বিবাহের উদ্দেশ্যে একজন মেয়েকে দেখা প্রসঙ্গে

প্রশ্ন: বিবাহের উদ্দেশ্যে একজন মেয়েকে কতটুকু দেখা যাবে? লুকিয়ে পাত্রীকে দেখা যাবে কি? বিবাহের পাত্রীকে বিউটি পার্লারে নিয়ে অথবা বাড়িতে সাজ-সজ্জা করা জায়েয হবে কি? কনে দেখার ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো পরিত্যাগ করা অপরিহার্য।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। আর এজন্য পৃথিবীতে মানবের বংশ বিস্তারের প্রয়োজন। এই প্রয়োজনের কারণে পুরুষ এবং নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পুরুষ এবং নারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মানব বংশ বিস্তার করবে। আল্লাহ তা‘আলা অপূর্ব কৌশলে পুরুষ এবং নারী উভয়ের মধ্যে একটা আকর্ষণীয় শক্তি দিয়েছেন। তা না দিলে সৃষ্টি প্রক্রিয়া অকার্যকর হতো। আমরা জানি চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে, কিন্তু অন্য ধাতুকে আকর্ষণ করে না। তাহলে বলতেই হবে যে, লোহারও আকর্ষিত হবার গুণ রয়েছে। তাই এটাই সঠিক যে, পুরুষ আকৃষ্ট হয় নারীর প্রতি, আর নারী আকৃষ্ট হয় পুরুষের প্রতি। তথাপি নারীর প্রতি পুরুষই অধিক আকর্ষণ বোধ করে। মানসিকভাবে পুরুষই নারীর প্রতি অধিক দুর্বল। আদম (আঃ) হাওয়া (আঃ)-এর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারেননি। তাই তিনি হাওয়া (আঃ)-এর অনুরোধে নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করেছিলেন। এটা শুধু আদি মানবের বেলাতে ঘটেছিল তা নয়, আজও এরূপ ঘটতে দেখা যায়। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা প্রতিহত করতেই নারীর জন্য পর্দা ফরয করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েকজন পুরুষ ব্যতীত অন্যান্য পুরুষের সঙ্গে নারীর দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা আল্লাহর কিতাব আল-কুরআনের বিধান। ইসলামের প্রতিটি কাজের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। বিবাহ তার ব্যতিক্রম নয়। পাত্রী সৌন্দর্যে যতই প্রসিদ্ধ হোক তবুও তাকে বিবাহের পূর্বে এক ঝলক দেখে নেওয়া উত্তম। ঘটকের চটকদার কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা না রেখে জীবন-সঙ্গিনীকে জীবন তরীতে চড়াবার পূর্বে স্বচক্ষে যাচাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধনে মধুরতা আসে, অধিক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। একে অপরকে দোষারোপ করা থেকে বাঁচা যায় এবং বিবাহের পর পস্তাতে হয় না।

❂➤বিবাহের জন্য কনেকে আগে দেখে নেওয়ার উপকারিতা:
_______________________________________
বিবাহের জন্য মনোনীত মহিলাকে দেখা মুস্তাহাব। আর এটাই মালিকী, হানাফী, শাফী, আহমাদ ও জুমহূর উলামাগণের মত। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলল, আমি আনসারদের এক মেয়েকে বিবাহ করতে চাই। তিনি বললেন, তুমি তাকে প্রথমে দেখে নাও। কারণ আনসার মহিলাদের চোখে দোষ থাকে। (সহীহ মুসলিম হা/১৪২৪, মিশকাত হা, ৩০৯৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়) মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি জনৈকা নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না, দেখিনি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে দেখে নাও। কেননা, এই দেখা তোমাদের মাঝে (বৈবাহিক সম্পর্ক) প্রণয়-ভালোবাসা জন্ম দিবে। (ইমাম নাসায়ি; ৩২৩৫, ইবনু মাজাহ; হা/১৮৬৫, মিশকাত হা/৩১০৭, সহীহাহ হা/৯৬)। তিনি আরো বলেন, যখন তোমাদের কেউ কোন পাত্রীকে প্রস্তাব দিবে সম্ভব হলে সে যেন পাত্রীকে দেখে। যা বিবাহের জন্য সহায়ক হবে(আবু দাউদ হা/২০৮২; মিশকাত হা/৩১০৬;সহীহাহ হা/৯৯)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ﷺ) বলেন, পাত্রী দর্শনে পরস্পরে মহববত সৃষ্টি হয়।’ (ইবনু মাজাহ হা/১৮৬৫; মিশকাত হা/৩১০৭; সিলসিলা সহীহাহ হা/৯৬) সুতরাং, বিবাহের উদেশ্যে মহিলার চেহারা ও দু’ হাতের কব্জি পর্যন্ত দেখা বৈধ। কেননা চেহারাতেই প্রমাণ পাওয়া যাবে যে, মহিলাটি সুন্দরী নাকি এর বিপরীত। আর হাত দেখার মাধ্যমে মহিলার দেহের নমুনা পাওয়া যাবে যে, দেহ কোমল নাকি এর বিপরীত। আর এটাই অধিকাংশ উলামাগণের মত। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড,হাঃ ১৪২৪)

❂➤বিয়ের উদ্দেশ্য ঠিক থাকলে কনেকে আড়ালে লুকিয়ে থেকেও দেখা যাবে:
_______________________________________
জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন কোন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেবে, সম্ভব হলে সে তার এমন কিছু দেখে নেবে, যা তাকে বিবাহে উৎসাহিত করে।’’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা গোপন রেখেছিলাম। অতঃপর আমি তার মাঝে এমন কিছু দেখি, যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আকৃষ্ট করে। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি।’ (ইমাম আবু দাউদ,২০৮২, আহমাদ ১৪৫৮৬, ইরওয়া ১৭৯১, সহীহ আল জামি‘ ৫০৬। মিশকাত হা/৩১০৬; সহীহাহ হা/৯৯)।মুহাম্মাদ বিন সালামাহ (রা.) বলেন, আমি এক নারীকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠালাম। আমি তাকে দেখার জন্যে চুপিসারে তার বাগানে যাতায়াত করতাম এবং সেখানে (একদিন) তাকে দেখে ফেললাম। তাকে বলা হলো, ‘রাসূলের সাহাবী হয়ে আপনি এই কাজ করলেন?’ তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যখন আল্লাহ কারো অন্তরে কোন নারীকে বিবাহ করার প্রস্তাব দানের আগ্রহ সৃষ্টি করেন, তখন তাকে দেখে নেওয়াতে দোষের কিছু নেই।’’ (ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৮৬৪; হাদিসটি সহীহ)। অন্য বর্ণনায় এটাও এসেছে যে, তার (মেয়ের) অজান্তেও যদি তাকে দেখা হয়, তাহলে গোনাহ হবে না। (ইমাম তহাবি, শারহু মা‘আনিল আসার: ২৪২৭; হাদিসের সনদ সহিহ) হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন:”অধিকাংশ আলেম বলেছেন: পাত্রীর অনুমতি ব্যতীত প্রস্তাবিত পাত্র চাইলে তার দিকে তাকাতে পারবেন। (ফাতহুল বারী (৯/১৫৭)
.
❂➤কনেকে কতটুকু দেখা যাবে? আর হবু বরকে কনে কতটুকু দেখতে পারবে?
_______________________________________
পুরুষদের মধ্যে শুধুমাত্র পাত্র অর্থাৎ বিবাহের প্রস্তাবকারী পাত্রীর মুখমন্ডল,কব্জি সহ দুই হাত ও গোড়ালী সহ দুই পা দেখতে পারে। এভাবে পাত্রীও পাত্রকে দেখতে পারে। (ইবনু রুশদ, বেদায়াতুল মুজতাহিদ ৩/৩১)। অর্থাৎ হবু বরের নাভী থেকে হাঁটু, অর্থাৎ সতরের অংশটুকু বাদে বাকি সবকিছুই কনে দেখতে পারবে। এ ব্যাপারে আলিমগণ একমত। আর কনের চেহারা এবং কব্জি পর্যন্ত হাত দেখার ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত। শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, কোনো মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করলে তাকে দেখা মুস্তাহাব। আর এটাই জুমহূর উলামাগণসহ মালিক, শাফি‘ঈ, হানাফী, কুফী মাযহাবের মত। তবে উক্ত মহিলার শুধু চেহারা ও দু’হাত দেখা বৈধ হবে। কারণ এ দু’টো লজ্জাস্থান নয়। আর চেহারাতে নারীর সুন্দরী বা অসুন্দরী হওয়া প্রমাণিত হবে। আর দু’,হাত দেখায় তার দেহের সৌন্দর্য প্রমাণিত হবে। আর এটাই আমাদের ও আধিকাংশ উলামাগণের মত। হাফিয শামসুদ্দীন ইবনুল কইয়্যূম (রহঃ) বলেনঃ ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) বলেছেন, পয়গামকৃত মহিলা পর্দায় আবৃত অবস্থায় তার চোহারা ও দু’হাত দেখা যাবে, এর বেশী কিছু দেখা যাবে না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৮২ মিশকাত ৩১০৬ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দৃষ্টব্য:)
.
হাম্বলি মাযহাবের আলিমগণের মতামত হল: একজন মেয়ে ঘরোয়া পরিবেশে পরিবারের সদস্যদের সামনে যে অবস্থায় থাকে, সে অবস্থায় দেখা যাবে। যেমন: তার হাত (কনুই পর্যন্ত), চেহারা, ঘাড়, পা ইত্যাদি। তবে, আলিমগণ বলেছেন, তার দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকাবে না। বরং স্বাভাবিক দৃষ্টি দেবে। আর, যেহেতু এটা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্য, সেহেতু বারবার তাকালেও কোনো গোনাহ হবে না। এছাড়া উভয়ে উভয়কে যেকোন বৈধ মাধ্যমে যাচাই করতে পারে। (ইমাম আলবানী (রহ:) সিলসিলা সহীহাহ; হা/৯৯)
.
❂➤বিবাহের পাত্রীকে বিউটি পার্লারে নিয়ে অথবা বাড়িতে সাজ-সজ্জা করা জায়েয হবে কি?
_______________________________________
ইসলাম নারীকে বৈধ সাজসজ্জা করতে বাধা দেয় না। বরং বিভিন্ন হালাল প্রসাধনী ব্যবহার করে নারীরা সৌন্দর্য চর্চা করতে পারে। সাজসজ্জার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তাতে যেন শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দৃশ্যমান না হয় বরং পূর্ণরূপে সমস্ত দেহ আবৃত থাকে। তদ্রূপ পোষাক যেন আঁটসাঁট ও কাফিরদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়। সেই সাথে পোষাকে যাতে বিভিন্ন ধরনের ছবি-মূর্তি অঙ্কিত না থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রসাধনীতে যেন হারাম ও ক্ষতিকর কিছু মিশ্রিত না থাকে। আবার এমন যেন না হয় যে লেজার ট্রিটমেন্ট বা স্কীন ট্রান্স ফরমেশনের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ত্বকের রং পরিবর্তন করা অর্থাৎ কালো ত্বককে ফর্সা করা বৈধ নয়। কারণ তা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে, যেভাবে উল্কি অংকন ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করার মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করা হয়।(ইবনে উসাইমীন, ফাতওয়া নূরুন আলাদ দারব)। কিন্তু যদি ত্বক মূলত শুভ্র ছিল, পরে অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে নিষ্প্রভ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে মেডিসিনের মাধ্যমে প্রকৃত রং ফিরে পাওয়া দোষণীয় নয়। (সালেহ আল-মুনাজ্জিদ, ইসলাম কিউএ, ফৎওয়া নং ১৭৪৩৭১) তবে সাজসজ্জার জন্য প্রচলিত বিউটি পার্লারে যাওয়া সমীচীন নয়। কারণ, বিউটি পার্লারে কৃত্রিমভাবে অসুন্দরকে সুন্দর করার মাধ্যমে প্রতারণা করা হয় এবং ভ্রু চিকন করাসহ নানা শরী‘আত বিরোধী কাজ করা হয়। সেজন্য তাক্বওয়াশীল মুসলিম নারীর জন্য বিউটি পার্লারে যাওয়া অনুচিৎ। তবে যদি শরী‘আত বিরোধী কোন কর্মকান্ড না হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে, সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে ও ইয্যত-আব্রু হেফাযত রেখে যাওয়া যেতে পারে। (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৭/১২৪-১৩৩)।

❂➤মানুষের জন্য পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো পরিত্যাগ করা অপরিহার্য:
_______________________________________
পাত্রী দর্শনের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে পাত্রের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন মিলে ১০/১২ জনের একটি দল পাত্রীর বাড়ীতে যায়। তারা পাত্রীকে সবার সামনে বসিয়ে মাথার কাপড় সরিয়ে, দাঁত বের করে, হাঁটিয়ে দেখার এবং ছবি তুলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সমাজে যে পদ্ধতি সমাজে প্রচলিত আছে, তা ইসলাম সম্মত নয়। বিবাহের পূর্বে পাত্র ব্যতীত অন্যদের এভাবে পাত্রী দেখা চোখের যেনার শামিল। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের উপর যেনার একটি অংশ লিখা হয়েছে। সে তা পাবেই। মানুষের দু’চোখের যেনা দেখা। দু’কানের যেনা শুনা। জিহ্বার যেনা কথা বলা। হাতের যেনা স্পর্শ করা। পায়ের যেনা যেনার পথে চলা। অন্তরের যেনা হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা করা। লজ্জাস্থান তার সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে।’(সহীহ মুসলিম হা/২৬৫৭; মিশকাত হা/৮৬)।মোটকথা কোনোভাবেই কনেকে বরপক্ষের কোনো পুরুষ দেখতে পারবে না। এমনকি বরের বাবাও নয়। শুধু বর দেখবে। বিয়ের কনে দেখার সব হাদীসে নির্দিষ্টভাবে শুধু বরের কথাই এসেছে। তবে, বরের নারী আত্মীয়রা ইচ্ছামত দেখতে পারবে। এতে কোনো বাধা-নিষেধ সেই।
.
কোনোভাবেই বিয়ের আগে বর-কনে নিরবে একত্র হতে পারবে না। যতই কথা বলার প্রয়োজন হোক, অবশ্যই সেই মেয়ের কোনো মাহরাম পুরুষ সামনে থাকতে হবে। অথবা, অন্তত মাহরামের চোখের সামনে, সামান্য দূরে, স্বল্প সময়ে বিশেষ কথা হতে পারে, যদি কিছু বলার বা জানার থাকে। কারণ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘মাহরাম পুরুষ ব্যতীত কোনো নারীর সাথে যেন কোনো পুরুষ নিরিবিলিতে একত্র না হয়।’’(সহীহ বুখারী হা/ ৫২৩৩) অন্য হাদীসে এসেছে,‘‘যখন কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে নিরবে একত্র হয়, তখন তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।’’(সুনানে তিরমিযি ১১৭২; হাদিসটি সহীহ]আর, অবশ্যই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ফিয়ান্সের (হবু বর-বউ) সাথে বিয়ের আগে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। হাদিসে এসেছে, ‘‘কোনো নারী যেন তার মাহরাম ব্যতীত সফর না করে।’’(সহীহ বুখারী; ১৮৬২)পাশাপাশি বিবাহের উদ্দেশ্যে ছবি দেখা জায়েয। তবে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন: ছবি শালীন হতে হবে, ছবি অন্য কোন গায়রে মাহরাম ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা যাবে না এবং প্রস্তাবদাতা ছবি নিজের কাছে স্থায়ীভাবে রাখবে না।
.
উল্লেখ্য যে, অনেক সময় পাত্র-পাত্রীর ধর্মীয় বিষয়কে না দেখে তার রূপ-লাবণ্য, বংশ ও সম্পদ দেখেই বিবাহের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রত্যেক মুসলিম পাত্রের উচিত রূপ, বংশ ও সম্পদের চেয়ে পাত্রীর দ্বীনদারীত্বকে বেশী গুরুত্ব দেয়া। পরিপূর্ণ দ্বীনদারী পাওয়া গেলে অন্য গুণ কম হলেও দ্বীনদার মহিলাকেই বিবাহ করা উচিত, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ হবে। রাসূল (ﷺ) বলেন, মেয়েদের চারটি গুণ বিবেচনা করে বিবাহ করা হয়; তার সম্পদ, তার বংশ মর্যাদা, তার রূপ ও সৌন্দর্য এবং তার দ্বীনদারী। কিন্তু তুমি দ্বীনদার মহিলাকেই প্রাধান্য দাও। নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’(সহীহ বুখারী হা/৫০৯০, মুসলিম হা/১৪৬৬, মিশকাত হা/৩০৮২, বুলূগুল মারাম হা/৯৭১)। আবার বিবাহের পূর্বে ছেলে-মেয়ে দেখা উপলক্ষে ইনগেইজমেন্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কনেকে আংটি বা সোনার চেইন পরানো হয়। অথচ এসব অমুসলিম খ্রিষ্টান থেকে চলে আসা প্রচলিত রীতি মাত্র। বিবাহের পূর্বে এরূপ কোন লেনদেনের প্রমাণ ইসালমী শরী‘আতে পাওয়া যায় না। তাছাড়া আংটি পড়ানো ইসলামী সংস্কৃতি নয়। বরং এটি অমুসলিম বিধর্মীদের কালচার থেকে মুসলিমরা গ্রহণ করেছে।ৎশরীয়তে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ নিষিদ্ধ। (সূরা মায়েদাহ ৫১ তিরমিযী হা/২৬৯৫; সিলসিলা সহীহাহ হা/২১৯৪)। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।