অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিধান

প্রশ্ন: অমুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিধান কী? কা-ফে-র-দের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে যে খাবার প্রস্তুত করা হয় সেটা খাওয়ার হুকুম কী? হি-ন্দু-দের কালী পূজা, দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাঠাবলি দেওয়ার জন্য তাদের কাছে ছাগল, বেড়া দুম্বা ইত্যাদি বিক্রি করা যাবে কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
◾প্রথমত, অমুসলিম কা-ফে-র মু-শ-রি-ক-দের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাওয়া,তাদের মন্দির বা পূজা পরিদর্শন করা, উদ্বোধন করা, সেখানে আনন্দ-উল্লাস করা কিংবা তাদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করা, প্রত্যেক মুসলিমের জন্যই হারাম। কারণ এতে তাদের শির্কী কর্মকাণ্ডের প্রতি স্বীকৃতি ও ভালোবাসার প্রকাশ পায়।অথচ মহান আল্লাহ বলেন,যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তার নিকট থেকে তা কখনোই কবুল করা হবে না এবং এমন ব্যক্তি পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সূরা আলে ইমরান: ৩/৮৫) তাছাড়া হিন্দুদের পূজা, মন্দির বা গির্জায় মহান রাজাধিরাজ আল্লাহকে অপমান করা হয় এবং মূর্তিকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করা হয়। যা স্পষ্ট শিরক (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২২)। মহান আল্লাহর নিকট শির্কের চেয়ে বড় কোনো অপরাধ আর নেই।শিরক এত ভয়ানক অপরাধ যাতে মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ক্রোধান্বিত হন এবং এই অপরাধ তিনি ক্ষমা করবেন না বলে দ্ব্যর্থ হীন ভাবে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না; এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেন।’’ [সুরা নিসা, আয়াত: ৪৮]
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)। তিনি আরো বলেন, যে আমাদের ব্যতীত অন্যদের রীতি- নীতির অনুসরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (তিরমিযী হা/২৬৯৫, মিশকাত হা/৪৬৪৯) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে গেছেন এই বলে যে, ‘‘শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তিপূজা করবে এবং কিছু লোক মূর্তি-পূজারীদের সাথে মিশে যাবে।’’(ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৯৫২) উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সাবধান করে বলে গেছেন, ‘তোমরা মু-শ-রি-কদের (যারা মূর্তি বা অন্য কিছুকে আল্লাহর সাথে শরিক করে) উৎসবের দিনগুলোতে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কারণ, তখন তাদের উপর আল্লাহর গ-জ*ব অবতীর্ণ হতে থাকে।’ (ইমাম বাইহাকি, সুনানুল কুবরা: ১৮২৮৮) সাহাবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম হিসেবে বিবেচিত আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘‘যে শির্কের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সেও মুশরিক।’’(ইমাম কুরতুবি, আল জামি’ লি-আহকামিল কুরআন: ৮/৯৪; সাবুনি, সফওয়াতুত তাফাসির: ৪৯১)
.
◾দ্বিতীয়ত, তাদের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে যে খাবার প্রস্তুত করা হয় সেটা খাওয়ার হুকুম কী?
.
কা-ফে-রদের কোন উৎসবের দিন উৎসবকে কেন্দ্র করে যে খাবার প্রস্তুত করে সে খাবার একজন মুসলিমের জন্য খাওয়া জায়েজ নয়, কেননা এটা এই বাতিল দিবসকে স্বীকৃতি দেয়া ও সেটা উদযাপনের পর্যায়ে পড়ে।আল্লাহ তা‘আলা বলেন,‘তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ২)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য, সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন’ (তাফসীর ইবনু কাছীর,খন্ড: ২ পৃষ্ঠা: ১২; তাফসীরে কুরতুবী, খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ৪৬-৪৭)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,আহলে কিতাব বা মু-শ-রি-করা তাদের উৎসবের জন্য যে খাবার তৈরি করে তা খাওয়া বা তাদের উৎসব উপলক্ষে দেওয়া হলে তা গ্রহণ করা কি একজন মুসলমানের জন্য জায়েজ?
.
জবাবে তারা বলেন:لا يجوز للمسلم أن يأكل مما يصنعه اليهود أو النصارى أو المشركون من الأطعمة لأعيادهم ، ولا يجوز أيضاً للمسلم أن يقبل منهم هدية من أجل عيدهم ، لما في ذلك من تكريمهم والتعاون معهم في إظهار شعائرهم وترويج بدعهم ومشاركتهم السرور أيام أعيادهم
ই-য়া-হু-দি, খ্রি-স্টান ও মু-শ-রি-করা তাদের উৎসবের জন্য যে খাবার তৈরি করে তা খাওয়া মুসলমানদের জন্য জায়েজ নয়। কোন মুসলমানের জন্য তাদের উৎসব উপলক্ষে দেওয়া জিনিসগুলো গ্রহণ করাও জায়েয নয়, কারণ এর অর্থ হল তাদের সম্মান করা এবং তাদের প্রতীক প্রকাশ করা এবং তাদের উদ্ভাবন প্রচারে তাদের সাথে সহযোগিতা করা এবং তাদের দিনগুলোতে তাদের আনন্দ ভাগাভাগি করা।…..(আল-লাজনাহ আল-দাইমাহ,খন্ড: ২২ পৃষ্ঠা: ২৯৮)
.
সৌদি ফতোয়া বোর্ড (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ) এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখ আবদুল্লাহ ইবনে জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি.]কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল প্রশ্ন:খ্রি-স্টা-ন-দের উৎসব উপলক্ষে যে খাবার প্রস্তুত করা হয় সেটা খাওয়ার হুকুম কী? যীশু খ্রি-স্টের জন্মদিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের দাওয়াত গ্রহণ করার বিধান কী?
.
জবাবে শাইখ বলেন :বিদাতী উৎসবগুলো উদযাপন করা জায়েয নয়; যেমন- খ্রি-স্ট-মাস (বড়দিন), নওরোজ, মেহেরজান। অনুরূপভাবে মুসলমানেরা নতুন নতুন যে সব দিবস উদযাপন করা চালু করেছে; যেমন- রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদ পালন করা, রজব মাসে মিরাজ দিবস পালন করা ইত্যাদি। অনুরূপভাবে খ্রি-স্টা-নেরা কিংবা মু-শ-রি-কেরা তাদের উৎসব উপলক্ষে যে খাবার প্রস্তুত করে সেটা খাওয়া জায়েয নয়, এসব দিবস উদযাপনকে কেন্দ্র করে তারা দাওয়াত দিলে সে দাওয়াত গ্রহণ করাও জায়েয নয়। কেননা তাদের দাওয়াত গ্রহণ করার অর্থ হল হলো- এ ক্ষেত্রে তাদেরকে উৎসাহিত করা এবং এ বিদাতগুলো পালনে তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়া। এর মাধ্যমে অজ্ঞ লোকেরা প্রবঞ্চিত হবে এবং তারা মনে করবে এতে কোন অসুবিধা নেই।(আল-লু’লুল মাকিন মিন ফাতাওয়া বিন জিবরীন, পৃষ্ঠা-২৭ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৭৮৭৬)

▪️তৃতীয়ত: তাদের ধর্মীয় অংশ হিসাবে পাঠাবলি দেওয়ার জন্য তাদের কাছে ছাগল বেড়া ইত্যাদি বিক্রি করার বিধান:
.
এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো যদি আপনি নিশ্চিত জানতে পারেন যে, কোন হি-ন্দু মূ-র্তি পূজার জন্য ছাগল ব্যবহার করবে তাহলে তাদের কাছে ছাগল বিক্রয় করা জায়েজ নয়। কেননা হিন্দুরা মূর্তি পূজার মাধ্যমে এ বিশ্বচরাচরের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শিরক (অংশীদার স্থাপন) করে। আর শিরক আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় অপরাধ। সুতরাং আপনার ছাগল দ্বারা যদি তারা এত বড় অপরাধ করে তাহলে আপনি তাদেরকে এতে সহায়তা করলেন। অথচ আল্লাহর নাফরমানির ব্যাপারে কাউকে সাহায্য করা ইসলামে নিষিদ্ধ।(সূরা মায়েদা: ৫/২)
.
প্রত্যেক অমুসলিম,মুসলমানের কাছে পূর্ণ সদাচরণ পাওয়ার হক রাখে। তবে তারা তাদের পূ-জা-রবা ধর্মীয় মৌলিক কোন সুযোগ-সুবিধা মুসলমানের কাছে পাওয়ার অধিকার রাখে না। কারণ পূজার সবকিছুই শিরকী কাজ, যা সবচেয়ে বড় গোনাহ। আর শিরক হ’ল সবচেয়ে বড় পাপ। আর পাপের সহযোগিতা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন (সূরা মায়েদা: ৫/২)
.
আর কোন মুসলিম শিরকী কাজে লিপ্ত হতে পারে না (সূরা আন-নিসা: ৪৮; সূরা লুক্বমান: ১৩)। প্রিয় নবী রাসূল (ﷺ) বলেন, যে আমাদের ব্যতীত অন্যদের রীতি- নীতির অনুসরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় (তিরমিযী হা/২৬৯৫, মিশকাত হা/৪৬৪৯)। তিনি আরো বলেন, শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু দল মূর্তিপূজা করবে এবং মুশরিকদের সাথে মিশে যাবে (ইবনু মাজাহ হা/৩৯৫২, আবুদাঊদ হা/৪২৫২; মিশকাত হা/৫৪০৬)

ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন, لا يحل للمسلمين أن يتشبهوا بالكفار في شيء مما يختص بأعيادهم لا من طعام ولا لباس ولا اغتسال… ولا البيع بما يستعان به على ذلك لأجل ذلك. “মুসলিমদের জন্য কা-ফে-র-দের উৎসবের জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য, পোশাক, গোসল..ইত্যাদি কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবের কাজে লাগানো হয় এমন জিনিসও এ উদ্দেশ্যে বিক্রয় করাও বৈধ নয়।” তিনি আরো বলেছেন, মুসলমানরা তাদের উৎসবে তাদের কাছে বিক্রি করে যা তারা তাদের খাবার, পোশাক, তুলসী ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করে বা তাদের উপহার দেয়, এটি তাদের নিষিদ্ধ উৎসব পালনে এক ধরনের সহায়তা ।(ইকতিদা আল-সিরাতুল মুস্তাকিম (২/৫২০ ইসলামি সওয়াল জওয়াব ফাতওয়া নং-৬৯৫৫৮)
.
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে (যারা আলেম অভিধার উপযুক্ত) মুসলমানদের জন্য মু-শ-রি-ক-দের উৎসবগুলোতে উপস্থিত হওয়া নাজায়েয। চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণ তাঁদের গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন…। ইমাম বাইহাকী উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে ‘সহিহ-সনদ’ এ বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: “মু-শ-রি-কদের উৎসবের দিনে তোমরা তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কেননা তাদের উপর আল্লাহ্‌র অসন্তুষ্টি নাযিল হতে থাকে”। তিনি আরও বলেন: “তোমরা আল্লাহ্‌র শত্রুদেরকে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে এড়িয়ে চলবে”। ইমাম বাইহাকী আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর (রাঃ) থেকে ‘জায়্যিদ-সনদ’ এ বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি বিধর্মীদের দেশে গিয়ে তাদের নওরোজ ও মেলা পালন করেছে, তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করেছে এবং মৃত্যু পর্যন্ত এভাবে কাটিয়েছে কিয়ামতের দিন তাদের সাথে তার হাশর হবে।”[আহকামু আহলিয যিম্মাহ্‌ (১/৭২৩-৭২৪)
.
বিগত শতাব্দীতে সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ,সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি বিশ্ববরণ্যে আলেম ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
.
কোনও মুসলিম পুরুষ-নারীর জন্য ই-হু-দি-খ্রি-স্টা-ন বা অন্যান্য কা-ফে-র-দের উৎসবে অংশগ্রহণ করা ও সহযোগিতা করা জায়েজ নয়,বরং তা বর্জন করা আবশ্যক। কারণ “যে ব্যক্তি অন্য কোনও জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন ও চরিত্র গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। সুতরাং ইমানদার নারী-পুরুষের জন্য এ বিষয়ে সাবধান হওয়া জরুরি। এ উৎসব পালনে তাদেরকে কোনভাবেই সাহায্য করা বৈধ নয়। কেননা এগুলো শরিয়ত বিরোধী উৎসব। সুতরাং তাতে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নেই এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা বৈধ নয়। চা, কফি, হাড়ি-পাতিল ইত্যাদি দ্বারাও সহায়তা করা যাবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ “আর তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদা: ২) আর কাফেরদের সাথে তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা তাদেরকে গুনাহ এবং সীমালঙ্ঘনের কাজে সহায়তার শামিল।(বিন বায মাজমূ‘ ফাতাওয়া: খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ৪০৫)।
.
বিগত শতাব্দীতে সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন,কাফেরদের বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে উপহার বিনিময়, মিষ্টান্ন বিতরণ,রকমারি খাদ্য তৈরী করা, কাজ বন্ধ রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য হারাম (মাজমূ‘ ফাতাওয়া: খন্ড: ৩ পৃষ্ঠা: ৪৬)।মোটকথা যেখামে শিরক-বিদ‘আত ও শরী‘আত বিরোধী কার্যক্রম হয় সেখানে যাওয়া, বেচা-কেনা ও ব্যবসা করা এবং সহযোগিতা করা গুনাহের কাজ। আল্লাহ বলেন, ‘নেকী ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে কাউকে সাহায্য করো না’ (সূরা মায়েদাহ ৫/২)।

পরিশেষে,প্রিয় পাঠক, ঈমানদারগণ আল্লাহকে তাদের থেকে অনেক বেশী ভালবাসে। কেননা, ঈমানদারগণ তাদের সম্পূর্ণ ভালবাসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করেছে।মহান আল্লাহ বলেন,যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় তারা সুদৃঢ়।(সুরা বাকারাহ: ১৬৫) আল্লাহকে ভালোবাসার অর্থই হলো আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অন্য সব কিছুর সন্তুষ্টির ওপর প্রাধান্য দেয়া। আল্লাহ তাআলাকে এরূপ ভালোবাসা বান্দার জন্য ফরজ বা আবশ্যক আর মহব্বতের সর্বনিম্ন স্তর হলো কু-ফ-রির ওপর ঈমানকে প্রাধান্য দেয়া। ন্যূনতম এ ঈমান প্রাধান্য না দিলে মানুষ মুমিনই থাকে না। মোটকথা আল্লাহর প্রতি মুমিনের ভালোবাসা তার ঈমানের দাবি। আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ছাড়া মুমিনের ঈমান পূর্ণতা লাভ করে না।(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৯৪১) ইমানদার নারী-পুরুষের জন্য এ বিষয়ে সাবধান হওয়া জরুরি। হি-ন্দু-দের পূ-জা উৎসব পালনে তাদেরকে কোনভাবেই সাহায্য করা বৈধ নয়। কেননা এগুলো শরিয়ত বিরোধী উৎসব। হি-ন্দু-রা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ করে। তা হল, মূ-র্তি-পূজা। এটি হল, শি-রক। শি-রক এত ভয়ানক অপরাধ যাতে মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ক্রোধান্বিত হন. সুতরাং তাতে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নেই এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা বৈধ নয় অতএব,প্রিয় মুসলিম ভাই-বোন,পূ-জা দেখতে যাওয়ার আগে একটু ভাবুন।যেখানে আল্লাহর সাথে শির্ক করা হচ্ছে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, সেখানে গিয়ে যদি আমি বিনোদিত হই, তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়ায়? আমার ঈমানি অনুভূতি শেষ হয়ে গেছে? হয়তো তাই! আল্লাহ বুঝার তাওফিক দিন। আমিন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।