আল্লামা নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ভুপালী: জীবন ও কর্ম

◈ ভূমিকা:

আল্লামা নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ভুপালী। ইলমী দিগন্তের এক কালপুরুষ। ইতিহাসের এক অমর ব্যক্তিত্ব। সালফে-সালেহীনের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি। তাওহীদ-সুন্নাহর অকুণ্ঠ প্রচারক এবং শিরক-বিদআতের মূলোৎপাটনে এক সংগ্রামী সিপাহসালার।

হিজরি ১৩০০ শতাব্দীর শেষ দিকে ভারত উপমহাদেশে যে ইলমের বিপ্লব সাধিত হয়েছিল এ ক্ষেত্রে আল্লাহর পরে তার অবদানকেই সব চেয়ে বেশী বলে গণ্য করা হয়। কেননা, তিনি ইলমের ময়দান থেকে ভূপালের রাজ সিংহাসনে আরোহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন এবং নিজস্ব জ্ঞান, প্রজ্ঞা, উদ্যোগ এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কুরআন-সুন্নাহ এবং বিশুদ্ধ আকীদা নির্ভর শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে শুধু ভারত উপামহাদেশ নয় বরং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।

আরবের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তার জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বহু থিসিস রচিত হয়েছে। অনেক গবেষক তার জীবনী নিয়ে গবেষণা করেছেন ও গ্রন্থ রচনা করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটি হল,

১) বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আব্দুর রাযযাক দায়লামী ১৯৯৩ সনে রচনা করেছেন সিদ্দীক হাসান খান কান্নুজী এবং তার রচিত ‘ফাতহুল বায়ান ফী মাকাসিদিল কুরআন’ শীর্ষক তাফসীর গ্রন্থের উপর একটি সন্দর্ভ।
২) কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আহমদ বিন মুহাম্মদ আল হামাদী ১৯৮৭ সালে থিসিস রচনা করেছেন তাফসীরের ক্ষেত্রে সিদ্দীক হাসান খান এর মূলনীতির উপরে।
৩) ডক্টর আহমদ মুহাম্মদ আখতার খান সিদ্দীক হাসান খান এর আকীদা-বিশ্বাসের উপর থিসিস রচনা করেছেন।
৪) ডক্টর আলী আল আহমদ থিসিস রচনা করেছেন দাওয়াত ও ইহতিসাব তথা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এর ক্ষেত্রে সিদ্দীক হাসান খান এর অবদান বিষয়ে।
৫) ডক্টর রাজিয়া হামিদ তার জীবনীর উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন।
৬) সিদ্দীক হাসান খান এর জীবনীর উপর শাইখ আব্দুল হামীদ রহমানীর এর লেখা প্রবন্ধ ধারাবাহিকভাবে ভারতের জামিয়া সালাফিয়ার ম্যাগাজিন এ প্রকাশিত হয়েছে।
৭) এ ছাড়াও তার জীবনীর উপরে ডক্টর শাইখ মহিউদ্দীন আলওয়ায়ীর লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে (৪৭ ও ৪৮তম সংখ্যায়)।
৮) আল্লামা মুহাম্মদ ইজতিবা নদভী তার জীবনীর ব্যাপারে মূল্যবান বই লিখেছেন। এটি তার জীবনীর ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো রচনা।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, এই মনিষী আমাদের খুব কাছের মানুষ হওয়া স্বত্বেও বাংলা ভাষায় তার আলোচনা খুব অপ্রতুল। যার কারণে এমন একজন জ্ঞানতাপস কালক্রমে আমাদের স্মৃতি থেকে হারাতে বসেছে! আমাদের ছাত্ররা এমন কি অনেক আলেমও তার সম্পর্কে তেমন ওয়াকিফহাল নন!

তাই আমি মনে করি, ইতিহাসের ক্ষণজন্মা এই মনিষীর জীবন চরিত সম্পর্কে গবেষণা ও আলোচনা-পর্যালোচনা হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে তাঁর মূল্যবান গ্রন্থাদি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা দরকার। তাতে আমাদের জ্ঞান জগত আরও সমৃদ্ধ হবে। কুরআন-সুন্নাহ ও বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাস নির্ভর জ্ঞানের প্রসার ঘটবে। সেই সাথে বিশুদ্ধ ইলম চর্চার দৈন্যতার এ যুগে তার জীবনী শিক্ষানবিশ, লেখক, গবেষক, অনুবাদক, বক্তা, আলেম, ওয়েয এমন কি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারের বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য প্রেরণার বাতিঘর হয়ে আলো ছাড়াবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

এখানে আমরা দেখতে পাব-

কিভাবে একজন আলেম সকল গোঁড়ামি পরিহার করে মাযহাবী অন্ধভক্তির বেড়াজাল ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন।
কিভাবে একজন আলেম সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে ইলমের খেদমতে নিয়োজিত থেকেছেন। তার ঐতিহাসিক হজ্জ সফর সময়কে কাজে লাগানোর এবং ইলম চর্চার ক্ষেত্রে এক অনবদ্য উদাহরণ হয়ে রয়েছে।
কিভাবে একজন আলেম রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে কাজ করে সততা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
কিভাবে একজন আলেম রাষ্ট্র পরিচালনা করে ইতিহাসের পাতায় অনন্য উদাহরণ হয়ে রয়েছেন। যদিও হিংসুক, চোগলখোর,শিরক ও বিদআতের পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত একশ্রেণীর মানুষের মাধ্যমে তিনি ষড়যন্ত্র ও অনেক অন্যায় আচরণের শিকার হয়েছেন। এমন কি শেষ পর্যন্ত তাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে দূরে সরতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও দাওয়াত ও ইলমের ময়দানের তিনি যে স্বাক্ষর রেখে গেছেন তার নজির খুব কম পাওয়া যায়। তার রচিত শতাধিক গ্রন্থ এ কথার উজ্জ্বল প্রমাণ বহণ করে।
উপরোক্ত কারণে, এই মনিষীকে বাংলাভাষী মানুষের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আমার এই সামান্য প্রয়াস। এতে হয়ত তার ব্যাপারে বাংলাভাষী গবেষকদের সামনে গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হবে।

সম্মানিত পাঠক পাঠিকার নিকট অনুরোধ জানাবো, কোথাও তথ্যগত,বানানগত বা অন্য কোন বিষয়ে বিভ্রাট পরিলক্ষিত হলে হলে আমাকে জানাবেন যাতে পরবর্তীতে তা সংশোধন করে নিতে পারি।

পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে দুয়া করি,আল্লাহ তাআলা যেন দ্বীনের খেদমতে আল্লামা সিদ্দীক হাসান এর অবদানগুলো কবুল করে নেন এবং তাকে এর সর্বোত্তম বিনিময় দান করেন। সর্বোপরি ক্ষমা ও দয়ার চাদরে পরিবেষ্টন করে সুউচ্চ জান্নাতুল ফিরদউসে স্থান দান করেন। আমীন।

বিনীত নিবেদক
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
তারিখ: ১৬-০৮-২০১৬ইং
MOB NO:+966571709362
[email protected]

◈◈ নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ভুপালী রহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
(জন্ম: ১৮৩২ ও মৃত্যু: ১৮৯০ খৃষ্টাব্দ)

◈ নাম ও বংশ পরিচয়

নাম: সিদ্দীক খান, পিতার নাম: হাসান, দাদার নাম: আলী আসগর। তাঁকে কান্নুজী, ভুপালী, হুসাইনী এবং বুখারীও বলা হয়।[1]

◈ সিদ্দীক হাসানের পিতা ও দাদা সম্পর্কে দুটি কথা:

কাল পরিক্রমায় সিদ্দীক হাসান খান এর পিতার জন্মস্থান কান্নুজ এলাকা শিয়াদের অধীনে চলে যায়। যার কারণে শিয়া প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তার দাদা আলী আসগর শিয়া মতাবলম্বন করেন! সেই সাথে তার দু ছেলে লুতফুল্লাহ এবং আযীযুল্লাহও একই পথের পথিক হয়! কিন্তু তার তৃতীয় ছেলে সিদ্দীক খান এর পিতা হাসান (যে ছিল আলী আসগারের প্রথম স্ত্রীর সন্তান) কে আল্লাহ তাআলা শিয়াদের প্রভাব থেকে হেফাজত করেন।

পরববর্তীতে আলী আসগর এবং তার অন্যান্য ছেলেরা কান্নুজ থেকে হায়দ্রাবাদে চলে আসেন এবং শিয়াদের আনকুল্যে ইমারতের বিভিন্ন উচ্চপদে আসীন হয় আমীর খেতাবে ভূষিত হন। ফলে তারা ক্ষমতা, অর্থ-প্রতিপত্তি, রাজ প্রাসাদ সবই অর্জন করেন। অবশেষে সিদ্দীক হাসানের দাদা আলী আসগর অঢেল সম্পদ রেখে ১২১৮ হিজরী মোতাবেক ১৮০৩ খৃষ্টাব্দে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি শিয়া মতের অনুসারী হওয়ার কারণে হাসান তার পিতার পরিত্যক্ত সম্পদ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।

যাহোক, সিদ্দীক এর পিতা হাসান কান্নুজে ১২০০ হিজরী মোতাবেক ১৭৮৫ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি তার নিজ শহর কান্নুজ এবং লক্ষ্ণৌতে জ্ঞানার্জন করেন। অত:পর দিল্লী চলে যান। সেখানে শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী রহ. এর ছেলে শাহ আব্দুল আযীয, শাহ আব্দুল কাদির ও শাহ রফীউদ্দীন এর নিকট ইলম অর্জন করেন।

সেই সাথে তিনি দুই মুজাহিদ ইমাম আহমদ ইরফান ও ইসমাঈল শহীদ এর সাহচর্য লাভ করে তাদের সাথে জিহাদ করেন। তিনি তাওহীদের প্রচার-প্রসার, বিদআতের মূলোৎপাটন এবং আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে উক্ত ইমামদ্বয়ের সহযোদ্ধা ছিলেন।

অত:পর তিনি দিল্লী থেকে ফিরে এসে নিজ শহর কান্নুজের মুফতী শায়খ মুহাম্মদ আউয আল উসমানী এর কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরহেযগার ও দুনিয়া বিমুখ বড় আলেম। তার রচিত বেশ কতিপয় মূল্যবান গ্রন্থ রয়েছে।

আল্লামা সিদ্দীক হাসান খান তার পিতার জীবনী তার আবজাদুল উলূম সহ বেশ কতিপয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি তিন মেয়ে ও দুই ছলে রেখে দুনিয়া থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন। একজন হলেন, সিদ্দীক হাসান (যার জীবনী নিয়ে আমাদের আলোচনা) অপরজন আহমদ হাসান। তিনিও সু সাহিত্যিক ও সালাফী আদর্শের বড় আলেম ছিলেন।

◈জন্মস্থান ও জন্ম তারিখ:

সিদ্দীক হাসান খান ২৩ জুমাদাল উলা, রবিবার, ১২৪৮হিজরী মোতাবেক ১৭ অক্টোবর ১৮৩২ খৃষ্টাব্দে ভারতের উত্তর প্রদেশের বান্স ব্রেলী শহরে তার নানার গৃহে জন্ম গ্রহণ করেন। তার নানা অত্র অঞ্চলের একজন স্বনামধন্য মুফতী ছিলেন। অত:পর তার পিতা সেখান থেকে তাঁকে নিজ এলাকা কান্নুজে নিয়ে আসেন।

◈ প্রতিপালন ও শিক্ষা-দীক্ষা

মাত্র ছয় বছর বয়সে সিদ্দীক হাসানের পিতা মারা যান (১২৫৪ হিজরী মোতাবেক ১৮৩৮ খৃষ্টাব্দ)। যার কারণে তাঁর মা তাঁকে পুনরায় নানার বাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি সেখানে মায়ের স্নেহ-মমতায় প্রতিপালিত হতে থাকেন। তিনি সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি যত্ন নেন এবং তার জন্য নিয়োগ করেন একজন কুরআনের শিক্ষক।

তার বড় ভাই আহমদ বিন হাসান তাকে ফারসী ভাষা, আরবী ভাষা ও ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান দান করেন।

অনুরূপভাবে তিনি কান্নুজের শাইখ মুহাম্মদ ইয়াকুবের নিকট এবং বিখ্যাত আলেম ও মুজাহিদ বেলায়াত আলী সাদেকপুরী আজিমাবাদীর নিকটও জ্ঞানার্জন করেন।

তাছাড়াও তিনি আরেক প্রখ্যাত আলেম ফজলুর রহমান মুরাদাবাদী এবং নিজ ভাই আহমদ হাসান প্রমুখের নিকট জ্ঞানার্জন করেছেন।

ফজলুর রহমান মুরাদাবাদী প্রায় কান্নুজে যাতায়াত করতেন এবং তাদের বাড়িতে দেখা করতে যেতেন। কেননা তিনি তাঁকে এবং তার ভাই আহমদ হাসানকে অনেক স্নেহ করতেন।

◈ জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে বহির্জগতে পাড়ি:

এরপর তিনি শিক্ষার্জনের উদ্দেশ্যে বহির্জগতে পাড়ি জমান। প্রথমে ফারখাবাদ অত:পর কানপুর গমন করে সেখানকার কতিপয় আলেমদের নিকট দ্বীন শিক্ষা করেন।

তিনি অত্র এলাকায় আহমদ ইরফান শহীদ এর বড় বড় শাগরেরদের নিকট ইলম অর্জন করেন। তারা সিদ্দীক হাসান খানকে তার পিতার মর্যাদার কারণে যথেষ্ট স্নেহ করতেন।

অত:পর তিনি কানপুর থেকে ১২৬৩হি:/১৮৪৬ খৃষ্টাব্দে দিল্লী গমন করেন। অত:পর সেখানকার বিচারপতি কাজী বশীর কান্নুজীর নিকটে গিয়ে আরবী ভাষা শেখেন।

অত:পর সেখানকার মানতিক, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত ইত্যাদি বহু বিষয়ে পারদর্শী শাইখ সদরুদ্দীন খান দেহলবীর নিকটে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্জন করেন। তার নিকটে তিনি চার খণ্ড সহীহ বুখারীও পড়েন। তিনি তাকে ‘ইজাযা’ (লিসান্স) প্রদান করেন। প্রায় দু বছর তিনি তার সাহচর্যে থাকেন।

তিনি নাযির হুসাইন দেহলবীর নিকট থেকেও সামান্য কিছু জ্ঞানার্জন করেছেন। তারপর দিল্লীতে বেশ কতিপয় জ্ঞানী-গুণী, শিল্প-সাহিত্যিক ও আলেম-উলামার সাথে সাক্ষাত করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হল, সর্ব শেষ মোগল সম্রাট মুহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বাহাদুর জাহ।

দিল্লীতে থাকা অবস্থায় তিনি কিছু বইয়ের অনুলিপি তৈরি করেন। আরবী ভাষায় ‘মীযান’ কিতাবের ব্যাখ্যা লেখেন এবং সেখানকার কিছু ছাত্রকে পড়ান।

◈ জীবন যুদ্ধে সিদ্দীক হাসান খান:

তিনি ২১ বছর বয়সে দিল্লী থেকে তার জন্মস্থান কান্নুজে ফিরে আসেন এবং কয়েক মাস অবস্থান করার পর তিনি জীবিকার সন্ধানে ভুপাল গমন করেন। কারণ পারিবারিকভাবে তারা তেমন সচ্ছল ছিলেন না।

ভুপালে তিনি বিশিষ্ট সালাফী আলেম মন্ত্রী জামালুদ্দীন খান সিদ্দিকী দেহলেবীর সাথে দেখা করেন। তার সাথে সিদ্দীক হাসান খানের পারিবারিক সম্পর্ক থাকার সুবাদে তিনি তাঁকে সেখানে সসম্মানে থাকার ব্যবস্থা করেন এবং তার নাতীদের পড়া-শোনা করার দায়িত্ব দেন।

এছাড়াও মন্ত্রী জামালুদ্দীন খান এর মধ্যস্থতায় ভুপালের রাণী সিকান্দার জাহান বেগম এর সাথে তার পরিচয় হয়। রাণী তাকে তার বিশেষ দেওয়ানীতে লেখক হিসেবে নিয়োগ দানের পাশাপাশি তার উপর মসজিদে ইবরাহীম খান এ প্রতি শুক্রবারে ওয়ায-নসীহত করার দায়িত্ব অর্পন করেন।

কিন্তু ১২৭৩ হিজরী মোতাবেক ১৮৫৬ খৃষ্টাব্দের প্রথম দিকে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের এক আলেমের সাথে ইলমী বিষয়ে তার মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ায় তাকে সরকারী দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। ফলে তিনি ভুপাল থেকে পিতৃভূমি কান্নুজে ফিরে এসে মায়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন। কান্নুজ ফিরার পথে তার ব্যাগ-ব্যাগজে চুরি হয়ে গিয়েছিল।

যাহোক, তিনি অল্প কিছু দিন সেখানে অবস্থান করার পর কাজের সন্ধানে কানপুর গমণ করেন। কিন্তু সে সময় ইংরেজদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হলে তিনি সপরিবারে বিলগ্রাম চলে যান এবং সেখানে তারা অতি কষ্টে জীবন যাপন করতে থাকেন। কিন্তু তিনি সেখানে অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে ১২৭৬ হিজরী মোতাবেক ১৮৫৯ খৃষ্টাব্দে পুরো কুরআনুল কারীম মুখস্থ করেন।

সে বছরের শেষ দিকে তিনি কান্নুজে ফিরে আসেন। অত:পর অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি কান্নুজ থেকে মির্যাপুরে স্থানান্তিত হন। সেখান থেকে ২য় বারের মত ভুপাল গমন করেন। অত:পর সেখান থেকে চলে যান টংক। টংকয় অবস্থানকালীন সময়ে তাকে ভুপালের ইতিহাস লেখার উদ্দেশ্যে ভুপালে ডেকে পাঠানো হয়। সেই আহ্বানে তিনি সেখানে এসে নতুন করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

◈ ভুপালের মন্ত্রীর মেয়ের সাথে বিয়ে:

এখানে ১২৭৭ হিজরী মোতাবেক ১৮৬০ খৃষ্টাব্দে মন্ত্রী জামালুদ্দীন তার ছোট মেয়ে যাকিয়া বেগমের সাথে সিদ্দীক হাসানের বিয়ে দেন। তিনি ছিলেন বিধবা। সিদ্দীক হাসান খান তাঁর সহধর্মীনীর প্রশংসা করতেন।

এ বিয়ের মাধ্যমে তিনি ভুপালের আমীর পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে স্থায়িত্ব লাভ করেন।

তার এই সহধর্মীনী থেকে তিনি দু সন্তানের জনক হন। একজনের নাম আবুল খায়ের মীর নুরুল হাসান খান তৈয়ব। অপরজনের নাম সৈয়দ শরীফ মীর নূরুল হাসান খান তাহির।

◈ সরকারের উচ্চপদে উন্নীত:

এ দিকে সিদ্দীক হাসান খাঁনের জ্ঞান-গরিমা, মেধা-পরিশ্রম ভুপালের রাণীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ফলে তিনি তাকে সরকারের উচ্চপদে উন্নীত করেন।

তাকে ‘আল ওয়াকায়ে’ নামক একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে তার নিকট শিক্ষা মন্ত্রণালয় অত:পর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ সরকারী কোষাগারের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

◈ মায়ের মৃত্যু ও ক্ষমতার মসনদে নতুন রাণী শাহজাহান বেগম:

এখানে সার্বিক অবস্থা ভালো হলে তিনি তার মা ও বোনদেরকে কান্নুজ থেকে ভুপাল নিয়ে আসেন। ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে তার মা-জননী দুনিয়া থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন। এর ছয় মাস পরে তার বড় ও মেজো দু বোনও মৃত্যু বরণ করেন।

একই বছর রাণী সিকান্দার বেগমও ইহধাম ত্যাগ করেন। রাণীর মৃত্যুর পর ক্ষমতার মসনদে আরোহন করেন তার মেয়ে শাহজাহান বেগম।[2]

◈ ঐতিহাসিক হজ্জ সফর:

১২৮৫ হিজরী মোতাবেক ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে তিনি মুম্বাই বন্দর থেকে হজ্জের উদ্দেশে বায়তুল্লাহর দিকে যাত্রা শুরু করেন। সফর ছিল পানি জাহাজের মাধ্যমে। যার কারণে তাকে এই সফরে অনেক কষ্ট ও ক্লেশের শিকার হতে হয়। কষ্টের আরেকটি কারণ হল, তার সফর সঙ্গীদের কিছু লোক ছিল যারা সাগরে ঝড় উঠলে গায়রুল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করত। তিনি এ সব ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তার ঐতিহাসিক সফর কাহিনী ‘رحلة الصديق إلى البيت العتيق‘ কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তার এ কষ্ট-ক্লেশকে মূল্যবান রত্ম ভাণ্ডারে পরিবর্তন করে দেন। তিনি সফরের পুরো সময়টাকে ইলম চর্চার কাজে লাগান। তিনি এই সফরে মক্কা যাওয়ার পথে জাহাজে বসেই ইমাম ইবনে আব্দুল হাদী রচিত الصارم المنكي কিতাবটির অনুলিপি তৈরী করেন। তিনি বলেন, “সাগর পথে ভ্রমনের সময়গুলোকে আমি অনর্থক নষ্ট হতে দেই নি।”

◈ ইয়েমেনে যাত্রা বিরতি:

তারা ইয়েমেনের আদন হয়ে হুদায়দা বন্দরে যাত্রা বিরতি করেন। সেখানে তিনি কাজী হুসাইন বিন মুহসিন আল আনসারী এবং তার ভাই যায়নুল আবেদীন এর বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। তাদের মেহদারীর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন: “সেখানে ১২ দিন অবস্থান করি। সে সময় বিভিন্ন হাদীসের কিতাব অধ্যয়ন করতাম। ইলম চর্চায় প্রচুর ব্যস্ততার কারণে ফরজ সালাত ছাড়া মসজিদে যেতাম না।”

তিনি সেখানে আল্লামা ইমাম শাওকানী এবং আল্লামা আমীর সানআনীর মত ইয়েমেনের আহলে সুন্নাহর বড় বড় আলেমদের লিখিত গ্রন্থগুলোর কিছু অধ্যয়ন করেন, কিছু ক্রয় করেন আর কিছু অনুলিপি তৈরী করে নেন। তার ক্রয়কৃত কিতাবগুলো মধ্যে অন্যতম ছিল, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রচিত ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকীম আর ইমাম শাওকানী রচিত নাইলুল আওতার, ফাতহুল কাদীর এবং ইরশাদুল ফুহুল। আরও ক্রয় করেন ইবনে আল্লান সিদ্দীকীর হস্তলিখিত সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারী। এটি তিনি ৬০০ স্বর্ণমুদ্রা দ্বারা ক্রয় করেন। পরবর্তীতে তিনি ফাতহুল বারীর এই কপিটি তার নিজস্ব খরচে মুদ্রণ করেছিলেন।

পরবর্তীতে তিনি উক্ত কিতাবগুলোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। এগুলোর মধ্যে কোনটির ব্যাখ্যা করেন, কোনটি সংক্ষিপ্ত করেন এবং কোনটা পরিমার্জন করেন এবং সেগুলো ছাপানোর ব্যবস্থা করেন। যার কারণে, অধিকাংশ হুকুম-আহকামের ক্ষেত্রে ইমাম শাওকানীর সাথে তার ঐকমত্য হওয়ার বিষয়টি প্রসিদ্ধি অর্জন করে।

উল্লেখ্য যে, তিনি মুজতাহিদ ইমাম শাওকানী রহ. এর অনেক ছাত্রের নিকটও জ্ঞান অর্জন করেন। এ সকল ছাত্রদের নাম তিনি سلسلة العسجد في ذكر مشايخ السند কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

◈ মক্কার পথে:

যাহোক ইয়েমেনের হুদায়দা থেকে সাগর পথে জেদ্দা বন্দরে পৌঁছেন যিলকদ মাসের শেষ দিকে। তারপর মক্কায় পৌঁছে উমরা আদায় করেন। অত:পর হজ্জের সময় হজ্জ সম্পন্ন করেন। তিনি মক্কা থেকে বেশ কিছু মূল্যবান গ্রন্থ ক্রয় করেন, কতিপয় ছোট-বড় কিতাব স্বহস্তে কপি করেন। যেমন ইবনে তাইমিয়া রচিত আস সিয়াসাতুশ শারঈয়্যাহ। আর কিছু কিতাব অন্যের মাধ্যমে কপি করিয়ে নেন। তম্মধ্যে একটি কিতাব হল, ইবনে নাসিরুদ্দীন রচিত আর রাদ্দুল ওয়াফী।

◈ মদীনার পথে:

অত:পর তিনি মক্কা থেকে মদীনা গমন করেন সফর মাসে। সেখানে ইবনুল হাজ্জ রচিত আল মাদখাল গ্রন্থটি ক্রয় করেন।

◈ ঘরে ফেরার পালা:

অত:পর মদীনা থেকে উমরা করার উদ্দেশ্যে মক্কা আগমন করেন। উমরা করার পর জেদ্দা হয়ে পূণরায় নিজ দেশে ফিরে আসেন। পথিমধ্যে জাহাজে বসেই সুনানে নাসাঈ কিতাবটি একটি মূলবান নুসখা থেকে কপি করেন। এই নুসখাটি তিনি তাকে ইজাযা প্রদানকারী শাইখ মুহাদ্দিস ইয়াকুব দেহলবীর শশুরের নিকট থেকে ধার নিয়েছিলেন। এটিতে শাহ ওলীউল্লাহ দেহলবীর টিকা সংযোজিত ছিল। পরে তিনি এটিকে মুদ্রণের ব্যবস্থা করেছিলেন।

তিনি দুই হারাম তথা মক্কা ও মদীনায় প্রায় আঠারো মাস অবস্থান করেন। এসময় তিনি সেখানকার আলেমদের নিকট থেকে বিভিন্ন বিষয়ে উপকৃত হন এবং তাদেরকেও উপকৃত করেন।

তার এই হজ্জ সফরটি ইলম চর্চা ও কিতাব সংগ্রহের মধ্যমে সময়কে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে এক অনবদ্য উদাহরণ হয়ে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে।

◈ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে তার বিশাল অবদান:

সিদ্দীক হাসান খান বহু মূল্যবান ও দুর্লভ কিতাবাদী এবং জ্ঞানের এক বিশাল ভাণ্ডার নিয়ে হজ্জ থেকে ফিরে এসে ইলমের খেদমতের অবদান রাখার পাশাপাশি সরকারী দায়িত্ব পালন করতে লাগলেন।

এরপর শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে তার ব্যাপক অবদানের কারণে ভুপালের মহীয়সী রাণী শাহজাহান বেগম তার হাতে ভুপালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব অর্পণ করেন।

তিনি দক্ষতার সাথে সে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশে প্রচুর স্কুল, মাদরাসা, ইন্সটিটিউট, লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

জ্ঞান চর্চার ভুবনে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল, বহু দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ও মূল্যবান গ্রন্থ সংগ্রহ করা। এ কাজের উদ্দেশ্যে তিনি মক্কা, মদীনা, মিসর, আস্তানা (কাজাখিস্তানের রাজধানী ও প্রধান শহর) ইত্যাদি অঞ্চলে একদল আলেম, গবেষক ও লেখক নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাদের জন্য তিনি ভাতারও ব্যবস্থা করেছিলেন।

◈ ভুপালের রাণীর সাথে বিবাহ বন্ধন এবং ইলমের ময়দান থেকে রাজ সিংহাসনে আরহন:

ভুপালের রাণী বেগম শাহজাহান একজন জ্ঞানবতী ও সম্মানিত মহিলা ছিলেন। তাঁর স্বামী মৃত্যু বরণ করার পর তিনি বিধবা অবস্থায় জীবন যাপন করছিলেন। কিন্তু তিনি একজন দ্বীনদার, ইলমের অধিকারী সম্মানিত ব্যক্তিকে বিয়ে করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। তাই তিনি তাঁর লেখক ও অনুবাদক সিদ্দীক হাসান খানকে নির্বাচন করে তাকে বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সিদ্দীক হাসান খান এই প্রস্তাব গ্রহণ করে হিজরি ১২৮৮ মোতাবেক ১৮৭১ খৃষ্টাব্দে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারপর থেকে তিনি তার স্ত্রীর পক্ষ থেকে ভুপালের শাসন ক্ষমতার দায়িত্ব নেন এবং তাকে ‘নওয়াব’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

◈ রাষ্ট্রনায়ক যখন ইলম ও দাওয়াতের একনিষ্ঠ খাদেম:

ভুপালের শাসনভার গ্রহণ করার পর তিনি সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করতে থাকেন। ফলে দেশের অবস্থার অগ্রগতি সাধিত হয়। মানুষের ধর্মীয়, নৈতিক এবং সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটে।

তিনি সরকারী বিভিন্ন পদে থাকা দুর্নীতি পরায়ণ দায়িত্বশীলদের থেকে প্রশাসনকে পরিচ্ছন্ন করে তদস্থলে যোগ্য ও কর্তব্য পরায়ণ দায়িত্বশীলদেরকে নিয়োগ প্রদান করেন।

আলেম-ওলামাগণ তাঁর কাছে একত্রিত হতে থাকেন। তিনি তাদের জন্য উচ্চমানের বেতন-ভাতা চালু করেন এবং তাদেরকে ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ এর জন্য উৎসাহিত করেন।

অনুরূপভাবে তাদেরকে তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইলমে শরঈ, বিশেষ করে সালাফী আকীদা, ইলমুল হাদীস প্রচার-প্রসার এবং কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার প্রতি জনগণের মাঝে দাওয়াতি কাজ করতে উৎসাহিত করেন। ফলে দেশে ধর্মীয় দিক দিয়ে এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হয়।

এভাবেই রাষ্ট্র পরিচালনায় সফলতার পাশাপাশি কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ইলম ও দাওয়াতের একনিষ্ঠ খাদিম হিসেবে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে রইলেন আল্লামা সিদ্দীক হাসান খান ভুপালী রহ.।

◈ হিংসা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ক্ষমতাচ্যুতি:

তার সফল রাষ্ট্র পরিচালনা এবং বিশ্বব্যাপী কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ইলম ও দাওয়াতের প্রসারের ফলে হিংসুকদের গাত্রদাহ হতে শুরু করে। ফলে তারা তৎকালীন দখলদার ইংরেজ শাসকদের নিকট তাঁর বিরুদ্ধে চোগলখোরি করে এবং নানা মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করতে থাকে। যার কারণে ইংরেজ শাসকরা তার স্ত্রীকে নির্দেশ দেয়, যেন সিদ্দীক হাসান খানকে শাসন ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

প্রথম পর্যায়ে এটি প্রতিহত করা হলেও পরে তিনি নিজের জীবননাশ এবং ক্ষমতা হারানোর আশংকায় হিজরী ১৩০২ মোতাবেক ১৮৮৪ খৃষ্টাব্দে তাকে শাসন ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। কিন্তু শাসন ক্ষমতা থেকে দূরে সরলেও তিনি সম্মান ও মর্যাদা সহকারে রাজ প্রসাদে লিখনি, জ্ঞান-গবেষণা ও অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন।

◈ অনন্তের পথে যাত্রা:

তিনি ২৯ জুমাদাল আখেরা ১৩০৭ হিজরী মোতাবেক ১৮৯০ খৃষ্টাব্দে তার জন্মস্থান ভারতে উত্তর প্রদেশে তার পিতৃ ভূমি কান্নুজে দুনিয়া থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। তিনি দু জন ছেলে রেখে যান।

আল্লাহ তায়ালা তাকে তাঁর রহমত দ্বারা পরিবেষ্টিত করে রাখুন, তাকে ক্ষমা করুন এবং ইলমকে পুনর্জীবিত করার ক্ষেত্রে তার ব্যাপক অবদান এবং ইসলামের খেদমত আঞ্জাম দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে সর্বোত্তম পুরষ্কারে ভূষিত করুন। আমীন।
শায়খের আকীদা

শায়খ প্রথম পর্যায়ে আশআরী আকীদার উপর ছিলেন এবং তার মধ্যে ইলমে কালামের প্রভাব বিদ্যমান ছিল। তার লেখা ‘ফাতহুল বায়ান মিন মাকাসিদিল বায়ান’ কিতাব থেকে সেটাই প্রতিভাত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মক্কা-মদীনার আলেমদের সংস্পর্শে আসার ফলে এবং আকীদাহ বিষয়ে প্রখ্যাত আলেম শাইখ হামাদ বিন আতীকের সাথে পত্র মারফতে আলোচনা-পর্যালোচনার ফলে আকীদার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। বিশেষ করে শাইখ হামাদের সাথে পত্রালাপ তাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। ফলে পরবর্তীতে তিনি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বিশুদ্ধ আকীদার একজন একনিষ্ঠ খাদেমে পরিণত হন।

আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকীদা বিষয়ে তিনি দুটি কিতাব রচনা করেন। একটি হল قطف الثمر في بيان عقيدة أهل الأثر এবং অপরটি হল الدين الخالص।

শুধু তাই নয়। বরং তিনি ইলমে কালামের সমালোচনায় গ্রন্থ রচনা করে। গ্রন্থটির নাম قصد السبيل إلى ذم الكلام والتأويل তিনি ইলমে কালামের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন যেমনটি তার আকীদা বিষয়ক লিখিত কিতাবাদী থেকে স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।

শাইখ নির্ভেজাল তাওহীদের প্রতি মানুষকে দাওয়াত প্রদানে খ্যতি অর্জন করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কারো তোষামোদ করতেন না। এ কারণে তাঁকে গোঁড়া আলেমদের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড শত্রুতার মোকাবেলা করতে হয়।

অপরপক্ষে তিনি নাজদের আহলে সুন্নাহর আলেমগণের তরফ থেকে সমর্থন ও সহযোগিতা পান। যার মাধ্যমে তিনি মানসিকভাবে আনন্দিত হওয়ার পাশাপাশি এ দাওয়াতের উপর অবিচল থাকার অনুপ্রেরণা লাভ করেন।

তাঁর লেখা ‘আদ দীনুল খালেস’ কিতাবটি তাওহীদ বিষয়ে একটি অনন্য সাধারণ গ্রন্থ।

আল্লাহ তায়ালা তাঁকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। আমীন।

◈ শাইখের মাযহাব:

ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ আলেমদের মত তিনিও বাল্যকাল থেকেই হানাফী মাযহাবের উপর বেড়ে উঠেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার অন্তরে কুরআন-সুন্নাহর দলীল অনুসরণের প্রেরণা জাগ্রত করেন। বিশেষ করে তিনি তার বরকতময় হজ্জ সফর থেকে ফিরে আসার পর এবং শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়েম, আল্লামা শাওকানী ও আল্লামা সানআনী এর গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করার পরে তার মধ্যে এ চেতনা আরও দৃঢ়তর হয়।

তিনি ইমাম শাওকানী রা. লিখিত কিতাবাদীর প্রতি অনেক গুরুত্ব দিতেন। তার কিতাব থেকে প্রচুর পরিমাণে উদ্ধৃতি দিতেন। কখনো কয়েক পৃষ্ঠা ব্যাপী কোন পরিবর্তন ছাড়া উদ্ধৃতি পেশ করতেন। তাই তিনি দলীল অনুসরণ করতেন এবং দলীল বহির্ভূত বিষয়কে বর্জন করতেন। যার কারণে, গোঁড়া মাযহাব পন্থীদের সাথে তার অনেক তর্ক-বিতর্ক সংঘটিত হয়েছে। তিনি তাকলীদ বিষয়ে কিতাব রচনা করেছেন। এই কিতাবে তিনি হককে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার আহবান জানিয়েছেন যদিও তা প্রচলিত মাযহাবের বাইরে যায়।

◈ দৈহিক গঠন ও চারিত্রিক গুণাবলী:

তিনি ছিলেন ফর্সা এবং মধ্যম গঠনধারী ব্যক্তিত্ব। শরীরে তেমন বার্ধক্য প্রকাশিত হয় নি। চুল ছিল কানের লতি পর্যন্ত। দানশীল ছিলেন। ভুপালে তার মহামতি স্ত্রী শাহজাহান বেগমের পক্ষ থেকে শাসন কার্য পরিচালনা করার সময় তিনি অনেক ধন-সম্পদ আলেম-ওলামা এবং তালিবুল ইলদের এর জন্য ব্যয় করেছেন। তাদের জন্য ভালো মানের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে তাদেরকে ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ করার কাজে উৎসাহিত করেছেন।

ইলম, আমল, সচ্চরিত্র এবং কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। সেই সাথে তার মাঝে ছিল দয়া, অনুকম্পা, অনুদান, সাহসিকতা, স্থির চিত্ত, কর্ম দক্ষতার বিশেষ গুণ। তিনি বিলাসিতা মুক্ত জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন।

◈ তাঁর রচিত গ্রন্থাবলী:

লেখক অনেক বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি নিজস্ব জীবনী গ্রন্থ ‘আবজাদুল উলূম’ (৩/২৭৫-২৭৯) কিতাবে তাঁর রচিত গ্রন্থাদি উল্লেখ করেছেন। সে সব গ্রন্থের অনেকগুলো আরবী আর বেশ কিছু ফারসী ভাষায় লিখিত।

ডক্টর জামীল আহমদ حركة التأليف باللغة العربية في الإقليم الشرقي الهندي في القرنين الثامن عشر والتاسع عشر للميلاد(অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতকে ভারতীয় পূর্বাঞ্চলে গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে আলোড়ন শীর্ষক গ্রন্থে (২৭৪-২৮১ পৃষ্ঠা) সিদ্দীক হাসান খান ভুপালী রহ. এর রচিত গ্রন্থাদি উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি তাঁর শুধু আরবী ভাষায় লিখিত গ্রন্থগুলোকে তিনভাগে ভাগ করেছেন। যথা:

● ১) যে সব গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
● ২) যে সব গ্রন্থ এখনো পাণ্ডুলিপি আকারেই রয়ে গেছে।
● ৩) যে সব গ্রন্থের খোঁজ পাওয়া যায় না অথচ তাঁর বা অন্য লেখকের বিভিন্ন গ্রন্থে সেগুলোর নাম পাওয়া যায়।
ডক্টর জামীল আহমদ আরবী ভাষায় তার লিখিত গ্রন্থাদির যে সকল নাম উল্লেখ করেছেন সেগুলো মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর সংখ্যা ৪৫, পাণ্ডুলিপির সংখ্যা ৪ আর অজ্ঞাত গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি।

অনলাইন ভিত্তিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় তার লিখিত গ্রন্থাবলী নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৬৮টি।

আর আরবী ওয়েব সাইটে তাঁর জীবনীতে নাম ও কোন ভাষায় লিখিত এবং কোথায় কখন প্রকাশিত ইত্যাদি বিস্তারিত উল্লেখ পূর্বক তাঁর লিখিত গ্রন্থাদির সংখ্যা লেখা হয়েছে ৯৩টি।

নিম্নে আল্লামা সিদ্দীক হাসান খান কর্তৃক আরবী ভাষায় রচিত ৪৫টি, পাণ্ডুলিপি ৪টি এবং অজ্ঞাতনামা ৭টি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হল (ফারসী ভাষায় রচিত বইয়ের নামগুলোর নাম উল্লেখ করা হয় নি)।

1 – فتح البيان في مقاصد القرآن المطبعة الكبرى الأميرية بالقاهرة

1300 – 1302 هـ ( في عشرة أجزاء ) ، الطبعة الأولى ببهوبال .

১) ফাতহুল বায়ান ফী মাকাসিদিল কুরআন

(তাফসীর গ্রন্থ, ১০ খণ্ড, প্রথমত: ১৩০০-১৩০২হিজরীতে ভুপাল থেকে পরবর্তীতে কায়রো থেকে পূণ: প্রকাশিত হয়)

2 – نيل المرام من تفسير آيات الأحكام لكهنو 1392 هـ مطبعة المدني بمصر 1382 هـ / 1962 م .

২) নাইলুল মারাম মিন তাফসীরিল আহকাম।

(১৩৯২ হিজরীতে লক্ষ্ণৌ থেকে এবং মিসর থেকে ১৩৮২হি:/ ১৯৬২ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত)

3 – الدين الخالص ( جمع فيه آيات التوحيد الواردة في القرآن ، ولم يغادر آية منها إلا أتى عليها بالبيان الوافي ) دهلي – مطبعة المدني بمصر – 1379 هـ / 1959 م

৩) আদ দীনুল খালিস। (কুরআনে যে সকল তাওহীদের আয়াত রয়েছে সে সকল আয়াত সম্পর্কে) (প্রকশিত দিল্লী-১৩৭৯ হি/১৯৫৯খৃ)

4 – حسن الأسوة بما ثبت عن الله ورسوله في النسوة الجوائب 1301 هـ

৪) হুসনুল উসওয়াহ বিমা সাবাতা

5 – عون الباري بحل أدلة البخاري ( شرح كتاب التجريد ) بولاق 1297 هـ ( 8 أجزاء ) على هامش ” نيل الأوطار ” ، بهوبال 1299 هـ ( جزآن ) .

৫) আউনুল বারী বি হিল্লি আদিল্লাতিল বুখারী (কিতাবুত তাজরীদের ব্যাখ্যা গ্রন্থ)

6 – السراج الوهاج في كشف مطالب صحيح مسلم بن الحجاج بهوبال 1302 هـ .

৬) আস সিরাজুল ওয়াহাজ ফী কাশফি মাতালিবি সহীহ মুসলিম, ভুপাল/১৩০২হিজরী

7 – أربعون حديثًا في فضائل الحج والعمرة بهوبال .

৭) হজ্জ-উমরার ফযীলতে চল্লিশ হাদীস, ভুপাল।

8 – أربعون حديثًا متواترة بهوبال .

৮) চল্লিশটি মুতাওয়াতির হাদীস, ভুপাল।

9 – العبرة بما جاء في الغزو والشهادة والهجرة بهوبال 1294 هـ / 1877 م .

৯) আল ইবরাহ বিমা জাআ ফীল গাযবি ওয়াশ শাহাদাতি ওয়াল হিজরাহ (জিহাদ, শাহাদাত ও হিজরত সম্পর্কিত) ভুপাল ১২৯৪হি/১৮৭৭খৃ

10 – الحرز المكنون من لفظ المعصوم المأمون ( في الحديث ) بهوبال .

১০) আল হারযুল মাকনূন মিন লাফযিল মাসূমিল মামূন (হাদীস বিষয়ক), ভুপাল।

➧ আরও কতিপয় গ্রন্থ

11 – الرحمة المهداة إلى من يريد زيادة العلم على أحاديث المشكاة دلهي

12 – الجنة في الأسوة الحسنة بالسنة ، في اتباع السنة بهوبال 1295 هـ

13 – يقظة أولي الاعتبار مما ورد في ذكر النار وأصحاب النار بهوبال 1294 هـ .

14 – الحطة في ذكر الصحاح الستة النظامية بكانبور 1283 هـ .

15 – الموائد العوائد من عيون الأخبار والفوائد ( جمع فيه حوالي ثلاثمائة حديث ) بهوبال 1298 هـ .

16 – الإذاعة لما كان ويكون بين يدي الساعة بهوبال 1293 هـ / 1876 م ، الجوائب بالآستانة – 1876 أيضا .

17 – الروضة الندية ، شرح الدرر البهية للقاضي محمد اليمني الشوكاني العلوية بلكهنو 1290 هـ ، مصر 1296 هـ .

18 – فتح العلام ، شرح بلوغ المرام لابن حجر العسقلاني المطبعة الأميرية القاهرة 1302 هـ / 1885 م .

19 – حصول المأمول من علم الأصول ( تلخيص إرشاد الفحول للشوكاني ) ، ( في أصول الفقه ) الجوائب 1296 هـ / 1879 م ، مصر 1338 هـ .

20 – الإقليد لأدلة الاجتهاد والتقليد الجوائب 1295 هـ / 1878 م .

21 – ظفر اللاضي بما يجب في القضاء على القاضي الصديقية ، بهوبال 1294 هـ. 22 – ذخر المحتي من آداب المفتي بهوبال 1294 هـ .

23 – الغنة ببشارة أهل الجنة بولاق 1302 هـ / 1885 م .

24 – الموعظة الحسنة بما يخطب به في شهور السنة بهوبال 1295 هـ ، مصر 1307 هـ .

25 – الانتقاد الرجيح في شرح الاعتقاد الصحيح لكهنو .

26 – قطف الثمر في بيان عقيدة أهل الأثر كانبور .

27 – إكليل الكرامة في تبيان مقاصد الإمامة بهوبال 1294 هـ / 1877 م

28 – حضرات التجلي من نفحات التجلي والتخلي ( في الكلام ) بهوبال 1298 هـ

29 – الطريقة المثلى في الإرشاد إلى ترك التقليد واتباع ما هو الأولى الآستانة1296هـ/1879م
30 – قصد السبيل إلى ذم الكلام والتأويل بهوبال 1295 هـ .

31 – قضاء الأرب في تحقيق مسألة النسب كانبور 1283 هـ .

32 – البلغة في أصول اللغة الشاهجانية ببهوبال 1294 هـ ، الجوائب 1296 هـ / 1879 م

33 – لف القماط على تصحيح بعض ما استعملته العامة من المعرب والدخيل والمولد والأغلاط بهوبال ، 1291 هـ – 1296 هـ / 1879 م .

34 – العلم الخفاق من علم الاشتقاق الجوائب 1296 ه، مصر 1346 هـ .

35 – طلب الأدب من أدب الطلب .

36 – مثير ساكن الغرام إلى روضات دار السلام ( في الجنة وأهل الجنة ) النظامية بكانبور 1289 هـ .

37 – غصن البان المورق بمحسنات البيان ( يشتمل على ثلاثة علوم علم البيان ، وعلم المعاني ، وعلم البديع ) الجوائب ، بهوبال 1294 هـ / 1877 م .

38 – نشوة السكران من صهباء تذكار الغزلان ، في ذكر أنواع العشق وأحوال العشاق والعشيقات من النسوان ، وما يتصل بذلك من تطورات الصبوة والهيمان بهوبال 1294 ، الجوائب 1296 هـ / 1879 م .

39 – الكلمة العنبرية في مدح خير البرية ( قصيدة ) .

40 – لقطة العجلان مما تمس إلى معرفته حاجة الإنسان . ( يحتوي من تواريخ الأمم السالفة قسطا وافرا ، ويذكر الليالي والأيام والشهور والأعوام والساعات والدقائق وفصول العام ) الجوائب 1296 هـ / 1879 م .

41 – خبيئة الأكوان في افتراق الأم على المذاهب والأديان الجوائب 1296 هـ / 1879 م ( في آخر لقطة العجلان ) ، كانبور .

42 – أبجد العلوم الصديقية ببهوبال 1296 هـ / 1878 م .

43 – التاج المكلل من جواهر مآثر الطراز الآخر والأول ( كتاب حافل مشحون بتراجم 543 عالما وعالمة من العالم الإسلامي ) المطبعة الهندية العربية ، بومباي 1383 هـ / 1963 م .

44 – رحلة الصديق إلى البيت العتيق العلوية بلكهنو 1289 هـ / 1872 م

45 – تخريج الوصايا من خبايا الزوايا مصر .

➧ কতিপয় পাণ্ডলিপি

1 – ربيع الأدب .

2 – تكحيل العيون بتعاريف العلوم والفنون .

3 – إحياء الميت بذكر مناقب أهل البيت .

4 – التذهيب ، شرح التهذيب في المنطق .

➧ যে সকল গ্রন্থের কোন সন্ধান পাওয়া যায় না:

1 – خلاصة الكشاف .

2 – ملاك السعادة .

3 – اللواء المعقود لتوحيد الرب المعبود .

4 – النذير العريان من دركات الميزان .

5 – الروض البسام .

6 – هداية السائل إلى أدلة المسائل .

– رياض الجنة في تراجم أهل السنة .
উৎস:

https://ar.wikipedia.org/…/%D9%85%D8%AD%D9%85%D8%AF_%D8%B5%…

http://www.alukah.net/culture/0/57749/

http://www.ahlalhdeeth.com/vb/showthread.php?t=181839

টিকা:
—————————–
[1] [1]কান্নুজ এলাকায় জন্ম গ্রহণের কারণে কান্নুজী,ভুপালে বসবাস করার কারণে ভুপালী এবং তার বংশ পরম্পরা যাইনুল আবেদীন বিন আলী বিন হুসাইন বিন আলী রা. পর্যন্ত পৌঁছার কারণে তাকে হুসাইনী বলা হয়।

তার পূর্বপুরুষগণ ইরাকের অধিবাসী ছিলেন। তাদের মধ্যে তার এক পূর্বপুরুষ মুহাম্মদ ইরাক থেকে বুখারায় হিজরত করেন। সেখান থেকে তার আরেক পূর্বপুরুষ মুহাম্মদ জালাল আজম ৬৫২ হিজরি মোতাবেক ১২৫৪ খৃষ্টাব্দে ভারতের মুলতানে গমন করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। যিনি একজন বড় আলেম এবং বিখ্যাত দাঈ ছিলেন। তার পূর্ব পুরুষগণ বুখারার অধিবাসী হওয়ার কারণে তাকে বুখারীও বলা হয়।

[2] উল্লেখ্য যে, তিনি ভুপালে থাকা কালীন সময়ই তৎকালীন সময়ের একজন স্বনামধন্য মুহাদ্দিস কাজী হুসাইন বিন মুহসিন আস সুবাইয়ী আল আনসারী আল ইয়ামানীর নিকট হাদীস পাঠ করেন। কাজী হুসাইন ছিলেন শরীফ মুহাম্মদ বিন নাসের আল হাযেমীর ছাত্র। শরীফ মুহাম্মদ ছিলেন ইমাম শাওকানী রহ. এর ছাত্র। অনুরূপভাবে তিনি কাজী হুসাইন আনসারীর ভাই কাজী জয়নুল আবেদনী আনসারীর নিকটও হাদীস পাঠ করেন।

نبذة عن حياة العلامة صديق حسن خان القنوجي البهوبالي
تأليف: عبد الله الهادي عبد الجليل

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইড্ন্স, সউদী আরব।