মহান আল্লাহ জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী নতুন কিছু সৃষ্টি করবেন এই সংশয়ের নিরসন

একটি সংশয়ের নিরসন! সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে এসেছে, মহান আল্লাহ জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী নতুন কিছু সৃষ্টি করবেন।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬
প্রিয় পাঠক, হাদীসটি ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তার সহীহ বুখারীতে পরিচ্ছেদঃ ৯৭/২৫. আল্লাহর বাণীঃ নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। (সূরাহ আল-আ’রাফ ৭/৫৬) অধ্যায়ে হা/৭৪৪৯) বর্ণনা করেছেন হাদীসটির সনদ হল:عُبَيْدُ اللهِ بْنُ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ حَدَّثَنَا أَبِي عَنْ صَالِحِ بْنِ كَيْسَانَ عَنْ الأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى
অর্থাৎ ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: ওবায়দুল্লাহ ইবনে সাদ ইবনে ইব্রাহীম আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, ইয়াকুব আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, আমার পিতা আমাদেরকে সালেহ ইবনে কায়সানের সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি ( সালেহ ইবনে কায়সান) আ’রয থেকে, আর আ’রয আবু হুরায়রার কর্তৃক,তিনি(আবু হুরায়রা) রাসূল ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির মাঝের অংশে এসেছে (ينشئ للنار من ينشأ) আল্লাহ তায়ালা! জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী নতুন করে সৃষ্টি করবেন। (সহীহ বুখারী হা/৭৪৪৯)
.
হাদীসটিতে বলা হয়েছে মহান আল্লাহ বিচার শেষে জাহান্নাম পূর্ণ করার জন্য নতুন কিছু সৃষ্টি করবেন যা একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসের বিরুদ্ধে যায়। তাই এই বিষয়টি নিয়ে বিদ্বানগণ মতবিরোধ করেছেন। এ বিষয়ে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত হল: এই বর্ণনায় বর্ণনাকারী জায়গা রদ- বদলের মাধ্যমে ভুল করেছেন। মূলত এখানে নার অর্থাৎ জাহান্নাম শব্দের পরিবর্তে জান্নাত শব্দ ছিল যা বুখারীসহ কুতুবে সিত্তায় ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, সুতরাং সঠিক ইবারাতটি হল:( ينشئ للجنة من ينشأ) অর্থাৎ আল্লাহ জান্নাতের জন্য ইচ্ছা অনুযায়ী নতুন করে সৃষ্টি করবেন।
.
ইমাম হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৭৪ হি.] বলেন: অনুরূপভাবে আল্লাহর বাণী ( وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا) যা আল্লাহ তা’য়ালার ন্যায়-নিষ্ঠা সম্পর্কে সংবাদ দেয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা কারো কাছে রাসূল/ দূত পাঠানো ছাড়াই কাউকে শাস্তি দিবেন না। এ ছাড়াও আয়াতটি দ্বারা প্রমাণিত হয়, আল্লাহ তায়ালা কারো নিকট রাসূল প্রেরণ করা ছাড়া কাউকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন না। এই কারণে একদল উলামায়ে কেরাম! ঐ শব্দটি নিয়ে আপত্তি করেছেন, যা সহীহ বুখারীতে পরিচ্ছেদঃ ৯৭/২৫. আল্লাহর বাণীঃ(إِنَّ رَحْمَةَ اللهِ قَرِيبٌ مِنْ الْمُحْسِنِينَ} অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।(সূরাহ আল-আ’রাফ ৭/৫৬) এর অধীনে উল্লেখ করা হয়েছ। প্রসিদ্ধ সাহাবী আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়েই স্বীয় রবের নিকট অভিযোগ করল। জান্নাত বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ব্যাপারটি কী যে তাতে শুধু নিঃস্ব ও নিম্ন শ্রেণীর লোকেরাই প্রবেশ করবে। এদিকে জাহান্নামও অভিযোগ করল অর্থাৎ আপনি শুধুমাত্র অহংকারীদেরকেই আমাতে প্রাধান্য দিলেন। আল্লাহ্ জান্নাতকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি আমার রহমত। জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার আযাব। আমি যাকে চাইব, তোমাকে দিয়ে শাস্তি পৌঁছাব। তোমাদের উভয়কেই পূর্ণ করা হবে। তবে আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টির কারো উপর যুলুম করবেন না। তিনি জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছানুযায়ী নতুন সৃষ্টি করবেন। তাদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নাম বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? জাহান্নামে আরো নিক্ষেপ করা হবে, তখনো বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? এভাবে তিনবার বলবে। অবশেষে আল্লাহ্ তাঁর পা জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিলে তা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। তখন জাহান্নামের একটি অংশ অন্য অংশকে এ উত্তর করবে- আর নয়, আর নয়, আর নয়। (সহীহ বুখারী হা/৭৪৪৯ আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪১)
.
তিনি (ইবনে কাসীর) বলেন, নিশ্চয়ই ঐ কথাটি জান্নাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, কেননা সেটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান। আর জাহান্নাম সেটি তো ন্যায়-নিষ্ঠার অর্থাৎ শাস্তির
স্থান, কারো কাছে রাসূল/দূত পাঠানোর আগে, কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার পূর্বে, কাউকে সেখানে প্রবেশ করানো হবে না।অবশ্যই একদল হাদীস বিশারদগণ এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন, এবং তারা বলেন: এই হাদীসটিতে শাব্দিক রদ-বদল হয়েছে। তার প্রমাণ বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত, বুখারীর শব্দে – আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাত ও জাহান্নাম পরস্পর বিতর্ক করে। জাহান্নাম বলে দাম্ভিক ও পরাক্রমশালীদের দ্বারা আমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলে, আমার কী হলো? আমাতে কেবল মাত্র দুর্বল এবং নিরীহ ব্যক্তিরাই প্রবেশ করছে। তখন আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা জান্নাতকে বলবেন, তুমি আমার রহমত। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছে আমি অনুগ্রহ করব। আর তিনি জাহান্নামকে বলবেন, তুমি হলে আযাব। তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের যাকে ইচ্ছে শাস্তি দেব। জান্নাত ও জাহান্নাম প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে পূর্ণতা। তবে জাহান্নাম পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না তিনি তাঁর পা তাতে রাখবেন। তখন সে বলবে, বাস, বাস, বাস। তখন জাহান্নাম পূর্ণ হয়ে যাবে এবং এর এক অংশ অপর অংশের সঙ্গে মুড়িয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টির কারো প্রতি জুলুম করবেন না। অবশ্য আল্লাহ্ তা‘আলা জান্নাতের জন্য অন্য মাখলূক সৃষ্টি করবেন। সহীহ বুখারীহা/৪৮৫০ সহীহ মুসলিম হা/২৮৪৬ তাফসির ইবনে কাছীর,খন্ড:৫ পৃষ্ঠা:৫২-৫৩)
.
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন;ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তিনি সকল জায়গায় সঠিকটা বর্ণনা করছেন, যাতে করে স্পষ্ট হয়ে যায় বর্ণনাকারী ভুল করেছেন। সেই স্বভাবগত ভাবেই তিনি সমস্ত শব্দ উল্লেখ করেছেন যা তার নিকট জানা রয়েছে,যার কিছু অংশ বর্ণনাকারীর ভুল ছিল।(ইবনে তাইমিয়া মিনহাজুস সুন্নাহ খন্ড:৫/১০১)
.
আরো বিস্তারিত জানতে ড: আহমদ বিন আব্দুল আজিজ বিন মুকরিন আল-কসির -র লিখিত কিতাব (الاحاديث المشكلة الواردة في تفسير القرآن الكريم) ভালো ভাবে অধ্যায়ন করা। তিনি এই হাদীসের আলোচনাটি এই প্রশ্নে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছেন,”যে আল্লাহ তা’য়ালা জাহান্নামের জন্য নতুন করে সৃষ্টি করে তাদের শাস্তি দিবেন কি না? (মুকরিন আল-কসির খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ১০৭ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং ৩৫৯৯১২)। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।