রামাদানের উদ্দেশ্য এবং সিয়ামের রুকন ও সিয়াম পালনের ফজিলত

প্রশ্ন: রামাদানের উদ্দেশ্য কি? সিয়ামের রুকন কতটি ও কি কি? কুরআন-সুন্নাহর বিশুদ্ধ দলিলের আলোকে সিয়াম পালনের কি কি ফজিলত রয়েছে?
▬▬▬▬▬▬▬▪️🌻▪️▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: ‘রামাদান’ আরবী মাসের নবম মাস। এমাসে সকল উম্মতের উপর সিয়াম পালন করা শরীআতসিদ্ধ ইবাদত। রামাদানের সিয়ামের প্রধান ও মৌলিক উদ্দেশ্য হল তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন, যা বান্দার সার্বিক কল্যাণের সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী ভিত্তি। তাক্বওয়া হল- ‘আল্লাহর নির্দেশিত কাজ করা এবং তাঁর নিষিদ্ধ কাজ বর্জন করা’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১২০) তাক্বওয়ার কথা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমের বহু স্থানে বর্ণনা করেছেন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাক্বওয়া যাবতীয় কর্মের মুকুট (মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭৯১, সনদ সহীহ; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৫৫৫)।সুতরাং সিয়াম পালনের মাধ্যমে তাক্বওয়া অর্জন করা, আত্মশুদ্ধি,বানী আদমের শয়তানের প্রবাহিত কষ্ট থেকে রক্ষা, গরীবদের প্রয়োজন ধনীদের উপলব্ধি ইত্যাদি অর্জিত হয়। সিয়াম মানুষকে আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। মানুষের আহার, অসংযত আচরণ, অবাধ যৌন স্বাধীনতা, স্বেচ্ছাচারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। পূর্ণ এক মাস সময়ের এ সংযম মেনে চলার ট্রেনিং বা অভ্যাস তাকে গোটা বছর সংযমী হয়ে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। এভাবে প্রতি বছরের এক মাস ট্রেনিং তার পূর্ণ জীবনকে সংযমী করে গড়ে তোলে।
.
সিয়ামের রুকন দুটি। যথা: (১). নিয়ত করা। (২). সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যাবতীয় খাদ্যদ্রব্য ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। (কিতাবুল ফিক্বহুল মুইয়াসসার, পৃঃ ১৪৯; ‘সিয়াম’ অধ্যায়-৪)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং এখন তোমরা তাদের সাথে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর। আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাত্রির কালো রেখা হতে ফজরের সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর তোমরা রাত্রি (সূর্যাস্ত) পর্যন্ত ছিয়াম পূর্ণ কর।’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৭)।
.
▪️একনজরে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে রামাদানের ফযীলত:
____________________________________
(ক). রামাদান কুরআন নাযিলের মাস
.
মহান আল্লাহ পবিত্র রামাদান মাসে কুরআনুল কারীম নাযিল করেন। বিধায় এমাসে কুরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব-মর্যাদাও অনেক বেশী। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন, রামাদান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল-কুরআন। যা মানুষের হেদায়াত এবং সৎপথের সুস্পষ্ট নির্দেশ ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। সুতরাং যে ব্যক্তি রামাদান মাস পাবে সে যেন সিয়াম পালন করে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৫)। আর অন্যত্র তিনি বলেন, إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ ‘আমি তা নাযিল করেছি ক্বদরের রাতে’ (সূরা আল-ক্বদর : ১)। মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘নিশ্চয় আমি ইহা নাযিল করেছি এক বরকতময় রাত্রিতে; নিশ্চয় আমরা সতর্ককারী’ (সূরা আদ-দুখান : ৪)। আর বরকতময় রাত্রি হচ্ছে কদরের রাত্রি। যা রামাদান মাসেই সংঘটিত হয়ে থাকে। যেমন কদরের রাত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ’ (সূরা আল-ক্বদর : ৩)। আর দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, লায়লাতুল ক্বদর কেবলমাত্র রামাদান মাসেই হয়েই থাকে। এ কারণেই রামাদান সর্বাধিক মহিমান্বিত মাস।
.
কুরআন নাজিলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
.
নুযূলে কুরআন শুরু হয় হেরা গুহায় ২১ রামাদান সোমবার ক্বদরের রাত্রিতে। প্রথম পাঁচটি আয়াত (সূরা আল-‘আলাক্ব: ১-৫) নাযিল করে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) চলে যান। খৃষ্টীয় হিসাবে এ দিনটি ছিল ৬১০ খৃষ্টাব্দের ১০ই আগষ্ট। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বয়স ছিল চান্দ্রবর্ষ হিসাবে ৪০ বছর ৬ মাস ১২ দিন এবং সৌরবর্ষ হিসাবে ৩৯ বছর ৩ মাস ২২ দিন। (ছফিউর রহমান মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃ. ৬৬-৬৭, টীকাসহ আলোচনা দ্রষ্টব্য; তাফসীরুল কুরআন, ৩০তম পারা, পৃ. ৩৬৮) কুরআনুল কারীমকে একই সাথে প্রথম আকাশের উপরে রামাদান মাসের ক্বদরের রাতে অবতীর্ণ করা হয় এবং ঐ রাতকে বরকতময় রাতও বলা হয়। (তাফসীর ইবনু কাসীর,১ম খ-, সূরা বাক্বারাহ-এর ১৮৫-নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য) ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘আল্লাহ কুরআনকে ক্বদরের রাতে দুনিয়ার আসমানে একসাথে নাযিল করেন। অতঃপর তাঁর রাসূলের নিকট একের পর এক নাযিল করেন’।(মুসতাদরাক আলাছ সহীহাঈন লিল হাকিম মা‘আ তালিকাতিয যাহাবী, ২য় খ-, পৃ. ৫৭৮) জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (মৃ. ৯১১ হি.) বলেন, ‘আল্লাহ কুরআনকে একসাথে ক্বদরের রাতে দুনিয়ার আসমানে নাযিল করেন। অতঃপর পর্যায়ক্রমে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নবুঅত প্রাপ্তির পরে বিভিন্ন প্রেক্ষাপট অনুপাতে তা দুনিয়ায় নাযিল করেন’। (জালালুদ্দীন আবুবাকর আস-সুয়ূত্বী, আল-ইতক্বান, ১ম খ-, পৃ. ৮৯)
.
(খ). রামাদান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়:
.
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন রামাযান মাস আগমন করে তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়।’ (সহীহ বুখারী, হা/১৮৯৯; মিশকাত, হা/১৯৫৬)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, فُتِحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ ‘জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।’ (সহীহ বুখারী হা/১৮৯৮, ৩২৭৭; নাসাঈ হা/২০৯৭; মিশকাত হা/১৯৫৬)। এবং فُتِحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ ‘রহমতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়।’ (মুসলিম হা/২৫৪৮; নাসাঈ হা/২১০০; মুসনাদে আহমাদ হা/৭৭৬৭; মিশকাত হা/১৯৫৬)
.
(গ). জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ:
.
রামাদান মাস বান্দাদের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি অন্যতম মাস। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন রমাযান মাসের প্রথম রাত্রি আসে, তখন সমস্ত শয়তান ও অবাধ্য জ্বীনকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়, অতঃপর তার কোন দরজাই খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়, অতঃপর তার কোন দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে কল্যাণের অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও, হে মন্দের অন্বেষণকারী! থাম। আল্লাহ তা‘আলা এই মাসে বহু ব্যক্তিকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেন, আর এটা প্রত্যেক রাতেই হয়ে থাকে।(তিরমিযী, হা/৬৮২; ইবনু মাজাহ, হা/১৬৪২; মিশকাত, হা/১৯৬০, সনদ সহীহ)। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِنَّ لِلهِ عُتَقَاءَ فِى كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ لِكُلِّ عَبْدٍ مِنْهُمْ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ ‘অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা রামাযান মাসের প্রত্যেক দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দু‘আ কবুল করেন।’(মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৪৩; সনদ সহীহ, হীহুল জামে, হা/২১৬৯; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১০০২)
.
(ঘ). আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভের সুবর্ণ সুযোগ:
.
আল্লাহ তা‘আলা এই মাসে অসংখ্য বান্দাকে ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ করতে পারল না, তার জন্য চরম দুর্ভোগ। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক, যার সামনে আপনার কথা আলোচিত হয় তথাপি সে আপনার ওপর দরূদ পড়ে না। ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক, যে রামাযান মাস পেল, অথচ শেষ হওয়ার আগে তাকে ক্ষমা করা হলো না। এরপর তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধূসরিত হোক, যে তার পিতা-মাতাকে কিংবা যেকোন একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল, অথচ জান্নাতে যেতে পারল না।’ (তিরমিযী, হা/৩৩৪৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪৪৪; মিশকাত হা/৯২৭; সনদ সহীহ, সহীহুল জামে হা/৩৫১০)। অন্যত্র কা‘ব ইবনু উজরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা বললেন, তোমরা মিম্বার নিয়ে আস। আমরা নিয়ে আসলে তিনি প্রথম স্তরে বসেন এবং আমীন বলেন। অতঃপর যখন তিনি দ্বিতীয় স্তরে উঠেন তখনও আমীন বলেন। যখন তৃতীয় স্তরে উঠেন তখনও আমীন বলেন। তারপর যখন খুৎবা শেষ করে মিম্বর থেকে অবতরণ করলেন তখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনার কাছে আজ এমন কিছু শুনলাম, যা এর পূর্বে শুনিনি। তিনি বললেন, আমার কাছে জিব্রীল এসে বললেন, ঐ ব্যক্তি অপমানিত হোক, যে ব্যক্তি রামাযান মাস পেল, কিন্তু তাকে ক্ষমা করা হলো না। আমি বললাম, আমীন। আমি দ্বিতীয় স্তরে উঠলাম তখন তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি অপমানিত হোক, যে ব্যক্তির কাছে আমাকে উল্লেখ করা হলো, অথচ আমার উপর দরূদ পড়ল না। তখন আমি বললাম, আমীন। অতঃপর যখন তৃতীয় স্তরে উঠলাম, তখন তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি অপমানিত হোক, যে ব্যক্তি পিতা-মাতা উভয়কে বা তাদের একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেল অথচ তারা দুইজন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমীন (আল্লাহ কবুল করুন)। (মুস্তাদরাক হাকিম, হা/৭২৫৬; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/১৪৭১; সনদ সহীহ, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৬৭৭)
.
(ঙ). সিয়াম বান্দার জন্য সুপারিশকারী:
.
ক্বিয়ামতের ময়দানে বান্দার জন্য যখন কোন সুপারিশকারী থাকবে না, তখন কুরআন এবং সিয়াম সুপারিশ করবে। আল্লাহ তাদের সুপারিশ কবুল করবেন। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,‘সিয়াম ও কুরআন ক্বিয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে- সিয়াম বলবে, হে প্রতিপালক! আমি দিনের বেলায় তাকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। কুরআন বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে।’
(বায়হাক্বী-শু‘আবুল ঈমান, হা/১৯৯৪; মিশকাত হা/১৯৬৩, সনদ সহীহ)
.
(চ). সব ধরনের পাপাচার থেকে দূরে রাখে:
.
সিয়ামের মূল লক্ষ্য ও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল হলো- সব ধরনের পাপ থেকে তাকে দূরে রাখা। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِى أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ ‘যে ব্যক্তি সিয়াম অবস্থায় মিথ্যা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে পারল না, তার খাদ্য ও পানীয় ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।’ (সহীহ বুখারী হা/১৯০৩, ৬০৫৭; আবু দাঊদ হা/২৩৬২; ইবনু মাজাহ হা/১৬৮৯; তিরমিযী হা/৭০৭; মিশকাত হা/১৯৯৯)
.
(ছ). সিয়াম বান্দার জন্য ঢালস্বরূপ:
.
সিয়াম দুনিয়াতে যেমন বান্দাকে যাবতীয় পাপ হতে রক্ষা করে, ঠিক তেমনি আখেরাতেও জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুন হতে তাকে হেফাযত করবে। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং তোমরা অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায় অথবা তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দু’বার বলে, আমি সিয়াম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও উৎকৃষ্ট। সে আমার জন্য খাদ্য, পানাহার ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমার জন্যই। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ।’ (সহীহ বুখারী, হা/১৮৯৪; নাসাঈ, হা/২২১৫)। অন্য হাদীসে এসেছে, ‘সিয়াম জাহান্নামের ঢাল।’ (ইবনু মাজাহ, হা/১৬৩৯; সনদ সহীহ)
.
(জ). সিয়াম জান্নাত লাভের মাধ্যম:
.
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা একজন বেদুইন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল, আমাকে এমন আমলের কথা বলুন, যে আমল করলে আমি জান্নাতে যেতে পারব। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, ফরয সালাত আদায় করবে, ফরয যাকাত দিবে এবং রামাযানের সিয়াম পালন করবে। তখন ঐ ব্যক্তি আল্লাহর শপথ করে বলল, আমি এর বেশী করব না। যখন লোকটি চলে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি একজন জান্নাতী ব্যক্তিকে দেখে আনন্দিত হতে চায় সে যেন এই ব্যক্তির দিকে দেখে।’ (সহীহ বুখারী, হা/১৩৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৪; মিশকাত, হা/১৪)
.
(ঝ). সিয়াম বান্দার পূর্ববর্তী সকল সগীরা গুনাহের কাফফারা:
.
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও নেকী অর্জনের আশায় রামাযানের সিয়াম রাখবে, আল্লাহ তার অতীতের সকল (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দিবেন।’ (সহীহ বুখারী, হা/৩৮ ও ২০১৪; সহীহ মুসলিম, হা/৭৬০; মিশকাত, হা/১৯৫৮)
.
(ঞ). সিয়াম অসংখ্য নেকী অর্জনের মাধ্যম:
.
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের জন্য ১০ থেকে ৭শ গুণ পর্যন্ত সওয়াব নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহ বলেন, সিয়াম এর ব্যতিক্রম। কেননা সেটা একমাত্র আমার জন্যই রাখা হয় এবং আমি নিজ হাতেই এর পুরস্কার দেব। সে আমার জন্যই যৌন বাসনা ও খানা-পিনা ত্যাগ করেছে। সিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটা হচ্ছে ইফতারের সময় এবং অন্যটি হচ্ছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। আল্লাহর কাছে সায়েমের মুখের গন্ধ মিশক-আম্বরের সুঘ্রাণের চাইতেও উত্তম।’ (সহীহ মুসলিম, হা/১১৫১; ইবনু মাজাহ, হা/১৬৩৮; মিশকাত, হা/১৯৫৯)
.
(ট). সিয়াম পালনকারী জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামক দরজা দিয়ে প্রবেশকারী:
.
সাহল ইবনু সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামক একটি দরজা আছে। ক্বিয়ামতের দিন সিয়াম পালনকারী ব্যতীত অন্য কেউ উক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বলা হবে, কোথায় সিয়াম পালনকারীরা? অতঃপর তারা দন্ডায়মান হবে এবং ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না। যখন তারা প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করবে না।’ (সহীহ বুখারী, হা/১৮৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫২)
.
(ঠ). সিয়ামের সমতুল্য কোন আমল নেই:
.
আবু উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে এমন একটি কাজের আদেশ দিন, যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি সিয়াম রাখ। কেননা সিয়ামের সমতুল্য কিছুই নেই। (নাসাঈ হা/২২২০-২১; সনদ সহীহ, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৯৮৬)
.
(ড). মানুষের পরিবার, ধন-সম্পদ ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে ঘটিত বিভিন্ন ফিতনা ও গোনাহর কাফফারা হলো- সালাত, সিয়াম ও সাদাকাহ:
.
হুযাইফাহ্ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, স্বীয় নাফস, সন্তান-সন্ততি এবং প্রতিবেশীর ব্যাপারে মানুষ যে ফিতনায় জড়িত হয়, তার সিয়াম, সালাত, সদাকাহ্ এবং সৎকার্যের আদেশ ও অসৎকার্যে বাধা দানই হলো এগুলোর জন্য কাফফারাহ। (সহীহ বুখারী হা/১৮৯৫, সহীহ মুসলিম হা/৭১৬০, ই.ফা. ৭০০৪, ই.সে. ৭০৬১)
.
(ঢ). আল্লাহর রাস্তায় একদিন মাত্র সিয়াম বিনিময়ে জাহান্নাম আল্লাহ তাকে থেকে ৭০ বছরের অপর বর্ননায় ১০০ বছরের পথ পরিমাণ দূরত্বে রাখবেন:
.
আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যে বান্দা আল্লাহর রাস্তায় একদিন মাত্র সিয়াম রাখবে সেই বান্দাকে আল্লাহ ঐ সিয়ামের বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে ৭০ বছরের পথ পরিমাণ দূরত্বে রাখবেন।”(সহীহ বুখারী হা/২৮৪০, সহীহ মুসলিম হা/১১৫৮, নাসায়ী ২২৪৫, ইবনু মাজাহ ১৭১৭, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক্ব ৯৬৮৪, আহমাদ ১১৪০৬, দারিমী ২৪৪৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৮৫৭৬, সহীহ আল জামি ৬৩২৯, মিশকাতুল মাসাবিহ হা/২০৫৩)। অপর বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন মাত্র রোযা রাখবে সেই ব্যক্তি থেকে জাহান্নাম ১০০ বছরের পথ পরিমাণ দূরে সরে যাবে। (ত্বাবারানীর কাবীর ও আওসাত্ব হা/ ৩২৪৯, সহীহ তারগীব ৯৮৮, হাদিস সম্ভার হা/ ১০৩৮)
.
(ণ). সিয়ান পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট কস্ত্তরীর সুবাস অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধময়:
.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন; আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন, সওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার কবজায় মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট মিস্‌কের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সায়িমের জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। (সহীহ বুখারী হা/১৯০৪, সহীহ মুসলিম হা/১১৫১)
.
(ত). রামাদান মাসের প্রত্যেক রাতে ও দিনে প্রত্যেক মুসলিমের দুআ কবুল করা হয়:
.
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “নিশ্চয়ই (রমযানের) দিবারাত্রে বর্কতময় মহান আল্লাহর জন্য রয়েছে বহু (দোযখ থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ (যাদেরকে তিনি মুক্ত করে থাকেন)। আর প্রত্যেক মুসলিমের জন্য রয়েছে প্রত্যহ দিবারাত্রে গ্রহণ (কবুল) যোগ্য দুআ। (প্রার্থনা করলে মঞ্জুর হয়ে থাকে)। (মুসনাদে আহমাদ হা/ ৭৪৫০, ত্বাবারানীর আওসাত্ব হা/৬৪০১,সহীহ তারগীব হা/১০০২, হাদীস সম্ভাব হা/১০৩১)
.
(থ). রামাদান মাসে রয়েছে এমন একটি রাত্রি, যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ:
.
আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রামাযান উপস্থিত হলে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “এই মাস তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়েই গেল। এই মাসে এমন একটি রাত্রি রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর। যে ব্যক্তি ঐ রাত্রের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হলো, সে যেন সর্বপ্রকার কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত থেকে গেল। আর একান্ত চিরবঞ্চিত ছাড়া ঐ রাত্রের কল্যাণ থেকে অন্য কেউ বঞ্চিত হয় না।” (ইবনে মাজাহ হা/১৬৪৪, সহীহ তারগীব হা/১০০০, হাদীস সম্ভার হা/১০২৯)
.
(দ). রাসূল (ﷺ) রামাদান মাসকে ‘ধৈর্যের মাস’ বলে অভিহিত করেছেন:
.
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ধৈর্যের (রমযান) মাসে সিয়াম আর প্রত্যেক মাসের তিনটি সিয়াম অন্তরের বিদ্বেষ ও খট্কা দূর করে দেয়।” (মুসনাদে আহমাদ হা/২৩০৭০, আরাবী থেকে, বায্যার ৬৮৮ আলী থেকে, সহীহ তারগীব হা/১০৩২, হাদীস সম্ভার হা/১১০০)
.
(ধ). রামাদান মাসে উমরাহ আদায় আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে হজ্জ করার সমান।
.
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনসার গোত্রের উম্মে সিনান নাম্নী এক মহিলাকে বললেন, “আমাদের সাথে হজ্জ করতে তোমাকে কে বাধা দিল?” মহিলাটি বলল, ‘অমুকের বাপের (স্বামীর) মাত্র দুটি সেচনকারী উট ছিল; তার মধ্যে একটি নিয়ে ওরা বাপ-বেটায় হজ্জে গিয়েছিল। আর অপরটি দিয়ে আমাদের এক খেজুর বাগান সেচতে হচ্ছিল। (তাই আমার সওয়ার হয়ে যাওয়ার মত আর উট ছিল না।) তিনি বললেন, “তাহলে রমযানে একটি উমরাহ একটি হজ্জের অথবা আমার সাথে একটি হজ্জ করার সমান সওয়াব রয়েছে। (অতএব তা তুমি করে ফেল।)।” (সহীহ বুখারী ১৮৬৩, মুসলিম ৩০৯৭-৩০৯৮)
.
(ন). এক রামাদান অপর রামাযান পর্যন্ত উভয়ের মধ্যবর্তীকালের সংঘটিত পাপরাশিকে মোচন করে দেয়; যদি কাবীরা গোনাহ থেকে দূরে থাকা হয় তবে:
.
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ হতে অপর জুমু’আহ পর্যন্ত এবং এক রামাদান হতে আরেক রামাযান পর্যন্ত সব গুনাহের কাফ্‌ফারাহ্‌ হয়, যদি কাবীরাহ গুনাহ সমূহ বেঁচে থাকা হয়। (সহীহ মুসলিম ২৩৩, আহমাদ ৯১৯৭, সহীহাহ্ ৩৩২২, সহীহ আল জামি ৩৮৭৫, সহীহ আত তারগীব ৬৮৪, মিশকাতুল মাসাবিহ হা/৫৬৪)
.
(প). সিয়াম পালনকারীর মধ্যে রয়েছে চারিত্রিক নিষ্কলুষতা এবং মন্দ আচরণ থেকে অন্তরের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। কেননা সিয়াম মন্দ আচরণকে প্রতিরোধ করে।
.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং কাজ ছাড়েনি, তার পানাহার ছেড়ে দেয়াতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই’। (সহীহ বুখারী, হা/১৯০৩, ৬০৫৭) অপর বর্ননায় আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,“কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম নয়। সিয়াম তো অসার, বাজে ও অশ্লীল কথা থেকে বিরত থাকার নাম। যদি তোমাকে কেউ গালি দেয় অথবা তোমার সাথে কেউ মূর্খামি করে তবে তাকে বল, ‘আমি সিয়াম রেখেছি। আমি সিয়াম রেখেছি।” (হাকেম ১৫৭০, বাইহাক্বী ৮০৯৬, ইবনে খুযাইমা ১৯৯৬, সহীহুল জামে ৫৩৭৬, হাদীস সম্ভার, হা/১০৪৮)

(ফ).সিয়াম পালনকারী আল্লাহর আনুগত্য করে। যেমন রামাদানে ফরয ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদত বেশি বেশি করে।
.
মহান আল্লাহ বলেন,অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান।(সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৪)। আর অনুগত থাকা তাক্বওয়ার বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রামাদানের সিয়াম পালন করে তার পূর্বের (সগীরা) গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রামাযানের রাত্রি ইবাদতে কাটায় তার পূর্বের (সগীরা) গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় ক্বদরের রাত্রি ইবাদতে কাটায় তার পূর্ববর্তী (সগীরা) গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হয়’। (সহীহ বুখারী, হা/৩৭, ৩৮, ২০০৯, ২০১৪; সহীহ মুসলিম, হা/৭৫৯, ৭৬০)
.
(ব). সিয়াম যৌবনকে দমন করার মাধ্যমে শরীরকে পবিত্র করে। আর এটা তাক্বওয়ার গুণ।
.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তাহলে সে যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন সিয়াম পালন করে। কেননা সিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম’। (সহীহ বুখারী, হা/১৯০৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৪০০)
.
(ভ). সিয়াম লৌকিকতামূক্ত ইবাদত। কেননা অন্য যে কোন ইবাদত যথা ছালাত, হজ্জ ইত্যাদি লৌকিকতা রক্ষার খাতিরে অনেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করে থাকে, কিন্তু সিয়ামের ব্যাপারটি সম্পূর্ণটাই স্বতন্ত্র। ছিয়াম শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্যই পালন করা হয়। যা তাক্বওয়ার চরিত্র। যেমন:
.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আদম সন্তানের নেক আমল বাড়ানো হয়ে থাকে। প্রত্যেক নেক আমল দশগুণ হতে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত পৌঁছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তবে সিয়াম ব্যতীত। কারণ সিয়াম আমারই জন্য পালন করা হয় এবং তার প্রতিদান আমিই দিব’(সহীহ বুখারী, হা/১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫১) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।