রচনা ও ভাষান্তরঃ আবূ মুবাশশির আহমাদ বিন আব্দুত তাওয়াব আনসারী (আহমাদুল্লাহ সৈয়দপুরী)
সম্পাদনাঃ আবু হিশাম মুহাম্মাদ ফুয়াদ
প্রশ্নঃ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ’ তথা ‘কালেমা ত্বাইয়েবা’ বলা কি শির্ক?
জবাব : না। এটা শির্ক নয়। বরং একটি তাওহীদী বাক্য। জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে আমাদের অনেকেই এই বাক্যটিকে শির্ক রূপে অনুধাবন করেছেন যা দুঃখজনক। নিম্নে আমরা কতিপয় দলীল পেশ করলাম যা আমাদের মাঝে বিদ্যমান ভুল ধারণার অপনোদন করবে ইনশা আল্লাহ।
দলীল-১ : ইমাম মুসলিম (রহঃ) রচিত বিশ্ববিখ্যাত হাদীছ গ্রন্থ ‘ছহীহ মুসলিম’-এ কিতাবুল ঈমানের অষ্টম অনুচ্ছেদে এই কালিমাটির উল্লেখ আছে-
بَابُ الْأَمْرِ بِقِتَالِ النَّاسِ حَتَّى يَقُولُوا: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ
লোকদের সাথে ততক্ষণ যুদ্ধ করতে থাকা যতক্ষণ না তারা বলে যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’[১]
দলীল-২ : ইমাম ত্বাবারাণী (রহঃ) লিখেছেন,
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘কালোমায়ে তাক্বওয়া হ’ল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ’।[২]
দলীল-৩ : ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) লিখেছেন,
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ , رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَخْبَرَهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” أَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى فِي كِتَابِهِ فَذَكَرَ قَوْمًا اسْتَكْبَرُوا فَقَالَ: {إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ} وَقَالَ تَعَالَى: {إِذْ جَعَلَ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي قُلُوبِهِمُ الْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَنْزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَى رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ التَّقْوَى وَكَانُوا أَحَقَّ بِهَا وَأَهْلَهَا} وَهِيَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ ” اسْتَكْبَرَ عَنْهَا الْمُشْرِكُونَ يَوْمَ الْحُدَيْبِيَةِ يَوْمَ كَاتَبَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَضِيَّةِ الْمُدَّةِ
ইমাম আবূ বকর আহমাদ ইবনুল হুসায়েন আল-বায়হাক্বী রহেমাহুল্লাহ (মৃঃ ৪৫৪ হিঃ) বলেছেন, আমাদেরকে আবূ আব্দুল্লাহ আল-হাফেয (ইমাম হাকেম, আল-মুসতাদরাক-এর প্রণেতা) সংবাদ প্রদান করেছেন…….অবশ্যই আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হ’তে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে নাযিল করেছেন এবং একটি গোত্রের উল্লেখ করেছেন যারা অহংকার করেছিল। তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) বলেছেন, নিশ্চয়ই তাদেরকে যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা হ’ত, তখন তারা অহংকার করত [৩]। এবং আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, যখন কাফেরগণ তাদের অন্তরে জাহেলিয়াতের জিদ রেখেছিল, তখন আল্লাহ তার শান্তি তার রাসূল এবং মুমিনদের উপরে নাযিল করেছিলেন। আর তাদের জন্য ‘কালেমায়ে তাক্বওয়া’-কে অপরিহার্য করে দিয়েছিলেন। আর তারা এর অধিক হক্বদার এবং গ্রহণকারী ছিলেন [৪]। আর সেটি (কালেমায়ে তাক্বওয়া) হ’ল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ’। হুদায়বিয়ার সন্ধির দিনে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেয়াদের (নির্দিষ্ট করার জন্য) ফায়ছালাতে মুশরিকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হ’লেন তখন মুশরিকগণ এই কালেমা হতে অহংকার করেছিল [৫]।
মুহাক্কিক্ব শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ (রহঃ) এই হাদীছটির সনদকে ‘হাসান লি-যাতিহী’ বলেছেন। হাসান লি-যাতিহী হাদীছ সনদের দৃষ্টিকোণ থেকে ছহীহ হাদীছের সামান্য নিম্ন স্তরে থাকে। তবে দলীল গ্রহণে এটি সহীহ হাদীছের সমপর্যায়ের হয়ে থাকে (যদি এর কোন বিপরীত সহীহ হাদীছ না থাকে)। মুহতারাম পাঠক এবং পাঠিকাদের উপকারার্থে আমরা শায়খের পুরো বক্তব্যটুকু প্রশ্নত্তোরসহ হুবহু অনুবাদ করে দিলাম-
প্রশ্নঃ কালোমায়ে ত্বাইয়েবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর প্রমাণ কোন সহীহ হাদীছে পাওয়া যায় কি?
জবাব : (বায়হাক্বীর উপরোল্লিখিত হাদীছটি বর্ণনা করার পরে শায়খ বলেন) এই রেওয়াতটির সনদ হাসান লি-যাতিহী।
হাকেম, আছম, মুহাম্মাদ বিন ইসহাক্ব আস-সাগানী, যুহরী এবং সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব সবাই উচ্চ স্তরের আস্থাভাজন রাবী।
রাবী-১ : ইয়াহ্ইয়া বিন ছালেহ উহাযী সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিমের রাবী। এবং জমহুর তথা অধিকাংশ মুহাদ্দিসদের নিকটে সিক্বাহ (আস্থাভাজন) ছিলেন। ইমাম আবূ হাতিম আর-রাযী বলেছেন, صدوق তিনি সত্যবাদী। ইমাম ইয়াহ্ইয়া বিন মাঈন বলেছেন, ثقة তিনি সিক্বাহ। [৬]।
ইমাম বুখারী বলেছেন, ويحي ثقة এবং ইয়াহইয়া হ’লেন সিক্বাহ রাবী [৭]।
‘ইয়াহ্ইয়া বিন ছালেহ’-এর বিরুদ্ধে নিম্নোক্ত আলেমদের ‘জারহ’ তথা সমালোচনামূলক বক্তব্য পাওয়া যায়- (১) আহমাদ বিন হাম্বল। (২) ইমাম ইসহাক্ব বিন মানছূর। (৩) ইমাম উক্বায়লী। (৪) ইমাম আবূ আহমাদ আল-হাকেম।
ইমাম আহমাদের সমালোচনার ভিত্তি হ’লেন একজন ‘মাজহূল’ ব্যক্তি (দেখুন : উক্বায়লী, আয-যু‘আফা ৪/৪০৮)।
এই সমালোচনাটি ইমাম আহমাদের তাওসিক্বের সাথে সাংঘর্ষিক।
আবূ যুর‘আহ আদ-দিমাশক্বী বলেছেন, لم يقل يعني أحمد بن حنبل في يحيى بن صالح إلا خيرا আহমাদ বিন হাম্বল ইয়াহ্ইয়া বিন ছালেহ-সম্পর্কে স্রেফ ভালই বলতেন[৮]।
ইসহাক্ব বিন মানছূরের ‘জারহ’-এর বর্ণনাকারী হ’লেন আব্দুল্লাহ বিন আলী। (উক্বায়লী, আয-যু‘আফা ৪/৪০৯)।
আব্দুল্লাহ বিন আলীর সিক্বাহ (আস্থাভাজন) এবং সদূক্ব (সত্যবাদী) হওয়া প্রমাণিত নয়। সুতরাং এই ‘জারহ’ তথা সমালোচনামূলক বক্তব্যটি প্রমাণিতই নয়।
ইমাম উক্বায়লীর সমালোচনাটি ‘আয-যু‘আফা আল-কাবীর’ গ্রন্থে পাওয়া যায় নি। তবে ‘তারীখে দিমাশক্ব’ গ্রন্থে (৬৮/৭৯) এই সমালোচনাসূচক বক্তব্যটি অবশ্যই বিদ্যমান আছে। কিন্তু এই ‘জারহ’-এর বর্ণনাকারী ইউসূফ বিন আহমাদ আস্থাভাজন নন (মাজহূলুল হাল)। সুতরাং এই সমালোচনাটিও প্রমাণিত নয়।
আবূ আহমাদ হাকেম (এবং আহমাদ, ইসহাক্ব বিন মানছূর এবং উক্বায়লীর বিশুদ্ধতার শর্তে)-এর ‘জারহ’ জমহুর মুহাদ্দিছদের তাওসিক্বের মোকাবেলায় প্রত্যাখ্যাত। হাফেয যাহাবী বলেছেন, ثقة في نفسه تكلم فيه لرايه “তিনি স্বয়ং সিক্বাহ”। কিন্তু তার (ভুল) অভিমতের কারণে (আবূ আহমাদ হাকেম এবং অন্যদের পক্ষ্য হ’তে) তাতে সমালোচনা করা হয়েছে[৯]।
হাফেয ইবনে হাজার বলেছেন, “খালেদ (বিন মাখলাদ) এবং ইয়াহ্ইয়া বিন ছালেহ উভয়ই সিক্বাহ” [১০]।
এবং তিনি বলেছেন, صدوق من اهل الراي তিনি আহলে রায়দের মধ্য হ’তে একজন সত্যবাদী (তাক্বরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৭৫৬৮)। ‘তাক্বরীবুত তাহযীব’-এর মুহাক্কিক্বগণ লিখেছেন, بل ثقة বরং তিনি ছিক্বাহ ছিলেন (আত-তাহরীর ৪/৮৮)।
তাহক্বীক্বের সারাংশ : ইয়াহ্ইয়া বিন সালেহ সিক্বাহ এবং সহীহুল হাদীস বা সহীহ হাদীস বর্ণনাকারী।
রাবী-২ : ইসহাক্ব বিন ইয়াহইয়া বিন আলক্বামা আল-কালবী আল-হিমসী ছহীহ বুখারীর (সাক্ষীমূলক বর্ণনাসমূহ বা শাওয়াহেদ-এর) রাবী। [১১] ।
হাফেয ইবনে হিব্বান তাকে ‘কিতাবুছ ছিক্বাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (৬/৪৯)। এবং ‘ছহীহ ইবনে হিব্বান’ গ্রন্থে তার থেকে বর্ণনা গ্রহণ করেছেন (আল-ইহসান হা/৬০৭৪)। দারাকুৎনী বলেছেন, أَحَادِيثه صَالِحَة وَالْبُخَارِيّ يستشهده وَلَا يعتمده فِي الْأُصُول তার হাদীছগুলি ‘ছালেহ’। এবং বুখারী তার দ্বারা সাক্ষীমূলক বর্ণনা করেন। এবং উছূলের মধ্যে তার উপর নির্ভর করেন না। [১২] ।
সতর্কীকরণ : ইমাম বুখারী যার থেকে ‘শাওয়াহেদ’-এ যেই রাবী থেকে রেওয়াত গ্রহণ করতেন, তিনি তার নিকটে ছিক্বাহ হ’তেন (তবে কোন বিশেষ রাবীর তাখছীছ বা বিশেষভাবে যঈফ হওয়া প্রমাণিত হওয়া ব্যতিত)। [১৩] ।
আবূ আওয়ানা ‘সহীহ আবী আওয়ানা’ গ্রন্থে (আল-মুসতাখরাজ আলা ছহীহ মুসলিম) তার থেকে রেওয়াত গ্রহণ করেছেন (২/২৯৩)।
হাফেয ইবনে হাজার বলেছেন, صدوق قيل انه قتل اباه তিনি সত্যবাদী। বলা হয়, তিনি তার পিতাকে হত্যা করেছেন (তাক্বরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৩৯১)।
পিতাকে হত্যা করার ঘটনাটি ‘তাহযীবুল কামাল’ (মুআস্সাসাতুর রিসালাহ ১/২০২) গ্রন্থে অসম্পূর্ণ সনদ ‘ابو عوانة الاسفرائني عن ابي بكر الجذامي عن ابن عوف قال يقال ’ দ্বারা বর্ণিত আছে।
এই ঘটনাটি কতিপয় কারণে প্রত্যাখ্যাত-
(১) আবূ আওয়ানা পর্যন্ত সনদটি গায়েব।
(২) আবূ বকর আল-জুযামী হ’লেন অজ্ঞাত ব্যক্তি।
(৩) ‘ يقال ’ (বলা হয়) এর উক্তিকারী অজ্ঞাত রয়েছেন। ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থের লেখক (হাফেয মিয্যী) কোন সনদ ব্যতিরেকেই মুহাম্মাদ বিন ইয়াহ্ইয়া আয-যুহলী (রহঃ) হ’তে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ইসহাক্ব বিন ইয়াহ্ইয়াকে ‘ত্বাবাক্বায়ে ছানিয়া’র মধ্যে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,
مجهول، لم أعلم له رواية غير يحيى بْن صالح الوحاظي، فإنه أخرج إلي له أجزاء من حديث الزُّهْرِيّ، فوجدتها مقاربة، فلم أكتب منها إلا شيئا يسيرا
তিনি মাজহূল। আমার জানা মতে ইয়াহ্ইয়া বিন ছালেহ আল-উহাযী ব্যতিত আর কেউই তার থেকে বর্ণনা করেন নি। তিনি আমার সম্মুখে তার যুহরী হ’তে বর্ণিত হাদীছসমূহ থেকে ‘আজযা’ পেশ করেছেন। তখন আমি দেখেছি যে, এই বর্ণনাটি ‘মুক্বারাব’ (ছহীহ, গ্রহণযোগ্য এবং ছিক্বাহ রাবীদের কাছাকাছি) হয়েছে। আমি তার থেকে সামান্য রেওয়াত লিপিবদ্ধ করেছি (১/২০২)।
হাফেয আবূ বকর মুহাম্মাদ বিন মূসা আল-হাযিমী (মৃঃ ৫৯১ হিঃ) ইমাম যুহরীর ছাত্রদেরকে ‘ত্বাবাক্বায়ে ছানিয়া’ সম্পর্কে বলেছেন যে, তারা মুসলিমের শর্তের উপরে আছেন [১৪]।
প্রতীয়মান হ’ল যে, এই রাবী ইমাম ইয়াহ্ইয়া আয-যুহলীর নিকটে মাজহূল হওয়ার সাথে আস্থাভাজন, সত্যবাদী এবং মুক্বারিবুল হাদীছ (!)। অন্য কথায়, এই সমালোচনাটি জমহুর মুহাদ্দিছদের মোকাবেলায় প্রত্যাখ্যাত।
তাহক্বীক্বের সারাংশ : ইসহাক্ব বিন ইয়াহইয়া আল-কালবী ‘হাসানুল হাদীস’ তথা হাসান হাদীছ বর্ণনাকারী।
জ্ঞাতব্য : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর এই রেওয়াতটিই শু‘আইব বিন আবী হামযা عن الزهري عن سعيد بن المسيب عن ابي هريرة ‘যুহরী থেকে, তিনি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব হ’তে, তিনি আবূ হুরায়রা হতে’ সনদে বর্ণনা করেছেন (ইবনু মান্দাহ, কিতাবুল ঈমান হা/৯৯, ১/৩৫৯, এর সনদ ‘শু‘আইব বিন আবী হামযাহ’ পর্যন্ত সহীহ)। এই সাক্ষীমূলক বর্ণনাটির দ্বারা ইসহাক্ব বিন ইয়াহইয়ার রেওয়াতটি আরো শক্তিশালী হয়ে যায়। আল-হামদুলিল্লাহ।
দ্বিতীয় দলীল : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ (বাক্যটি বিশুদ্ধ হওয়ার) -এর পক্ষ্যে মুসলমানদের ইজমা আছে। হাফেয ইবনে হাযম লিখেছেন, فَهَذَا إجْمَاعٌ صَحِيحٌ، كَالْإِجْمَاعِ عَلَى قَوْلِ: لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ অতএব এই ইজমাটি ছহীহ। যেমনটি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ-এর উপর আছে [১৫] ।
হাফেয ইবনে হাযম আরো লিখেন, وَكَذَلِكَ مَا اتّفق عَلَيْهِ جَمِيع أهل الْإِسْلَام بِلَا خلاف من أحد مِنْهُم من تلقين موتاهم لَا إِلَه إِلَّا الله مُحَمَّد رَسُول الله আর এভাবেই সমস্ত আহলে ইসলাম কোন রকম মতানৈক্য ছাড়াই এর উপর একমত আছেন যে, মৃত্যুপথ যাত্রীকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ-এর ‘তালক্বীন’ দেয়া উচিৎ।[১৬]।
প্রতীয়মান হ’ল যে, ‘কালোমায়ে ইখলাছ’ : কালোমায়ে তাইয়েবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ’ এর বিশুদ্ধ হওয়া ছহীহ হাদীছ এবং ইজমা দ্বারা প্রমাণিত আছে। ওয়াল-হামদুল্লিাহি ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা নাবিইয়িহি ওয়া সাল্লাম।
সতর্কীকরণ : “মুফতী” মুহাম্মাদ ইসমাঈল তূরূ দেওবন্দী ‘ষাষ কালমে’ (ছয়টি কালেমা) এর অধীনে লিখেছেন, কালিমা ত্বাইয়েবাহ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ’ (অনুবাদ) নেই কোন মা‘বূদ আল্লাহ ব্যতিত। এবং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল (বুখারী ও মুসলিম)” [১৭]।
এই পূর্ণাঙ্গ কালিমাটি না সহীহ বুখারীর কোন হাদীসে লেখা হয়েছে আর না সহীহ মুসলিমের কোন হাদীসে এভাবে বিদ্যমান আছে। মুফতী বনে যাওয়া আলেমদেরকে নিজেদের লেখনীতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এবং ভুল উদ্ধৃতি হ’তে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে।
অমা আলায়না ইল্লাল বালাগ। [১৮]। (১৬ই ফেব্রুয়ারী, ২০০৭ইং)। “”
শেষ কথা, এর পক্ষে আরো দলীল পেশ করা যায়। তবে আমরা আশা করছি, এটুকুই হক পিপাসুদের পিপাসা মেটাতে সক্ষম হবে ইনশা আল্লাহ। সেই সাথে যারা ভ্রান্তিতে ডুবে আছেন তাদের জন্যও আলোকবর্তিকা হবে। এবং তাদেরকে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন আক্বীদা হ’তে টেনে দিবাকরের ন্যায় উদ্ভাসিত, মসৃণ পথের সন্ধান দিবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াহ দান করুন। আমীন।
পাদটীকা
[১] সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, অধ্যায়-১, অনুচ্ছেদ-৮, ১/৫১, (মাকতাবা শামেলা) ২০ নং হাদীছের পূর্বে, ফুয়াদ আব্দুল বাক্বীর হাদীছ নং ৩২; সহীহ মুসলিম খন্ড-১, পৃঃ ৬২, আহলেহাদীস লাইব্রেরী, ঢাকা হতে প্রকাশিত, প্রথম প্রকাশ : নভেম্বর ২০০২ইং।
[২] ইমাম ত্বাবারাণী, আদ-দু‘আ, হাদিসঃ ১৬১৮
[৩] সূরা আছ-ছফ্ফাত, আয়াত-৩৫
[৪] সূরা আল-ফাৎহ, আয়াত-২৬
[৫] বায়হাক্বী, আল-আসমা ওয়াছ সিফাত;হাদিসঃ ১৯৫
[৬] ইবনে আবী হাতিম, আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল ৯/১৫৮, সনদ সহীহ
[৭] কিতাবুয যুআফা আছ-ছাগীর, রাবী নং ১৪৫, হিন্দী ছাপা
[৮] ইবনে আসাকির, তারীখে দিমাশক্ব ৬৮/৭৮, সনদ সহীহ
[৯] মা‘রিফাতুর রুওয়াত আল-মুতাকাল্লাম ফীহিম বিমা লা য়ূজিবুর রাদ্দ, রাবী নং ৩৬৭
[১০] ফাৎহুল বারী ৯/৫২৪, হা/৫৩৭৮-এর আলোচনা, ‘খাদ্য’ অধ্যায়, ‘নিকটবর্তী খাদ্য হ’তে খাওয়া’ অনুচ্ছেদ
[১১] দেখুন : ছহীহুল বুখারী হা/৬৮২, ১৩৫৫, ৩২৯৯, ৩৪৪৩, ৩৯২৭, ৬৬৪৭, ৭০০০, ৭১৭১, ৭৩৮২
[১২] সুওয়ালাতুল হাকেম লিদ-দারাকুৎনী, ক্রমিক নং ২৮০
[১৩] দেখুন : মুহাম্মাদ বিন ত্বাহের আল-মাক্বদেসী, শুরূতুল আয়িম্মাতিস সিত্তাহ পৃঃ ১৮, অন্য সংস্করণ পৃঃ ১৪
[১৪] শুরূতুল আয়িম্মাতিস সিত্তাহ পৃঃ ৫৭
[১৫] আল-মুহাল্লা ১০/৪২৩, আল-আইন, মাসআলা-৩০২৫
[১৬] আল-ফাছলু ফিল মিলালি ওয়াল আহওয়া-ই ওয়ান নিহাল ১/১৬২, ‘আর-রাদ্দু আলা মান যা‘আমা আন্নাল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম লায়সূ আম্বিয়া আল-ইয়াওম’
[১৭] মুখতাসার নিসাব পৃঃ ২৪, প্রকাশ : ২০০৫ইং, দারুল ইফতা জামে‘আ ইসলামিয়া, সদর কামরান মার্কেট, রাওয়াল পিন্ডি
[১৮] ফাতাওয়া ইলমিইয়া ১/৭৫-৮০
স্বত্বাধিকারী © www.darhadith.com