মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে

“মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি সে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়, তবে ইবাদতের উপর কায়েম থাকে এবং যদি কোন পরীক্ষায় পড়ে, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি।
.
সে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে, যে তার অপকার করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। এটাই চরম পথভ্রষ্টতা।”
.
.
(সুরা হজ্ব এর ১১ এবং ১২ নম্বর আয়াত)
.
এই আয়াত দুইটা শক্ত ধরণের রিমাইন্ডার। আমাদের বেশিরভাগের অবস্থা এখন এমন। হিদায়াত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, আবার সেই হিদায়াতের উপর মৃত্যু পর্যন্ত অটল থাকার শক্তিটাও আল্লাহই দিয়ে দেন।
.
.
যে ছেলেটা একটা সময় ৫ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে মসজিদে গিয়ে আদায় করতো সে একদিনে “অবিশ্বাসী” হয় না। প্রথমে হয়ত জামাতের সাথে সালাত আদায় না করে একা একা বাসায় সালাত আদায়ের একটা অভ্যাস হয়ে যায়। একটা সময় সালাত কাযা হওয়া শুরু করে। তারপর দুই ওয়াক্ত সালাত একসাথে কাযা হয়ে যায়। আর আস্তে আস্তে সালাতের প্রতি অনীহা চলে আসে। সালাতের প্রতি ভালোবাসা চলে যাওয়া মানেই শয়তানের সাথে বন্ধুত্ব শুরুর প্রথম ধাপ।
.
প্যান্ট নষ্ট থাকা, অপবিত্র থাকা ইত্যাদি সালাত আদায় না করার জনপ্রিয় অযুহাত। এবং শয়তানের প্রিয় অস্ত্র। আজ যদি প্যান্ট অপবিত্র থাকে তবে সেই অবস্থাতে সালার পড়ে নিলাম। কাল থেকে আর অপবিত্র থাকলাম না। যদি কালও ভুলক্রমে অপবিত্র থাকি। কালও আবার সেই অবস্থাতে সালাত আদায় করতে হবে। দুইটা ব্যাপার লক্ষণীয়। এক. সালাত যখন যে অবস্থাতে আছি আদায় করা লাগবে। পরে কী হবে তা পরে দেখা যাবে। দুই. এই অযুহাতে সবসময় অপবিত্র থাকা যাবে না। এক ভুল ইচ্ছা করে প্রতিদিন করা যাবে না।
.
সালাতের ইচ্ছা ছুটে গেলে, কুর’আনের প্রতি ভালোবাসা কমে গেলে আল্লাহ সেগুলো শয়তানের ইচ্ছা দ্বারা পূর্ণ করে দেন। আল্লাহর প্রতি ভালবাসার জায়গাটা কোন মানুষ দখল করে নেয়। আল্লাহর কথা চিন্তা করলে, জান্নাতা- জাহান্নামের কথা শুনলে যেখানে চোখে পানি আসতো – এখন সেখানে অন্তর শক্ত হয়ে জ’মে যায়। সেখানে মানুষের মহব্বত বেশি হয়ে যায়। মানুষ হারানোর বিচ্ছেদে মন বেশি খারাপ থাকে। মন খারাপের সময়গুলোতে গান শুনতে ভালো লাগে। যেখানে শয়তানের রাজত্ব সেখানে তাদের স্ট্যান্ডার্ড “ওয়েস্টার্ন কালচারে” ধীরে ধীরে মনের মধ্যে ভালোবাসা জন্মায়।
.
সেই কাফির মুশরিকদের চুল কাটার স্টাইল, মদের ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে কথায় কথায় বিদেশী গালাগাল একসময় ছেলেখেলা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তাদের ভাষাটায় এদের ভাষা হয়ে যায়। পুরুষের দাড়ি / নারীর হিজাব, বুরকা এসবের প্রতি মারাত্নক বিদ্বেষ কাজ করে। অস্বীকারের উপায় নেই এই দ্বীনের লেবাস পরেও মানুষ খারাপ কাজ করেন। তবে সবাইকে একই সাথে পরিমাপ করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা দেখা যায়। আমাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, ইসলামের কোন বিধানকে অস্বীকার করা, সেটা নিয়ে ঠাট্টা করার কারণে কুফরীর পর্যায়ে গিয়ে পরে।
.
দুনিয়ার কাজের ক্ষেত্রে আমরা সব ঠিকই বুঝি। আখিরাতের কথা আসলে আর মনে থাকে না। দুনিয়ার পরীক্ষার আগের সময়গুলোতে দিন রাত এক করে নাকে মুখে প্রস্তুতি নেয় সবাই। আজ থেকে ৫ বছর পরে হিসেব করে বানানোর ডুপ্লেক্স এর ডিজাইন এখন থেকে শুরু করে দেয়। অথচ, আজ বিকেল ৫ টার আগেই চলে আসতে পারে যেই মৃত্যু সেটার কোন প্রস্তুতি নেই। ঠিক যে সময়টাতে মৃত্যুর ফিরিশতা চলে আসবে, তাঁকে ফেরানোর আর কোন উপায় নেই। এতদিনের দ্বিধা দ্বন্দ নিয়ে করা সমস্ত ইবাদাত তখন নিঃশেষ হয়ে যাবে। আল্লাহ মাফ করুক আমাদের (আমীন)।
.
কবরে খুব সহজ তিনটি প্রশ্ন করা হবে। জিজ্ঞাসা করে দেখুন, কেবল মুসলিমরা নয় অনেক বিধর্মীও প্রশ্নগুলোর উত্তর ঠিকঠাক দিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু আসল জায়গায় সবার মুখ থেকে উত্তর সরবে না। কারণ, আপনি সারাজীবন কিসের উপর ছিলেন, আল্লাহর প্রতি কতটুকু আস্থা ছিল এসব হল সেই উত্তর দেওয়ার যোগ্যতা। আপনি কিভাবে আশা করেন, একজন গায়ক যিনি সকালে উঠে হারমোনিয়াম নিয়ে রেওয়াজ করতে বসে যায়, মৃত্যুর সময়টাতে তিনি মুখ দিয়ে কালেমা উচ্চারণ করবেন? এটা ভালো করে লক্ষ করলে দেখবেন- যারা গান শুনে তারাই সালাতে ঠিকমত মনযোগ ধরে রাখতে পারেন না। কোনরকমে সালাত আদায় করেই মসজিদ থেকে বেরিয়ে যান। আবার এরাই ঘন্টার পরে ঘন্টা কানে হেডফৌন লাগিয়ে গানে মশগুল। তাহলে যারা গানের গায়ক, গীতিকার এবং সুরকার তাদের অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়। একইভাবে, যেই লোক সারাজীবন মিথ্যা বলে মানুষকে ঠকিয়েছে, আল্লাহর সাথেও অনেস্ট থাকে নি- সে ম’রার একদম আগে দিয়ে খুব সুন্দর করে ঈমানের উপর অটল থেকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে?
.
এজন্যে আল্লাহ তাওবাহ এর দরজা খোলা রেখেছেন মৃত্যুর ফেরেশতা নিজের চোখে দেখার আগ পর্যন্ত। যত বড় গুনাহই হোক, তাওবাহ করলে আল্লাহর ক্ষমা আশা করা যায়। আর ঔদ্ধত্যদের জন্য মর্মান্তুদ আযাব আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন।
.
“নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত, যারা আল্লাহর সাক্ষাৎকে মিথ্যা মনে করেছে। এমনকি, যখন কিয়ামত তাদের কাছে অকস্মাৎ এসে যাবে, তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এর ব্যাপারে আমরা কতই না ক্রটি করেছি। তার স্বীয় বোঝা স্বীয় পৃষ্ঠে বহন করবে। শুনে রাখ, তারা যে বোঝা বহন করবে, তা নিকৃষ্টতর বোঝা।”
(সুরা আন’আমের ৩১ নম্বর আয়াত)

সংগ্রহ……. Misbah Mahin