প্রশ্ন: সালাত সহিহ ও পূর্ণাঙ্গ হওয়ার জন্য যেসব শর্ত, রুকন (স্তম্ভ), ওয়াজিব ও সুন্নত রয়েছে সেগুলোর মোট সংখ্যা কত? এবং প্রত্যেকটি বিভাগ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা চাই।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর সালাত (নামায) ইসলামের একটি মহান ইবাদত, যা দ্বীনের মূল স্তম্ভগুলোর অন্যতম। এর গুরুত্ব এত বেশি যে, মানুষের অন্যান্য সকল ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতা এর উপর নির্ভরশীল। যদি সালাত সঠিকভাবে আদায় করা হয়, তবে অন্যান্য আমলও গ্রহণযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যদি সালাত নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে অন্যান্য আমলও ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য সালাতকে ইবাদতের মানদণ্ড বলা হয়ে থাকে। কুরআন ও হাদীসে সালাত সম্পর্কিত যে সকল শর্ত, রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নাত বর্ণিত হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালন করলে সালাত শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হবে এবং আল্লাহর নিকট কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার লাভ হবে। পক্ষান্তরে, এসবের প্রতি অবহেলা বা ত্রুটি হলে সালাত যেমন সহীহ হবে না, তেমনি তার ফজিলত ও সওয়াব থেকেও বঞ্চিত হতে হবে। নিচে সালাতের সঠিক আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো:
.
❑ মূল আলোচনায় প্রবেশের আগে সালাত সম্পর্কিত কিছু মৌলিক বিষয় জানা আবশ্যক। সর্বপ্রথম যেটা জানা দরকার তা হলো সালাতে আদায়কৃত সকল কাজ ও উচ্চারিত সকল বাক্য মূলত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত।
.
▪️প্রথমত: এমন কিছু বিষয় যা সালাতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভুলবশত, ইচ্ছাকৃত কিংবা অজ্ঞতাবশত যেভাবেই হোক না কেন সেগুলোর কোনো একটি ছাড়া সালাত সহিহ হয় না। সেগুলো ছেড়ে দিলে সালাত বাতিল হয়ে যায়। এসবকে সালাতের রুকন বা ফরজ বলা হয়।
.
▪️দ্বিতীয়ত: এমন কিছু বিষয় যা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে সালাত বাতিল হয়। কিন্তু ভুলক্রমে বা অজ্ঞতাবশত ছেড়ে দিলে তা মাফযোগ্য হয়ে যায়। এসবকে সালাতের ওয়াজিব বলা হয়।
.
▪️তৃতীয়ত: এমন কিছু বিষয় যা সালাতে থাকা উত্তম ও পূর্ণতার জন্য সুপারিশকৃত, তবে তা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলেও সালাত বাতিল হয় না। এগুলোকে সালাতের সুন্নাত বলা হয়।(দ্রষ্টব্য: আর-রুহাইবানি, মাতালিব উলি নুহা, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৯৩)
.
❑ ভুলক্রমে সালাতের কোনো ফরজ ছেড়ে যাওয়ার চারটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি রয়েছে:
▪️(১) ভুলক্রমে সালাতের প্রথম ফরজ তথা তাকবিরাতুল ইহরাম ছেড়ে দেওয়া। এই ফরজ ছেড়ে দিলে সালাতের সূচনাই হয় না। সুতরাং এ সালাত শূন্য থেকে আবার শুরু করতে হবে।
.
▪️(২) তাকবিরে তাহরিমা ছাড়া অন্য কোনো ফরজ ভুলক্রমে ছুটে গেলে যেমন রুকু, সিজদা বা কিয়াম এবং তা সেই রাকাআতের পরবর্তী রাকাআতে সূরা ফাতিহা শুরু করার আগেই স্মরণে এলে, তখন সঙ্গে সঙ্গে ফিরে গিয়ে উক্ত ফরজটি আদায় করতে হবে। এরপর সেখান থেকে যথাযথ ধারাবাহিক ভাবে সালাতের বাকি অংশ সম্পন্ন করতে হবে। সালাত শেষে সালাম ফেরানোর পূর্বে দুটি সাহু সিজদা দিতে হবে, কারণ এটি ভুল সংশোধনের জন্য জরুরি। তবে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ফিরে গিয়ে ফরজটি আদায় না করে, তাহলে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে; কেননা সালাতের ফরজ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করলে তা শুদ্ধ হয় না।
.
▪️(৩) তাকবীরাতুল ইহরাম ব্যতীত অন্য কোনো ফরজ ভুলবশত ছুটে গেলে এবং তা এমন অবস্থায় স্মরণ হয় যখন পরবর্তী রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়া শুরু করে দিয়েছে তাহলে যে রাকাতে ফরজটি ছুটেছে, তা বাতিল গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী রাকাতটি বাতিল হওয়া রাকাতের স্থলাভিষিক্ত হবে। কিন্তু যদি কেউ এই অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে সেই পরিত্যক্ত ফরজ আদায়ের উদ্দেশ্যে পূর্বের রাকাতে ফিরে যায়, তাহলে এতে সালাতের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যাবে এবং পুরো সালাতই বাতিল হয়ে যাবে।
.
▪️(৪) তাকবিরে তাহরিমা ছাড়া অন্য কোনো ফরজ ভুলবশত ছেড়ে গেলে এবং সালাম ফিরানোর পরই যদি তা মনে পড়ে যে, ভুলক্রমে ফরজ ছুটে গেছে, তাহলে ঐ রাকাআতটি শুদ্ধ বলে বিবেচিত হবে না। বরং পুনরায় আরেক রাকাআত পড়ে সালাম ফেরানোর আগে দুটো সাহু সিজদা দিতে হবে। কিন্তু প্রচলিত ওরফ তথা প্রথা অনুযায়ী লম্বা সময়কাল পরে যদি ফরজ ছুটে যাওয়ার কথা মনে পড়ে, অথবা ওজু নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে যদি ফরজ ছুটে যাওয়ার কথা মনে পড়ে, অথবা কথাবার্তা বলার পরে যদি ফরজ ছুটে যাওয়ার কথা মনে পড়ে, তাহলে সালাত বাতিল হিসেবে পরিগণিত হবে এবং অপরিহার্যভাবে তাকে পুনরায় সালাত শুরু থেকে আদায় করতে হবে। (দ্রষ্টব্য: আল-কুআইমি, আল-হাওয়াশিস সাবিগাত, পৃ. ১১২)
.
আর ভুলবশত সালাতের কোনো ওয়াজিব (আবশ্যকীয় কাজ) ছুটে গেলে, সাহু সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। সাহু সিজদার নিয়ম অনুযায়ী, সালাম ফেরানোর ঠিক আগে বা পরে দু’টি সাহু সিজদা দিতে হয়। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে সাহু সিজদা পরিত্যাগ করলে সালাত বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে তা বাদ পড়ে এবং সালাম ফেরানোর পর অল্প সময়ের মধ্যেই তা স্মরণ হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে সাহু সিজদা আদায় করতে হবে। অন্যদিকে প্রচলিত ওরফ অনুযায়ী যদি অনেক সময় পরে স্মরণ হয়, বা ওজু ভেঙে যায়, অথবা মসজিদ ত্যাগ করা হয় তাহলে সাহু সিজদা করার বাধ্যবাধকতা আর থাকে না, এবং ওই সালাত শুদ্ধ হিসেবে গণ্য হয়। (দ্রষ্টব্য: আল-কুআইমি, ফাইদুল জালিল, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৫৫) এ বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা উলামাগণ ফিকহশাস্ত্রের ‘সাহু সিজদা’ অধ্যায়ে করেছেন। আগ্রহী পাঠকগণ বিশদভাবে জানতে সেসব আলোচনা পড়তে পারেন। আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
.
❑ অতঃপর সালাতের রুকন ও ওয়াজিব সুন্নাত সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক বিষয় জানা জরুরি।
.
সালাতের স্তম্ভসমূহ (আরকান/রুকন) হলো সেসব মৌলিক অংশ যেগুলোর কোনো একটি ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা ভুলে হোক ছুটে গেলে সালাত শুদ্ধ হয় না; বরং তা বাতিল হয়ে যায়, কারণ স্তম্ভ পরিত্যাগ করা হয়েছে। অন্যদিকে সালাতের ওয়াজিবসমূহ হলো সেসব দায়িত্ব, যেগুলোর কোনো একটি যদি ভুলক্রমে ছুটে যায়, তাহলে ‘সাহু সিজদা’ দ্বারা তা পূরণ হয়ে যায়। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ওয়াজিব পরিত্যাগ করা হলে সালাত বাতিল হয়ে যায়।সুতরাং রুকন ও ওয়াজিব এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে রুকন এমন একটি অংশ যা ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা ভুলবশত বাদ পড়লে সালাত শুদ্ধ হয় না। সেটি অবশ্যই আদায় করতে হবে এবং ভুলের জন্য সাহু সিজদা দিতে হবে। পক্ষান্তরে কোনো ওয়াজিব যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ছুটে যায় তবে সাহু সেজদার মাধ্যমে তা পূরণ করা যায়। ইচ্ছেকৃত হলে সালাত বাতিল হয়ে যায়। এই বিষয়টি পরিষ্কার করার লক্ষ্যে আমরা এখানে সালাতের রুকন ও ওয়াজিবসমূহ ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করছি। শেষে দলিলুত ত্বালেব গ্রন্থ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমলও উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ। এ বইটি হাম্বলি মাযহাবের প্রসিদ্ধ পুস্তিকা:
• এক: সালাতের রুকন ১৪টি।
• দুই: সালাতের ওয়াজিব ৮টি।
• তিন: সালাতের বাচনিক সুন্নত ১১টি।
• চার: কর্মকেন্দ্রিক সুন্নতসমূহ।
.
❑[সালাতের শর্তাবলি ৯ টি]
.
▪️(১) মুসলিম হওয়া, [সুরা আলে ইমরান: ৮৫]
▪️(২) জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া, [ইবনু মাজাহ, হা/২০৪১]
▪️(৩) ভালো-মন্দের বিবেচনাবোধসম্পন্ন হওয়া,[আবু দাউদ, হা/৪৯৫; সনদ: হাসান]
▪️(৪) ওজু নষ্টের কারণগুলো দূরীভূত করা,
▪️(৫) অপবিত্রতা দূর করা, [সুরা মুদ্দাসসির: ৪]
▪️(৬) আবরণীয় অঙ্গকে আবৃত রাখা, [সুরা আরাফ: ৩১]
▪️(৭) সময় হওয়া, [সূরা নিসা: ১০৩]
▪️(৮) কিবলামুখী হওয়া এবং [সুরা বাকারা: ১৪৪]
▪️(৯) নিয়ত করা।[সহিহ বুখারি, হা/১]
.
❑[সালাতের স্তম্ভ বা রুকন সমূহ ১৪ টি]
.
▪️(১) সামর্থ্য থাকলে দাঁড়ানো,[সুরা বাকারা: ২৩৮]
▪️(২) তাকবিরাতুল ইহরাম তথা নামাজ আরম্ভের তাকবির দেওয়া, [তিরমিজি, হা/২৩৮; সনদ: সহিহ]
▪️(৩) ফাতিহা পাঠ করা, [সহিহ বুখারি, হা/৭৫৬; সহিহ মুসলিম, হা/৩৯৪] সুরা ফাতিহা কুরআনের মূল।]
▪️(৪) রুকু করা, [সুরা হজ: ৭৭]
▪️(৫) রুকু থেকে ওঠা,[সহিহ বুখারি, হা/৮১২]
▪️(৬) সাতটি অঙ্গের ওপর সিজদা দেওয়া, [সুরা হজ: ৭৭ সহিহ বুখারি, হা/৮১২]
▪️(৭) সিজদা থেকে সোজা হওয়া,[সুরা হজ: ৭৭, সহিহ বুখারি, হা/৮১২]
▪️(৮) দু সিজদার মাঝে উপবেশন করা, [সুরা হজ: ৭৭, সহিহ বুখারি, হা/৮১২]
▪️(৯) সকল স্তম্ভের কার্য সম্পাদনে ধীরস্থির থাকা,[সহিহ বুখারি, হা/৭৫৭; সহিহ মুসলিম, হা/৩৯৭]
▪️(১০) পর্যায়ক্রম বজায় রাখা, [সহিহ বুখারি, হা/৭৫৭; সহিহ মুসলিম, হা/৩৯৭]
▪️(১১) শেষ তাশাহহুদ, [সহিহ বুখারি, হা/৮৩১; সহিহ মুসলিম, হা/৪০২]
▪️(১২) শেষ তাশাহহুদের জন্য বসা,
▪️(১৩) নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত (দরুদ) পাঠ করা,
▪️(১৪) দুই সালাম।
❑[সালাতের ওয়াজিবসমূহ ৮ টি]
.
সালাতের ওয়াজিব আটটি:
▪️(১) নামাজ আরম্ভের তাকবির ব্যতীত বাকি সকল তাকবির,(সহীহ বুখারী হা/৭২৪৬)
▪️(২) রুকুতে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আজিম (আমার সুমহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি)’ বলা,(আবু দাউদ হা /৮৬৯)
▪️(৩) ইমাম ও একাকী নামাজরত ব্যক্তির জন্য ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ (আল্লাহ তার দোয়া কবুল করুন,যে তাঁর প্রশংসা করে)’ বলা,(সহীহ বুখারী হা/৭২৪৬; আশ শারহুল মুমতি খণ্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৩১৭)
▪️(৪) সকলের জন্য ‘রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ (হে আমাদের রব, যাবতীয় প্রশংসা কেবল আপনার জন্যই নিবেদিত) বলা, (সহীহ বুখারী হা/৭৯৬)
▪️(৫) সিজদায় ‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা (আমার সমুচ্চ রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি)’ বলা,(আবু দাউদ হা /৮৬৯)
▪️(৬) দুই সিজদার মাঝে ‘রব্বিগফিরলি (প্রভুগো, আমায় ক্ষমা করুন)’ পাঠ করা, (সহীহ বুখারী হা/৭২৪৬; দাকায়িকু উলিন নুহা খণ্ড;১; পৃষ্ঠা: ২১৮)
▪️(৭) প্রথম তাশাহহুদ পড়া,(সহীহ বুখারী হা/৮২৯)
▪️(৮) প্রথম তাশাহহুদের জন্য উপবেশন করা।
.
❑[সালাতের সুন্নাতসমুহ]
.
সালাতের সুন্নতসমূহ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। এর কিছু সুন্নত বাচনিক যেগুলো মুখের উচ্চারণ দ্বারা সম্পাদিত, আর কিছু সুন্নত শারীরিক যেগুলো দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এখানে ‘সুন্নত’ বলতে বোঝানো হয়েছে সালাতের সেইসব কর্ম যা ফরজ ও ওয়াজিব নয়, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিতভাবে আদায় করতেন। কোনো কোনো ফিকাহবিদের মতে সালাতে মোট ১৭টি বাচনিক ও ৫৫টি শারীরিক সুন্নত রয়েছে। এসব সুন্নতের কোনোটি ছুটে গেলেও সালাত বাতিল হয় না। এমনকি ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করলেও সালাত শুদ্ধ থাকে। এ কারণে সাহু সিজদাও আবশ্যক হয় না, যদিও চাইলে তা আদায় করা যেতে পারে। তবে সালাতের আরকান (মূল স্তম্ভ) ও ওয়াজিবসমূহের ক্ষেত্রে বিধান ভিন্ন; সেগুলোর কোনোটি ছুটে গেলে সালাত শুদ্ধ হয় না অথবা সাহু সিজদা আবশ্যক হয়ে পড়ে।
.
❑সালাতের বাচনিক সুন্নত ১১টি; সেগুলো হচ্ছে:
.
▪️১। তাকবীরে তাহরীমার পর ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বি হামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গায়রুক’ (অর্থ- হে আল্লাহ! আপনি পাক-পবিত্র,সকল প্রশংসা আপনারই জন্য। আপনার নাম মহিমান্বিত। আপনার মর্যাদা সমুন্নত। (আপনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন উপাস্য নেই।) এই দোয়া বলা।
▪️২। আউযুবিল্লাহ পড়া।
▪️৩। বিসমিল্লাহ পড়া।
▪️৪। ‘আমীন’ বলা।
▪️৫। সূরা ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা পড়া।
▪️৬। ইমামের জন্য উচ্চস্বরে ক্বিরাত পড়া।
▪️৭। মোক্তাদি ছাড়া অন্যদের জন্য ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদা’ বলার পর এই দোয়াটি পড়া ‘মিলআল সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরযি ওয়া মিলআ মা শি’তি বাদ।’ অর্থ- হে আল্লাহ! আপনার জন্য ঐ পরিমাণ প্রশংসা যা আসমান ভর্তি করে দেয়,যা জমিন ভর্তি করে দেয় এবং এগুলো ছাড়া অন্য যা কিছু আপনি চান সেটাকে ভর্তি করে দেয়। তবে সঠিক মতানুযায়ী এ দোয়াটি পড়া মোক্তাদির জন্যেও সুন্নত।
▪️৮। রুকুর তাসবীহ একবার পড়ার পর অতিরিক্ত যতবার পড়া হয়। অর্থাৎ দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার কিংবা আরও যত বেশি বার পড়া হোক না কেন।
▪️৯। সেজদার তাসবীহ একবারের বেশি যতবার পড়া হোক।
▪️১০। দুই সেজদার মাঝখানে একবারের বেশি যতবার ‘রাব্বিগ ফির লি’ পড়া যায়।
▪️১১। শেষ বৈঠকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর দরুদ পড়া এবং এরপর দোয়া করা।
.
❑[কর্মকেন্দ্রিক সুন্নতসমূহ]
.
▪️১। তাকবীরে তাহরীমার সময় হাতদ্বয় উত্তোলন করা।
▪️২। রুকুর সময় হাতদ্বয় উত্তোলন করা।
▪️৩। রুকু থেকে উঠার সময় হাতদ্বয় উত্তোলন করা।
▪️৪। হাত উঠিয়ে সাথে সাথে নামিয়ে ফেলা।
▪️৫। বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখা।
▪️৬। সেজদার স্থানের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা।
▪️৭। দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মাঝখানে খালি রাখা।
▪️৮। রুকু অবস্থায় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা রেখে দুই হাত দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরা,পিঠ প্রসারিত রাখা এবং পিঠ ও মাথা এক বরাবরে রাখা।
▪️৯। সেজদা অবস্থায় হাঁটুদ্বয় ছাড়া সেজদার অন্য অঙ্গগুলোকে ভূমির সাথে সেঁটে রাখা।
▪️১০। দুই পার্শ্ব থেকে হাতের বাহুদ্বয়,দুই উরু থেকে পেট,দুই উরু থেকে পায়ের গোছা ফাঁকা করে রাখা। দুই হাঁটুর একটি অপরটি থেকে দূরে রাখা। দুই পা খাড়া করে রাখা। পায়ের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা করে ভূমির ওপর রাখা। দুই হাত কাঁধ বরাবর রেখে আঙ্গুলগুলো একটি অপরটির সাথে মিলিয়ে জমিনের ওপর বিছিয়ে রাখা।
▪️১১। দুই সেজদার মাঝখানে ও প্রথম বৈঠকের সময় পায়ের পাতার ওপর বসা। আর দ্বিতীয় বৈঠকের সময় পাছার ওপর বসা।
▪️১২। দুই সেজদার মাঝখানে বসার সময় উরুর ওপর হাতের তালু বিছিয়ে রাখা,হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখা। তাশাহুদের বৈঠকের সময়েও একই পদ্ধতিতে রাখা। তবে,তাশাহুদের সময় কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুল গুটিয়ে রাখা, মধ্যমা ও বৃদ্ধা অঙ্গুলি দিয়ে বৃত্তাকার আকৃতি তৈরী করা এবং তর্জনী অঙ্গুলি দিয়ে ‘আল্লাহকে স্মরণ’ করার সময় ইশারা করা।
▪️১৩। সালাম দেয়ার সময় ডান দিকে ও বাম দিকে ফিরে তাকানো।(ইসলাম সাওয়াল জাওয়াব, ফাতাওয়া নং ৬৫৮৪৭)
.
উল্লেখিত সুন্নতসমূহের মধ্যে কিছু বিষয়ে ফিকাহবিদদের মাঝে মতভেদ বিদ্যমান। কোনো কোনো ইমামের মতে তা ওয়াজিব, আবার অন্যদের দৃষ্টিতে তা সুন্নত মাত্র। ফিকাহের গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। তবে সালাতে এসব সুন্নতের কোনোটি ছেড়ে দিলে সালাত বাতিল হয় না, যদিও সওয়াবের ঘাটতি হতে পারে। সর্বজ্ঞ আল্লাহই ভালো জানেন।”
▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।