সালাতের ফযীলত সমূহ

প্রশ্ন: বিশুদ্ধ হাদীসের আলোকে সালাতের ফযীলত সমূহ কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সালাতের ফযীলত সংক্রান্ত কুরআন-সুন্নাহর কয়েকটি বাণী নিম্নে পেশ করা হল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَلَذِكْرُ اللهِ أَكْبَرُ ‘আর আপনি সালাত আদায় করুন। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (আনকাবূত ৪৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ‘আপনি দিনের দুই প্রান্তে এবং রাত্রির কিছু অংশে সালাত আদায় করুন। নিংসন্দেহে সৎকর্ম সমূহ মন্দ কর্মসমূহকে দূর করে দেয়।’ (হূদ ১১৪)।

১) কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করার পরেই ইসলামে সালাতের স্থান। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৭২]।

২) সালাত ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত,যা মিরাজের রাত্রিতে ফরয হয়। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫]।

৩) সালাত ইসলামের প্রধান স্তম্ভ। [তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৯]। যা ব্যতীত ইসলাম টিকে থাকতে পারে না।

৪) সালাত একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত,যা ৭ বছর বয়স থেকেই আদায়ের অভ্যাস করতে হয়। [আবুদাঊদ হা/২৪৭,মিশকাত হা/৫৭২]।

৫) সালাতের বিধ্বস্তি জাতির বিধ্বস্তি হিসাবে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। [মারিয়াম ১৯/৫৯]।

৬) পবিত্র কুরআনে সর্বাধিকবার আলোচিত বিষয় হ’ল সালাত। [কুরআনে অনূন্য ৮২ জায়গায় ‘সালাতের’ আলোচনা এসেছে। আল-মু‘জামুল মুফাহরাস লি আলফাযিল কুরআনিল কারীম (বৈরূত : ১৯৮৭]

৭) মুমিনের জন্য সর্বাবস্থায় পালনীয় ফরয হল সালাত, যা অন্য ইবাদতের বেলায় হয়নি।[বাক্বারাহ ২/২৩৮-৩৯; নিসা ৪/১০১-০৩]

৮) ইসলামের প্রথম যে রশি ছিন্ন হবে,তা হল তার শাসনব্যবস্থা এবং সর্বশেষ যে রশি ছিন্ন হবে তা হ’ল ‘সালাত’। [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৬৯; আলবানী, সহীহ জামে‘ ছাগীর হা/৫০৭৫]।

৯) দুনিয়া থেকে ‘সালাত’ বিদায় নেবার পরেই ক্বিয়ামত হবে। [সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব,হা/৫৬৯; আলবানী,সহীহ জামে‘ ছাগীর হা/৫০৭৫]।

১০) ক্বিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে তার সালাতের। সালাতের হিসাব সঠিক হ’লে তার সমস্ত আমল সঠিক হবে। আর সালাতের হিসাব বেঠিক হলে তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে। [আবুদাঊদ হা/৮৬৪-৬৬; নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৩০]।

১১) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত হিসাবে ‘সালাত’বকে ফরয করা হয়েছে,যা অন্য কোন ফরয ইবাদতের বেলায় করা হয়নি। [ত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫]।

১২) মুমিন ও কাফির-মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হ’ল ‘সালাত’। [মুসলিম হা/১৩৪ ‘ঈমান’ অধ্যায়; ঐ, মিশকাত হা/৫৬৯ ]।

১৩) জাহান্নামী ব্যক্তির লক্ষণ এই যে,সে সালাত বিনষ্ট করে এবং প্রবৃত্তির পূজারী হয়। (মারিয়াম ১৯/৫৯)।

১৪) ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নিকটে নিজের জন্য ও নিজ সন্তানদের জন্য সালাত কায়েমকারী হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন।(ইবরাহীম ১৪/৪০)।

১৫) মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সর্বশেষ অসিয়ত ছিল ‘সালাত’ ও নারীজাতি সম্পর্কে।[ইবনু মাজাহ হা/২৬৯৮ ‘অসিয়তসমূহ’ অধ্যায়; আবুদাঊদ হা/৫১৫৬]।
.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলতেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুম‘আ হতে পরবর্তী জুম‘আ, এক রামাযান হতে পরবর্তী রামাযান এর মধ্যকার যাবতীয় পাপের কাফফারা স্বরূপ। যদি সে কাবীরা গোনাহ সমূহ থেকে বিরত থাকে।’ (সহীহ মুসলিম হা/৫৭৪, ১/১২২ পৃঃ, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫; মিশকাত হা/৫৬৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫১৮, ২/১৫৮ পৃঃ, ‘সালাতের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ)।
.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের কারো বাড়ীর সামনের প্রবাহিত নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করলে তোমাদের দেহে কোন ময়লা বাকী থাকবে কি?তারা বললেন, না বাকী থাকবে না। তিনি বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের তুলনা ঠিক অনুরূপ। আল্লাহ এর দ্বারা গোনাহ সমূহ বিদূরিত করেন।’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/৫২৮, ১/৭৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫০৩, ২/৭ পৃঃ), ‘সালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়; মুসলিম হা/১৫৫৪, ১/২৩৫ পৃঃ, ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫২; মিশকাত হা/৫৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫১৯, ২/১৫৮ পৃঃ)।
.
উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমাদের প্রভু অত্যন্ত খুশি হন ঐ ছাগলের রাখালের প্রতি যে পর্বতশিখরে দাঁড়িয়ে সালাতের আযান দেয় এবং সালাত আদায় করে। তখন মহান আল্লাহ ফেরেশতাগণকে বলেন, তোমরা লক্ষ্য করো সে আযান দেয় এবং সালাত কায়েম করে এবং আমাকে ভয় করে। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম এবং জান্নাতে প্রবেশ করালাম।(আবুদাঊদ হা/১২০৩, ১/১৭০ পৃঃ; নাসাঈ হা/৬৬৬; মিশকাত হা/৬৬৫, পৃঃ ৬৫, ‘আযানের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬১৪, ২/২০২ পৃঃ)।
.
আবু ক্বাতাদা (রাঃ) বলেন,রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, নিশ্চয় আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি এবং আমার কাছে একটি অঙ্গীকার রেখেছি যে, যে ব্যক্তি ওয়াক্তমত সেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে ক্বিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে, আমি তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে ব্যক্তি সেগুলোর সংরক্ষণ করবে না তার জন্য আমার নিকট কোন অঙ্গীকার নেই।’ (সহীহ আবুদাঊদ হা/৪৩০, সনদ হাসান, ‘সালাত’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত হেফাযত করা’ অনুচ্ছেদ)।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করা পঁচিশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার ন্যায়। যখন উক্ত সালাত কোন নির্জন ভূখন্ডে আদায় করে অতঃপর রুকূ ও সিজদা পূর্ণভাবে করে,তখন সেই সালাত পঞ্চাশ সালাতের সমপরিমাণ হয়। (আবুদাঊদ হা/৫৬০, ১/৮৩ পৃঃ, সনদ সহীহ)।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ফজর ও আছরের সালাত নিয়মিত আদায় করে, সে জাহান্নামে যাবে না।’ ‘সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৪-২৫,‘সালাতের ফযীলতসমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩)।

দিবস ও রাত্রির ফেরেশতারা ফজর ও আসরের সালাতের সময় একত্রিত হয়। রাতের ফেরেশতারা আসমানে উঠে গেলে আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কি অবস্থায় রেখে এলে? যদিও তিনি সবকিছু অবগত। তখন ফেরেশতারা বলেন যে, আমরা তাদেরকে পেয়েছিলাম (আসরের) সালাত অবস্থায় এবং ছেড়ে এসেছি (ফজরের) সালাত অবস্থায়। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৬২৬) কুরআনে ফজরের সালাতকে ‘মাশহূদ’ বলা হয়েছে।(ইসরা ১৭/৭৮)। অর্থাৎ ঐ সময় ফেরেশতা বদলের কারণে রাতের ও দিনের ফেরেশতারা একত্রিত হয়ে সাক্ষী হয়ে যায়।(তিরমিযী, মিশকাত হা/৬৩৫)।

যে ব্যক্তি ফজরের সালাত আদায় করল,সে আল্লাহর যিম্মায় রইল। যদি কেউ সেই যিম্মা থেকে কাউকে ছাড়িয়ে নিতে চায়, তাকে উপুড় অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৬২৭)।
.
সালাত সংক্রান্ত আরো অনেক ফযীলত সহীহ হাদীস সমূহে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখেই আমাদেরকে আমল করতে হবে। যঈফ ও জাল হাদীস এবং কাল্পনিক মিথ্যা কাহিনীর কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ আমাদেরকে বিশুদ্ধভাবে সালাত আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন! আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।
_______________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।