ইসলামী শরীয়তের আলোকে পানাহার বা খাদ্য গ্রহণের আদব বা শিষ্টাচার

ভূমিকা: মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অতি প্রয়োজনীয় বস্ত্ত হচ্ছে আহার ও পানীয়। জীবন ধারণের জন্য পানাহারের কোন বিকল্প নেই। খাদ্য-পানীয় মানুষের দেহ-মন সুস্থ ও সতেজ রাখার প্রধান উপকরণ। এগুলির অভাবে মানুষের শরীর ভেঙ্গে যায় এবং দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ইবাদতে মন বসে না এবং কোন কাজে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে না। তাই খাদ্য-পানীয় মানুষের জন্য অতি জরূরী। তবে এ খাদ্য-পানীয় হালাল হওয়া আবশ্যক। আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ব্যতীত কোন কিছুই কবুল করেন না।’ আল্লাহ মুমিনদেরকে সেই নির্দেশ দিয়েছেন, যা তিনি নবী-রসূলগণকে দিয়েছিলেন। হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্তসমূহ থেকে আহার কর এবং সৎকাজ কর। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত। (সূরা মুমিনূন ২৩/৫১)। হে মুমিনগণ! আমরা তোমাদেরকে যে সকল রিযিক দান করেছি তা থেকে পবিত্র বস্ত্ত আহার কর।’ (সূরা বাক্বারাহ ২/১৭২)। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) একদা কা‘ব বিন উজরার উদ্দেশ্যে বললেন, হে কা‘ব বিন উজরাহ! সে গোশত কোন দিন জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার পুষ্টিসাধন হারাম খাদ্য দ্বারা করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা/১০১৫; তিরমিযী হা/২৯৮৯; মিশকাত হা/২৭৬০)
.
ইসলামে পানাহারের বিভিন্ন আদব বা শিষ্টাচার রয়েছে; যেগুলি পালন করলে সওয়াব লাভ হয় এবং সুস্বাস্থ্য গড়ে ওঠে। তন্মধ্যে সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ ২৮ টি আদব বা শিষ্টাচার নিম্নে উল্লেখ করা হল:

(১). স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্রে পানাহার না করা: স্বর্ণ-রূপার পাত্র হচ্ছে কাফেরদের জন্য। যাতে অহংকার প্রকাশ পায়। সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী হা/৫৬৩৩; মুসলিম হা/২০৬৭।বুখারী হা/৫৬৩৪; মুসলিম হা/২০৬৫)

(২). খাবার পাত্রের মধ্যস্থল থেকে না খাওয়া: রাসূল (ﷺ) বলেন- তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন পাত্রের উপর (মাঝখান) থেকে না খায়। বরং পাত্রের নিচে (একধার) থেকে খায়। কারণ বরকত তার উপর (মাঝখান) অংশে নাযিল হয়। (বুখারী হা/৫৩৭৬; তিরমিযী হা/১৮০৫; মিশকাত হা/৪১৫৯, ৪২১১।তিরমিযী হা/১৮০৫; ইবনু মাজাহ হা/৩২৭৭; সহীহ আত-তারগীব হা/২১২৩। আবু দাউদ হা/৩৭৭২; তিরমিযী হা/১৮০৫; ইবনু মাজাহ হা/৩২৭৭।)

(৩). ঠেস বা হেলান দিয়ে না খাওয়া: ঠেস বা হেলান দিয়ে পানাহার করা সুন্নাতী তরীকা নয়। তাই এভাবে পানাহার না করে সোজা হয়ে বসে পানাহার করতে হবে। (মুসনাদে আহমাদ হা/১৮২৭৯; বুখারী হা/৫৩৯৮-৯৯। সহীহাহ হা/৩১২২। আবু দাঊদ হা/৩৭৭৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৩৭০; সহীহাহ হা/২৩৯৪।)

(৪). খাবার প্রস্ত্তত হয়ে গেলে এবং সালাতের সময় হলে আগে খাবার খাওয়া: খাবার তৈরী হয়ে গেলে সালাতের সময় হলেও আগে খাবার খেয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা ক্ষুধার্ত অবস্থায় সালাত শুরু করলে একাগ্রতা থাকে না। (বুখারী হা/৫৪৬৫; সহীহুল জামে হা/৩৭৪; বুখারী হা/৬৭৪; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৫২৪২)

(৫). খাবার শুরু করার আগে ও পরে উভয় হাত ধৌত করা: খাওয়ার পূর্বে হাত ভালভাবে ধুয়ে নিতে হাদিসে নির্দেশনা রয়েছে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৪৮৫; আল-আদাবুশ শারইয়্যাহ ৩/২১৪; মুসনাদে আহমাদ হা/২৭৪৮৬; ইবনু মাজাহ হা/৪৯৩; আবু দাঊদ হা/৩৮৫২; তিরমিযী হা/১৮৬০; ইবনু মাজাহ হা/৩২৯৭; দারেমী হা/২০৬৩)

(৬). খাবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ ও শেষে ‘আলহামদুল্লিাহ’ বলা: খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ ও শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা সুন্নাত। ইমাম আহমাদ বলেন, খাবারে ৪টি জিনিস জমা হলে সে খাবার পরিপূর্ণ হয়; খাবার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা, (একাধিক লোকের) অনেক হাত পড়া এবং তা হালাল হওয়া। (বিস্তারিত দেখুন যাদুল মা‘আদ ৪/২৩২; মুসলিম হা/২০১৭-১৮ ও ২৭৩৪; আবু দাঊদ হা/৩৭৩০ ও ৩৭৬৫-৬৭; তিরমিযী হা/১৮১৬ ও ১৮৫৮; তিরমিযী হা/৩৪৫৫-৫৮; ইবনু মাজাহ হা/৩২৮৫; আহমাদ হা/১৬১৫৯; সহীহাহ হা/৭১)

(৭). ডান হাতে পানাহার করা: ডান হাতে পানাহার করতে হবে। কেননা রাসূল ﷺ ডান হাতে পানাহার করতেন এবং উম্মতকে করতে উৎসাহিত করেছেন (সহীহ মুসলিম হা/২০২০-২১; তিরমিযী হা/১৮০০; আবু দাউদ ৩৮৪৮৩৭৭৬; বুখারী হা/৫৩৭৬; মুসলিম হা/৫৩৮৮৮)

(৮). খাবার শেষে আঙ্গুল ও প্লেট চেঁটে খাওয়া: খাবার শেষে আঙ্গুল ও প্লেট চেটে খাওয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরূপ করতেন এবং অপরকে করতে আদেশ করতেন। (বুখারী হা/৫৪৫৬; মুসলিম হা/২০৩১; মুসনাদে আহমাদ হা/১৩৮০৯; মুসলিম হা/২০৩৩; ইবনু মাজাহ হা/৩২৭০; নাসাঈ, ইবনু হিব্বান হা/১৩৪৩; ইরওয়াউল গালীল ৭/৩২; যঈফুল জামে হা/৫৪৭৮)

(৯). খাবার শেষে কুলি করা: খাবার শেষে কুলি করা, যাতে খাদ্যের অবশিষ্টাংশ মুখ থেকে বের হয়ে যায়। রাসূল (ﷺ) খাবার শেষে কুলি করতেন। (সহীহ বুখারী হা/৫৩৯০)

(১০). দস্তরখানা উঠানোর সময় দোআ পাঠ করা: খাবার শেষে দস্তরখানা ও থালা-বাসন উঠানোর সময় দোআ পাঠ করা। الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِىٍّ وَّلاَ مُوَدَّعٍ وَّلاَ مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا-
উচ্চারণ: আল-হামদু লিল্লা-হি হাম্দান্ কাছীরান্ ত্বাইয়্যিবাম্ মুবা-রাকান্ ফীহি গায়রা মাকফিইয়্যিন ওয়ালা মুওয়াদ্দা‘ঈন ওয়ালা মুস্তাগ্নান্ ‘আনহু রাববানা।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা তোমার, অধিক অধিক প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়। হে প্রভু! তোমার অনুগ্রহ হতে মুখ ফিরানো যায় না, আর এর অন্বেষণ ত্যাগ করা যায় না এবং এর প্রয়োজন হতে মুক্ত থাকা যায় না।’ (সহীহ বুখারী হা/৫৪৫৮; মিশকাত হা/৪১৯৯)

(১১). খাবারের কোন কিছু পড়ে গেলে তা উঠিয়ে পরিস্কার করে খাওয়া: পড়ে যাওয়া খাবার তুলে নিয়ে ময়লা পরিস্কার করে খাওয়ার নির্দেশ এসেছে হাদীসে। কারণ ঐ পতিত খাবারে বরকত থাকতে পারে। (মুসনাদে আহমাদ হা/১৪২১৮; মুসলিম হা/২০৩৪)

(১২). পানীয়তে মাছি পড়লে তা ডুবিয়ে দিয়ে তুলে ফেলা: পানীয়তে মাছি পড়লে সেটিকে সরাসরি না তুলে পূর্ণরূপে তাতে ডুবিয়ে, অতঃপর তা তুলে ফেলে পান করা কর্তব্য। (বুখারী হা/৩৩২০; ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৪১১৫)

(১৩). গরম খাবার ঠান্ডা হলে খেতে শুরু করা: অধিক গরম খাবার খেলে জিহবা বা মুখ পুড়ে যেতে পারে এবং খাবারের আসল স্বাদও আস্বাদন করা যায় না। বেশী গরম খাবার গিলে ফেললে পেটেরও কোন ক্ষতি হতে পারে। এজন্যই খাবার ঠান্ডা করে খেতে হবে। (মুসনাদে আহমাদ হা/২৬৪১৮; দারেমী হা/২০৪৭; সহীহাহ হা/৩৯২; বায়হাক্বী, ইরওয়াউল গালীল হা/১৯৭৮)

(১৪). খাদ্য ও পানীয়তে ফুঁক দিয়ে না খাওয়া: গরম খাবার ঠান্ডা করার জন্য অথবা পানীয়তে পতিত কোন ময়লা দূর করার জন্য ফুঁক দেওয়া উচিত নয়। আর আহার্য বা পানপাত্রে নিঃশ্বাস ছাড়া যাবে না। কারণ এর ফলে খাদ্য ও পানীয়তে ফুঁকের সাথে নির্গত কার্বনডাই-অক্সাইড গ্যাস মিশ্রিত হবে। ফলে সে দূষিত গ্যাস শরীর ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। (বুখারী হা/৫৬৩০; মুসলিম হা/২৬৭; আবু দাউদ হা/৩৭২৮; তিরমিযী হা/১৮৮৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৪২৯; আহমাদ, সহীহুল জামে হা/৬৯১৩)

(১৫). খাদ্যের দোষ বর্ণনা না করা: খাদ্যের কোন প্রকার ত্রুটি বর্ণনা না করে তা পছন্দ হলে খেতে হবে অন্যথা খাবে না। কারণ তাতে রাঁধুনী মনে কষ্ট পায়। মহানবী (ﷺ) কখনো খাবারের ত্রুটি বর্ণনা করতেন না। কিছু খেতে ইচ্ছা হলে খেতেন, না হলে তা বর্জন করতেন। (সহীহ বুখারী হা/৫৪০৯; মুসলিম হা/২০৬৪)

(১৬). দাঁড়িয়ে পানাহার না করা: কোন পানীয় দাঁড়িয়ে পান করা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন- তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে। কেউ ভুলে গিয়ে পান করে থাকলে সে যেন তা বমি করে ফেলে।’ (সহীহ মুসলিম হা/২০২৪-২৬; মিশকাত হা/৪২৬৭; বুখারী হা/১৬৩৭, ৫৬১৫; মুসলিম হা/২০২৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৩০১)

(১৭). পানীয় তিন নিঃশ্বাসে পান করা: পানীয় এক নিঃশ্বাসে পান না করে তিন নিঃশ্বাসে পান করবে। রাসূল (ﷺ) তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করতেন এবং বলতেন এর অর্থ এই নয় যে, এক নিঃশ্বাসে পানি পান করা বৈধ নয়। বরং উদ্দেশ্য হল, এক নিঃশ্বাসে পান করা অপেক্ষা তিন নিঃশ্বাসে পান করা উত্তম। (বুখারী, মুসলিম হা/২০২৮)

(১৮). পানপাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলা: কোন পানীয় পান করার সময় পাত্রের বাইরে ৩ বার নিঃশ্বাস ফেলবে। পানির পাত্রে বা খাবারে নিঃশ্বাস ছাড়বে না বা ফুঁক দিবে না। (বুখারী হা/৫৬৩১; সহীহাহ হা/৩৮৭; বুখারী হা/১৫৩; মিশকাত হা/৪২৭৭)

(১৯). জগ বা কলসীর মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান না করা: কলসী, জগ বা এ জাতীয় পাত্রের মুখে মুখ লাগিয়ে পান করা উচিত নয়। নবী করীম (ﷺ) এভাবে পান করতে নিষেধ করেছেন। এভাবে পানি পান করলে জগ বা কলসীর ভিতরে কোন ময়লা বা পোকা-মাকড় থাকলে তা পেটে চলে যেতে পারে। তাছাড়া এভাবে পান করলে সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু অন্যের মাঝে সংক্রমিত হতে পারে। (বুখারী হা/৫৬২৭; ৫৬২৯; মুসলিম হা/১৬০৯)

(২০). পরিবেশনকারীর সবার শেষে খাওয়া: যে ব্যক্তি খাবার পরিবেশন করবে তার জন্য মুস্তাহাব হল যে, সে সবার শেষে খাবে। রাসূল (ﷺ) এরূপ করেছেন ও বলেছেন, যে লোকদেরকে পানি পান করায়, সে যেন সবার শেষে পান করে। (সহীহ মুসলিম হা/৬৮১)

(২১). একাকী না খেয়ে একত্রে খাওয়া: একাকী না খেয়ে একাধিক লোক একত্রে খাওয়া ভাল। এতে বরকত রয়েছে। (মুসলিম হা/৫৪৮৯; সহীহ তিরমিযী হা/১৮২০; ইবনু মাজাহ হা/৩২৫৪; ইবনু মাজাহ হা/৩২৮৭; সহীহুল জামে হা/৪৫০০; মুসনাদে আহমাদ হা/১৫৬৪৮; আবু দাঊদ হা/৩৭৬৪; ইবনু মাজাহ হা/৩২৮৬; সহীহুল জামে‘ হা/১৪২; মুসনাদু আবী ইয়ালা হা/২০৪৫; আল-মু‘জামুল আওসাত হা/৭৩১৭; সহীহুল জামে হা/১৭১। সিলসিলাহ যঈফাহ হা/২৩৮-২৩৯)

(২২). একাধিক লোক এক পাত্রে খাবার খেলে বেশী খাওয়ার চেষ্টা না করা: একত্রে খাবার খাওয়ার সময় সবার চেয়ে বেশী খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। বরং সবার চেয়ে কম খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সকলের সমান খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। (বুখারী হা/২৪৫৫; মুসলিম হা/২০৪৫)

(২৩). কেউ খাওয়ার জন্য ডাকলে এবং ক্ষুধা ও খাবারের চাহিদা থাকলে মিথ্যা ওযর পেশ না করা: কেউ কাউকে খাবার জন্য আহ্বান করলে এবং ক্ষুধা ও খাবারের চাহিদা থাকলে এগুলি গোপন করে মিথ্যা ওযর পেশ করে খাওয়ার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। (আহমাদ, ইবনে মাজাহ, সহীহুল জামে হা/৭২৩০)

(২৪). খাদেম খানা প্রস্ত্তত করলে খাবারে তাকেও শরীক করা: খাবার তৈরীতে খাদেম পরিশ্রম করে, খাদ্যের সুগন্ধ তার নাকে যায় এবং হয়তো তার মন ঐ খাবারের প্রতি আকৃষ্টও হয়। এজন্যই রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশ হল, তাকে বসিয়ে এক সাথে খাওয়া। আর তাকে বসানো যদি সম্ভব না হয় বা সে বসতে না চায়, তাহলে সেই খাবার হতে কিছু অংশ তুলে তাকে দেওয়া। (বুখারী হা/৫৪৬০; মুসলিম হা/১৬৬৩)

(২৫). যে মজলিসে মদ বা অন্য কোন হারাম জিনিস পরিবেশন করা হয় সেখানে অংশগ্রহণ না করা: যে অনুষ্ঠানে কোন হারাম খাদ্য-পানীয় পরিবেশন করা হয়, সেখানে যাওয়া মুসলমানের জন্য বৈধ নয়। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে সে যেন কখনই সেই ভোজ অনুষ্ঠানে না বসে যাতে মদ পরিবেশিত হয়।’(আহমাদ, তিরমিযী হা/২৮০১; হাকেম, আল-মুসতাদরাক হা/৭৭৭৯; আদাবুয যিফাফ পৃঃ ১৬৩-১৬৪, মেহমান নেওয়াযীর আদব দ্রঃ)

(২৬). খাবারের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা: এত অধিক খাবার না খাওয়া যাতে স্বাভাবিক নড়াচড়ায় সমস্যা হয়। আবার বেশী খেলে পেটের পীড়া ও শরীর ভারী হতে পারে। ফলে ইবাদতে অলসতা আসতে পারে। আর বেশী খাওয়া আসলে কাফেরদের অভ্যাস। হাদীসের নির্দেশ মোতাবেক খাবার খেলে শরীর ও স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। (সহীহ বুখারী হা/৫৩৯৬; মুসলিম হা/৫৪৯৩; ইবনু মাজাহ হা/৩২৫৭; তিরমিযী হা/২৩৮০; ইবনু মাজাহ হা/৩৩৪৯; হাকেম ৪/১২১; সহীহুল জামে হা/৫৬৭৪]

(২৭). প্লেট বা দস্তরখানা উঠানোর সময় দোআ পড়া: পানাহার শেষে প্লেট বা দস্তরখানা উঠানোর সময় বলবে, الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ، ‘আল-হামদুলিল্লা-হি হামদান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি।’

অর্থ: ‘আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা বহু প্রশংসা পবিত্র প্রশংসা রবকতময় প্রশংসা। (সহীহ বুখারী হা/৫৪৫৮; মিশকাত হা/৪১৯৯।)

(২৮). দাওয়াত খেলে মেযবানের জন্য দোআ করা: কারো বাড়ীতে মেহমান হলে মেযবানের জন্য দোআ করা সুন্নাত। সুতরাং মেযবানের জন্য এ দোআ করবে, اللهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِي، وَأَسْقِ مَنْ أَسْقَانِي ‘আল্লা-হুম্মা আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী ওয়াসক্বি মান সাক্বা-নী।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! যে আমাকে খাওয়ায়েছে তাকে তুমি খাওয়াও। আর যে আমাকে পান করিয়েছে তাকে তুমি পান করাও।’ (সহীহ মুসলিম হা/২০৫৫; আহমাদ হা/২৩৮৬০, সনদ সহীহ)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পানাহারের উক্ত আদবগুলি মেনে চলার তাওফীক দিন আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।