ভূমিকা: ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা-ভাবনা করলে সিয়াম পালনকারীর সাথে রক্ত আদান-প্রদানের সাথে সর্বমোট চারটি বিষয় জড়িত। সেগুলো হল- (১). রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দেওয়া। (২). কারো জীবন রক্ষার্থে রক্তদান করা। (৩). চিকিৎসার্থে রোগীর শরীরের রক্ত নেওয়া। (৪). দুর্ঘটনা জনিত কারণে শরীর থেকে রক্ত বের হওয়া। চারটি মাসয়ালার হুকুম সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
.
(১). চিকিৎসার্থে রক্ত পরীক্ষা করা:
.
শরীরের রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু কিছু রোগীর রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কখনও কখনও দেখা যায় যে, রোগী সিয়াম রেখেছে। এক্ষণে, রক্ত পরীক্ষা করালে কি তা তার সাওমে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ আলেমগণ এবং বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন- সিয়াম থাকা অবস্থায় প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষার জন্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সামান্য পরিমাণ রক্ত নিলে তা রোজাকে প্রভাবিত করে না, এটি শিঙ্গা লাগানোর মত বিবেচিত হবে না। কেননা কোনো কোনো হাদীসে শিঙ্গা লাগালে কেন সাওম নষ্ট হবে, তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে, রোগীর দুর্বলতা বোধ। কিন্তু সামান্য রক্ত নিলে সেই দুর্বলতা সৃষ্টি হয় না। এটি শরীয়ত অনুসারে রোজা ভঙ্গ করার জন্য পরিচিত জিনিসগুলির মতো নয়। (মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি বায, ১৫/২৭৪ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৫০৪০৬)।
.
রোজাদারের রক্ত পরীক্ষা করার হুকুম এবং তাতে রোজা ভেঙ্গে যায় কিনা। উক্ত প্রশ্নের উত্তরে সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, রোজাদারের রক্ত পরীক্ষার জন্য রোজা ভঙ্গ হয় না। যদি ডাক্তার রোগীর কাছ থেকে পরীক্ষা করার জন্য রক্ত নিতে হয় তবে এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে না, কারণ এটি অল্প পরিমাণ রক্ত এবং এটি শরীরে এমনভাবে প্রভাব ফেলে না যেভাবে কাপিং (হিজামা) করে। মূলনীতি হলো যে রোজা বৈধ থাকে এবং তা নষ্ট করা যায় না এমন জিনিসগুলি ছাড়া যেগুলির জন্য শরয়ী প্রমাণ রয়েছে যে তারা রোজাকে প্রভাবিত করে।এমতাবস্থায় এই অল্প পরিমাণ রক্তের কারণে রোজাদারের রোজা ভাঙার কোনো প্রমাণ নেই। (ইমাম উসাইমীন ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম,পৃ. ৪৭৮;)
.
(২). কারো জীবন রক্ষার্থে রক্তদান করা:
.
সাওম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা লাগানোর মাসআলার ওপর স্বেচ্ছায় রক্তদানের এই মাসআলাটি ক্বিয়াস করা যায়। মাসআলা দু’টির মধ্যে হুবহু মিল রয়েছে। কারণ দু’টিতেই শরীর থেকে রক্ত বের করার প্রসঙ্গটি রয়েছে। অবশ্য একটির উদ্দেশ্য চিকিৎসা গ্রহণ এবং অপরটির উদ্দেশ্য অন্যকে সাহায্য। উদ্দেশ্য যাই হোক, মূল বিষয় হচ্ছে, সাওম পালনকারীর দেহ থেকে রক্ত বের হওয়া। পূর্ববর্তী ফকীহগণ সাওম পালনকারীর জন্য শিঙ্গা লাগানোর মাসআলাটি নিয়ে গবেষণা করেছেন। এক্ষেত্রে তাদের তিন ধরণের মত পাওয়া যায় তবে ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম আবু হানীফাহ শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) সহ জমহূর মুহাদ্দিস ফকীহর মতে, শিঙ্গা লাগালে সাওম নষ্ট হবেনা। তাদের দলিল ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসটি। যেমন: যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহরিম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং সায়িম (রোযা রাখা) অবস্থায়ও শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (সহীহ বুখারী হা/১৮২৫, ১৯৩৮, ২৯২৯, ২১০৩, সহীহ মুসলিম হা/১২০২, তিরমিয়ী হা/৭৭৫, ৭৭৬, ৭৭৭, নাসায়ী হা/২৮৪৫, ২৮৪৬, ২৮৪৭, ১৮২৫, ইবনু মাজাহ হা/১৬৮২, ২০৮১, মুসনাদে আহমাদ হা/১৮৫২, ১৯২২, সুনানে দারেমী হা/১৮১৯, ১৯২১, বুলুগুল মারাম, হা/৬৬৫)। অপর বর্ণনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তিনটি বিষয় রোজা ভাঙে না: সিঙ্গা লাগানো, বমি করা এবং স্বপ্নদোষ হওয়া।’’ (তিরমিযি, আস-সুনান: ৭১৯; বাযযার, আল-মুসনাদ: ৫২৮৭; হাদীসটি সহীহ)।
.
উপরোক্ত হাদীসের আলোকে বলা যায়; যদি কোন রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হয় আর সেটা যদি ইফতারের পর দেওয়া হলে কোন সমস্যা না হয়; তাহলে দিনে না দিয়ে রাতে দেওয়াটাই অধিকতর উত্তম। এর ফলে সে মতভেদের বেড়াজাল থেকে নিষ্কৃতি পাবে। রক্ত বের করার পর সে দৈহিক দুর্বলতার শিকার হবে না। কিন্তু যদি অবস্থা খুবই বিপদজনক হয়, আর সে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ধৈর্যধারণ করতে না পারে এবং ডাক্তারেরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির রক্ত পেলে রোগী উপকৃত হবে এবং তার প্রয়োজন পূরণ হবে, সেক্ষেত্রে রক্তদান করা জায়েয। এতে সিয়াম ভঙ্গ হবেনা ইনশাআল্লাহ। কেননা দলিলের আলোকে সর্বাধিক সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য মত এই যে- দেহ থেকে দূষিত রক্ত বের করলে বা কাউকে রক্ত দান করলে রোযা নষ্ট হবে না; যে বের করাবে তার এবং যে বের করে দেবে তারও নয়। (বিস্তারিত দষ্টব্য ইবনে হাযম মুহাল্লা ৬/২০৪-২০৫; ইমাম আলবানী রাহিমাহুল্লাহ, ইরওয়াউল গালীল, ৪/৭৪, ইমাম উবাইদুল্লাহ মুবারকপুরী রাহিমাহুল্লাহ, মিশকাতুল মাসাবীহ হা/২০০২ এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
.
(৩). চিকিৎসার্থে রোগীর শরীরের রক্ত নেওয়া:
.
স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। আর শরীয়তের দৃষ্টিতে রোযা-বিনষ্টকারী কিছু বিষয় আছে যেগুলো শরীরে প্রবেশ করানোর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন- যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত। এটি দুইটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। (১). যদি রোযাদারের শরীরে রক্ত পুশ করা হয়। যেমন- আহত হয়ে রক্তক্ষরণের কারণে কারো শরীরে যদি রক্ত পুশ করা হয়; তাহলে সে ব্যক্তির রোযা ভেঙ্গে যাবে। যেহেতু পানাহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে— রক্ত তৈরী। (২). খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ইনজেকশন পুশ করলে সিয়াম ভেঙে যাবে। কারণ এমন ইনজেকশন নিলে পানাহারের প্রয়োজন হয় না। (শাইখ উসাইমীন ‘মাজালিসু শারহি রমাদান’, পৃষ্ঠা- ৭০)। তবে, যেসব ইনজেকশন পানাহারের স্থলাভিষিক্ত নয়; বরং চিকিৎসার জন্য দেয়া হয়, উদাহরণতঃ ইনসুলিন, পেনেসিলিন কিংবা শরীর চাঙ্গা করার জন্য দেয়া হয় কিংবা টীকা হিসেবে দেয়া হয় এগুলো রোযা ভঙ্গ করবে না; চাই এসব ইনজেকশন মাংশপেশীতে দেয়া হোক কিংবা শিরাতে দেয়া হোক। (শাইখ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম এর ফাতওয়া খন্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৮৯)
.
জেনে রাখা ভালো যে চার মাজহাবসহ অধিকাংশ আলেমের মতে- একজন রোগীর জন্য রমজান মাসে রোযা ভঙ্গ করা জায়েয; যদি তার রোগ তীব্র হয়। রোগের তীব্রতার অর্থ হলো: (১). রোযার কারণে যদি রোগ বেড়ে যায়। (২). রোযার কারণে যদি আরোগ্য লাভে বিলম্ব হয়। (৩). রোযার কারণে যদি খুব বেশি কষ্ট হয় যদিওবা তার রোগ বেড়ে না যায় বা সুস্থতা দেরিতে না হয়। (৪). এর সাথে আলেমগণ আরও যোগ করেছেন এমন কোন ব্যক্তি সিয়াম পালনের কারণে যার অসুস্থ হয়ে পড়ার আশংকা আছে। হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম,ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন; “যে রোগ রোযা ভঙ্গকরা বৈধ করে তা হলো তীব্র রোগ; যা রোযা পালনের কারণে বেড়ে যায় অথবা সে রোগ থেকে আরোগ্য লাভ বিলম্বিত হওয়ার আশংকা থাকে।” একবার ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞেস করা হলো, একজন রোগী কখন রোযা ভঙ্গ করতে পারবে? তিনি বললেন, “যদি সে রোযা পালন করতেনা পারে।” তাঁকে বলা হল; “যেমন জ্বর?” তিনি বললেন- জ্বরের চেয়ে কঠিনতর কোন রোগ আছে কি!…আর যে সুস্থ ব্যক্তি রোযা রাখলে তার রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হয় রোযা ভাঙ্গার ক্ষেত্রে তার হুকুম ঐ অসুস্থ ব্যক্তির ন্যায় রোযা রাখলে যার রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। কেননা সে রোগীর জন্য রোযা ভঙ্গ করা এ কারণে বৈধ করা হয়েছে যে রোযা রাখলে তার রোগ বেড়ে যেতে পারে, রোগ বিলম্বে সারতে পারে। অনুরূপভাবে নতুন কোন রোগ সৃষ্টি হওয়াও একই অর্থবোধক।” (ইবনু কুদামা,আল-মুগনী খন্ড:৪ পৃষ্ঠা:৪০৩)
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন; “যে রোগীর রোগ মুক্তির আশা করা যায়, কিন্তু তিনি রোযা পালনে অক্ষম এক্ষেত্রে রোযা পালন করা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়….। যদি রোযার কারণে রোগীর কষ্ট হয় সেক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য। রোযা ভঙ্গ করার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের অক্ষমতা শর্ত নয়। বরং আমাদের আলেমদের অনেকে বলেছেন; “রোযা ভঙ্গকরার ক্ষেত্রে শর্ত হলো রোযার কারণে এমন কষ্ট হওয়া যা সহ্য করা কষ্টসাধ্য।” (ইমাম নববী আল-মাজমূ খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:২৬১)। পাশাপাশি এটিও জেনে রাখা ভালো যে, রোগ যদি সিয়াম পালনে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে তাহলে সেই রোগের জন্য সিয়াম ভঙ্গ করা জায়েজ নয় এটি জমহুর ওলামাদের মত। ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, হালকা রোগ যার কারণে বিশেষ কোন কষ্ট হয় না সে ক্ষেত্রে রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়। এ ব্যাপারে আমাদের আলেমদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই। (ইমাম নববী আল-মাজমূ খন্ড:৬; পৃষ্ঠা: ২৬১)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, “রোযা পালনের কারণে যে রোগীর উপর শারীরিক কোন প্রভাব পড়ে না;,০ যেমন- হালকা সর্দি, হালকা মাথাব্যথা, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদির ক্ষেত্রে রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়। যদিও আলেমগণের কেউ কেউ নিম্নোক্ত আয়াতের দলীলের ভিত্তিতে বলেছেন যে- তার জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয। আল্লাহ বলেছেন “আর কেউ অসুস্থ থাকলে…” (সূরা বাক্বারাহ, ২: ১৮৫)। তবে আমরা বলবো- এই হুকুমটি একটি ইল্লত (কারণ) এর সাথে সম্পৃক্ত। আর তা হলো রোযা ভঙ্গ করাটা রোগীর জন্য বেশি আরামদায়ক হওয়া। যদি রোযা রাখার কারণে রোগীর উপর শারীরিক কোন প্রভাব না পড়ে তবে তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়। বরং তার উপর রোযা রাখা ওয়াজিব।(আশ্-শারহুলমুমতি; ৬/৩৫২)
.
(৪). দুর্ঘটনা জনিত কারণে শরীর থেকে রক্ত বের হওয়া:
.
কোন ব্যক্তির অনিচ্ছায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে; যেমন: কোন এক্সিডেন্ট বা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে,নাক থেকে কিংবা শরীরের যে কোন স্থানের ক্ষত থেকে রক্ত বের হলে এমন ব্যক্তির রোযা সহীহ। এমনকি যদি অনেক রক্ত বের হয় তবুও। কিন্তু ব্যক্তির অনিচ্ছায় বের হওয়া রক্তের পরিমাণ যদি বেশি হয় যার ফলে সে দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে তার জন্য রোযা ভেঙ্গে ফেলা এবং এর বদলে পরবর্তীতে উক্ত সিয়ামটির কাযা পালন করা জায়েয হবে। বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ,ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, কোন ব্যক্তির শরীর থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে রক্ত বের হলে যেমন দুর্ঘটনা বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা শরীরের কোনো অংশে আঘাত লাগলে রক্তের পরিমাণ বেশি হলেও তার রোজা বৈধ।(শাইখ উসাইমীনের ফাতওয়ার সারাংশ,দেখুন ফাতাওয়া ইসলামিয়া,খন্ড:২ পৃষ্ঠা:১৩২)
.
কোন রোযাদার যদি রমযান মাসের দীর্ঘ ২৮ দিন নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোগে আক্রান্ত হয় এর হুকুম কী? এবং ভুলবশত দাঁতের মাঝখান থেকে রক্ত বের হলে কি রোজা ভঙ্গ হবে নাকি? উক্ত প্রশ্ন সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ বলেছেন, আপনি যা উল্লেখ করেছেন যদি তেমনি ঘটে থাকে তাহলে আপনার রোযা শুদ্ধ। কেননা আপনার ইচ্ছার বাইরে আপনি নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সুতরাং এ রোগের কারণে আপনার উপর রোযা ভাঙ্গার হুকুম দেয়া হবে না। এর প্রমাণ পাওয়া যায় শরয়ী বিধান সহজ হওয়ার দলিল থেকে। যেমন; আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “আল্লাহ্ কারো উপর এমন কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না যা তার সাধ্যাতীত। (সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৮৬)। আল্লাহ্ আরও বলেন, “আল্লাহ্ তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা করতে চান না।”(সূরা মায়িদাহ,৫/০৬ ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা:২৬৪-২৬৭) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।