হাদিস অস্বীকারকারী কাফের।হাদীস যে মহান আল্লাহর অহী তা বস্ত্তবিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্বারাও প্রমাণিত

মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হ’তে পারে এমন সব বিষয় সম্পর্কে আজ থেকে প্রায় ১৪৫০ বছর পূর্বে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) তার উম্মতকে সতর্ক করেছেন। আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) [মৃত: ৫৮ হি.] হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন,
.
إنه خلق كل إنسان من بني آدم على ستين وثلاثمائة مفصل
.
নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক আদম সন্তানকে ৩৬০টি গ্রন্থি বা জোড়ার উপর সৃষ্টি করেছেন’।(সহীহুল বুখারী হা/ ২৯৮৯, ২৭০৭, ২৮৯১ সহীহ মুসলিম হা/২২২০)

আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে, মানুষের শরীরের ৩৬০টিই জোড়া রয়েছে। একটিও কম বেশি নয়। (বিস্তারিত জানতে দেখুন ড.খলীল আল-আয্যামী, মুখতাসারুস সুন্নাহ আন-নাবাবিইয়াহ ওয়াহইয়ুন (জেদ্দা :দারুল ক্বিবলাহ, ২য় প্রকাশ : ২০০৫খ্রি.পৃষ্ঠা:১৮৬-১৮৭)

আজ থেকে প্রায় ১৪৫০ বছর পূর্বে যখন শরীরবিজ্ঞান নিয়ে মানুষের কাছে কোন তথ্যই ছিল না, সেই সময়ে রাসূল (ﷺ) কীভাবে এই সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক তথ্য জানলেন? এটি প্রমাণ করে যে, হাদীস আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী ব্যতীত কিছুই নয়।
.
অনুরূপভাবে এমনই একটি বিষয় হ’ল পান পাত্রে মাছি পতিত হওয়া। মাছির এক ডানায় রয়েছে রোগ-জীবাণু, অন্য ডানায় রয়েছে তার প্রতিষেধক। আর মাছি যখন কোন পাত্রে পতিত হয় তখন রোগ-জীবাণু বিশিষ্ট ডানা ভারী হওয়ায় তা নিচে থাকে এবং প্রতিষেধক বিশিষ্ট ডানা উপরে থাকে। এমতাবস্থায় মাছিটিকে পানপাত্রে না ডুবিয়ে তুলে ফেলে দিলে ঐ পানীয় পান করার কারণে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হ’তে পারে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন,

إذا وقع الذباب في إناء أحدكم فليغمسه كله، ثم ليطرحه، فإن
في أحد جناحيه شفاء، وفي الآخر داء،

‘যখন তোমাদের কারও কোন খাবার পাত্রে মাছি পড়ে, তখন তাকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিবে, তারপর ফেলে দিবে। কারণ তার এক ডানায় থাকে আরোগ্য, আরেক ডানায় থাকে রোগ’।(সহীহ বুখারী হা/৩৩২০, ৫৭৮২)

এই হাদীসটি বিবেক বিরোধী এবং অযৌক্তিক মনে করে অনেক গবেষক সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় প্রমান হয়েছে,এই তথ্য সম্পূর্ণ সঠিক এবং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। কিং আব্দুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ওয়াজীহ বায়েশরী এই হাদীছের আলোকে মাছিকে নিয়ে কয়েকটি পরীক্ষা চালান। জীবাণুমুক্ত কিছু পাত্রের মাধ্যমে মাছের বাযার থেকে কয়েকটি মাছি ধরে নিয়ে জীবাণুমুক্ত টেস্ট টিউবের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখেন। তারপর নলটি একটি পানির গ্লাসে উপুড় করেন। মাছিগুলো পানিতে পতিত হওয়ার পর উক্ত পানি থেকে কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, সেই পানিতে অসংখ্য জীবাণু রয়েছে। তারপর জীবাণুমুক্ত একটি সূঁচ দিয়ে মাছিকে ঐ পানিতেই ডুবিয়ে দেন। তারপর কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, সেই পানিতে আগের মত আর জীবাণু নেই, বরং কম। তারপর আবার ডুবিয়ে দেন। তারপর কয়েক ফোঁটা পানি নিয়ে আবার পরীক্ষা করেন। এমনিভাবে কয়েক বার পরীক্ষা করে দেখেন যে, যত বার মাছিকে ডুবিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন, ততই জীবাণু কমেছে। অর্থাৎ ড. ওয়াজীহ এটা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, মাছির একটি ডানায় রোগ-জীবাণু রয়েছে এবং অপরটিতে রোগনাশক ঔষধ রয়েছে। (ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃঃ ১৩২-১৩৩ মুখতাছারুস সুন্নাহ আন-নাবাবিইয়াহ ওয়াহইয়ুন, পৃ. ১৯৯-২০১)
.
অনুরূপভাবে আরেকটি বিষয় হলো,কুকুর অপবিত্র প্রাণী।নিজের মল থেকে শুরু করে এমন বস্ত্ত নেই যা, সে ভক্ষণ করে না। এ থেকে শত-সহস্র রোগ-জীবাণু সৃষ্টি হয়। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই রাসূল (ﷺ) কুকুরে মুখ দেয়া পাত্রকে ৭ বার উত্তম রূপে ধৌত করতে বলেছেন এবং একবার মাটি দ্বারা মাজতে বলেছেন। রাসূল (ﷺ) বলেন,

إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِى الإِنَاءِ فَاغْسِلُوْهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ وَعَفِّرُوهُ الثَّامِنَةَ فِى التُّرَابِ،

‘যখন কুকুর কোন পাত্রে মুখ দিবে তখন পাত্রটিকে সাতবার ধৌত করবে এবং অষ্টমবার মাটি দিয়ে মাজবে’। (সহীহ মুসলিম হা/২৭৯ ইবনু মাজাহ হা/৩৬৫; তিরমিযী হা/৯১)

এই হাদীসকে সামনে রেখে লন্ডনের এক ব্যক্তি কিছু দিন পূর্বে পরীক্ষা চালিয়েছেন। তার কল্পনা ছিল, এই হাদীছ থেকে কিছু ত্রুটি বের করবেন। প্রযুক্তির উন্নতির এ যুগে অত্যাধুনিক কিছু কিছু জিনিস রয়েছে যা দিয়ে পরিস্কার করলে হয়তো মাটির প্রয়োজন হবে না। তিনি একটি পাত্রে কিছু খাদ্য রেখে তা কুকুরকে দিলেন। কুকুরটি তা খাওয়ার পর অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন যে, ঐ পাত্রটির মধ্যে অসংখ্য বিষাক্ত জীবাণু রয়েছে। তারপর সাবানসহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে ভাল করে পরিস্কার করার পর আবার উক্ত যন্ত্র দিয়ে দেখেন যে, তাতে জীবাণু রয়েই গেছে। এমনিভাবে বহু বার পরিস্কার করার পরও উক্ত পাত্রটি জীবাণুমুক্ত হয়নি। অবশেষে রাসূল (ﷺ)-এর বাৎলে দেওয়া পদ্ধতি অনুযায়ী মাটি দিয়ে পরিস্কার করার পর দেখেন যে, উক্ত পাত্রটি সম্পূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তার হৃদয় প্রশস্ত হয়ে গেল। তিনি বললেন, এই তত্ত্ব একজন লেখাপড়া না জানা ব্যক্তি থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে প্রকাশ পাওয়া এটাই প্রমাণ করে যে, তিনি তার নিজেরলব্ধ জ্ঞান থেকে বর্ণনা করেননি, বরং মহান করুণাময় সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে অহী-র মাধ্যমে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এই দ্বীন সত্য, এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি স্বপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করলেন। প্রকাশ থাকে যে, মাটির মাঝে এমন একটি পদার্থ রয়েছে, যা কুকুরের লালার বিষাক্ত ক্ষুদ্র জীবাণুকে সমূলে ধ্বংস করতে পারে। কুকুরের লালায় মানব জাতির জন্য ক্ষতিকারক জীবাণু রয়েছে। এই মাটি সেই জীবাণুও ধ্বংস করতে সক্ষম। (ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃঃ ১৩৮-১৩০ নোট আত তাহরীক থেকে)
.
এভাবে মাদকদ্রব্য, যবেহ ব্যতীত অন্য কোন পন্থায় প্রাণী হত্যা করে তার গোশত ভক্ষণ করা, মহাকাশ তত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, মানব সৃষ্টিতত্ত্ব, জিনতত্ত্ব, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ে বহু বৈজ্ঞানিক তথ্য হাদীস থেকে দেয়া যায়, যা ১৫০০ বছর পূর্বে কারও পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। বরং অতি সম্প্রতি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহের মাধ্যমে জানা গেছে। (ড.খলীল আয্যামী তাঁর ‘মুখতাছারুস সুন্নাহ আন-নাবাবিইয়াহ ওয়াহইয়ুন’গ্রন্থে এমন ১৫টি উদাহরণ দিয়েছেন। এছাড়া ড. সালিহ ইবনু আহমাদ রিযা এই বিষয়ে الاعجاز العلمي في السنة النبوية শিরোনামে ২ খন্ডে ১৫৬৮ পৃষ্ঠার একটি বৃহদাকার গ্রন্থ লিখেছেন (বৈরূত: মাকতাবাতুল ওবায়কান, ১ম প্রকাশ: ২০০১খ্রি.)।

সুতরাং এগুলো সম্ভব হ’তে পারে একমাত্র এই কারণে যে, রাসূল (ﷺ) আল্লাহর সত্য নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। হাদীস আল্লাহর পক্ষ থেকেই তাঁর নিকটে অহী হিসাবে প্রেরিত হয়েছিল। যারা বিশুদ্ধ সনদের কোন একটি হাদীস অস্বীকার করে তারা পথভ্রষ্ট কাফের। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: