১৫ই শাবানের পর নফল সিয়াম পালনের বিধান

প্রশ্ন: ১৫ই শাবানের পর নফল সিয়াম পালনের বিধান কী? হাদীসে এসেছে রমদ্বনের দুই-একদিন আগে সিয়াম রাখা জায়েয নয়। বিষয়টি পরিস্কার ভাবে বুঝতে পড়ুন এই দলিলটি।
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: শাবান মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশে অর্থাৎ ১৫ই শাবানের পর সিয়াম রাখা নিষেধ মর্মে রাসূল (ﷺ) থেকে কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা দুই অবস্থা ব্যতীত। অর্থাৎ- (১). যে ব্যক্তির নিয়মিত সিয়াম রাখার বিশেষ কোন অভ্যাস আছে। যেমন— যে ব্যক্তির অভ্যাস হচ্ছে প্রতি সোমবার ও প্রতি বৃহস্পতিবারে সিয়াম রাখা; সে ব্যক্তি এ দুইদিন সিয়াম রাখতে পারবেন; এমনকি সেটা যদি শাবান মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশে পড়ে তবুও। এটি হাদীসে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবেনা। (২). যদি কেউ শাবান মাসের প্রথম অংশের সাথে দ্বিতীয় অংশেও লাগাতরভাবে সিয়াম রাখে। সেটা এভাবে যে, শাবান মাসের প্রথমার্ধে সিয়াম শুরু করে রমাদ্বন শুরু হওয়া পর্যন্ত সিয়াম অব্যাহত রাখা। এটি জায়েজ। এটিও নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবেনা। (ইসলামি সাওয়াল জবাব ফাতওয়া নং -১৩৭২৬)।
.
▪️ এবার সকল শংসয় দুর করতে হাদীসগুলো লক্ষ করুন:
.
(ক). আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,যখন শাবান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হয়; তখন তোমরা সাওম রেখো না।” (আবু দাউদ হা/ ৩২৩৭; তিরমিযী হা/৭৩৮; ইবন মাজাহ হা/১৬৫১) বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] সহীহ তিরমিযী নামক কিতাবে হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত বলেছেন পৃ: ৫৯০)। হাদীসটি দ্বারা সুপষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, শাবানের পনেরো দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ১৬ তারিখ থেকে সাওম পালন করা নিষিদ্ধ। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এ বিষয়ে বিপরীতমুখী হাদীসও বিদ্যমান আছে, যেগুলো সাওম রাখা জায়েয হওয়াকে প্রমাণ করে। (যেমন: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯১৪; সহীহ মুসলিম, হা/ ১০৮২-তে বর্ণনা করেন)
.
(খ). আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, তোমরা রমাদ্বনের একদিন বা দুইদিন পূর্ব থেকে (নফল) সাওম রাখা আরম্ভ করে রমদ্বন মাসকে এগিয়ে এনো না। তবে কারো পূর্ব থেকেই ঐ দিনে সাওম রাখার অভ্যাস থাকলে তার বিষয়টি ব্যতিক্রম, তার জন্য সাওম রাখাই উচিত, সে যেন সাওম রাখে। (সহীহ বুখারী, হা/১৯১৪; সাহীহ মুসলিম, হা/১০৮২; ইবনে মাজাহ, হা/১৬৫০; আবু দাউদ হা/২০১৬, তিরমিজি হা/৬৮৮)। এই হাদীসটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অর্ধ শাবানের পর সাওম রাখতে অভ্যস্ত এমন ব্যক্তির জন্য সাওম রাখা জায়েয আছে। যেমন; কোনো ব্যক্তির অভ্যাস হলো প্রতি সোমবার অথবা বৃহস্পতিবারে সাওম রাখা। ঘটনাক্রমে শাবানের ২৯ তারিখ সোমবার অথবা বৃহস্পতিবার, তখন তার জন্য তার অভ্যাসানুযায়ী সেদিন নফল সাওম রাখাতে কোনো অসুবিধা নেই। অথবা কোনো ব্যক্তি একদিন পরপর সাওম রাখতো, তার জন্যও সাওম রাখাতে কোনো অসুবিধা নেই। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, সন্দেহের দিনে কাযা সিয়াম, মানতের সিয়াম ও কাফফারার সিয়াম পালন করা বৈধ। কারণ, সেদিনে যদি নফল সিয়াম পালন করা যায়, তাহলে উপরিউক্ত ফরয সিয়াম পালন করা আরো উত্তম। (ইমাম নববী আল-মাজমূ, ৬/৩৯৯)। সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, “তোমরা রামাযানের একদিন কিংবা দু’দিন আগে থেকে রোযা রাখা শুরু করবে না।” হাদিসটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন: আলেমগণ এ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে মতভেদ করেছেন যে, এটি কি হারামসূচক নিষেধাজ্ঞা; নাকি মাকরুহসূচক নিষেধাজ্ঞা? সঠিক অভিমত হচ্ছে—এটি হারামসূচক নিষেধাজ্ঞা। বিশেষ করে সন্দেহের দিনের ব্যাপারে।(শারহু রিয়াদুস সালেহীন, ৩/৩৯৪)
.
অপর বর্ননায় আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি সন্দেহের দিনে সিয়াম পালন করবে, সে আবুল ক্বাসেম মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে অস্বীকার করল।’ (তিরমিযী হা/৬৮৬, নাসায়ী হা/২১৮৮ ইবনু মাজাহ হা/১৬৪৫ সনদ সহীহ) অর্থাৎ-পূর্ব সতর্কতামূলক রমাযান শুরু হলো কিনা এ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে রমাযান মাসের চাঁদ দেখা না গেলে অথবা শা‘বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ না হলে রমাযানের সিয়ামের নিয়্যাতে সিয়াম পালন করবে না। কারণ, রমাযানের সিয়াম চাঁদ দেখার সাপেক্ষে। সুতরাং এ ব্যাপারে নিজেকে ভারগ্রস্ত করা উচিৎ নয়। আর এখানে সন্দেহের দিন থেকে উদ্দেশ্য শা‘বান মাসের ত্রিশ তারিখ যদি ঐ রাতে আকাশে মেঘ থাকার কারণে চাঁদ না দেখা যায়। ফলে এ দিনটি শা‘বান মাসেরও হতে পারে আবার রমাযান (রমজান) মাসেরও হতে পারে। যেহেতু চন্দ্রমাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়, তাই এ ত্রিশতম দিন সন্দেহের দিন। এ রাতে চাঁদ দেখা গেলে সন্দেহ দূর হয়ে গেল। আর আকাশ পরিষ্কার থাকার পর চাঁদ না দেখা গেলেও সন্দেহ দূর হয়ে গেল। আর আকাশ মেঘলা থাকলে সন্দেহ সৃষ্টি হল। অতএব এ সন্দেহের সময়ে যে ব্যক্তি ঐ দিনে রমাযানের সিয়াম মনে করে সিয়াম পালন করল, সে নিঃসন্দেহে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবাধ্য হল। কেননা তিনি এ ক্ষেত্রে শা‘বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করার আদেশ দিয়েছেন আর সিয়াম পালনকারী এ নির্দেশ লঙ্ঘন করল না।(মিশকাতুল মাসাবিহ হা/১৯৭৭ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
.
(গ). ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এ মাসের মধ্যভাগে কিছু দিন সওম পালন করেছিলে? সে বলল, না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তার বদলে রমাযানের সিয়াম শেষ করে দু’দিন সিয়াম পালন করবে।(সহীহ মুসলিম হা/২৬৪২ ই.ফা. ২৬১৯, ই. সে. ২৬১৮) অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যখন তুমি রামাযানের ছিয়াম শেষ করবে, তখন ঐ দিনের স্থানে দুই দিন সিয়াম রাখবে(ত্বাবারাণী কাবীর, হা/২২০; সহীহ মুসলিম, হা/১১৬১; ফাৎহুল বারী, হা/১৯৮৩-এর আলোচনা দ্রঃ) এই হাদীসটি অনেকে বুঝতে পারেনি। হাদীসটির ব্যখ্যায়,শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.]এবং ভারতবর্ষে হাদীসশাস্ত্রের আরেক দিকপাল, মিশকাতুল মাসাবীহ’র বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ’র সম্মানিত মুসান্নিফ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ইমাম ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘আব্দুস সালাম মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৪ হি./১৯৯৪ খ্রি.]বলেছেন, জমহুর ওলামাদের মতে হাদীসটিতে শা‘বান মাসের শেষাংশ এ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, শাবান মাসের ২৮, ২৯, ৩০ তম দিন। তবে এ ক্ষেত্রে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, তোমরা একদিন কিংবা দু’দিন সিয়াম পালনের মাধ্যমে রমাযান কে এগিয়ে নিও না। অথচ এ হাদীসে শা‘বানের শেষের দিনে সিয়াম পালনের বিষয়টি স্পষ্ট। এর জবাবে বলা যায় যে,এই ব্যক্তির প্রতি মাসের শেষে সিয়াম পালন করার অভ্যাস ছিল। অথবা এটি তার মানতের সিয়াম ছিল। যেটি রাসূল (ﷺ) তাকে সেটি পরে আদায় করার নির্দেশ দেন। কেননা আল্লাহ নিকট ঐ আমলই সর্বাধিক প্রিয়, যা নিয়মিত করা হয়। তিনি ঐ ব্যক্তিকে বলেন, রামাযানের সিয়াম যখন শেষ করবে, তখন ঈদের পরবর্তী সময়ে শা‘বানের শেষ তারিখের বদলা স্বরূপ দুই দিন সিয়াম পালন করবে। (ইমাম নববী, শরহ মুসলিম ৮/৫৩; মির‘আতুল মাফাতীহ ৭/৪১; মিরক্বাত ৪/১৪১০)
.
(ঘ). আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণ শাবান মাস সাওম পালন করতেন। তিনি শাবান মাসে সাওম পালন করতেন,খুব কম সংখ্যক দিনই সাওম থেকে বিরত থাকতেন।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৬)। শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, এ বাক্যটি প্রথম বাক্যের ব্যাখ্যাস্বরূপ পুরো শাবান মাস সাওম রাখতেন -এ কথা দ্বারা অধিকাংশ সময় সাওম রাখতেন বলাই উদ্দেশ্য। অন্যথায় তিনি একেবারে ধারাবাহিকভাবে পূর্ণ মাস কখনোই সাওম রাখতেন না। হাদীসটি দ্বারা প্রমাণিত হয়, অর্ধ শাবানের পরও সাওম রাখা জায়েয আছে। তবে শর্ত হলো অর্ধ শাবনের পূর্বের ধারাবাহিকতা বা যোগসূত্রতা থাকতে হবে। ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম ১৫০ হি./৭৬৭ খ্রি. এবং মৃত্যু ২০৪ হি./৮২০ খ্রি.] উল্লিখিত সব হাদীসের ওপরই আমল করেন। তিনি বলেন, অর্ধ শাবানের পর সাওম রাখা বৈধ হবে না, তবে যদি কারো সাওম রাখার অভ্যাস থাকে অথবা যোগসূত্র থাকে তাহলে তার বিষয়টি ব্যতিক্রম। তার জন্য তার অভ্যাস অনুযায়ী অথবা যোগসূত্রতা ধরে সাওম রাখা বৈধ। এ মতটি (হাদীসের মধ্যে নিষেধটি হারাম বর্ণনার নিষেধ) শাফেঈদের অধিকাংশের মতে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং বিশুদ্ধ মত। আবার কারো মতে যেমন (রোইয়ানি রহ.) এখানে নিষেধটি হারামের জন্য নয়; বরং নিষেধটি মাকরুহের জন্য নির্ধারিত। (আল মাজমু-৬/৩৯৯-৪০০; ফতহুল বারী ৪/১২৯)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] এ অধ্যায়ের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, “জমহুর ওলামার মতে অর্ধ শাবানের পর সাওম রাখা নিষেধ হওয়া সর্ম্পকিত হাদীসগুলো দুর্বল। ফলে তারা বলেন অর্ধ শাবানের পর সাওম রাখা মাকরূহ নয়।” (রিয়াদুস-সালেহীনের পৃ: ৪১২)। হাফেয ইবন হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “জমহুরে ওলামাদের মতে অর্ধ শাবানের পর নফল সাওম রাখা জায়েয আছে। আর নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীসগুলোকে তারা দুর্বল হাদীস বলে আখ্যায়িত করেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইবন মুঈন (রাহিমাহুল্লাহ) উভয়ে বলেন, এসব হাদীস মুনকার…। বনে রজব, লাত্বায়িফুল মা‘আরিফ পৃষ্ঠা ৩২০; ফাতহুল বারী ৪/১২৯ তাহযীবুত তাহযীব ৮/১৮৭)। এ ছাড়া ইমাম বাইহাকী এবং ইমাম ত্বহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) ও হাদীসগুলোকে দুর্বল বলে সাব্যস্ত করেন। হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, হাদীসটি সমালোচনা মুক্ত নয়। আমরা আব্দুর রহমান ইবন মাহদীর নিকট প্রশ্ন করলে তিনি হাদীসটিকে সহীহ আখ্যা দেন নি এবং তার থেকে তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কোনো হাদীস বর্ণনা করেন নি। আর ইমাম আহমদ বলেন, আলা (রাহিমাহুল্লাহ) একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী, তার থেকে বর্ণিত এ একটি হাদীসকেই প্রত্যাখান করা যেতে পারে। আলা হলো আব্দুর রহমানের ছেলে, সে হাদীসটি তার পিতা থেকে এবং তার পিতা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেন। (ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৩৭২৬)
.
ইবনুল কাইয়্যেম (রাহিমাহুল্লাহ) তাহযীবুস-সুনান কিতাবে যারা হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন তাদের কথার উত্তর দিয়েছেন। তার উত্তরের সারাংশ নিম্নরুপ: মূলত ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটি সহীহ। আলা (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনাকারীর একা (তাফাররুদ) দ্বারা হাদীসটি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। ইমাম মুসলিম তার মুসলিম শরীফে (আলা তার পিতা থেকে এবং তার পিতা আবু হুরায়রা থেকে) এ সনদে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুতরাং আলা রহ.-এর তাফাররুদ কোনো দোষনীয় বিষয় নয়। এ ছাড়াও অনেক হাদীস এ রকম পাওয়া যায় যে, নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী এখানে একা। তা সত্ত্বেও উম্মত এ ধরনের হাদীসকে গ্রহণ করেছে এবং তদানুযায়ী আমল করে আসছেন। সুতরাং, হাদীসটি অগ্রাহ্য হওয়ার মতো যৌক্তিক কোনো কারণ বিদ্যমান না থাকায় গ্রহণ করাই হলো ইনসাফ। বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
.
পরিশেষে, প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, শাবান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হলে আপনারা রোজা রাখবেন না। (আবু দাঊদ,হা/২৩৩৭; তিরমিযী, হা/৭৩৮)। এটি সহীহ হাদীস। এই নিষেধাজ্ঞার গূঢ় রহস্য হচ্ছে: লাগাতার রোযা রাখার মাধ্যমে রমাদ্বনের সিয়াম পালনকারী রোযা পালনে দুর্বল হয়ে পড়বে। পাশাপাশি শাবান মাসের দ্বিতীয় অর্ধাংশের রোযা দুই প্রকার। যথা:(১). শাবান মাসের ১৬ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রোযা রাখা। এটি মাকরুহ; তবে যে ব্যক্তির বিশেষ কোন অভ্যাস আছে সে ব্যক্তি ব্যতীত। অর্থাৎ কেউ যদি ১৪ তারিখ, বা ১৫ তারিখ, বা ১৩ তারিখ থেকে রোজা শুরু করে, তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা সে বেশিরভাগ দিন রোজা রাখছে। আর কেউ যদি পুরো মাস অথবা মাসের বেশি সংখ্যক দিন রোজা রাখে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। পক্ষান্তরে সে যদি প্রথমার্ধে রোজা না রাখে, অতঃপর (প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর) ১৬ তারিখ থেকে রোজা রাখা শুরু করে, তাহলে এটাই (হাদীসে উদ্দিষ্ট) নিষিদ্ধ বিষয়।
.
(২). ইয়াওমুশ–শাক বা সন্দেহের দিনে সিয়াম রাখা কিংবা রমাদ্বনের একদিন বা দুইদিন আগে সিয়াম রাখা। এটি হারাম; তবে যে ব্যক্তির বিশেষ কোন নফল সিয়াম রাখার অভ্যাস আছে তার জন্য রোজা রাখতে কোনো সমস্যা নেই। অর্থাৎ যদি কারও সোম ও বৃহস্পতিবারে সিয়াম থাকার অভ্যাস থাকে, তাহলে তার জন্য (এ সময়ে) রোজা রাখায় কোনো সমস্যা নেই। অথবা যদি কারও একদিন রোজা রাখার এবং একদিন রোজা না রাখার (অর্থাৎ, দাঊদী রোজা রাখার) অভ্যাস থাকে, তাহলে তার জন্য (এ সময়ে) রোজা রাখায় কোনো সমস্যা নেই।(আল-মাজমূ‘, ৬/৩৯৯) পক্ষান্তরে অর্ধ শাবান অতিবাহিত হওয়ার পর শাবান উপলক্ষে রোজা শুরু করা জায়েজ নয়। কিন্তু কেউ যদি ১৪ তারিখ, বা ১৫ তারিখ, বা ১৩ তারিখ থেকে রোজা শুরু করে, তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা সে বেশিরভাগ দিন রোজা রাখছে। আর কেউ যদি পুরো মাস অথবা মাসের বেশি সংখ্যক দিন রোজা রাখে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। পক্ষান্তরে সে যদি প্রথমার্ধে রোজা না রাখে, অতঃপর (প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর) রোজা রাখা শুরু করে, তাহলে এটাই (হাদীসে উদ্দিষ্ট) নিষিদ্ধ বিষয়। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।