প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন জাহান্নামে যাবে বাকি একজন জান্নাতে যাবে মর্মে বর্ণিত হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা

যে হাদীসটি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তির ব্যাখ্যা জানার আগে একটি বিষয় পরিষ্কার করি, জাহান্নামীদের সংখ্যার বিষয়ে বর্ণিত মৌলিক হাদীস দু্ইটি। মূল হাদীস দুটি হলো, বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; ক্বিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম আদাম (আঃ)-কে ডাকা হবে। তিনি তাঁর সন্তানদের দেখতে পাবেন। তখন তাদেরকে বলা হবে, ইনি তোমাদের পিতা আদাম (আঃ)। তখন তারা বলবে (আরবী) আমরা তোমার খিদমাতে হাযির! এরপর তাঁকে আল্লাহ্ বলবেন, তোমার জাহান্নামী বংশধরকে বের কর। তখন আদাম (আঃ) বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! কী পরিমাণ বের করব? আল্লাহ্ বলবেনঃ প্রতি একশ’ তে নিরানব্বই জনকে বের কর। তখন সহাবাগণ বলে উঠলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! প্রতি একশ’ থেকে নিরানব্বই জনকে বের করা হবে তখন আর আমাদের কে বাকী থাকবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন; নিশ্চয়ই অন্যান্য সকল উম্মাতের তুলনায় আমার উম্মাত হলো কাল ষাঁড়ের গায়ে একটি সাদা চুলের মত। (সহীহ বুখারী হা/৬৫২৯, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৮৫)
.
অপর বর্ণনায় আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন ডাক দিয়ে বলবেন, হে আদম! নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে আদেশ করেন যে, আপনি আপনার সন্তানদের মধ্য হতে জাহান্নামীদের বের করে দেন। আদম বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! কতজন জাহান্নামী? আল্লাহ বলবেন প্রতি হাযারে ৯৯৯ জন।… এ বক্তব্য লোকদের জন্য খুবই কঠিন হলো। এমনকি তাদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। তখন নবী করীম (ﷺ) বললেন, দেখ ইয়াজূজ-মাজূজ সম্প্রদায় থেকে হবে ৯৯৯ জন। আর তোমাদের মধ্য থেকে হবে ১ জন। তারপর বললেন, মানুষের মধ্য হতে তোমাদের সংখ্যার তুলনা হবে একটি সাদা গরুর পশমসমূহের মধ্যে একটি কালো পশম অথবা একটি কালো গরুর পশমসমূহের মধ্যে একটি সাদা পশমের মত। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি আশা করি যে, তোমরা জান্নাতীদের এক-চতুর্থাংশ হবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা একথা শুনে ‘আল্লাহ আকবার’ বললাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। আমরা আবারো ‘আল্লাহু আকবার’ বললাম। আর অবশ্যই আমি আশা রাখি যে, তোমরা জান্নাতীদের চার ভাগের তিন ভাগ হবে। তখন আমরা ‘আল্লাহু আকবার’ বললাম। (সহীহ বুখারী হা/৪৭৪১; মিশকাত হা/৫৫৪১ ‘হাশর’ অনুচ্ছেদ)
.
উপরোক্ত (১) নং আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীসে প্রতি এক শত জনে ৯৯ জনকে জাহান্নাম থেকে বের করার কথা বলা হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৬৫২৯)। যা হিসাব করলে হাজারে ৯৯০ জন দাঁড়ায়। (২) নং আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীসে প্রতি হাজারে ৯৯৯ জনের কথা বলা হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৩৩৪৮)। প্রথম হাদীসের বর্ণনা অনুসারে , যাদেরকে ক্বেয়ামাতের দিন জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা হবে তাদের সংখ্যা হবে হাজারে দশজন। দ্বিতীয় হাদীস অনুসারে এই সংখ্যা হাজারে একজন। বিশেষজ্ঞ আলিমগণ বিভিন্নভাবে এই দুটি হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন। যেমন:

(১): এখানে সংখ্যা আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা যাবে না। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বর্ণনা দ্বারা এটা বুঝায় না যে সংখ্যা এর থেকে বেশি হবে না। দুটি হাদীসে বর্ণিত দুটি সংখ্যা দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যে ,মুমিন বিশ্বাসীদের সংখ্যা কম এবং কাফির-অবিশ্বাসীদের সংখ্যা বেশি।

(২): আবু সাঈদ আল খুদরী (رضي اللّه عنه) এর হাদীস দ্বারা আদম (عليه السّلام) এর সব বংশধরকেই বুঝানো হতে পারে। তাই , তাদের ভিতরে যারা জান্নাতে যাবে, তারা হবে প্রতি হাজারে একজন। এবং আবু হুরায়রা (رضي اللّه عنه) বর্ণিত হাদীস দ্বারা ইয়াযুয-মাজুজ সম্প্রদায় ছাড়া আর বাঁকী সকলকে বুঝানো হতে পারে। তাই, তাদের ভিতরে যারা জান্নাতে যাবে তারা হবে প্রতি হাজারে দশ জন। এই ব্যাখ্যাটির প্রতি সমর্থন এভাবে পাওয়া যায় যে, আবু সাঈদ আল খুদরী (رضي اللّه عنه) বর্ণিত হাদীসে ইয়াযুয-মাজুজ এর উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আবু হুরায়রা (رضي اللّه عنه) এর হাদীসের উল্লেখ করা হয়নি।

(৩): এটা হতে পারে যে, এই ভাগ করার ঘটনা দুইবার ঘটবে। একবার ঘটবে তাদের সাথে যারা এই উম্মাতের আগে এসেছিলেন, যখন সংখ্যাটি হবে হাজারে একজন। এবং আরেকবার ঘটবে শুধুমাত্র এই উম্মাতের সাথে, যখন সংখ্যা হবে হাজারে দশজন।

(৪): “যাদেরকে জাহান্নামে পাঠানো হবে” এর দ্বারা এটা বুঝানো হতে পারে যে, অবিশ্বাসী-কাফির এবং পাপী-মুসলিম যারা এখানে প্রবেশ করবে, তাদের মধ্য থেকে কাফিরদের সংখ্যা হবে প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন্য এবং পাপী-মুসলিমদের সংখ্যা হবে প্রতি একশতে নিরানব্বই জন। (দেখুন ইবনে হাজার তার গ্রন্থ ফাতহুল বারী , ১১/৩৯০ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-২২৮৩৬)
.
মোটকথা প্রতি হাজারে ৯৯৯ জন জাহান্নামী, এটা মুসলিম-অমুসলিম সবার মধ্য থেকে গণনা হবে। তবে তার মধ্যে উম্মাতে মুহাম্মাদীর সংখ্যা হবে মাত্র একজন। এই একজনের মধ্যে পাপী মুমিনরাও অন্তর্ভুক্ত। পাপী মুমিনরা তাদের গুনাহের কারণে শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহর দয়ায় একসময় জান্নাতে যাবে। দুটি হাদীসে দুরকম সংখ্যার বৈপরীত্য দূরীকরণার্থে মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, ইয়াজুজ মাজুজ ও সকল কাফের মুশরিকসহ হাজারে ৯৯৯ জন জাহান্নামী। আর ইয়াজুজ-মাজুজ ব্যতীত অন্যান্য কাফের-মুশরিকের তুলনায় হাজারে ৯৯০ জন জাহান্নামী। (ফায়যুল বারী, ৫/৩৩১)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।