মসজিদে হামলা ও ভাঙচুরের পরিণাম

প্রশ্ন: ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদে হামলা ও ভাঙচুরের পরিণাম কী?
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর ইসলাম এক শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল ধর্ম, যেখানে চরমপন্থা, সহিংসতা ও উগ্রতার কোনো স্থান নেই। বরং ইসলামের ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয় এই ধর্মের ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষা, মানবতা ও ন্যায়পরায়ণতার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অগণিত মানুষকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে এসেছে। ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সালাত, যা মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও আত্মিক বন্ধনের এক অনন্য মাধ্যম। আর এই সালাত আদায়ের শ্রেষ্ঠ স্থান হলো মসজিদ যা ইসলামে শুধু ইবাদতের স্থান নয়, বরং ‘আল্লাহর ঘর’ হিসেবে বিবেচিত একটি পবিত্র স্থান। মসজিদে আগমনকারী ব্যক্তিরা আল্লাহর মেহমান। মসজিদ নির্মাণ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। যেমন:
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ، أَوْ أَصْغَرَ، بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য টিড্ডির ঢিবির ন্যায় বা তার চাইতেও ক্ষুদ্র একটি মাসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন”।(ইবনু মাজাহ হা/৭৩৮; ইবনু হিব্বান হা/১৬১৮; সহীহুত তারগীব হা/২৭১) অন্য বর্ণনায় আছে- مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا، بَنَى اللهُ لَهُ مِثْلَهُ فِي الْجَنَّةِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ (ঘর) তৈরী করবেন”।(তিরমিযী হা/৩১৮; ইবনু মাজাহ হা/৭৩৬) মসজিদ নির্মাণের গুরুত্ব এতটাই বেশী যে, রাসূল (ﷺ) পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। মা আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَمَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبِنَاءِ الْمَسَاجِدِ فِي الدُّوْرِ وَأَنْ تُنَظَّفَ وَتُطَيَّبَ، “রাসূল (ﷺ) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করতে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং সুবাসিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন”।(আবু দাঊদ হা/৪৫৫) বাইহাকী তাঁর ‘শুআবুল ঈমান’ নামক গ্রন্থে আমর বিন মায়মূন আল-আওদি থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ আমাদেরকে জানিয়েছেন যে: মসজিদগুলো হচ্ছে জমিনে আল্লাহ্‌র ঘর। যে ব্যক্তি এ ঘরে আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাত করতে আসবে আল্লাহ্‌র কাছে তার প্রাপ্তি হচ্ছে তাকে সম্মানিত করা।”(বাইহাকী ‘শুআবুল ঈমান’হা/২৯৪৩; সিলসিলা সহীহাহ হা/১১৬৯; ইমাম আলবানী সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন)
.
দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে, আজকের বাংলাদেশে এমন কিছু দল ও ব্যক্তি বিদ্যমান, যারা নিজেদের ‘হানাফি’ পরিচয়ে আবৃত করে বিকৃত ইসলামি চিন্তাধারার প্রচারক হয়ে উঠেছে। তারা সহীহ আক্বীদা ও বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে পরিচালিত সালাফি আহ্বানকে সহ্য করতে না পেরে, অশালীনতা, চরমপন্থা ও সহিংসতা অবলম্বন করে মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বেদনাদায়ক হলেও সত্য, এদের কেউ কেউ বাহ্যিকভাবে ‘সহনশীলতার’ ভান করে মন্দির পাহারার দায়িত্ব পালন করলেও, সেই হাতেই আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদ ও সালাফি মাদরাসাগুলোর ওপর হামলা চালায়, ভাঙচুর করে এবং মালামাল লুট করে। এমনকি তারা মসজিদগুলো দখল করে নিচ্ছে, তারা কিবলামুখী মিম্বার ও কুরআনের তাক পর্যন্ত ধ্বংস করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। এ ধরনের কার্যকলাপ শুধু বিভ্রান্তি নয়, বরং ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধ ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য এবং আল্লাহর ঘরের পবিত্রতার সরাসরি অবমাননা। একজন খাঁটি মুসলিম কখনোই মসজিদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতে পারে না। যারা আল্লাহর ঘর ভাঙে, লুটে নেয়, অবমাননা করে, তারা নিঃসন্দেহে ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে যালিম ও সীমালঙ্ঘনকারী। এই কাজ মহান আল্লাহর ঘরের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশের নামান্তর এবং তা ইসলামের ভিত্তিমূলকে আঘাত করার শামিল। এটি নিছক একটি বড় গুনাহ নয়, বরং তা এক ভয়াবহ অপরাধ যা ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না। বরং আল্লাহর ঘরে হামলাকারীরাই প্রকৃত অর্থে সবচেয়ে বড় যালিমদের অন্তর্ভুক্ত। এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللّٰهِ اَنۡ یُّذۡكَرَ فِیۡهَا اسۡمُهٗ وَ سَعٰی فِیۡ خَرَابِهَا ؕ اُولٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمۡ اَنۡ یَّدۡخُلُوۡهَاۤ اِلَّا خَآئِفِیۡنَ ۬ؕ لَهُمۡ فِی الدُّنۡیَا خِزۡیٌ وَّ لَهُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ “আর তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর মসজিদগুলোতে তার নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং এগুলো বিরাণ করার চেষ্টা করে? অথচ ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে তাদের জন্য সেগুলোতে প্রবেশ করা সঙ্গত ছিল না। দুনিয়াতে তাদের জন্য লাঞ্ছনা ও আখেরাতে রয়েছে মহাশাস্তি।”(সূরা বাকারাহ: ২/১১৪) “উক্ত আয়াত থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয় যারা আল্লাহর ঘর, অর্থাৎ মসজিদে তাঁর ইবাদতে বাধা সৃষ্টি করে এবং মসজিদ ধ্বংস বা নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে সেখানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট কিংবা অগ্নিসংযোগের মতো নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তারা নিঃসন্দেহে অতি বড় জালিম। এদের জন্য পার্থিব জীবনে অপমান ও লাঞ্ছনা অবধারিত, আর পরকালে তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে এক ভয়াবহ, মর্মন্তুদ শাস্তি।”
.
উক্ত আয়াতের তাফসিরে ইমাম আবু ‘আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল ক্বুরত্বুবী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭১ হি.] বলেছেন:… وأراد بالمساجد هنا بيت المقدس ومحاريبه. وقيل الكعبة، وجمعت لأنها قبلة المساجد أو للتعظيم. وقيل: المراد من منع من كل مسجد إلى يوم القيامة، وهو الصحيح، لأن اللفظ عام ورد بصيغة الجمع، فتخصيصها ببعض المساجد وبعض الاشخاص ضعيف، والله تعالى أعلم.“এখানে ‘মসজিদসমূহ’ বলতে বোঝানো হয়েছে বায়তুল মাকদিস (জেরুজালেম) ও তার সালাতের স্থানসমূহকে। আর কেউ কেউ বলেছেন, এতে কাবা (মসজিদুল হারাম)-কে বোঝানো হয়েছে। এখানে ‘মসজিদসমূহ’ (বহুবচনে) এসেছে, কারণ এটি সকল মসজিদের কিবলা, অথবা এর মহত্ত্বের কারণে বহুবচনে ব্যবহার করা হয়েছে। আরেকটি মত হলো এখানে সেসব ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যে কিয়ামত পর্যন্ত যেকোনো মসজিদে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে এটাই সঠিক মত। কারণ শব্দটি আম (ব্যাপক) এবং বহুবচনের রূপে এসেছে। এটিকে কেবল কিছু নির্দিষ্ট মসজিদ বা কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির সাথে সীমাবদ্ধ করে ব্যাখ্যা করা দুর্বল মত। আর আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।” ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) এটাও বলেছেন: خراب المساجد قد يكون حقيقياً كتخريب بخت نصر والنصارى بيت المقدس على ما ذكر أنهم غزوا بني إسرائيل مع بعض ملوكهم – قيل: اسمه نطوس بن اسبيسانوس الرومي فيما ذكر الغزنوي – فقتلوا وسبوا، وحرقوا التوراة، وقذفوا في بيت المقدس العذرة وخربوه. ويكون مجازا كمنع المشركين المسلمين حين صدوا رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عن المسجد الحرام، وعلى الجملة فتعطيل المساجد عن الصلاة وإظهار شعائر الإسلام فيها خراب لها“মসজিদসমূহের ধ্বংস বাস্তবিক অর্থেও হতে পারে যেমন বুখতনসর ও খ্রিষ্টানরা বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস করেছিল, যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে যে তারা বনি ইসরাইলদের ওপর তাদের এক রাজার নেতৃত্বে হামলা চালিয়েছিল। বলা হয় তার নাম ছিল ‘নাতুস ইবনু আসবিসানুস’, একজন রোমান, যেমনটি গজনবী উল্লেখ করেছেন। তারা হত্যা করেছিল, বন্দি করেছিল, তাওরাত পুড়িয়ে দিয়েছিল, বাইতুল মুকাদ্দাসে মলত্যাগ করেছিল এবং শেষ পর্যন্ত পবিত্র সেই স্থাপনাটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিল। আবার এটি রূপক অর্থেও হতে পারে যেমন মুশরিকরা মুসলিমদের মসজিদে প্রবেশ করতে বাধা দিত, এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে তারা বাধা দিয়েছিল। সার্বিকভাবে বলা যায়,যখন মসজিদগুলোতে সালাত কায়েমে বাধা দেওয়া হয়, কিংবা ইসলামের প্রতীকি চিহ্ন ও বিধানের প্রকাশ রুদ্ধ করা হয় তখন সেটিও মসজিদ ধ্বংসেরই একটি (রূপ) প্রকার।”(তাফসিরে কুরতুবি: খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৭৪)
.
ইবনুল আরাবি (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর গ্রন্থে আহকামুল কুরআন বলেছেন:فائدة هذه الآية تعظيم أمر الصّلاة فإنّها لمّا كانت أفضل الأعمال وأعظمها أجراً كان منعها أعظم إثماً، وإِخراب المساجد تعطيل لها وقطع بِالمسلمِين في إظهار شعائرهم وتأليف كلمتهم “এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হলো সালাতের গুরুত্ব ও মর্যাদার বিবরণ। কারণ সালাত হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আমল এবং সবচেয়ে বেশি সওয়াব অর্জনের মাধ্যম। অতএব, সালাত আদায়ে বাধা সৃষ্টি করা অন্যতম বড় গুনাহসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর মসজিদকে ধ্বংস বা পরিত্যক্ত করে দেওয়ার অর্থ হলো মসজিদকে (নিষ্ক্রিয়) অকার্যকর করে দেওয়া, যার ফলে মুসলিমদের ইবাদতের নিদর্শন প্রকাশ এবং তাঁদের ঐক্যবদ্ধতা বিনষ্ট হয়ে যায়।”(ইবনুল আরাবী ‘আহকামুল কুরআন’ খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৫১) ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম:৭০১ মৃত: ৭৭৪ হি.] বলেন,”মক্কার মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীদেরকে মক্কা থেকে বের হতে বাধ্য করেছিল এবং পবিত্র কা‘বায় মুসলিমদেরকে ইবাদত করতে বাধা দিয়েছিল। এমনকি হুদায়বিয়ার সন্ধিতেও একমাত্র আল্লাহর ঘর যিয়ারতের উদ্দেশ্যেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় প্রবেশ করতে চাইলে তারা বাধা দেয়।”(তাফসীর ইবনু কাসীর, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮৭-৩৮৮)।
.
সৌদি আরবের প্রথিতযশা মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুর রহমান বিন নাসির আস-সা‘দী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৭৬ হি./১৯৫৬ খ্রি.] বলেছেন,”

أي: لا أحد أظلم وأشد جُرما، ممن منع مساجد الله، عن ذكر الله فيها وإقامة الصلاة وغيرها من الطاعات. وسعى أي: اجتهد وبذل وسعه في خرابها الحسي والمعنوي، فالخراب الحسي: هدمها وتخريبها، وتقذيرها، والخراب المعنوي: منع الذاكرين لاسم الله فيها، وهذا عام، لكل من اتصف [ ص: 86 ] بهذه الصفة، فيدخل في ذلك أصحاب الفيل، وقريش، حين صدوا رسول الله عنها عام الحديبية، والنصارى حين أخربوا بيت المقدس، وغيرهم من أنواع الظلمة، الساعين في خرابها، محادة لله، ومشاقة، فجازاهم الله، بأن منعهم دخولها شرعا وقدرا، إلا خائفين ذليلين، فلما أخافوا عباد الله، أخافهم الله، فالمشركون الذين صدوا رسوله، لم يلبث رسول الله صلى الله عليه وسلم إلا يسيرا، حتى أذن الله له في فتح مكة، ومنع المشركين من قربان بيته، فقال تعالى: يا أيها الذين آمنوا إنما المشركون نجس فلا يقربوا المسجد الحرام بعد عامهم هذا .وأصحاب الفيل، قد ذكر الله ما جرى عليهم، والنصارى، سلط الله عليهم المؤمنين، فأجلوهم عنه.وهكذا كل من اتصف بوصفهم، فلا بد أن يناله قسطه، وهذا من الآيات العظيمة، أخبر بها الباري قبل وقوعها، فوقعت كما أخبر.واستدل العلماء بالآية الكريمة، على أنه لا يجوز تمكين الكفار من دخول المساجد.لهم في الدنيا خزي أي: فضيحة كما تقدم ولهم في الآخرة عذاب عظيم .وإذا كان لا أظلم ممن منع مساجد الله أن يذكر فيها اسمه، فلا أعظم إيمانا ممن سعى في عمارة المساجد بالعمارة الحسية والمعنوية، كما قال تعالى: إنما يعمر مساجد الله من آمن بالله واليوم الآخر .بل قد أمر الله تعالى برفع بيوته وتعظيمها وتكريمها، فقال تعالى: في بيوت أذن الله أن ترفع ويذكر فيها اسمه .وللمساجد أحكام كثيرة، يرجع حاصلها إلى مضمون هذه الآيات الكريمة

“অর্থাৎ আল্লাহর ঘরসমূহে যেখানে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয়, সালাত কায়েম করা হয়, এবং অন্যান্য ইবাদত করা হয় সেগুলিতে আল্লাহর জিকির ও ইবাদত হতে বাধা দেয়া ব্যক্তির চেয়ে বড় জালিম ও অপরাধী আর কেউ নেই। আর “সে ধ্বংসে সচেষ্ট হলো’ এর অর্থ হলো সে এর ধ্বংসে পরিপূর্ণভাবে চেষ্টা করল এবং সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যয় করল, তা হোক শারীরিক কিংবা আধ্যাত্মিকভাবে। শারীরিক ধ্বংসের অর্থ মসজিদ ভেঙে ফেলা, ধ্বংস করা, এবং নোংরা ও অপবিত্র করা। আর আধ্যাত্মিক ধ্বংস হলো আল্লাহর নাম সেখানে স্মরণ করা বন্ধ করে দেওয়া। এই আয়াতের বর্ণনা সেই সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাধারণভাবে প্রযোজ্য, যারা এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এতে অন্তর্ভুক্ত: হস্তীবাহিনী (আবরাহার সেনা), কুরাইশ, যারা হুদায়বিয়ার বছরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কাবা প্রবেশে বাধা দিয়েছিল, খ্রিস্টানরা, যারা বায়তুল মাকদিস ধ্বংস করেছিল, এবং অন্যান্য সকল যালিম যারা মসজিদ ধ্বংসে সচেষ্ট তারা আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও বিদ্রোহে লিপ্ত।ফলে আল্লাহ তাদের প্রতিদান স্বরূপ মসজিদে প্রবেশ থেকে তাদের বঞ্চিত করলেন শরীয়তের দিক দিয়েও এবং তাকদীরের দিক দিয়েও, তারা কেবল ভীত ও লাঞ্ছিত অবস্থায়ই প্রবেশ করতে পারে। তারা যেভাবে আল্লাহর বান্দাদের ভয় দেখিয়েছে, আল্লাহও তাদেরকেই ভয়ভীতিতে ফেলেছেন। মুশরিকরা যারা রাসূলকে বাধা দিয়েছিল, তারা অল্প সময়ের মধ্যেই দেখলো আল্লাহ রাসূলকে মক্কা বিজয়ের অনুমতি দিলেন এবং মুশরিকদের কাবার নিকটবর্তী হওয়াও নিষিদ্ধ করলেন। যেমন আল্লাহ বলেন: “হে যারা ঈমান এনেছ, মুশরিকরা তো অপবিত্র; সুতরাং তারা যেন এ বছরের পর কাবার নিকটে না আসে।” (সূরা আত-তাওবা: ২৮) হস্তীবাহিনীর ব্যাপারে আল্লাহ তাদের উপর কী ঘটেছিল তা উল্লেখ করেছেন। আর খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে আল্লাহ মুমিনদেরকে বিজয়ী করেছেন এবং তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করেছেন। এই নীতি সকল সময়ের জন্য সত্য: যে কেউ তাদের মতো আচরণ করবে, সে-ও অনুরূপ শাস্তি ভোগ করবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশাল নিদর্শন, যা তিনি ঘটনার আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন এবং তা সেভাবেই বাস্তবায়িত হয়েছে। এই মহিমান্বিত আয়াত থেকে আলেমগণ প্রমাণ নিয়েছেন যে, কাফেরদেরকে মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া বৈধ নয়। তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে অপমান ও লাঞ্ছনা। যেমন পূর্বে বলা হয়েছে আর আখিরাতে রয়েছে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি। আর যেহেতু আল্লাহর ঘরে তাঁর নাম স্মরণে বাধা দেওয়া সবচেয়ে বড় যুলুম, তাই সবচেয়ে বড় মুমিন হলো সে ব্যক্তি, যে মসজিদ গঠনে ও রক্ষণাবেক্ষণে শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উভয় দিকেই সচেষ্ট থাকে, যেমন আল্লাহ বলেন: “আল্লাহর মসজিদসমূহ কেবল তারাই রক্ষণাবেক্ষণ করে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনেছে।” (সূরা আত-তাওবা: ১৮) বরং আল্লাহ তাঁর ঘরসমূহকে উঁচু করা এবং সেখানে তাঁর নাম স্মরণ করা হোক এই মর্মে আদেশ দিয়েছেন, যেমন তিনি বলেন: “সেসব ঘরে, যেগুলোকে আল্লাহ মর্যাদা দিতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করা হয়, অনুমতি দিয়েছেন।” মসজিদসমূহ সম্পর্কিত বহু বিধান রয়েছে, যেগুলোর সারাংশ এই মহৎ আয়াতসমূহের মর্মার্থেই নিহিত।”(তাফসির আস সাদী; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৮৬)
.
শায়খ মুহাম্মদ গাজ্জালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:إن القضاء على المسجد يعني إبادة دين ومحو تاريخ واستئصال أمة
“মসজিদ ধ্বংস করার অর্থ হলো ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করা, একটি ইতিহাসকে মুছে ফেলা, এবং একটি জাতিকে শিকড়সহ উপড়ে ফেলা।”
.
“পরিশেষে, আমরা মুসলিম সমাজকে আহ্বান জানাই যেন তারা আল্লাহর ঘর ধ্বংসে লিপ্ত বিভ্রান্তচক্রের চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকে এবং সচেতন ভূমিকা গ্রহণ করে। আমরা আল্লাহর দরবারে দোয়া করি তিনি যেন আমাদের সকলকে সঠিক পথের হেদায়াত দান করেন, বাতিল থেকে হিফাযত করেন এবং হক ও সত্যের ওপর অবিচল রাখেন।” (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি.)।
অধ্যয়নরত, কিং খালিদ ইউনিভার্সিটি,সৌদি আরব।

Share: