তাওবা সম্পর্কে বিস্তারিত

প্রশ্ন: তাওবা শব্দের প্রকৃত অর্থ কী? একনিষ্ঠ হৃদয়ে গীবতসহ সমস্ত গুনাহ থেকে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে আল্লাহর নিকট খাঁটি ও গ্রহণযোগ্য তাওবার শর্তসমূহ এবং সঠিক পদ্ধতি কী?
▬▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬▬
▪️প্রথমত: পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। অতঃপর তওবা শব্দের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসা, গুনাহ ত্যাগ করা, গুনাহকে অপছন্দ করা, নেক কাজে কসুর হওয়ার জন্য অনুতপ্ত হওয়া।কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় তওবার অর্থ বিগত গোনাহের জন্যে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার ধারে কাছে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা। যে কেউ তওবা করলে আল্লাহ্‌ তার তওবা কবুল করেন। তওবাকারীদের কাফেলা চলমান থাকবে।পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় ঘটার পূর্ব পর্যন্ত এ কাফেলা থামবে না।কেউ তওবা করে ডাকাতি থেকে, কেউ তওবা করে যৌনাঙ্গের পাপ থেকে, কেউ তওবা করে মদ্যপান থেকে, কেউ তওবা করে মাদকদ্রব্য থেকে, কেউ তওবা করে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে, কেউ তওবা করে নামায না-পড়া থেকে কিংবা জামাতে হাজিরে অলসতা করা থেকে, কেউ তওবা করে পিতামাতার অবাধ্যতা থেকে, কেউ তওবা করে সুদ-ঘুষ থেকে, কেউ তওবা করে চুরি থেকে, কেউ তওবা করে মানুষ হত্যা করা থেকে, কেউ তওবা করে অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা থেকে, কেউ তওবা করে সিগারেট খাওয়া থেকে। প্রত্যেক পাপ থেকে আল্লাহ্‌র কাছে তওবাকারীকে স্বাগতম।খাঁটি তওবার মাধ্যমে সে যেন নবজাতক শিশুর মত হয়ে গেল।কারন আল্লাহ্‌ তাআলার রহমত অবারিত, বান্দার প্রতি তাঁর দয়া সর্বব্যাপী। তিনি সহিষ্ণু; তাৎক্ষণিকভাবে আমাদেরকে পাকড়াও করেন না, শাস্তি দেন না, কিংবা ধ্বংস করে দেন না। বরং আমাদেরকে সময় দেন। তিনি তাঁর নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে তিনি তাঁর মহানুভবতার ঘোষণা দেন: “বলে দিন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ! আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ্‌ তো সব গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু”।[সূরা যুমার, ৩৯: ৫৩] আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফল হও।”[সূরা নূর, ২৪:৩ ১] আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে খাঁটি তওবা কর।”[সূরা আত্‌তাহরীম, ৬৬: ৮] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাদেম হামযার পিতা আনাস বিন মালেক আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবাতে এর চেয়েও বেশি খুশি হন।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]আব্দুর রহমানের পিতা আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করেন যতক্ষণ পর্যন্ত না গড়গড় শব্দ (মৃত্যুর যন্ত্রণা) শুরু হয়।”[সুনানে তিরমিযি: ৩৫৩৭]
.
হাদিসে সাঈদের পিতা সাদ বিন মালিক বিন সিনান আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে এমন এক লোক ছিল যে নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করেছে। সে ঐ সময়কার সবচেয়ে জ্ঞানবান ব্যক্তির অনুসন্ধান করল। তাকে একজন ধর্মযাজককে দেখিয়ে দেয়া হল। সে ধর্মযাজকের কাছে এসে বলল: আমি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছি; আমার জন্য কি তওবার সুযোগ আছে? ধর্মযাজক বলল: না। তখন সে উক্ত ধর্মযাজককে হত্যা করে একশজন পূর্ণ করল। এরপর সে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে আছে তার সন্ধান করল? তখন তাকে একজন ধর্মীয় পণ্ডিতকে দেখিয়ে দেয়া হল। সে (পণ্ডিতকে) বলল যে, সে একশজন মানুষকে হত্যা করেছে; তার জন্যে কি তওবা করার সুযোগ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তার তওবা কবুলের পথে কে প্রতিবন্ধক হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত আছে। তুমিও তাদের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত হও এবং কখনও তোমার নিজ দেশে ফিরে যাবে না। কেননা, সেটা খুব খারাপ জায়গা। লোকটি নির্দেশিত স্থানের দিকে রওয়ানা হয়ে গেল। অর্ধেক পথ অতিক্রম করার পর তার মৃত্যুর সময় হয়ে গেল। তখন তাকে নিয়ে রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতাদের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতারা বলল: লোকটি তওবা করে অন্তর থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। আর আযাবের ফেরেশতারা বলল: লোকটি কখনো কোন পুণ্যের কাজ করেনি। এ সময় একজন ফেরেশতা মানুষের বেশে হাজির হল। তারা এ ব্যক্তিকে তাদের মাঝে বিচারক হিসেবে মেনে নিল। তিনি বললেন: তোমরা উভয় দিকের জায়গা মেপে দেখ। যে দিকের ভূমি কম হবে এ লোক তার ভাগের হিসেবে গণ্য হবে। তখন তারা জায়গা মেপে দেখল যে, ঐ ব্যক্তি যে স্থানের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল সে স্থানের কাছাকাছি। ফলে রহমতের ফেরেশতারা লোকটির প্রাণ কেড়ে নিল।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় এসেছে যে, “ঐ ব্যক্তি নেককারদের গ্রামের দিকে এক বিঘত এগিয়ে ছিল। ফলে তাকে নেককার গ্রামের অধিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়”।(সহীহ মুসলিম হা/২৭১৬) সহিহ বুখারীর অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে:“আল্লাহ্‌ তাআলা এ ভাগের ভূমির কাছে প্রত্যাদেশ করলেন যে, তুমি নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং ঐ ভাগের ভূমির কাছে প্রত্যাদেশ করলেন যে, তুমি দূরে যাও। লোকটি বলল: তোমরা এ দুই ভূমির মধ্যবর্তী জায়গা মেপে দেখ। মেপে পাওয়া গেল যে, নেককারদের গ্রামের দিকে এক বিঘত কাছে। তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।”(সহীহ বুখারী
হা/৩৪৭০) সহিহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে,“ঐ ব্যক্তি তার বুক দিয়ে ঐ স্থানের দিকে আগাচ্ছিল।”(সহীহ মুসলিম হা/২৭৬৬)
.
▪️দ্বিতীয়ত: তাওবাহ্ খাঁটি হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। সে শর্তসমূহ পূরণ না করে তাওবাহ্ করলে সে তাওবাহ্ খাঁটি তাওবাহ্ হবে না আর তা আল্লাহর নিকট কবূলও হবে না। শর্তাবলীর সংখ্যা সর্বনিম্ন ৩টি আর সর্বোচ্চ ৬টি। যদি গুনাহের সম্পর্ক শুধু আল্লাহর (অবাধ্যতার) সঙ্গে থাকে এবং কোন মানুষের অধিকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এ ধরনের তাওবাহ্ ক্ববূলের জন্য ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) ও সাউদী আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতী শাইখ ‘আবদুল ‘আযীয বিন ‘আবদুল্লাহ বিন বায (রহিমাহুল্লাহ) সহ অনেক আলিমের মতে শর্ত ৩টি। তবে কোন গুনাহ যদি মানুষের অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাহলে আরও একটি শর্ত বেড়ে তা হয়ে যাবে ৪টি। তবে সাউদী আরবের আরেক বিখ্যাত ‘আলিম শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে তাওবার শর্ত মোট ৫টি। তবে মানুষের অধিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুনাহ থেকে তাওবাহ্ করার জন্য অতিরিক্ত ১টি শর্ত যোগ হবে। তা হলো পাওনাদারকে তার হক বা অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। সুতরাং যদি এগুলোর মধ্যে একটি শর্তও বাদ পড়ে, তাহলে সেই তাওবাহ্ খাঁটি তাওবাহ্ হবে না। নিম্নে ঐ সকল শর্ত সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :
.
(১).তাওবাহ্ একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে এবং আল্লাহর কাছে করতে হবে।
(২).গুনাহর কাজ করার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
(৩).যে গুনাহ হতে তাওবাহ্ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
(৪).ভবিষ্যতে এই গুনাহ আর না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
(৫).নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাওবাহ্ করতে হবে।
(৬).মানুষের অধিকার তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন,
أن كلَّ من ارتكب معصيةً لزمه المبادرةُ إلى التوبة منها، والتوبةُ من حقوق الله تعالى يُشترط فيها ثلاثة أشياء: أن يُقلع عن المعصية في الحال، وأن يندمَ على فعلها، وأن يَعزِمَ ألاّ يعود إليها. والتوبةُ من حقوق الآدميين يُشترط فيها هذه الثلاثة، ورابع: وهو ردّ الظلامة إلى صاحبها أو طلب عفوه عنها والإِبراء منها، فيجبُ على المغتاب التوبة بهذه الأمور الأربعة، لأن الغيبة حقّ آدمي، ولا بدّ من استحلاله مَن اغتابَه،
“পাপে লিপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তির অবশ্য করণীয় হল অনতিবিলম্বে তওবা করা। আর আল্লাহর অধিকাররের সাথে সম্পৃক্ত পাপ থেকে তওবা করার শর্ত তিনটি:
(১) কৃত পাপকর্ম থেকে নিবৃত্ত হওয়া।
(২) কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
(৩) ভবিষ্যতে সেই গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা।
আর বান্দার সাথে সম্পৃক্ত গুনাহ থেকে তওবা করার ক্ষেত্রে আরো একটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটা হ’ল-
(৪) যার অধিকার নষ্ট করা হয়েছে তাকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে দায়মুক্ত হয়ে যাওয়া। সুতরাং গীবতকারীকে উপরিউক্ত চারটি শর্ত মেনে তওবা করা ওয়াজিব। কেননা গীবত বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ। সেজন্য যার গীবত করা হয়েছে তার কাছ থেকেই দায়মুক্ত হওয়া আবশ্যক”।(ইমাম নববী, আল-আযকার, পৃষ্ঠা: ৩৪৬)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন:
قَالَ العلماءُ: التَّوْبَةُ وَاجبَةٌ مِنْ كُلِّ ذَنْب، فإنْ كَانتِ المَعْصِيَةُ بَيْنَ العَبْدِ وبَيْنَ اللهِ تَعَالَى لاَ تَتَعلَّقُ بحقّ آدَمِيٍّ، فَلَهَا ثَلاثَةُ شُرُوط:
أحَدُها: أنْ يُقلِعَ عَنِ المَعصِيَةِ. والثَّانِي: أَنْ يَنْدَمَ عَلَى فِعْلِهَا.والثَّالثُ: أنْ يَعْزِمَ أَنْ لا يعُودَ إِلَيْهَا أَبَدًا. فَإِنْ فُقِدَ أَحَدُ الثَّلاثَةِ لَمْ تَصِحَّ تَوبَتُهُ. وإنْ كَانَتِ المَعْصِيةُ تَتَعَلقُ بآدَمِيٍّ فَشُرُوطُهَا أرْبَعَةٌ: هذِهِ الثَّلاثَةُ، وأنْ يَبْرَأ مِنْ حَقّ صَاحِبِها، فَإِنْ كَانَتْ مالًا أَوْ نَحْوَهُ رَدَّهُ إِلَيْه، وإنْ كَانَت حَدَّ قَذْفٍ ونَحْوَهُ مَكَّنَهُ مِنْهُ أَوْ طَلَبَ عَفْوَهُ، وإنْ كَانْت غِيبَةً استَحَلَّهُ مِنْهَا، ويجِبُ أنْ يَتُوبَ مِنْ جميعِ الذُّنُوبِ، فَإِنْ تَابَ مِنْ بَعْضِها صَحَّتْ تَوْبَتُهُ عِنْدَ أهْلِ الحَقِّ مِنْ ذلِكَ الذَّنْبِ، وبَقِيَ عَلَيهِ البَاقي. وَقَدْ تَظَاهَرَتْ دَلائِلُ الكتَابِ، والسُّنَّةِ، وإجْمَاعِ الأُمَّةِ عَلَى وُجوبِ التَّوبةِ
“আলেমগণ বলেছেন: প্রত্যেক গুনাহ থেকে তাওবা করা ওয়াজিব (অবশ্য পালনীয় কর্তব্য)। যদি গুনাহটি আল্লাহ তা‘আলার হক (অধিকার) সংক্রান্ত হয় এবং তাতে কোনো মানুষের হক সংশ্লিষ্ট না থাকে, তাহলে তাওবার তিনটি শর্ত পূরণ করা আবশ্যক:
(১).গুনাহ পরিত্যাগ করা।
(২).কৃত গুনাহর জন্য আন্তরিক অনুতপ্ত হওয়া।
(৩).ভবিষ্যতে ঐ গুনাহে ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা।
এই তিন শর্তের একটি শর্তও যদি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে তাওবা সহীহ (গ্রহণযোগ্য) হবে না। আর যদি গুনাহটি কোনো মানুষের হকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে উপরোক্ত তিনটি শর্তের সঙ্গে আরও একটি চতুর্থ শর্ত সংযুক্ত হবে, তা হলো: ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির হক আদায় করে তাকে মুক্ত করা। যদি তা সম্পদ বা এ জাতীয় কিছু হয়, তাহলে তা মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি তা অপবাদ বা মানহানিকর কথা হয়, তবে তাকে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।আর যদি তা গীবত হয়ে থাকে, তাহলে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এছাড়াও, প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত সকল গুনাহ থেকে তাওবা করা। তবে কেউ যদি কিছু গুনাহ থেকে তাওবা করে, তাহলে আহলুস-সুন্নাহর নিকট তা গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ সে গুনাহসমূহের তাওবাকারী হিসেবে গণ্য হবে যদিও অন্যান্য গুনাহ থেকে এখনো দায়মুক্ত হয়নি। আর কুরআন, সুন্নাহ ও মুসলিম উম্মাহর ইজমা (ঐক্যমত) দ্বারা তাওবার আবশ্যকতা প্রমাণিত হয়েছে।”(বিন বায; মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড: ৬; পৃষ্ঠা: ২৯৮; আরও দেখুন; অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ফাতওয়া নং-৫৬১/০২)
.
সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:
وذكر العلماء أن التوبة النصوح هي التي جمعت خمسة شروط :
1- أن تكون خالصة لله عز وجل .
2- أن يكون نادماً حزنا على ما سلف من ذنبه , يتمنى أنه لم يحصل منه .
3- أن يقلع عن المعصية فوراً ، فإن كانت المعصية بفعل محرم تركه في الحال , وإن كانت المعصية بترك واجب فعله في الحال , وإذا كانت المعصية فيما يتعلق بحقوق الخلق لم تصح التوبة منها حتى يتخلص من تلك الحقوق .
4- أن يعزم على أن لا يعود في المستقبل إلى المعصية .
5- أن لا تكون بعد انتهاء وقت قبول التوبة , كما سبق .
আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে,”তাওবাতুন নাসূহ” হলো সেই তাওবাহ যা নিম্নোক্ত পাঁচটি শর্ত পূরণ করে—
(১).তা যেন আল্লাহর জন্যই খালিস (বিশুদ্ধভাবে নিবেদিত) হয়: (অর্থাৎ তাওবাহটি একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে কোনো লোক দেখানো বা দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয়)।
(২).ব্যক্তি নিজের পূর্ববর্তী গোনাহের জন্য সত্যিকারের অনুতপ্ত ও দুঃখিত থাকবে, এমনকি তার অন্তরে এই আকাঙ্ক্ষা থাকবে—ইশ! যদি এ গোনাহ সে কখনও না করতো!
(৩).সে যেন অবিলম্বে সেই গুনাহ ত্যাগ করে যদি গুনাহটি কোনো হারাম কাজ করে থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তা ছেড়ে দেবে; আর যদি গুনাহটি কোনো ফরয (আবশ্যিক) কাজ পরিত্যাগ করার মাধ্যমে হয়ে থাকে, তাহলে তা সঙ্গে সঙ্গেই আদায় করবে। আর যদি গুনাহটি মানুষের হক বা অধিকার সংক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে সেই তওবা তখনো শুদ্ধ হবে না যতক্ষণ না সে মানুষের সেই অধিকার থেকে নিজেকে মুক্ত করে না নেয়।
(৪).ভবিষ্যতে সেই পাপে আর ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করা।( অর্থাৎ তাওবাহকারী ব্যক্তির মনে দৃঢ় ইচ্ছা ও প্রতিজ্ঞা থাকতে হবে যে, সে ভবিষ্যতে আর কখনও সেই গোনাহে লিপ্ত হবে না।
(৫).তাওবাহ এমন সময় যেন না হয় যখন তওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেছে যেমন ইতঃপূর্বে তা স্পষ্ট করা হয়েছে।(অর্থাৎ তওবা করতে হবে মৃত্যু শুরু হওয়ার পূর্বে এবং পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় শুরু হওয়ার আগে।”(ইমাম ইবনু উসাইমীন; মাজালিসু শারহি রামাদান’ পৃষ্ঠা: ১৪৩; ইবনু উসাইমীন লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-৫৩/৭৩)
.
▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
Share: