আজকের দু’আটি সকাল সন্ধ্যায় পড়ার জন্য খুবই অর্থবহ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি দু’আ।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আজকের দু’আটি শুরু করার পূর্বে দু’আটি সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই, আজকের দু’আটিতে মহান রবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি জিনিস চাওয়া হয়েছে,দু’আটি রাসূল (ﷺ) প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা (একবার) করে পড়তেন। এখানে প্রশ্ন হতে পারে সকাল ও সন্ধ্যা বলতে কোন সময়কে বুঝানো হয়েছে? জবাব হল: সকাল-সন্ধ্যা জিকির আযকার করার সময়টি নিয়ে সালাফদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে,এই মতপার্থক্যের মূল কারণ হল সকাল ও সন্ধ্যার শুরু ও শেষ সময়কে কেন্দ্র করে। তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী সকাল বলতে বুঝায়, ফজর উদিত হওয়ার পর থেকে সালাতুয যোহা আদায়ের শেষ সময়কালকে। আর সন্ধ্যা বলতে বুঝায় আসরের পর থেকে রাত্রীর অন্ধকার অবতরণ করা পর্যন্ত সময়কালকে।(দেখুন আল-ফাতুহাতুর রাব্বানিয়্যাহ, খন্ড ৩ পৃষ্ঠা: ৭৪ ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, খণ্ড: ৬ পৃষ্ঠা: ১৫৪) তবে শাইখ শাইখ উসাইমী (হাফিযাহুল্লাহ)-এর মতে সন্ধ্যার জিকির কখনোই সূর্যাস্তের আগে পড়া যাবে না। এর স্বপক্ষে তিনি শাইখ দলিল উল্লেখ করেছেন।(তিরমিজি, হা/৩৩৮৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৬৯; সনদ: সহীহ; সহীহ বুখারি, হা/৬৩০৬)।
.
এবার আসি মূল আলোচনায়,আজকের দু’আর হাদীসটি জুবায়র ইবনু আবূ সুলাইমান ইবনু জুবায়র ইবনু মুত্বইম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) [মৃত: ৭৩ হি.]-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এ দু‘আগুলো পড়া বাদ দিতেন না অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) সর্বদা সকাল-সন্ধ্যায় এই বাক্যগুলো বলতেন— দু’আটির মূল আরবি হচ্ছে,
.
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ دِيْنِيْ وَدُنْيَايَ وَأَهْلِيْ وَمَالِيْ، اَللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي, وَاٰمِنْ رَوْعَاتِىْ
.
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাহ। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দীনী ওয়াদুনইয়া-ইয়া, ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী,ওয়া আ-মিন রও‘আ-তী।(আরবির সঠিক উচ্চারণ বাংলায় লেখা কোনোভাবেই শতভাগ সম্ভব নয়; তাই আরবি টেক্সট মিলিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন, পাশাপাশি আরবির সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ুন, না হয় ভুল শিখতে হবে)।
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি আমার দ্বীন ও দুনিয়ার; আমার পরিবার ও সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন, এবং ভীতিপ্রদ বিষয়সমূহ থেকে আমাকে নিরাপদ রাখুন।(আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭০৩, ১২০০, ১২১২ আবু দাউদ হা ৫০৭৪ সহীহ ইবনে হিব্বান হা/৯৬১ ইবনে মাজা হা/৩৮৭১ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৯২৭৮ হাদিসটি সহীহ)
.
এবার এভাবে আরবী এবং বাংলা উচ্চারণসহ সহজে মুখস্থ করুন:
.
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ
(আল্লাহুম্মা ইন্নী) অর্থ: হে আল্লাহ্! নিশ্চয়ই আমি,
.
أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ
(আসআলুকাল আফিয়াতা) অর্থ: আপনার নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি,
.
فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ،
(ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাহ্) অর্থ: দুনিয়া ও আখিরাতের,
.
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ
(আল্লাহুম্মা ইন্নী) অর্থ: হে আল্লাহ্! নিশ্চয়ই আমি,
.
أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ
(আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা) অর্থ: আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি,
.
فِيْ دِيْنِيْ وَدُنْيَايَ
(ফী দীনী ওয়াদুনইয়া-ইয়া) অর্থ: আমার দ্বীন ও দুনিয়ার,
.
وَأَهْلِيْ وَمَالِيْ،
(ওয়া আহ্লী ওয়া মা-লী) অর্থ: আমার পরিবার ও আমার সম্পদের,
.
اَللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي
(আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী) অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন,
.
وَاٰمِنْ رَوْعَاتِىْ
(ওয়া আ-মিন রও‘আ-তী) অর্থ: এবং শঙ্কা ও ভীতিপ্রদ বিষয়সমূহ থেকে আমাকে নিরাপদ রাখুন।
.
প্রিয় পাঠক! দু’আটি সামান্য বড় হলেও খুবই সুন্দর এবং চমৎকার একটি দু’আ। দু’আটির অর্থও খুবই সুন্দর ও ব্যাপক দু‘আটির অর্থের দিকে লক্ষ করলেই এর বিরাট গুরুত্ব সহজেই উপলব্ধি করা যায়। তাছাড়া দু‘আটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় পড়তেন। দু’আটিতে গুরুত্বপূর্ণ চারটি জিনিস চাওয়া হয়েছে,প্রথমত, এতে দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় নিরাপত্তা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পরিবারের ক্ষমা এবং সম্পদের নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে, তৃতীয়ত,নিজের গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখার দু‘আ করা হয়েছে, যা আমাদের সম্মানের সাথে জড়িত। এবং চতুর্থত,ভয়-ভীতি সৃষ্টিকারী জিনিস থেকে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে, সুতরাং এটি একটি চমৎকার দু‘আ—এতে কোনো সন্দেহ নেই। দু‘আটি আরো বড়; আমরা তার দুই-তৃতীয়াংশ উল্লেখ করেছি কেবল। তাই প্রত্যেকের উচিত দু‘আটি মুখস্থ করা নেওয়া এবং নিয়মিত পড়া। এটি শুধু সকাল-সন্ধ্যায় নয় বরং নামাজের সিজদায়, সালাম ফেরানোর পূর্বে, লাইলাতুল কদরে এবং অন্য যেকোনো সময় এই গুরুত্বপূর্ণ দু‘আটি পাঠ করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। নামাজের সিজদায় পড়ার নিয়ম হলো: প্রথমে সিজদার তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা”। ৩/৫/৭ বার পড়ে নেবেন, এরপর এই দু‘আটি পড়বেন। এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি সুধাণা রাখবেন। আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ সবার ইলমে আমলে বারাকাহ দান করুনের। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।