ওয়াজ মাহফিলে বিদআতি বক্তাকে দাওয়াত দেওয়া, তার ওয়াজ শোনা এবং অনুপযুক্ত বক্তাকে বাধা দেওয়া

❑ ক. কোনও বিদআতি বক্তাকে কি বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো জায়েজ আছে যদি সে বিদআতের দিকে আহ্বান না করে?

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য এবং বর্তমান যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ আল্লামা ডক্টর শাইখ সালেহ আল ফাউযান (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়, কিছু মানুষ আছে যারা দাওয়াতি প্রোগ্রাম ও আলোচনা সভার আয়োজন করে বলে, কোনও বিদআতি বক্তাকে আমন্ত্রণ করতে কোনও সমস্যা নেই যদি সে বক্তৃতায় বিদআতের দিকে আহ্বান না করে। এ বিষয়টা কি সঠিক?

উত্তরে তিনি বলেন, না, এটা ঠিক নয়। তুমি যদি কোনও বিদআতি বক্তাকে আমন্ত্রণ করো এবং সে বক্তৃতা দেয় তাহলে লোকেরা তার বিদআতকে গ্রহণ করবে। বলবে, এতে কোন সমস্যা নেই এবং তারা তাকে অনুসরণ করবে। না, এটি জায়েজ নয়।” [শাইখের অডিও প্রশ্নোত্তর থেকে নেয়া, ইউটিউব চ্যানেল: ডা. আল্লামা সালেহ আল ফাউযান]

❑ খ. বিদআতি বক্তাদের ওয়াজ বা বক্তৃতা শোনা জায়েজ নাই:

যদি জানা যায়, ওয়াজ মাহফিলে কোনও বিদআতি বক্তা/আলোচক আলোচনা করবে তাহলে তাতে কোন সাধারণ মুসলিমের অংশগ্রহণ করা জায়েজ নেই। কারণ অনেক বিদআতি বক্তা আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে সুরেলা কণ্ঠে বাকপটুতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অন্তরে শিরক, বিদআত, উদ্ভট ও ভ্রান্ত কথাবার্তা এবং বিষাক্ত আকিদা ঢেলে দেয়। কিন্তু তারা দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ ও অসচেতন মানুষেরা সে সব ভ্রান্ত কথাবার্তা ও বিষাক্ত আকিদা অন্তরে ধারণ করে অবশেষে পথভ্রষ্ট হয়। (আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।)
তবে কোনও বিজ্ঞ আলেম যদি বিদআতিদের বক্তব্য শোনে এ উদ্দেশ্যে যে, সে তার বিদআতের প্রতিবাদ করবে এবং তার উত্থাপিত সংশয় ও ভ্রান্ত দলিলের খণ্ডন করবে তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নেই।

❑ গ. ওয়াজের জন্য অনুপযুক্ত ব্যক্তিকে বাধা দেওয়া:

আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়্যা বা কুয়েতি ফিকাহ বিশ্বকোষে বলা হয়েছে,

শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, “যে ব্যক্তি ওয়াজের উপযুক্ত নয় অথবা মিথ্যা বলে তাকে বক্তৃতা থেকে বাধা দিতে হবে। কারণ এ আশঙ্কা মুক্ত নয় যে, মানুষ তার অপব্যাখ্যা ও উল্টাপাল্টা বক্তব্য দ্বারা প্রতারিত হবে।” [রাওযাতুত তালেবিন ১০/২১৮, আল মাকতাবুল ইসলামিয়া-শরিয়ী শিষ্টাচার ১/৮৯]

আরও বলা হয়েছে,

“বিদআতির মাহফিলে উপস্থিত হওয়া বৈধ নয়। তবে তার প্রতিবাদ করা উদ্দেশ্য থাকলে ভিন্ন কথা। হয় বক্তাকে বাধা দিবে অথবা তার আশপাশের কিছু লোকজনকে নিষেধ করবে যদি শক্তি থাকে। শক্তি না থাকলে ঐ মাহফিলে উপস্থিত হওয়া জায়েজ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَىٰ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

“যখন আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াত সমূহে ছিদ্রান্বেষণ করে, তখন তাদের কাছ থেকে সরে যান যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত না হয়, যদি শয়তান আপনাকে ভুলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়ার পর জালেমদের সাথে উপবেশন করবেন না। ” [সূরা আনআম: ৬৮]
[উৎস: আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়্যা বা কুয়েতি ফিকাহ বিশ্বকোষ, ৪৪/৮৩, অনলাইন ভার্সন]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
অনুবাদ ও গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।