স্ত্রী রামাদানের কাযা সিয়াম পালন অবস্থায় স্বামী তার সাথে সহবাস করেছে এখন তাদের উভয়ের করনীয় কি

উত্তর: কোন ব্যক্তি নারী বা পুরুষ কোন ফরয সিয়াম পালন করা শুরু করেছে যেমন: রামাদানের কাযা সিয়াম কিংবা শপথ ভঙ্গের কাফফারার সিয়াম তার জন্য কোন ওজর ছাড়া (যেমন: রোগ ও সফর) উক্ত সিয়াম ভেঙ্গে ফেলা তার জন্য জায়েয নয়। যদি কেউ ওজরের কারণে কিংবা ওজর ছাড়া রোযা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে তার উপর ঐ দিনের বদলে অন্য একদিন সিয়াম কাযা পালন করা ফরয। যদি তিনি কোন ওজর ছাড়া রোযাটি ভঙ্গ করে থাকেন তবে এ রোযাটি পুনরায় পালন করার সাথে তাকে এই হারাম কাজ থেকে তওবা করতে হবে।তবে সিয়াম বঙ্গ করার জন্য তাকে কোন কাফফারা দিতে হবে না। কেননা কাফফারা ফরয হয় শুধুমাত্র রমযান মাসের দিনের বেলায় সহবাস করার কারণে অন্য কারনে নয়।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন ফরয রোযা শুরু করেছে যেমন- রমযানের কাযা সিয়াম বা মানতের সিয়াম বা কাফ্‌ফারার সিয়াম তার জন্য এর থেকে বেরিয়ে যাওয়া জায়েয নয়। আলহামদুলিল্লাহ; এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই। (ইবনে কুদামা, খন্ড: ৪ পৃষ্ঠা: ৪১২ থেকে সংক্ষেপিত)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, কেউ যদি রমযান ব্যতিত অন্য কোন সিয়াম পালনকালে সহবাসে লিপ্ত হয়; যেমন: রমযানের কাযা সিয়াম বা মানতের সিয়াম কিংবা অন্য কোন সিয়াম সেক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হবে না। এটি সংখ্যা গরিষ্ঠ আলেমের অভিমত। তবে কাতাদা বলেছেন: রমযানের কাযা সিয়াম নষ্ট করার কারণে তার উপর কাফফারা আবশ্যক হবে। (ইমাম নববী ‘আল-মাজমু’খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ৩৮৩)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে একবার জিজ্ঞেস করা হয়:”একবার আমি রমযানের কাযা রোযা পালন করছিলাম। জোহরের পরে আমার ক্ষুধা লেগে গেল বিধায় আমি ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করে ফেললাম; ভুলে নয়, অজ্ঞতাবশতঃ নয়। আমার এ কর্মের হুকুম কী?

জবাবে তিনি বলেন: আপনার কর্তব্য ছিল সিয়াম পূর্ণ করা। ফরয সিয়াম (যেমন: রমযানের কাযা সিয়াম, মানতের সিয়াম) ভেঙ্গে ফেলা জায়েয নেই। এখন আপনার কর্তব্য হচ্ছে আপনি যা করেছেন এর থেকে তওবা করা। যে ব্যক্তি তওবা করে আল্লাহ্‌ তার তওবা কবুল করেন। (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১৫; পৃষ্ঠা: ৩৫৫ থেকে সমাপ্ত)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]কে জিজ্ঞেস করা হয় “ইতিপূর্বের বছরগুলোতে আমি কাযা রোযা আদায়কালে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছি। পরবর্তীতে ঐ দিনের বদলে অন্য একদিন রোযা রেখেছি। আমি জানি না এভাবে একদিন রোযা রাখার মাধ্যমে কাযা পালন হয়েছে; নাকি আমাকে লাগাতার দুইমাস রোযা রাখতে হবে? আমার উপরে কি কাফফারা আবশ্যক? দয়া করে জানাবেন।

জবাবে তিনি বলেন: কোন মানুষ যদি ফরয রোযা রাখা শুরু করেছে যেমন রামাদানের কাযা রোযা, শপথ ভঙ্গের কাফফারার রোযা, হজ্জের মধ্যে ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার আগে মাথা মুণ্ডন করে ফেলার ফিদিয়াস্বরূপ কাফফারার রোযা ইত্যাদি; তার জন্য কোন শরয়ি ওজর ছাড়া রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয নয়। তেমনিভাবে কেউ যদি কোন ফরয আমল শুরু করে তাহলে সে আমল শেষ করা তার উপর আবশ্যক। আমলটি কর্তন করাকে বৈধকারী কোন শরয়ি ওজর ছাড়া সে আমল ছেড়ে দেয়া জায়েয নয়। এই নারী যিনি কাযা রোযা পালন করা শুরু করেছিলেন, এরপর কোন ওজর ছাড়া রোযাটি ভেঙ্গে ফেলেছেন এবং অন্যদিন রোযাটির কাযা পালন করেছেন তার উপর কোন কিছু আবশ্যক নয়। কেননা কাযা শুধু একদিনের বদলে একদিন হয়ে থাকে। কিন্তু, তার কর্তব্য হচ্ছে-বিনা ওজরে ফরয রোযা ভঙ্গ করার কারণে তওবা করা এবং আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা (উসাইমীন,মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল খন্ড:২০ পৃষ্ঠা:৪৫১)
.
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] অপর ফাতওয়ায় বলেন,যদি রমাযানের রোযা কাযা রাখতে গিয়ে স্ত্রী-সহবাস করে ফেলে, তাহলে তার ফলে কাফফারা নেই। আর তার জন্য ঐ দিনের বাকী অংশ পানাহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাও জরুরী নয়। অবশ্য তার গোনাহ হবে। কারণ, সে ইচ্ছাকৃত একটি ওয়াজিব সিয়াম নষ্ট করেছে তাই। (ইমাম উসাইমীন আশ শারহুল মুমতে খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ৪১৩)
.
পরিশেষে, প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্য বলবো আপনি আপনার স্ত্রীর সিয়াম বিনষ্ট করে খুবই খারাপ কাজ করেছেন। কারণ কোন স্ত্রী যখন তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে রামাদানের কাযা সিয়াম পালন করে তখন স্বামীর তার সিয়াম বিনষ্ট করার কোন অধিকার নেই। তাই এখন আপনাদের দু’জনের উচিত আল্লাহর কাছে তওবা করা। এ কাজের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। এ কাজ পুনরায় না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া। আর যদি আপনি আপনার স্ত্রীকে জোরপূর্বক বাধ্য করে থাকেন তবে তার কোনো গুনাহ হবে না।আল্লাহ তা’আলা তা বলেছেন, যেমন, “যে সৎ কাজ করে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সে-ই ভোগ করবে। আপনার রব তাঁর বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুমকারী নন।”(সূরা ফুসসিলাত: ৪৬; সূরা আল-জাসিয়াহ: ১৫) মহান আল্লাহ আরো বলেন,যে গুনাহ করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়’(সূরা নিসা ৪/১১০ বিস্তারিত জানতে ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৫০৬৩২)(আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন)
_________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।