হজ্জ উমরা আদায়ের লক্ষ্যে কুরআন-হাদীসের নির্যাস নিম্ন লিখিত সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলি সকলের জন্য অনুসরণীয়

▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
◾[ক] একনিষ্ঠতার সাথে শুধুমাত্র আল্লাহ্‌কে রাযী-খুশী করার জন্য ওমরা পালন করা।[সূরা আনআম,১৬২ সূরা কাহফ ১১০]

◾[খ] উহা পালনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের তরীকা ও পদ্ধতি অনুসরণ কর।[মুসলিম হা/১৭১৮]

◾[গ] হালাল বা বৈধ উপার্জন থেকে ওমরা পালন করা। কেননা হালাল উপার্জন ছাড়া ইবাদত কবুল হয়না।[মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০]

◾[ঘ] ওমরার বিধান সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করা।কেননা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করা সবার জন্য ফরজ।[ ইবনে মাজা,২২৪]

◾[ঙ] পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সঠিকভাবে আদায় করা। কেননা সালাত আদায় না করলে ওমরা করে কোন লাভ নেই।[মুসলিম ৮২, আবূ দাঊদ ৪৬৭৮, নাসায়ী ৪৬৪, তিরমিযী ২৬২০]

◾[চ] যাবতীয় শির্‌ক, বিদআত ও পাপাচার থেকে বিরত থাকা।[সূরা নিসা,৩৬,৪৮ মায়েদা,৭২]

🔰হজ্জ ওমরা ফরয হওয়ার শর্তাবলী:
_____________________________
◾(১) মুসলিম হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয় মুশরিকরা নাপাক, সুতরাং তারা যেন মসজিদুল হারামের নিকটবর্তী না হয় তাদের এ বছরের পর।’[সূরা তাওবা : ২৮]
বুঝা গেল, এতে যেকোনো ইবাদত সহীহ ও কবুল হওয়ার জন্য মুসলিম হওয়া পূর্বশর্ত।

◾(২) জ্ঞান সম্পন্ন হওয়াঃ বিবেকশূন্য ব্যক্তির ওপর হজ-উমরা জরুরী নয়। কারণ সে ইসলামের বিধি-বিধান জানা এবং আল্লাহর আদেশ বুঝার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং সে দায়িত্ব পালনে অক্ষম। তাই আল্লাহর নির্দেশ পালনে সে আদিষ্ট নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,বাচ্চা, পাগল ও ঘুমন্ত ব্যক্তির ওপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়।’[ইবন মাজাহ্‌ : ২৪০২]

◾(৩) স্বাধীন হওয়া। [আহমাদ, আবু দাউদ, নাসায়ী]

◾(৪) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়াঃ অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চা-যদিও সে বুঝার মত বা ভালো-মন্দ পার্থক্য করার মত জ্ঞান রাখে- তার জন্য হজ-উমরা আবশ্যক নয়। কেননা তার জ্ঞান ও শক্তি এখনো পূর্ণতা পায়নি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,তিনজন থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে : (তন্মধ্যে) শিশু থেকে, যতক্ষণ না সে যৌবনে উপনীত হয়।’[তিরমিযী : ৩২৪১] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘এবং শিশু থেকে যতক্ষণ না সে বালেগ হয়।[আবু দাউদ : ৩০৪৪] তবে বাচ্চারা যদি হজ বা উমরা আদায় করে, তবে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে। ইবন আব্বাস রা. বলেন, ‘একজন মহিলা একটি শিশুকে উঁচু ধরে জানতে চাইল, ‘হে আল্লাহর রাসূল, এর জন্য কি হজ রয়েছে?’ তিনি বললেন.‘হ্যাঁ, আর সওয়াব হবে তোমার।’[মুসলিম : ২/৪৭৯]

◾(৫) অর্থিক ও শারীরিক ক্ষমতা সমপন্ন হওয়াঃ মহান আল্লাহ বলেন, এবং সামর্থবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বাইতুল্লাহ্‌র হজ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।’[আলে ইমরান: ৯৭]
আপনার কোন ঋণ থেকে থাকলে হজ করার পূর্বেই তা পরিশোধ করে নিন। যাকাত, কাফফারা ও মানত ইত্যাদি পরিশোধ না করে থাকলে তাও আদায় করে নিন। কেননা এগুলো আল্লাহর ঋণ। মানুষের ঋণও পরিশোধ করে নিন। মনে রাখবেন, যাবতীয় ঋণ পরিশোধ ও হজের সফরকালীন সময়ে পরিবারের ব্যয় মেটানোর ব্যবস্থা করে হজের কার্যাদি সম্পন্ন করার মত অর্থ-কড়ি বা সামর্থ যদি আপনার থাকে তাহলে হজে যেতে আপনি আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান।

◾(৬) মহিলার জন্য স্বামী অথবা মাহরাম থাকাঃ ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে সফরের দূরত্বে গিয়ে হজ করতে হলে মাহরাম সাথে থাকা শর্ত। যে মহিলার মাহরাম নেই তার ওপর হজ ফরয নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,কোন মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া সফর না করে আর কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সাথে মাহরাম থাকা ছাড়া তার কাছে না যায়।’এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি অমুক অমুক যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা করেছি। এদিকে আমার স্ত্রী হজের ইচ্ছা করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে যাও।’[বুখারী : ১৮৬২] ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
কোন মহিলা যেন মাহরাম ছাড়া কখনো হজ না করে।’[দারা কুতনী : ২/৩০]

হজ্জের রুকন: হজ্জের রুকন চারটি। যথা :
১. ইহরাম বাঁধা: হজ্জে তামাত্তু’ হলে যুলহিজ্জার ৮ তারিখে যেখানে অবস্থান করা হয়, সেখান থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে।
২. ত্বাওয়াফে ইফাযা করা। [আল-হজ্জ, ২২/২৯]
৩. সা‘ঈ করা।[আল-বাক্বারা, ২/১৫৮ ছহীহ বুখারী, হা/১৭৯০দারাকুৎনী, হা/২৬১৬; আহমাদ, হা/২৭৪০৮; ইরওয়াউল গালীল, হা/১০৮৭]
৪. আরাফায় অবস্থান করা।[ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮; মিশকাত, হা/২৫৯৩, ২৫৯৫, ২৫৯৬।ইবনে মাজাহ, হা/৩০১৫।

🔰হজ্জ ও উমরার ওয়াজিবসমূহ :
_______________________________
হজ্জ কিংবা উমরায় যে সকল আমল সম্পাদন করা জরুরী, কিন্তু ছুটে গেলে হজ্জ-উমরা বাতিল হয়ে যায় না, তবে জরিমানা স্বরূপ কাফফারা দিতে হয়, সে সকল আমলকে হজ্জ-উমরার ওয়াজিব বলা হয়। ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, যে ব্যক্তি হজ্জ বা উমরার জরুরী আমল ভুলে গেছে অথবা ছেড়ে দিয়েছে, সে যেন রক্ত প্রবাহিত করে।[মুওয়াত্ত্বা মালেক, ১/৪১৯]অর্থাৎ পশু যবেহ করে।

🔰হজ্জের ওয়াজিব আটটি। যথা :
______________________________
▪️১. নির্ধারিত মীক্বাত হতে ইহরাম বাঁধা।[ছহীহ বুখারী, হা/১৫২৬; মিশকাত, হা/১১৮১]

▪️২. সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার মাঠে অবস্থান করা।[ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮; মিশকাত, হা/২৫৫৫।সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯০]

▪️৩. মুযদালিফায় রাত্রিযাপন করা।[আল-বাক্বারা, ২/১৯৮ সহীহ মুসলিম, হা/১২১৮; মিশকাত, হা/২৫৫৫]

▪️৪. ১০ তারিখে বড় জামরায় ৭টি এবং ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে ছোট জামরা, মধ্য জামরা ও বড় জামরায় প্রতিদিন মোট ২১টি পাথর মারা।[ছহীহ মুসলিম, হা/১২৯৯; নাসাঈ, হা/৩০৬৩; মিশকাত, হা/২৬২০।
. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৪৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৯৬; আবূ দাউদ, হা/১৯৭৪; মিশকাত, হা/২৬২১।ছহীহ বুখারী, হা/১৭৪৬; আবূ দাউদ, হা/১৯৭২; মিশকাত, হা/২৬৬০।]

▪️৫. কুরবানী করা।[ছহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮; আবূদাউদ, হা/২৮০৭; মিশকাত, হা/১৪৫৮] পশু জবাই করার স্থান ও হাদী ও কুরবানীর সময়সীমা [ইবনু মাজাহ, হা/৩০৪৮; সিলসিলা ছহীহ, হা/২৪৬৪। ছহীহ বুখারী, হা/১৯৯৮।ছহীহ মুসলিম, হা/১১৪১; মিশকাত, হা/২০৫০।মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৭৯৭; সিলসিলা ছহীহা, হা/২৪৭৬।]

▪️৬. মাথা ন্যাড়া অথবা চুল ছোট করা।[সূরা আল ফাহতা,২৭ সূবা বাকারা,১৯৬ সহীহ বুখারী,১৭২৮মুসলিম,১৩০৩]

▪️৭. ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ মিনায় রাত্রিযাপন করা।[ছহীহ বুখারী, হা/১৬৩৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩১৫; মিশকাত, হা/২৬৬২]

▪️৮. বিদায় ত্বাওয়াফ করা।[ছহীহ বুখারী, হা/১৬৭৮; নাসাঈ, হা/৩০৩২; মিশকাত, হা/২৬০৯। ইবনু মাজাহ, হা/৩০৭০; ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/৩০০০।ছহীহ মুসলিম, হা/১৩২৭; ইবনু মাজাহ, হা/৩০৭১; মিশকাত, হা/২৬৬৮।ছহীহ বুখারী, হা/১৭৫৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩২৮; ছহীহ ইবনু খুযায়মা, হা/২৯৯৯]

🔰হজ্জ ও উমরার সুন্নাতসমূহ :
_____________________________
হজ্জ ও উমরার সুন্নাত বলতে এমন সব কাজকে বুঝায়, যা পালন করলে নেকী হবে, কিন্তু ছুটে গেলে হজ্জ ও উমরা বাতিল হবে না এবং দমও ওয়াজিব হবে না। তবে কেউ যদি অনীহা ও তাচ্ছিল্য করে ছেড়ে দেয়, তাহলে গুনাহগার হবে। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়’।[ছহীহ বুখারী, হা/৫০৬৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০১

🔰হজ্জ ও উমরার সুন্নাতসমূহ নিম্নরুপ:-
▪️(১) ইযতেবা অর্থাৎ পুরুষদের ইহরামের চাদর ডান বগলের নিচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপরে তুলে দেওয়া এবং ডান কাঁধ খালি রাখা। এটা শুধু প্রথম ত্বাওয়াফের সময় করতে হবে।[আবু দাউদ,৮৮৪ তিরমিজি,৮৫৯]

▪️(২) রমল অর্থাৎ প্রথম ত্বাওয়াফের প্রথম তিন চক্কর দৌঁড়ের মতো করে দ্রুতপদে হাঁটা। অবশ্য এটা শুধু হজ্জ-উমরার উদ্দেশ্যে প্রথম যখন মক্কায় প্রবেশ করে উমরা করবে সেই উমরার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পরবর্তী ত্বাওয়াফগুলোতে এটা করার প্রয়োজন নেই।[আবূ দাঊদ, হা/২০০১; মিশকাত, হা/২৬৭৩]

▪️(৩) ত্বাওয়াফের সময় হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করা অথবা হাত দিয়ে স্পর্শ করে হাত চুম্বন করা, অথবা লাঠি দিয়ে ইশারা করে লাঠি চুম্বন করা অথবা পাথরের দিকে হাতের ইশারা করা এবং আল্লাহু আকবার বলা। উল্লেখ্য, হাত দ্বারা ইশারা করলে হাত চুম্বন করতে হবে না।[সহীহ বুখারী১৬১১ মিশকাত,২৫৬৭ও ২৫৭১]

▪️(৪) রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা। আর স্পর্শ করতে না পারলে এখানে হাত দ্বারা ইশারা করার বিধান নেই, কোন দোয়াও নেই। [সহীহ বুখারী,১৬০৯]

▪️(৫) ত্বাওয়াফ শেষে দুই রাকআত সালাত আদায় করা।[সহীহ বুখারী,১৬২৭ মুসলিম,১২৩৪]

▪️(৬) ত্বাওয়াফোত্তর সালাত শেষে যমযমের পানি পান করা। [মুসনাদে আহমেদ,১৫২৮০ ইরওউয়াল গালীল,১০১৭]

▪️(৭) সাফা-মারওয়া পাহাড়ে উঠে কিবলামুখী হয়ে যিকির করা, তাকবীর দেওয়া ও দুই হাত তুলে দু‘আ করা।[সহীহ মুসলিম,১২১৮ মিশকাত,২৫৭৫]

▪️(৮) সাফা-মারওয়ার মাঝে সবুজ চিহ্নিত অংশে শুধু পুরুষদের দৌঁড়ানো।[বায়হাকী সুনালুল কুবরা,৯৫৫৩-৫৪]

▪️(৯) পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলা।[তিরমিজি,৮৯৩ ও ৯০০ আবু দাউদ,১৯৮১]

▪️(১০) ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরায় পাথর নিক্ষেপের পর কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দু‘আ করা ইত্যাদি।[সহীহ বুখারী,১৭৫২-৫৩]

ফিদ্ইয়া:‘রুকন’ তরক করলে হজ্জ বিনষ্ট হয়। ‘ওয়াজিব’ তরক করলে ‘ফিদ্ইয়া’ ওয়াজিব হয়। এজন্য একটি বকরী কুরবানী দিবে অথবা ৬ জন মিসকীনকে তিন সা‘ খাদ্য দিবে অথবা তিনটি সিয়াম পালন করবে’।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৮৮; ইরওয়া হা/১১০০, ৪/২৯৯; ক্বাহত্বানী পৃঃ ৬৪-৬৫]

পক্ষান্তরে তামাত্তু হজ্জের হাদ্ই বা কুরবানী তরক করলে তাকে ১০টি সিয়াম পালন করতে হয়। ৩টি হজ্জের মধ্যে এবং ৭টি বাড়ী ফিরে’ (বাক্বারাহ ১৯৬)। আইয়ামে তাশরীক্ব অর্থাৎ ১১,১২,১৩ই যিলহাজ্জ তারিখে সাধারণভাবে সিয়াম নিষিদ্ধ হ’লেও এসময় ফিদ্ইয়ার তিনটি ছিয়াম রাখা যায়।[বুখারী হা/১৯৯৭-৯৮]

🔰ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ :
হজ্জ ও ওমরাহর ইহরাম সালাতে তাকবীরে তাহরীমার ন্যায়। ফলে ইহরাম বাঁধার পর মুহরিমের জন্য অনেকগুলি বিষয় নিষিদ্ধ থাকে। যেমন:-
__________________________________
হজ্জ ও উমরার কার্যক্রম শুরু করার নিয়্যতকেই ইহরাম বলা হয়। ‘ইহরাম’ অর্থ ‘হারাম করা’। ইহরাম বাঁধার কারণে কতগুলো কাজ হালাল হওয়া সত্ত্বেও হারাম হয়ে যায়। আর এজন্য একে ইহরাম বলা হয়।ইহরামের পর নিষিদ্ধ কাজ ৮টি

🔰ইহরামের পর নিষিদ্ধ বিষয় সমূহ:হজ্জ ও ওমরাহর ইহরাম সালাতে তাকবীরে তাহরীমার ন্যায়। ফলে ইহরাম বাঁধার পর মুহরিমের জন্য অনেকগুলি বিষয় নিষিদ্ধ থাকে। যেমন:

▪️(১) সুগন্ধি ব্যবহার করা।[সহীহ বুখারী, হা/১২৬৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১২০৬]

▪️(২) স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের জন্যই মাথার চুল এবং যে কোন উপায়ে শরীরের যে কোন স্থানের পশম উঠানো ও হাত-পায়ের নখ কাটা।[আল-বাক্বারা, ২/১৯৬]

▪️(৩) পশু-পক্ষী বা যেকোন প্রাণী শিকার করা। এমনকি শিকার ধরতে ইশারা-ইঙ্গিতে সহযোগিতা করা।[আল-মায়েদা, ৫/১] তবে ক্ষতিকর জীবজন্তু যেমন সাপ, বিচ্ছু, ইঁদুর, ক্ষ্যাপা কুকুর, মশা, উকুন ইত্যাদি মারার অনুমতি রয়েছে।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৯৮-৯৯]

▪️(৪) যাবতীয় যৌনাচার, বিবাহের প্রস্তাব, বিবাহের আক্বদ বা যৌন আলোচনা করা।ইবনু মাজাহ, হা/১৯৬৬]

▪️(৫) পুরুষের জন্য পাগড়ী, টুপী ও রুমাল ব্যবহার করা। তবে প্রচন্ড গরমে ছায়ার জন্য বা বৃষ্টিতে ছাতা বা ঐরূপ কিছু ব্যবহার করায় দোষ নেই।[ছহীহ বুখারী, হা/১৫৪২; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৭৭; নাসাঈ, হা/২৬৬৭]

▪️(৬) পুরুষের জন্য কোন প্রকারের সেলাই করা কাপড় যেমন জুববা, পাঞ্জাবী, শার্ট, গেঞ্জি, মোযা ইত্যাদি পরিধান করা। তবে তালি লাগানো ইহরামের কাপড় পরায় দোষ নেই ।[ছহীহ বুখারী, হা/১৫৪২]

▪️(৭) মহিলাদের জন্য মুখাচ্ছাদন ও হাত মোযা ব্যবহার করা। তবে পর পুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখা ওয়াজিব।[বুখারী হা/১৮৩৮; মিশকাত হা/২৬৭৮]

▪️(৮) ঝগড়া-বিবাদ করা এবং শরী‘আত বিরোধী কোন বাজে কথা বলা ও বাজে কাজ করা।

উপরোক্ত কাজগুলির মধ্যে কেবল যৌনমিলনের ফলেই ইহরাম বাতিল হবে। বাকীগুলির জন্য ইহরাম বাতিল হবে না। তবে ফিদইয়া ওয়াজিব হবে। অবশ্য যদি ভুলে কিংবা অজ্ঞতাবশে কিংবা বাধ্যগত কারণে অথবা ঘুম অবস্থায় কেউ কিছু করে ফেলে, তাতে কোন গোনাহ নেই বা ফিদ্ইয়া নেই।

পাশাপাশি উপরোক্ত নিষিদ্ধ বিষয় সমূহের উদ্দেশ্য হ’ল মুহরিমকে দুনিয়াবী সাজ-সজ্জা থেকে মুক্ত হ’য়ে পুরাপুরি আল্লাহমুখী করা। পুরুষের জন্য সেলাই বিহীন কাপড় পরিধানের উদ্দেশ্য হ’ল সকল জৌলুস ও প্রদর্শনী থেকে মুক্ত হ’য়ে আল্লাহর জন্য খালেস ও নিবেদিতপ্রাণ হও। আল্লাহু আলাম।
___________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।