নিয়মিত সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার পড়ার ফজিলত

নিয়মিত ”সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার” পড়ুন এতে অনেক ফজিলত রয়েছে।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ ‏”‏ ‏
অনুবাদ এবং অর্থ: সুবহানাল্লাহ (আল্লাহ মহাপবিত্র), ওয়ালহামদু লিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর) ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ব্যাতিত কোন ইলাহ নাই) এবং ওয়াল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান)

▪️(১) তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) অর্থ আল্লাহ মহাপবিত্র।
▪️(২) তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ) অর্থ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।
▪️(৩) তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)অর্থ আল্লাহ ব্যাতিত কোন হক ইলাহ নাই।
▪️(৪) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) অর্থ, আল্লাহ মহান। আজ আমরা এগুলো পাঠের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

(১) রাসল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ চারটি শ্রেষ্ঠ বাক্য আছে তার যে কোনোটি দিয়ে শুরু করাতে তোমার ক্ষতি নেই, সুবহানাল্লাহ (আল্লাহ মহাপবিত্র), ওয়ালহামদু লিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর) ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ব্যাতিত কোন ইলাহ নাই) এবং ওয়াল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান)। (মুসলিম ২১৩৭। সিলসিলা সহীহাহ ৩৪৬। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৮১১)
.
(২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সুব্হানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার পাঠ করা যা কিছুর উপর সূর্য উদিত হয়েছে সবকিছু থেকে আমার নিকট অধিক প্রিয়।” (সহীহ মুসলিম ২৬৯৫)
.
(৩) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাহমীদের (আলহামদু লিল্লাহ) এর মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর যে মহিমা বর্ণনা কর তা মৌমাছির গুঞ্জনের ন্যায় শব্দ করে আরশের চারপাশে ঘুরতে থাকে। সেগুলো নিজ নিজ প্রেরকের কথা উল্লেখ করতে থাকে। তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করে না যে, আল্লাহর নিকট অনবরত তার উল্লেখকারী কেউ থাকুক?(আহমাদ ১৭৮৯৮,১৭৯২১। মুখতাসারুল উলু ৩২/২৪। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৮০৯)
.
(৪) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের প্রত্যেক (হাড়ের) জোড়ের পক্ষ থেকে প্রাত্যহিক (প্রদেয়) সাদকাহ রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর (আল্লাহু আকবার বলা) সাদকাহ।” (সহীহ মুসলিম ১৭০৪ হাদিস সম্ভার, হাদিস নং ১৬০০)
.
(৫) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি শুকনা পাতাওয়ালা গাছের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁর লাঠি দিয়ে তাতে আঘাত করলে হঠাৎ পাতাগুলো ঝরে পরে। অতঃপর তিনি বললেন কোন বান্দা “আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ এবং লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” (সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ তা’আলা অতি পবিত্র এবং আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত সত্য কোন মা’বূদ নেই, তিনি অতি মহান) বললে তা তার গুনাহ সমূহ এরূপভাবে ঝরিয়ে দেয় যেভাবে এ গাছের পাতাসমূহ ঝরে পড়েছে। (তা’লীকুর রাগীব হা: ২/২৪৯ তিরমিজি,৩৫৩৩)
.
(৬) উম্মু হানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললাম, হে রাসূলুল্লাহ! আমাকে একটা আমল বলে দিন। কেননা এখন তো আমি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, দুর্বল হয়ে গেছি এবং আমার দেহও ভারী হয়ে গেছে। তিনি বলেনঃ তুমি শতবার আল্লাহু আকবার, শতবার আলহামদু লিল্লাহ এবং শতবার সুবহানাল্লাহ পড়ো। তা জিনপোষ ও লাগামসহ একশত ঘোড়া আল্লাহর পথে (জিহাদে) দান করার চেয়ে উত্তম, একশত উটের চেয়ে উত্তম এবং একশত গোলাম আজাদ করার চেয়ে উত্তম। (আহমাদ ২৭৭২৩, ২৬৮৪৭।সিলসিলা সহীহাহ ১৩১৬। সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৮১০)
.
(৭) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের কোন ব্যক্তি প্রত্যহ এক হাজার নেকী অর্জন করতে অপারগ হবে কি?” তাঁর সাথে উপবিষ্ট ব্যক্তিদের একজন জিজ্ঞাসা করল, ‘কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করবে?’ তিনি বললেন, “একশ’বার তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়বে। ফলে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা এক হাজার গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে।” (সহীহ মুসলিম ২৬৯৮, তিরমিযী ৩৪৬৩, আহমাদ ১৪৯৯, ১৫৬৬, ১৬১৫)
.
(৮) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নামাযান্তে কিছু বাক্য রয়েছে বা কিছু কর্ম রয়েছে, সেগুলি যে পড়বে বা (পাঠ) করবে, সে আদৌ ব্যর্থ হবে না। তা হচ্ছে প্রত্যেক ফরয নামায বাদ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া। (মুসলিম ৫৯৬, তিরমিযী ৩৪১২, নাসায়ী ১৩৪৯ রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৪২৮)
.
(৯) অপর এক বর্ণনায় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর ‘সুবহা-নাল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘আল্লাহু আক্বার’ ৩৩ বার, সর্বমোট ৯৯ বার এবং ১০০ বার পূরণ করার জন্য একবার لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْـحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ দাহু লা-শারী-কা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর) পাঠ করবে, তার পাপ সমুদ্রের ফেনারাশি পরিমাণ হলেও মাফ হয়ে যাবে’। (সহীহ মুসলিম হা/৫৯৭; মিশকাত হা/৯৬৭)
.
(১০) রাসূল (ﷺ) বলেন,তোমরা ২৫ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ২৫ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং ২৫ বার ‘আল্লাহু আকবর’ এবং ২৫ বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে, তাও একশত বার হবে। যখন সকাল হল ঐ ব্যক্তি স্বপ্ন বৃত্তান্ত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানাল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তাসবীহ অনুরুপই বলবে, যেরূপ আনসারী ব্যক্তি বলেছে। (সুনানে আন-নাসায়ী ১৩৫১)
.
(১১) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’টি বিষয় বা দু’টি অভ্যাসের প্রতি যে মুসলিম খেয়াল রাখবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে যাবে। অভ্যাস দু’টি সহজ কিন্তু তা আমলকারীর সংখ্যা কম। তা হলো (১) প্রত্যেক সলাতের পর দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আল্‌হামদু লিল্লাহ ও দশবার আল্লাহু আকবার বলবে। মুখে (পাঁচ ওয়াক্তে) এর সংখ্যা একশ পঞ্চাশ, কিন্তু মীযানে তা একহাজার পাঁচশ। (২) যখন শয্যায় যাবে চৌত্রিশ বার আল্লাহু আকবার, তেত্রিশ বার আল্‌হামদু লিল্লাহ ও তেত্রিশ বার সুবহানাল্লাহ বলবে। তা মুখে একশ কিন্তু মীযানে একহাজার। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০৬৫)
.
(১২) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয়। (সহীহ মুসলিম ২২৩, তিরমিযী ৩৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৮০, আহমাদ ২৩৯৫, ২২৪০১, দারেমী ৬৫৩ রিয়াদুস সলেহিন ১৪২১)
.
(১৩).রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’র জিকির মিজানের পাল্লাকে ভারী করে দেয় এবং এটা সর্বোত্তম দোয়া। (তিরমিজি: ৫/৪৬২ ও ইবনে মাজাহ ২/১২৪৯)
.
(১৪) রাসূল (ﷺ) বলেছেন, সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ এবং সর্বোত্তম দু’আ হলো ‘আল-হামদুলিল্লাহ্’। (তিরমিযী হা/৩৩৮৩, ইবনু মাজাহ হা/৩৮০০, ইবনু হিব্বান, নাসায়ী, মুস্তাদরাক হাকিম হা/১৮৩৪)
.
(১৫) রাসূল (ﷺ) বলেছেন কোন বান্দা এমন নেই যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে আর তার জন্য আকাশসমূহের দরজাগুলো খূলে যায় না। এমনকি এ কালেমা সোজা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তবে শর্ত হচ্ছে, এর পাঠকারী কবীরাহ গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকবে। (তিরমিযী হ/৩৫৯০- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহীহ জামিঊস সাগীর হা/৫৬৪৮)
.
(১৬) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ (সালাতে ইমামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য) পুরুষদের বেলায় তাসবিহ সুবহানাল্লাহ্ বলা। তবে মহিলাদের বেলায় ‘তাসফীক’ (এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের তালুতে মারা)। (সহীহ বুখারী পর্ব ২১ /৫ হাঃ ১২০৩, মুসলিম ৪/২৩ হাঃ ৪২২ আল লু’লু ওয়াল মারজান, হাদিস নং ২৪৪)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।