মৃত পিতামাতার জন্য সন্তানের দুআ করার গুরুত্ব

নি:সন্দেহে পিতামাতার জন্য দুআ করা সন্তানের প্রতি তাদের হক (প্রাপ্য) এবং সদাচরণের অন্তর্ভুক্ত। তাই তাদের জন্য দুআর ক্ষেত্রে সন্তানদের অবহেলা করা মোটেও উচিৎ নয়। তাদের জীবদ্দশায় যেমন দুআ করা উচিৎ মৃত্যুর পরও দুআ করা উচিৎ। এ মর্মে কুরআন ও হাদিসে যথেষ্ট গুরুত্ব এসেছে। যেমন:

◍ হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
“মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তার আমলের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ব্যতীত:
ক. সদকায়ে জারিয়া (এমন দান যা থেকে মানুষ দীর্ঘ দিন উপকৃত হয়)

খ. এমন ইলম (জ্ঞান) যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়।
গ. এবং এমন সৎ সন্তান যে তার জন্য দুআ করবে।” [সহিহ বুখারি, অধ্যায়: মৃতের পক্ষ থেকে হজ্জ এবং মানত পালন করা এবং পুরুষ মহিলার পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পারে।]

◍ আবু উসাইদ রা. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল, বাবা-মা’র মৃত্যুর পর আমার উপর তাদের সাথে সদাচরণ করার কিছু অবশিষ্ট আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আছে। তা হল:
الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا، وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا، وَإِنْفَاذُ عَهْدِهِمَا مِنْ بَعْدِهِمَا، وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوصَلُ إِلَّا بِهِمَا، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا
১. তাঁদের জন্য দুআ করা।
২. তাদের জন্য ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৩. তাঁদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা (শরিয়ত সম্মত ওসিয়ত বাস্তবায়ন করা)
৪. তাদের উভয়ের মাধ্যমে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে তা রক্ষা করা।
৫. এবং তাঁদের বন্ধুদের সাথে সুন্দর আচরণ করা।
(আল আদাবুল মুফরাদ ৩৫-মুনযেরি বলেন,إسناده صحيح أو حسن أو ما قاربهما “এর সনদ সহিহ অথবা হাসান অথবা এর কাছাকাছি- তারগিব-তারহিব ৩/২৯৮, শাইখ আলবানী বলেন, হাদিসটি যইফ (দুর্বল)-যইফুত তারগিব হা/১৪৮২)

◍ মহান আল্লাহ আল কুরআনুল কারিমে আমাদেরকে পিতামাতার জন্য দুআ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কিভাবে দুআ করতে হবে তাও শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন:

আল্লাহ বলেন:
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
“হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।“ (সূরা ইবরাহীম: ৪১)
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
“হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।” (সূরা ইসরা: ২৪)

সুতরাং সন্তানদের কর্তব্য হল, পিতামাতার জন্য অধিক পরিমাণে দুআ করা। কেননা কবরে মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিদের দুআ দ্বারা উপকৃত হয়। বিশেষ করে পিতামাতার জন্য সন্তানের দুআ করা অত্যন্ত উপকারী
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।