রমজান মাসের সিয়াম কখন ৩১টি হয়

রমজান মাসের সিয়াম কখন ৩১টি হয়? কেউ সিয়াম রেখে এমন দেশে সফর করেছে যেখানে সিয়াম একদিন পরে শুরু হয়েছে এই ক্ষেত্রে এই ব্যক্তি কি ৩১ টি সিয়াম পালন করবে?
▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: প্রথমেই একটি বিষয় পরিস্কার করা দরকার চান্দ্র মাস যেমন ২৮ দিনে হতে পারে না। তেমনে ৩১ দিনেও হতে পারেনা চান্দ্র মাস হয় ৩০ দিনে মাস হবে, না হয় ২৯ দিনে হবে এটাই চুড়ান্ত। তবে হা! রমজান মাসের সিয়াম কোন ব্যক্তির জন্য ৩১ হতে পারে। কারন যদি কোন ব্যক্তি রমজানের প্রথম রোজা যে দেশে রেখেছে সে দেশ থেকে এমন কোন দেশে সফর করে যেখানে ঈদুল ফিতর বিলম্বে হয় তাহলে সে ব্যক্তি রোজা পালন চালিয়ে যাবে যতদিন না সে দেশবাসী ঈদ উদযাপন না করে। যেমন: পূর্ব দিককার (প্রাচ্যের) দেশগুলিতে চাঁদ ১ অথবা ২ দিন পরে দেখা দেয়। এখন ২৯ শে রমাযান চাঁদ দেখার পর অথবা ৩০শে রমাযান ঐ দিককার কোন দেশে সফর করলে সেখানে গিয়ে দেখবে তার পরের দিনও রোযা। সে ক্ষেত্রে তাকে ঐ দেশের মুসলিমদের সাথে রোযা রাখতে হবে। অতঃপর তারা ঈদ করলে তাদের সাথে সেও ঈদ করবে; যদিও তার রোযা ৩১টি হয়ে যায়। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন,
(فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ)
অর্থাৎ, অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে।(সূরা বাকারা, ২/১৮৫) আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘রোযা সেদিন, যেদিন লোকেরা রোযা রাখে। ঈদ সেদিন, যেদিন লোকেরা ঈদ করে।’’(তিরমিযী, ইরওয়াউল গালীল হা/ ৯০৫, সিলসিলাহ সহীহাহ হা/২২৪)
.
অপরদিকে যদি কেউ পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ২৮ শে রমাযান সফর করে, অতঃপর তার পর দিনই সেখানে ঈদ হয়, তাহলে সেও রোযা ভেঙ্গে লোকদের সাথে ঈদ করবে। অবশ্য তার পরে সে একটি রোযা কাযা রাখবে। কারণ, মাস ২৯ দিনের কম হয় না। পক্ষান্তরে যদি ২৯শে রমাযান সফর করে তার পরের দিন ঈদ হয়, তাহলে তাদের সাথে ঈদ করার পর তাকে আর কোন রোযা কাযা করতে হবে না। কারণ, তার ২৯টি রোযা হয়ে গেছে এবং মাস ২৯ দিনেও হয়। আবার যদি কেউ ঈদের দিনে ঈদ করে প্রাচ্যের দেশে সফর করে এবং সেখানে গিয়ে দেখে সেখানকার লোকেদের রোযা চলছে, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে পানাহার বন্ধ করতে হবে না এবং রোযা কাযা করতেও হবে না। কেননা, সে শরয়ী নিয়ম মতে রোযা ভেঙ্গেছে। অতএব এ দিন তার জন্য পানাহার বৈধ হওয়ার দিন।
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি পূর্ব এশিয়ার অধিবাসী। আমাদের দেশে হিজরি মাস সৌদি আরবের একদিন পর শুরু হয়। রমজান মাসে আমি দেশে যাব। আমি যদি সৌদি আরবে সিয়াম পালন শুরু করি এবং আমার দেশে গিয়ে শেষ করি, তাহলে আমার ৩১ দিন রোজা পালন করা হবে। এভাবে আমার সিয়াম পালনের হুকুম কি? আমি কতটি রোজা রাখব?

তিনি উত্তরে বলেন “আপনি যদি সৌদি আরব বা অন্য কোন দেশে সিয়াম পালন শুরু করেন এবং নিজের দেশে গিয়ে বাকিটা পালন করেন তাহলে আপনার দেশের লোকদের সাথে সিয়াম ভঙ্গ করবেন তথা ঈদ উদযাপন করবেন; যদিও বা তা ৩০ দিনের বেশি হয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “রোজা হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে) রোজা পালন কর, আর ঈদুল ফিতর হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে) ইফতার (রোজা ভঙ্গ) কর।”কিন্তু আপনি যদি তা করতে গিয়ে ২৯ দিনের কম রোজা পালন করেন, তাহলে আপনাকে পরবর্তীতে ১টি রোজা কাযা আদায় করে নিতে হবে। কারণ রমজান মাস ২৯ দিনের কম হতে পারেনা।(ইমাম বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/১৫; পৃষ্ঠা: ১৫৫)

সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল: যদি কোন ব্যক্তি এক মুসলিম দেশ থেকে অন্য দেশে গমন করে যে দেশের মুসলমানেরা প্রথম দেশের একদিন পরে রমজান শুরু করেছে সে ব্যক্তি সেদেশের লোকদের সাথে রোজা রাখতে গিয়ে তার ৩০টির বেশি রোজা হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে হুকুম কী?অনুরূপভাবে এ অবস্থার বিপরীত অবস্থার হুকুম কী?

তিনি উত্তরে বলেন:“যদি কেউ এক মুসলিম দেশ থেকে অন্য মুসলিম দেশে ভ্রমণ করে এবং সেই দেশে রমজান পরে শুরু হয়, তবে তিনি ঐদেশের লোকেরা সিয়াম না-ছাড়া পর্যন্ত সিয়াম পালন করে যাবেন।কারণ রোজা হল সেদিন, যেদিন লোকেরা সিয়াম পালন করে; আর ঈদুল ফিতর হল সেদিন, যেদিন লোকেরা রোজা ছেড়ে দেয়। আর ঈদুল আযহা হল সেদিন, যেদিন লোকেরা পশু যবেহ করে। তাকে এভাবে রোজা পালন করতে হবে; যদিও বা এজন্য তাকে একদিন বা এর বেশি দিন সিয়াম পালন করতে হয়।এটি সেই মাসয়ালার অনুরূপ যখন কোন ব্যক্তি এমন কোন দেশে ভ্রমণ করে যেখানে সূর্যাস্ত দেরীতে হয়, তবে সে ব্যক্তিকে সূর্যাস্ত না যাওয়া পর্যন্ত রোজা পালন করতে হবে।যদিও বা এর ফলে রোজা পালন স্বাভাবিক দিনের চেয়ে দুই,তিন বা ততোধিক ঘণ্টা বিলম্বিত হয়। এছাড়া এ কারণেও তাকে বেশিদিন রোজা থাকতে হবে যেহেতু সেদ্বিতীয় যে দেশে ভ্রমণ করেছে সেখানে(শাওয়াল মাসের) নতুন চাঁদ দেখা যায়নি।অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে চাঁদ দেখে রোজা রাখতে ও চাঁদ দেখে রোজা ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন।তিনি বলেছেন:(صوموالرؤيته،وأفطروالرؤيته) “তোমরা তা (নতুন চাঁদ) দেখে রোজাধর এবং তা (নতুন চাঁদ) দেখে রোজা ছাড়।” আর বিপরীত অবস্থা হচ্ছে-কোন ব্যক্তি এক দেশ থেকে অন্য এক দেশে ভ্রমণ করে যেখানে রমজান মাস প্রথম দেশের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে, তবে তিনি তাদের সাথেই রোজাপালন ছেড়ে দিবেন এবং যে কয়দিনের রোজা বাদ পড়েছে সে রোজাগুলো পরে কাযা আদায় করে নিবেন। যদি একদিন বাদ পড়ে তবে একদিনের রোজাকাযা করবেন। যদি দুই দিনের বাদ পড়ে তবে দুই দিনের কাযা করবেন। তিনি ২৮ দিন পর রোজাছাড়লে দুই দিনের রোজা কাযা আদায় করবেন। যদি উভয় দেশে মাস ৩০দিনে শেষ হয়, আর এক দিনের কাযা করবেন যদি উভয় দেশে বা যে কোন এক দেশে ২৯ দিনে মাস শেষ হয়।”(উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১৯/ প্রশ্ন নং ২৪)

ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) এর কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়েছিল কেউ হয়ত বলবে যে, কেন আপনি বলছেন যে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি রোজা পালন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রোযার কাযা পালন করতে হবে?

তিনি উত্তরে বলেন “দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রোযার কাযা রোজা পালন করতে হবে কারণ মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না। আর প্রথম ক্ষেত্রে সে ৩০ দিনের বেশি রোজা পালন করবে কারণ তখনও নতুন চাঁদ দেখা যায়নি। প্রথম ক্ষেত্রে আমরা তাকে বলব রোজা ছেড়ে দাও যদিও তোমার ২৯ দিন পূর্ণ হয়নি। কারণ নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে। নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার পর রোজা ছেড়ে দেয়া বাধ্যতামূলক। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন রোজা পালন করা হারাম। আর কেউ যদি ২৯ দিনের কম রোজা পালন করে থাকে তাহলে তাকে ২৯ দিন পূরণ করতে হবে। এটি দ্বিতীয় অবস্থা হতে ভিন্ন। কারণ যে দেশে আসা হয়েছে সেখানে তখন রমজান চলছে; নতুন চাঁদ দেখা যায় নি। যেখানে এখনও রমজান চলছে সেখানে কিভাবে রোজা ভঙ্গ করা যেতে পারে?তাই আপনাকে রোজা পালন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি তাতে মাস বেড়ে যায়, তাহলে তা দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার মত।(উসাইমীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১৯/ প্রশ্ন নং ২৫ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং ৪৫৫৪৫) আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।