সর্বশ্রেষ্ঠ চারটি মসজিদে সালাত আদায়ের ফজিলত

আসমানের নিচে ও জমিনের উপরে ফজিলতের দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ চারটি মসজিদে সালাত আদায়ের ফজিলত বিস্তারিত।
▬▬▬▬▬▬▬◖🌻◗▬▬▬▬▬▬▬
(১). দুনিয়ার সর্বপ্রথম মসজিদ পবিত্র নগরী মক্কায় মসজিদুল হারামে সালাত আদায়ের ফজিলত:
.
(ক). জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; মাসজিদুল হারাম ব্যতীত অপরাপর মসজিদের সালাত অপেক্ষা আমার মসজিদের সালাত হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ (ফাযীলাতপূর্ণ)। আর অন্যান্য মসজিদের সালাতের তুলনায় মাসজিদুল হারামের সালাত এক লক্ষ গুণ উত্তম। (মুসনাদে আহমাদ হা/ ১৪২৮৪, ১৪৮৪৭ ইবনে মাজাহ হা/১৪০৬)। তাহক্বীক্ব: এই হাদীসটিকে ইমাম মুনজিরি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু:৬৫৬ হি:] এবং আল-বুসায়রি সহীহ বলে গণ্য করেছেন। বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] এর সনদ দুই শাইখের শর্তে অর্থাৎ সহীহ বুখারী ও মুসলিম অনুযায়ী সহীহ বলেছেন। (ইরওয়া আল-গালীল, ৪/১৪৬ ও ১১২৯; ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১২৪৮১২)
.
(২). পবিত্র নগরী মদিনায় মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ের ফজিলত:
.
(খ). আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; মাসজিদুল হারাম ব্যতীত, অন্যান্য মসজিদে পড়া সালাতের তুলনায় আমার এ মসজিদে পড়া সালাত হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ। (খরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: বুখারী ১১৯০, মুসলিম ১৩৯১-৪, তিরমিযী ৩২৫, নাসায়ী ৬৯৪, ২৮৯৯; আহমাদ ৭২১২, ৭৩৬৭, ৭৪৩২, ৭৬৭৬, ৭৬৮১, ৭৮৮৫, ৯৬৮০, ৯৭০১, ৯৭৬২, ৯৯০৫, ৯৯২৬, ১০০৯৭; মুওয়াত্ত্বা মালিক ৪৬১, দারিমী ১৪১৮)। (তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: ইরওয়াহ ৯৭১)। হিশাম ইবনু আম্মার, সুফ্ইয়ান ইবনু উয়াইনাহ, যুহরী, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব, আবু হুরাইরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) হতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে।
.
(৩). মুসলিম উম্মাহর প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসায় সালাত আদায়ের ফজিলত:
.
(গ). মুসলিমদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসায় সালাত পড়লে কি পরিমাণ নেকি হয় এই মর্মে একাধিক বর্ননা পাওয়া যায়। তবে অধিকাংশ বর্ণনাই বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। তবে অধিকাংশ ওলামাদের তাহক্বীক অনুযায়ী ৫০০ এবং ২৫০ রাকআত সালাত আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়। যেমন: আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন- মসজিদুল হারামে একটি সালাত একলক্ষ সালাতের সমতুল্য এবং আমার মসজিদে একটি সালাত এক হাজার সালাতের সমতুল্য এবং মসজিদুল আকসায় একটি সালাত পাঁচশত সালাতের সমতুল্য। (আল-তাবারানী আল-কাবীরে এবং ইবনে খুজাইমা সহীহ পৃ.২৬৮)। (ইমাম মুনজিরি (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত্যু:৬৫৬ হি:] হাদীসটির সনদ হাসান বলেছেন,সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব: ২/২০৫)। আবুল হাসান নূরুদ্দীন আলী ইবনু আবি বকর আল-হায়সামী আল মিসরী (মৃ.৭৩৫-৮০৭হিঃ)-এর মতে হাদীসটির সনদ বিশুদ্ধ। (মাজমাঊয যাওয়ায়েদ ওয়া মামবাউ‘ল ফাওয়ায়েদ’,৪/৭)।
.
অপর বর্ণনায় মহানবী (ﷺ) বলেন, “বায়তুল মাকদিস অপেক্ষা আমার এই মসজিদে নামায চারগুণ উত্তম। আর তা হলো শ্রেষ্ঠ নামাযের স্থান। (মুস্তাদরাক হাকেম, ৪/৫০৯, বায়হাকী শুআবুল ঈমান, সিলসিলাহ সহীহাহ, ৬/২/৯৫৪ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৩৪৭৫১)। অপর এক বর্ণনায় এসেছে মসজিদুল আকসায় সালাত আদায় জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফের মাধ্যম। (ইবনু মাজাহ হা/১৪০৮; সহীহ আত-তারগীব হা/১৭৭৮; সনদ সহীহ)
.
জেনে রাখা ভালো যে, মসজিদুল আকসায় ব্যক্তির এক নামাজ পঞ্চাশ হাজার নামাজের সমতুল্য। অপর বর্ননায় ১ হাজার নামাজের সমতুল্য মর্মে হাদীস সহীহ নয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৪০৭ ও ১৪১৩ আবু দাউদ,৪৫৭)। (তাহক্বীক আলবানী: সনদ মুনকার। তাখরীজ আলবানী: যঈফ আবী দাউদ হা/৬৮)। কারণ উক্ত হাদিসের রাবী উসমান বিন আবু সাওদাহ সম্পর্কে ইবনু হিব্বান সিকাহ বললেও ইবনুল কাত্তান বলেন, তার অবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞাত।
.
(৪). মসজিদুল কুবায় সালাত আদায়ের ফজিলত:
.
(ঘ). সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের বাড়ীতে পবিত্রতা অর্জন করল অর্থাৎ ওযু করল, অতঃপর ক্বোবা মসজিদে এসে সালাত আদায় করল, তার জন্য একটি ওমরাহর সমান সওয়াব রয়েছে। (ইবনু মাজাহ হা/১৪১২; নাসাঈ হা/৬৯৯; আলবানী সহীহ আত-তারগীব হা/১১৮১) অপর বর্ণনায় ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন; নবী করীম (ﷺ) প্রতি শনিবার ক্বোবা মসজিদে আসতেন, কখনো পদব্রজে, কখনো সাওয়ারীতে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) ও ঐরূপ করতেন। (সহীহ বুখারী হা/১১৯৩)। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূল (ﷺ) এসে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। (সহীহ বুখারী হা/১১৯৪)(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।