বিদআতী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে দান-সাদাকাহ করা যাবে কি

প্রশ্ন: বিদআতী প্রতিষ্ঠান যেমন; মসজিদ-মাদ্রাসা, সংগঠন অথবা কোন বিদআতী ব্যক্তিকে দান-সাদাকাহ করা যাবে কি? কেউ না জেনে বিদআতী কাজে দান- সাদাকাহ করলে করণীয় কী?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: মহান আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণ করা ইসলামের মহান একটি মূলনীতি। এটা ছাড়া কারো ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। মু‘আয ইবনু আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, যে লোক আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে দান-খায়রাত করে, আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে (দান করা হতে) নিবৃত্ত থাকে, আল্লাহ তাআলার জন্য ভালোবাসে, আল্লাহ তাআলার জন্যই ঘৃণা করে এবং আল্লাহ তাআলার (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে বিয়ে প্রদান করে, সে তাঁর ঈমান সুসম্পন্ন করেছে। (তিরমিযী, হা/২৫২১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৫৫; মুসতাদরাকু আলাস সহীহাইন, হা/২৬৯৪)। এই হাদীসটি প্রমান করে যে, দান-সাদাকাহ হবে একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এবং তার নির্দেশিত পথে। এর ব্যতিক্রম হলে নেকির পরিবর্তে গুনাহ হবে।
.
অপরদিকে আমাদের সকলের জানা অপরিহার্য যে, ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে বড় পাপ শিরকের পর সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক ও মারাত্মক গুণাহের নাম বিদআত। তাই সব ধরনের বিদআতী আমল বা কার্যক্রম এবং বিদআতী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে সাহায্য ও সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে আক্বীদাগত বিদআতিদের। কারণ, রাসূল (ﷺ) বিদআত ও বিদআতী এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে তাঁর উম্মতকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। এমনকি বিদআতীকে আশ্রয় দিতেও নিষেধ করেছেন।
.
(১). বিদআত করলে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করা হয়: আল্লাহ তা‘আলা বলেন; “আর তোমাদের জিহবা দ্বারা বানানো মিথ্যার উপর নির্ভর করে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটানোর জন্য বল না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে, তারা সফলকাম হবে না।’’ (সূরা নাহল; ১৬/১১৬)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন, যারা বিদআত করে, যার কোন ভিত্তি ইসলামী শরীআতে নেই, তারা এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, তারা নিজেদের মন মত আল্লাহর হারামকৃত বস্ত্তকে হালাল সাব্যস্ত করে এবং আল্লাহর হালালকৃত বস্ত্তকে হারাম সাব্যস্ত করে। (তাফসীর ইবনু কসীর খন্ড:২ পৃষ্ঠা:৫৯১)। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, আল্লাহ সম্পর্কে বিনা ইলমে কথা বলা হারাম কাজ সমূহের অন্যতম এবং সবচেয়ে বড় পাপ। এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করা হয় এবং এমন কিছুকে তাঁর উপর সাব্যস্ত করা হয়; যা তাঁর জন্য শোভা পায় না, শরীআতে যা সিদ্ধ তা অমান্য করা হয় এবং যা নিষিদ্ধ তা পালন করা হয়, বাতিলকে হক্ব বলা হয় এবং হক্বকে বাতিল সাব্যস্ত করা হয়। (ইবনুল কাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন খন্ড:১, পৃষ্ঠা:৩৭২)
.
(২). বিদআত করলে রাসূল (ﷺ)-এর উপর খিয়ানতের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়: রাসূল (ﷺ)-এর জীবদ্দশাতেই দ্বীন-ইসলাম পূর্ণতা লাভ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।’ (সূরা মায়েদা; ৫/৩)। অতএব, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হওয়া সত্ত্বেও যারা ভাল কাজের দোহাই দিয়ে ইসলামের মধ্যে নতুন নতুন ইবাদতের জন্ম দিয়েছে ও তাকে লালন করছে তাদের ভাবখানা এমন যেন ইসলাম অপূর্ণাঙ্গ। আর এরূপ বিশ্বাস আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর মিথ্যারোপ করার শামিল। ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন; ‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে বিদআত সৃষ্টি করল এবং তাকে উত্তম মনে করল, সে যেন ধারণা করল যে- মুহাম্মাদ (ﷺ) রিসালাতে খিয়ানত করেছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে (ইসলাম) পূর্ণাঙ্গ করলাম।’ (সূরা মায়েদাহ; ৫/৩)। সুতরাং, সে যুগে [রাসূল (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে] যা দ্বীন হিসাবে গণ্য ছিল না, বর্তমানেও তা দ্বীন হিসাবে পরিগণিত হবে না।’ (আশরাফ ইবরাহীম কাতকাত, আল-বুরহানুল মুবীন ফিত তাছাদ্দী লিল বিদই ওয়াল আবাতীল খন্ড: ১ পৃষ্ঠা:৪২)
.
(৩). রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘কেউ আমাদের এই দ্বীনের অংশ নয়; এমন কিছু উদ্ভাবন করলে তা পরিত্যাজ্য-প্রত্যাখ্যাত।’ অন্য বর্ণনায় তিনি আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনি কাজের মধ্যে এমন বিষয় উদ্ভাবন করে যা তাতে নেই, তা অগ্রহণযোগ্য।’ (সহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮)।
.
(৪). রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও সালাতের পর আরো বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হলো আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হলো মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হলো দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হলো ভ্রষ্টতা।’ এর ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (আবু দাঊদ, হা/৪৬০৭; নাসাঈ হা/১৫৭৮, সনদ সহীহ)।
.
(৫). রাসূল (ﷺ)আরো বলেছেন, ‘যে কেউ দ্বীনের ব্যাপারে বিদআত করে কিংবা কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয় কিংবা সাহায্য করে তার উপর আল্লাহ তা‘আলার, ফেরেশতাগণের ও সকল মানব জাতির অভিশাপ। তার কোন ফরয কিংবা নফল ‘ইবাদত গৃহীত হবে না।’ (সহীহ বুখারী, হা/১৮৭০সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭০)। তাই বিদআতী কাজে সহযোগিতা করা মহা অন্যায়। আল্লাহ মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন। এবং অন্যায়, অসৎ, হারাম ও বিদআতী কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। (সূরা আল-মায়িদাহ : ২; তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/১২ পৃ.; তাফসীরে কুরতুবী, ৬/৪৬-৪৭ পৃ.)।
.
(৬). রাসূল (ﷺ) সাহাবীদেরকে উপদেশ দিতে গিয়ে আরো বলেছেন, আমার পরে তোমাদের যে ব্যক্তি বেঁচে থাকবে; সে অনেক মতভেদ দেখবে। এমতাবস্থায় তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নাতকে ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদীনের সুন্নাতকে আঁকড়িয়ে ধরা এবং এ পথ ও পন্থার উপর দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! তোমরা দ্বীনের মধ্যে বিদআত সৃষ্টি করা হতে বিরত থাক। কেননা প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। (মুসনাদে আহমাদ হা/১৬৬৯৪, আবু দাঊদ হা/ ৪৬০৭, তিরমিযী হা/২৬৭৬,মিশকাত হা/১৬৫)
.
(৭). আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِنَّ اللهَ حَجَرَ التَّوْبَةَ عَنْ كُلِّ صَاحِبِ بِدْعَةٍ ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিদ‘আতীকে তওবাহর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন।’ (আহমাদ ইবনুল হুসাইন ইবনু আলী ইবনি মূসা আবী বাকর আল-বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান, ১২তম খণ্ড, রিয়াদ: মাকতাবাতুর রুশদ, ১ম সংস্করণ, ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি., পৃষ্ঠা:৫৪, হা/৯০১০)। সুফিয়ান আস-সাওরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবলীসের কাছে অন্য যে কোন পাপের চেয়ে বিদআত অতি প্রিয়। কেননা যে কোন পাপ থেকে তওবার সুযোগ থাকে। কিন্তু বিদআত থেকে তওবার সুযোগ থাকে না।’ (আলী ইবনুল জা‘দ ইবনু ‘উবাইদ আবুল হাসান আল-জাওহারী আল-বাগদাদী, মুসনাদু ইবনি জা‘দ; বৈরূত: মুওয়াস্সাসাতু নাদির, ১ম সংস্করণ, ১৪১০ হি./১৯৯০ খ্রি., পৃ. ২৭২ হা/১৮০৯)
.
(৮). ফুযাইল ইবনু ঈয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে ব্যক্তি বিদআতীকে সম্মান করল; সে যেন ইসলামকে ধ্বংস করতে সহযোগিতা করল। আর যে ব্যক্তি বিদআতীর সম্মুখে মুচকি হাসল; সে যেন আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর উপর যা অবতীর্ণ করেছেন তা অবজ্ঞা করল। (কিতাবু শারহিস সুন্নাহ, পৃ. ৬০, আছার নং-১৩০)। আসাদ ইবনু মূসা (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক আসাদ ইবনু ফুরাত (রাহিমাহুল্লাহ)-এর নিকট প্রেরিত একটি পত্রে বলেন, বিদআতীর উপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে। সুতরাং তাদের আসরগুলো ভেঙ্গে দাও, তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে পরিত্যাগ ও লাঞ্ছিত করেছেন; সেভাবে পরিত্যাগ ও লাঞ্ছিত কর এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও হেদায়াতপ্রাপ্ত ওলামায়ে কেরাম তাদেরকে যেরূপ লাঞ্ছিত করেছেন, তাদেরকেও অনুরূপ লাঞ্ছিত কর।’ (মুহাম্মাদ ইবনু ওয়াযযাহ আল-কুরতুবী, আল-বিদা‘ঊ ওয়ান নাহিউ আনহা; কায়রো: দারুছ ছাফা, ১ম সংস্করণ, ১৪১১ হি./১৯৯০ খ্রি., পৃ. ১৪)।
আবূ ক্বিলাবা (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, ‘একদা তিনি আহলে সুন্নাতের এক ব্যক্তিকে এক বিদআতী লোকের সাথে দেখে তাকে বলেন- তোমার কী হলো, এটাতো ঠাট্টা-বিদ্রুপ।’ (আল-ইবানাতু আন শার‘আতিল ফিরক্বাতিন নাজিয়াতি ওয়া মুজানিবাতিল ফিরাক্বিল মাযমূমাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৮৯১)
.
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা প্রমাণিত যে- কোন অবস্থাতেই বিদআতীকে বা বিদআতী কার্যক্রমে সাহায্য সহযোগিতা করা যাবেনা। এখন বিদআতি প্রতিষ্ঠান দান-সাদকার ক্ষেত্রে করনীয় হলো, যে সকল মসজিদ ও মাদরাসায় বিদআতী কর্মকাণ্ড হয় দেখতে হবে তাদের বিদআত কোন পর্যায়ের। যদি সাধারণ বিদআত অর্থাৎ আমলগত বিদআত হয়; তাহলে স্বাভাবিক ভাবে তাদেরকে দান- সাদকা করা নাজায়েজ হলেও তাদের একান্ত প্রয়োজন হলে মুসলিম ভাই বোন হিসেবে উত্তম নসীহার মাধ্যমে দান-সাদকা করা যেতে পারে। কারন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য আয়নাস্বরূপ এবং এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভাই। তারা একে অপরের ক্ষতি করা হতে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রক্ষা করে।(সুনানে আবু দাউদ,হা/৪৯১৮) উক্ত হাদীসে তিনি তাকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেন” এই কথার ব্যাপারে, ইমাম ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: একজন মানুষের ক্ষতি হস্তশিল্প, বাণিজ্য, কৃষি ইত্যাদির ক্ষেত্রে হতে পারে, তাই তার সহবিশ্বাসী তাকে সমর্থন করে এবং তাকে জীবিকা অর্জনে সাহায্য করার চেষ্টা করে। এবং যখন সে অনুপস্থিত থাকে তখন তাকে রক্ষা করে” (দেখুন ‘আউন আল-মা’বুদ এবং ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২১৯৪৪)
.
কিন্তু বিদআত যদি আক্বীদাগত অর্থাৎ শিরক, কুফরি পর্যায়ের হয় তাহলে সেসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসায় কোন অবস্থাতেই দান-সাদকা করা যাবেনা। কারণ, এতে বিদআতের সহযোগিতা করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে পরস্পরে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘন কাজে সহযোগিতা কর না।’ (সূরা মায়েদাহ; ৫/২)। জেনে-শুনে বিদআতী আমল করলে সেই আমল কবুল হয় না, যতক্ষণ না সে তওবা করে বিদআত থেকে ফিরে আসে।’ আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত; কুরআন এবং এই কাগজে যা আছে তা ব্যতীত আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট হতে আর কিছু লিখে নেইনি। তিনি বলেন, এতে আছে- রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মদীনা হারাম (সম্মানার্হ) আইর হতে সওর পর্যন্ত। যে তাতে কোন বিদআত সৃষ্টি করবে অথবা বিদআত সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দিবে, তার উপর আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ এবং মানুষ সকলেরই অভিসম্পাত। তার ফরয বা নফল কিছুই কবুল করা হবে না। সকল মুসলমানের প্রতিশ্রুতি এক, তাদের ক্ষুদ্র ব্যক্তিও তার চেষ্টা করতে পারে। অতএব, যে ব্যক্তি কোন মুসলামানে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, তার উপর আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের লা‘নত; তার ফরয বা নফল কোনটাই গ্রহণ করা হবে না। আর যে ব্যক্তি নিজের মালিকদের অনুমতি ব্যতীত অন্য সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে, তার উপর আল্লাহ্ ও ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের লা‘নত; তার ফরয বা নফল কোনটাই গ্রহণ করা হবে না। (সহীহ বুখারী হা/৩১৭২; মুসলিম হা/১৩১৭; মিশকাত হা/২৭২৮, ত্বাবারাণী, সহীহুত তারগীব হা/৫৪)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, কিছু বিদআত আছে যার জন্য একজন ব্যক্তি কে মাফ করা যেতে পারে, কিছু বিদআত আছে যা ফিসক (পাপ কাজ) পর্যন্ত পৌঁছে এবং কিছু বিদআত আছে যা কুফর পর্যায়ে পৌঁছে। যারা কুফর বিদআতের অনুসারী তাদের ব্যাপারে, তাদের সাহায্য করা মোটেও জায়েয নয়, যদিও তারা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করে। কারণ তারা কুফর প্রমাণিত হওয়ার পরেও বিদআতের উপর অটল থাকা মানে এর অর্থ হলো তারা মুনাফিকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যারা বলেছিল। আল্লাহ বলেন; তারা বলে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল। আর আল্লাহ জানেন যে, আপনি নিশ্চয় তাঁর রাসূল এবং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (সূরা আল-মুনাফিকুন; ৬৩:১)। তবে বিদআত সম্পর্কে যা ফিসক (অপকর্ম) গঠন করে বা যার জন্য একজন ব্যক্তির যুক্তিসঙ্গত অজুহাত থাকতে পারে, তারা যে বিদআত অনুসরণ করে তার মানে এই নয় যে- আমরা তাদের সাহায্য করার অনুমতি নেই। তাদেরকে কাফির শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য করা উচিত। কারণ, তারা নিঃসন্দেহে সেই কাফেরদের চেয়ে উত্তম। কিন্তু তাদের বিদ’আত প্রতিষ্ঠা বা প্রচারে দান-সাদকা করা থেকে বিরত রাখতে হবে। যদি এটা জানা যায় বা মনে করা হয় যে, তারা সেই দানের অর্থ তাদের বিদআতকে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করবে, এবং তাদের তা করা থেকে বিরত রাখা যাবে না তাহলে তাদের দান করা উচিত নয়। কারণ, এটি তাদের পাপের কাজে তাদেরকে সাহায্য করা হবে। আল্লাহ মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ, হারাম ও বিদআতী কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন। (সূরা আল-মায়িদাহ:২; উসামীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৬৬)
.
এখন কেউ যদি না জেনে কোন আক্বীদাগত বিদআতী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে দান করে তাহলে তার জন্য করণীয় হলো- আল্লাহর কাছে উক্ত ভুলের জন্য তওবা করা। এই মর্মে হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] ও ইমাম শাত্বিবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, না জেনে বিদেশী প্রতিষ্ঠান দান করলে এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট কঠোরভাবে তওবাহ করতে হবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা খালিছ তওবার মাধ্যমে শিরকের মত ধ্বংসাত্মক, হত্যার মত মারাত্মক ও ব্যভিচারের মত জঘন্য গুনাহকেও ক্ষমা করার ঘোষণা করেছেন। যে ব্যক্তি স্বচ্ছ ও পবিত্র অন্তরে একনিষ্ঠ ও একাগ্রতার সাথে খালিছ তওবাহ করে আল্লাহ তার তওবাহ কবুল করেন। (গিযাউল আলবাব, ২/৫৮১ পৃ.; আল-ই‘তিছাম, খন্ড:২ পৃষ্ঠা ২৮১; মাজাল্লাতুল বুহূছিল ইসলামিয়্যাহ খন্ড:১৪ পৃষ্ঠা:১৮৩-১৮৫ পৃ.) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।