিদে প্রবেশের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন জুতায় কোনো প্রকার নাপাকী বা কষ্টদায়ক কিছু না লেগে থাকে।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২১৫-২১৬)
.
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে বর্তমান সময়ে মসজিদে জুতা পায়ে সালাত আদায় না করাই উত্তম। তবে যাদের জন্য জুতা খোলা কষ্টসাধ্য তারা পরিচ্ছন্নতার নিশ্চয়তা সাপেক্ষে তা পরেই সালাত আদায় করতে পারবেন যতক্ষণ না তাতে পাশের কারো কষ্ট হয়। আর যদি এর ফলে মুসলিমদের মাঝে মতবিরোধ, ঘৃণা বা অপছন্দের মনোভাব সৃষ্টি হয় তাহলে উত্তম হলো ঐক্য রক্ষার্থে জুতা খুলেই সালাত আদায় করা। তবে মুসলিম ব্যক্তির জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশ পালনের সুযোগ আছে যেমন জুতা পায়ে সালাত আদায় করার সুন্নাহ বাস্তবায়ন যদি এর মাধ্যমে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি না হয়। যেমন ঘরে অথবা খালি-প্রাঙ্গণে, যেখানে কার্পেট নেই বা কেউ বিরক্ত হবে না। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।