উত্তর: হজ্ব একটি উত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। এটি ইসলামের পঞ্চখুঁটির অন্যতম। দলীল হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী: “ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সাক্ষ্য দেয়া যে, নেই কোন সত্য উপাস্য শুধু আল্লাহ ছাড়া এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল (বার্তাবাহক)। নামায কায়েম করা। যাকাত প্রদান করা। রমজান মাসে রোযা রাখা। বায়তুল্লাতে হজ্জ আদায় করা।” আল্লাহর কিতাব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস ও উম্মতের ইজমা (ঐকমত্য) এর ভিত্তিতে হজ্জের ফরজিয়ত সাব্যস্ত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে ব্যক্তি কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।”[সূরা আলে ইমরান, ৩: ৯৭]
.
হজ্জের সংজ্ঞা: হজ্জ বলতে যা বুঝায় তা হচ্ছে, নুসুক পালনের উদ্দেশ্য কাবা ঘর তথা বায়তুল্লায়ে হারাম গমন করাকে হজ্ব বলা হয়। নুসুক হচ্ছে- এমন কিছু কথা ও কাজ যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হজ্বের বিবরণে এসেছে। যেমন- বায়তুল্লাহর চারদিকে সাত চক্কর তওয়াফ (প্রদক্ষিণ), সাফা ও মারওয়া নামক পাহাড়দ্বয়ের মাঝে প্রদক্ষিণ, আরাফার ময়দানে অবস্থান, মীনার জমরাতগুলোতে কংকর নিক্ষেপ ইত্যাদি। হজ্বের মধ্যে বান্দার জন্য প্রভূত কল্যাণ রয়েছে। যেমন আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেয়া, গুনাহ মাফ পাওয়া, মুসলমানদের সাথে পরিচিত হওয়া, দ্বীনি হুকুম-আহকামশেখা ইত্যাদি। হজ্ব তিন প্রকার: তামাত্তু, ইফরাদ ও ক্বিরান। হজ্বের মাস হচ্ছে- শাওয়াল, জ্বিলক্বদ, জ্বিলহজ্ব। আর হজ্জ প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য জীবনে একবারই ফরয। কেউ যদি এর বেশি করতে চায় তাহলে বাকীগুলো তার জন্য নফল। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আল-আকরা‘ ইবনে হাসিব (রাঃ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জিজ্ঞেস করেন, يَا رَسُولَ اللَّهِ الْحَجُّ فِي كُلِّ سَنَةٍ أَوْ مَرَّةً وَاحِدَةً قَالَ “ بَلْ مَرَّةً وَاحِدَةً فَمَنِ اسْتَطَاعَ فَتَطَوُّعٌ ” . “ইয়া রাসূলুল্লাহ, হজ্জ কি প্রতিবছর; নাকি একবার মাত্র? তিনি বললেন: একবার মাত্র। যে ব্যক্তি একাধিকবার করবে সেটা নফল।”(সুনানে আবু দাউদ হা/১৭২১; মুসনাদে আহমাদ হা/২৩০৪ ইবনু মাজাহ হা/২৮৮৬; আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন) আর উত্তমতার প্রশ্নে মুসলমান যতবেশি হজ্জ করতে পারে সেটা উত্তম। এমনকি কেউ যদি প্রতিবছর হজ্জ করতে পারে সেটাও ভাল। বেশি বেশি হজ্জ আদায় করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যেমন- আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল: কোন আমল উত্তম। তিনি বললেন: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। জিজ্ঞেস করা হল: এরপর কোনটি? তিনি বললেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হল: এরপর কোনটি? তিনি বললেন: হজ্জে মাবরুর।”(সহিহ বুখারি হা/২৬; ও সহিহ মুসলিম হা/৮৩)
.
হজ্জের সামর্থ্য: আলেমগণ হজ্ব ফরজ হওয়ার যে সমস্ত শর্তগুলো উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত হচ্ছে সামর্থ্য থাকা। এই মর্মে দলিল হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা বলেন:وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا “এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয।[সূরা আলে ইমরান,৩:৯৭] এ আয়াতে কারীমাতে উল্লেখিত সামর্থ্য বলতে শারীরিক সামর্থ্য ও আর্থিক সামর্থ্য উভয়টাকে অন্তর্ভুক্ত করে। শারীরিক সামর্থ্য বলতে বুঝায় শরীর সুস্থ হওয়া এবং বায়তুল্লাহ পর্যন্ত সফরের কষ্ট সইতে সক্ষম হওয়া। আর আর্থিক সামর্থ্য বলতে বুঝায় বায়তুল্লাহতে আসা-যাওয়া করার মত অর্থের মালিক হওয়া। অতএব কোন মুসলিম যখন আর্থিকভাবে এবং শারীরিকভাবে হজ্জ করতে সক্ষম হবে, তখনই তার উপর হজ্জ করা ফরয হবে।
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণকে হজ্জের সামর্থ্য বলতে কী বুঝায়? এমন একটি প্রশ্ন করা হলে জবাবে তারা বলেন,
الحمد لله.الاستطاعة بالنسبة للحج أن يكون صحيح البدن ، وأن يملك من المواصلات ما يصل به إلى بيت الله الحرام من طائرة أو سيارة أو دابة أو أجرة ذلك بحسب حاله ، وأن يملك زاداً يكفيه ذهاباً وإياباً ، على أن يكون ذلك زائداً عن نفقات من تلزمه نفقته حتى يرجع من حجه وأن يكون مع المرأة زوج أو محرم لها في سفرها للحج أو العمرة .
আলহামদুলিল্লাহ,হজ্জের সামর্থ্য বলতে বুঝায় ব্যক্তি শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়া, বায়তুল্লাহ শরিফে পৌঁছানোর মত যানবাহন যেমন- গাড়ী, এরোপ্লেন অথবা সওয়ারী পশুর মালিক হওয়া অথবা ইত্যাদি যানবাহনে ভাড়া দিয়ে চড়ার মত অর্থের মালিক হওয়া, হজ্জ করে ফিরে আসা পর্যন্ত সফরের সম্বল (খাদ্যপানীয়) এর মালিক হওয়া। ব্যক্তির উপর যাদের ভরণপোষণ দেয়া ওয়াজিব হজ্জ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত সময়কালের জন্য তাদের ভরণপোষণ দেয়ার পর উপরোক্ত অর্থ তাঁর কাছে অতিরিক্ত থাকা। আর নারীর ক্ষেত্রে তাঁর স্বামী বা অন্য কোন মাহরাম সাথে থাকা যিনি তাঁর সাথে হজ্জ বা উমরার সফরের সঙ্গি হবেন।(ফাতওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; অধ্যায় কিতাবুল হজ্জ; পৃষ্ঠা: ১৭) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
___________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।