প্রশ্ন: রাসূল (ﷺ) এর জন্ম-মৃত্যুর সঠিক তারিখ কোনটি?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) এর জন্ম এবং মৃত্যুর তারিখ কোনটি? রাসূল (ﷺ) এর জন্ম সংশ্লিষ্ট সমাজে প্রচলিত কিছু দলিল বিহীন কথা নিয়ে আজ আলোচনা করব ইন শাহ্ আল্লাহ।
ভূমিকা: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহা মানব মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আগমনে বিশ্ববাসী পেয়েছে সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও আলোর সন্ধান। তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে দেখিয়েছে মুক্তি ও কল্যাণের পথ। তাঁর দর্শনতন্ত্রের মূলমন্ত্র ছিল হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক্ব আদায় করা ও হাক্কুল ইবাদ বা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কর্তব্য পালন করা। রাসূল (ﷺ) এর জীবনদর্শন কোনো স্বতঃস্ফূর্ত কর্ম নয়; বরং আল্লাহপাক প্রদত্ত ঐশীবাণীরই বাস্তব রূপায়ণ। কেবল মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর মহান কর্মের গুরুদায়িত্ব সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। তিনি একাধারে পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক মহাবিপ্লবের মাধ্যমে রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছিলেন। এসব দায়িত্বের মূলে ছিল আল্লাহ তা‘আলার প্রতি আত্মসমর্পণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধানকে প্রতিষ্ঠিত করা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সমস্ত বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, وَمَا اَرْسَلْنَاكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِيْنَ ‘হে নবী! আমি তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মহান চরিত্রের অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ ‘তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা কালাম: ৪)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমস্ত মানুষের মাঝে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেন, اِنَّمَا بُعِثْتُ لِاُتَمِّمَ صَالِحَ الْاَخْلَاقِ ‘নিশ্চয়ই আমি প্রেরিত হয়েছি উত্তম চরিত্রসমূহকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য।’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯৫২, ৮৯৩৯). পৃথিবীতে সর্বাধিক চর্চা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে নিয়ে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ ‘আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।’ (সূরা ইনশিরাহ: ৪)।
.
পৃথিবীর ইতিহাসে যত মানুষ এসেছে তাদের মধ্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ)। বিশ্বের বহু খ্যাতিমান পুরুষ মুহাম্মাদ (ﷺ) এর জীবনী নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এককথায় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, তিনি একমাত্র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক। পৃথিবীতে তাঁর অবদানের কোনো বিকল্প নেই। তিনি যে বার্তা নিয়ে এ ধরায় প্রেরিত হয়েছিলেন, এটিই শ্রেষ্ঠ বার্তা, মানবের জন্য চির কল্যাণকর গাইডলাইন। এই গাইডলাইনের মধ্যেই বিশ্বমানবতার শান্তি নিহিত। এটি অস্বীকার করার কারও কোনো সুযোগ নেই। আর সেই রাসূল (ﷺ) এর জন্মের দিন ও মাস নির্দিষ্ট করা নিয়ে সীরাত প্রণেতা ও ঐতিহাসিকগণ মতানৈক্য করেছেন। এ মতানৈক্যের যৌক্তিক কারণও রয়েছে। যেহেতু কারও জানা ছিল না যে, এ নবজাতক ভবিষ্যতে বড় কিছু হবে। অন্য নবজাতকের জন্মকে যেভাবে নেওয়া হতো, তাঁর জন্মকেও সেভাবে নেওয়া হয়েছিল। এজন্য কেউ রাসূল ( ﷺ) এর জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করেননি। ড. মুহাম্মাদ তাইয়্যেব আন- নাজ্জার (রাহি.) বলেন, ‘সম্ভবত এর রহস্য হলো, যখন তিনি জন্মগ্রহণ করেন, তখন তার থেকে কেউ এমন বিপদ আশঙ্কা করেনি। এজন্যই জন্মলগ্ন থেকে নবুঅত প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত সময়ে আলোচনায় আসেননি। ৪০ বছর বয়সে যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে রিসালাতের দাওয়াত পৌঁছানোর নির্দেশ প্রদান করেন, তখন থেকে মানুষ এ নবী সংক্রান্ত তাদের স্মৃতিতে গেঁথে থাকা ঘটনাগুলো স্মরণ করতে থাকে এবং একে অপরকে তাঁর জীবনের খুঁটিনাটি সব ইতিহাস জিজ্ঞেস করতে থাকে। এ বিষয়ে তাদেরকে অনেকটা সমৃদ্ধ করেছে বুঝবান হওয়ার পর থেকে নিজের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বর্ণিত যে ঘটনাগুলো তিনি পার করেছেন অথবা তাঁর উপর দিয়ে পার হয়েছে। অনুরূপভাবে তার সাহাবীগণের বর্ণনা ও এসব ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের বর্ণনা। এভাবে মুসলিমরা তাদের নবী (ﷺ) এর ইতিহাস সংক্রান্ত শ্রুত সব ঘটনা সংগ্রহ করা আরম্ভ করেন, যেন ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানুষের জন্য তা বর্ণনা করে যেতে পারেন।’
(আল-ক্বাওলুল মুবীন ফী সীরাতে সায়্যিদিল মুরসালীন, পৃ. ৭৮)।
◾সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) জন্মদিন:
_______________________________________
পবিত্র কুরআনে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্মদিন, বার, তারিখ ও সময় সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি বিধায় এক্ষেত্রে আমাদেরকে হাদীস ও বিদ্বানগণের উক্তি বিশ্লেষণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্ম বার সোমবার, এটি নিয়ে পৃথিবীর কোন আলেমদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই সবাই একমত। রাসূল (ﷺ) এর জন্মদিন সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, আবু ক্বাতাদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সোমবারের দিন সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি, এই দিনেই আমি নবুঅত পেয়েছি এবং এই দিনেই আমার উপর কুরআন নাযিল করা হয়েছে।’ (সহীহ মুসলিম, হা/১১৬২; মিশকাত, হা/২০৪৫)।
.
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সোমবারে জন্মগ্রহণ করেন, সোমবারে নবুঅত লাভ করেন, সোমবারে ইন্তিকাল করেন, সোমবারে মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনার পথে রওয়ানা করেন, সোমবারে মদীনা পৌঁছান এবং সোমবারেই তিনি হাজারে আসওয়াদ স্থাপন করেন।’ (আহমাদ ইবনে হাম্বল, আল-মুসনাদ,মিসর: দারুল মা‘আরিফ, ১৯৫০), ৪/১৭২-১৭৩, হা/২৫০৬, বিশ্লেষক আহমদ শাকির সনদ আলোচনা করে বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ)।
.
◾সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) এর জন্মবছর:
_______________________________________
রাসূল (ﷺ) এর জন্মবছর সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, ক্বাইস ইবনে মাখরামা (রা.) তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করে বলেন, আমি ও রাসূল (ﷺ) হস্তির বছরে (আবরাহার বাহিনী ধ্বংসের বছর) জন্মগ্রহণ করি। তিনি বলেন, ইয়া‘মুর ইবনু লাইছ গোত্রীয় কুবাছ ইবনু আশইয়ামকে ওসমান ইবনু আফফান (রা.) প্রশ্ন করেন, আপনি বড় নাকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার চাইতে অনেক বড়, তবে আমি তাঁর আগে জন্মগ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হাতির বছর জন্মগ্রহণ করেছেন। আমার মা আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেলেন, যেখানে গিয়ে আমি পাখিগুলোর মলের রং সবুজে বদল হয়ে যেতে দেখেছি। আবু ঈসা (তিরমিযী) বলেন, এ হাদীসটি হাসান গরীব। আমরা শুধু মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্বের সূত্রেই এ হাদীসটি জেনেছি। (জামে‘ আত-তিরমিযী, হা/৩৬১৯) ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭৫১ হি.] বলেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কার অভ্যন্তরে হস্তিবাহিনীর বছর জন্মগ্রহণ করেন। (আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, ১/৭৬)।
◾হস্তিবাহিনীর ঘটনা কখন ঘটেছে:
___________________________________
আবরাহা সাবাহ হাবশী (সে সম্রাট নাজ্জাশী হাবশের পক্ষ হতে ইয়ামানের গভর্নর ছিল) যখন দেখল যে, আরববাসী কা‘বা ঘরের হজ্জ পালন করছে এবং একই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন সেখানে আগমন করছে, তখন সান‘আয় সে একটি বিরাট গির্জা নির্মাণ করল এবং সেই গির্জাকে কেন্দ্র করে হজ্জ পালন করার জন্য আরববাসীকে আহ্বান জানালো। কিন্তু বনু কেনানা গোত্রের লোকজন যখন এই সংবাদ অবগত হলো, তখন তারা এক রাতে গোপনে গির্জায় প্রবেশ করে তার সামনের দিকে ‘মল’ এর প্রলেপন দিয়ে একদম নোংরা করে ফেলল। উক্ত ঘটনায় আবরাহা ভয়ানক ক্রোধান্বিত হয় এবং প্রতিশোধ গ্রহণার্থে কা‘বা ঘর ধ্বংস করার জন্য বিশাল বাহিনী প্রস্ত্তত করেন। কোন বর্ণনায় ২০ হাযার ও কোন বর্ণনায় ৬০ হাযার সৈন্যের কথা এসেছে। তবে শেষোক্ত বর্ণনাটি আরবী কবিতা থেকে নেওয়া (কুরতুবী)। আর সে যুগে কবিতাই ছিল ইতিহাসের বাহন। অতএব শেষোক্ত সংখ্যাটিই সঠিক বলে অনুমিত হয়। উক্ত বাহিনীর সাথে নাজাশীর পক্ষ হতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশালবপু হস্তীবাহিনী পাঠানো হয়। যার নেতৃত্বে ছিল ‘মাহমূদ’ নামক হাতিটি। হস্তীবাহিনীর সংখ্যা কেউ বলেছেন ১টি, কেউ বলেছেন ২টি, ৮টি বা ১২ টি বা তার বেশী। তবে ‘মাহমূদ’ ছিল এদের নেতা। বাকীরা মাহমূদের অনুগামী। এদের নেওয়া হয়েছিল এজন্য যে, লোহার শিকলের এক প্রান্ত কা‘বার দেওয়ালে বেঁধে অন্য প্রান্ত হাতির ঘাড়ে বাঁধা হবে। অতঃপর হাতিকে হাঁকিয়ে দেয়া হবে, যাতে পুরা কা‘বাগৃহ এক সাথে উপড়ে ভেঙ্গে পড়ে (ইবনু কাছীর)।সে নিজে একটি শক্তিশালী হাতির পিঠে আরোহণ করে।
.
আবরাহা ইয়ামান হতে অগ্রসর হয়ে ‘আল-মাগাম্মাস’ নামক স্থানে পৌঁছল এবং সেখানে তার সৈন্য বাহিনীকে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত করে মক্কায় প্রবেশের উদ্দেশ্যে সামনে অগ্রসর হলো। অতঃপর যখন মুযদালিফা এবং মিনার মধ্যবর্তী স্থান ওয়াদিয়ে মুহাসসারে পৌঁছল, তখন আবরাহার হাতিটি মাটিতে বসে পড়ল। কা‘বা অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার জন্য কোনোভাবেই তাকে উঠানো সম্ভব হলো না। অথচ উত্তর, দক্ষিণ কিংবা পূর্বমুখে যাওয়ার জন্য তাকে উঠানোর চেষ্টা করলে সে তৎক্ষণাৎ উঠে দৌঁড়াতে শুরু করছিল। এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা এক ঝাঁক ছোট পাখি প্রেরণ করলেন। কুরআন মাজীদে সেই পাখিগুলোকে ‘আবাবীল’ বা ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই পাখিগুলো পাথরের ছোট ছোট টুকরো বয়ে এনে সৈন্যদের উপর নিক্ষেপ করতে লাগল। কঙ্করগুলো শরীরের যেখানে লাগছিল, ফেটে গিয়ে সেখান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে হতে সে মরে যাচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া নুফায়েল বিন হাবীব বলে ওঠেন,أيْنَ الْمَفَرُّ والإلَهُ الطَّالِبُ + والْأَشْرَمُ الْمَغْلُوبُ لَيْسَ الْغَالِبُ কোথায় পালাচ্ছ, খোদ আল্লাহ আজ তোমাদের ধরেছেন। নাককাটা (আবরাহা) পরাজিত। সে বিজয়ী নয়। এছাড়াও নুফায়েল এর আরও কবিতা বর্ণিত হয়েছে।
.
ইবনু ইসহাক বলেন, আবরাহা বাহিনী মক্কা থেকে পালিয়ে ইয়ামন পর্যন্ত পথে পথে মরতে মরতে যায় এবং আবরাহা তার প্রিয় রাজধানী সান‘আ শহরে পৌঁছে লোকদের কাছে আল্লাহর গযবের ঘটনা বলার পর মৃত্যুবরণ করে। এ সময় তার বুক ফেটে কলিজা বেরিয়ে যায়। মুক্বাতিল বিন সুলায়মান বলেন, কুরায়েশরা ঐদিন বহুমূল্য গণীমতের মাল হস্তগত করে। একা আবদুল মুত্ত্বালিব যা স্বর্ণ পান, তাতে তাঁর সমস্ত পাত্র পূর্ণ হয়ে যায়। ইবনু ইসহাক বলেন, এর পরপরই আল্লাহ তাঁর বিশেষ রহমত স্বরূপ কুরায়েশদের গৃহে তাঁর প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করেন (ইবনু কাছীর)। তিনি বলেন, আবরাহা বাহিনীর এই মর্মান্তিক পরিণতির ফলে সমগ্র আরবে কুরায়েশদের সম্মান ও মর্যাদা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তারা তাদেরকে أَهْلُ اللهِ ‘
আল্লাহওয়ালা’ বলতে থাকে। তারা বলতে থাকে যে, قَاتَلَ اللهُ عَنْهُمْ، وَكَفَاهُمْ مَئُونَةَ عَدُوِّهِمْ ‘আল্লাহ তাদের পক্ষে লড়াই করেছেন এবং তাদেরকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন (কুরতুবী)। এই ঘটনার পর দশ বছর মক্কার লোকেরা মূর্তিপূজা থেকে বিরত থাকে। (হাকেম ২/৫৩৬ হা/৬৮৭৭; সহীহাহ হা/১৯৪৪)।
.
হস্তীওয়ালাদের এই ঘটনা আরবদের মধ্যে বহুল প্রচলিত ছিল। এমনকি রাসূল (ﷺ) এর সময়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে অনেকে জীবিত ছিলেন। যেমন হাকীম বিন হেযাম, হাতেব বিন আব্দুল ওযযা, নওফেল বিন মু‘আবিয়া প্রমুখ। যারা প্রত্যেকে ১২০ বছর করে বয়স পেয়েছিলেন। ৬০ বছর জাহেলিয়াতে ও ৬০ বছর ইসলামে। এছাড়া উক্ত ঘটনার বিষয়ে রাসূল (ﷺ) থেকে অনেকগুলি সহীহ হাদীস এসেছে। যেমন: হুদায়বিয়ার দিন রাসূল (ﷺ) এর উষ্ট্রী ‘ক্বাছওয়া’ বসে পড়লে তিনি বলেন, حَبَسَهَا حَابِسُ الْفِيْلِ ‘হস্তীবাহিনীকে বাধা দানকারী (আল্লাহ) তাকে বাধা দিয়েছেন।’ (সহীহ বুখারী হা/২৭৩১, ২৭৩২)।
.
অধিকাংশ ঐতিহাসিকের অভিমত হচ্ছে, উক্ত ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রাসূল (ﷺ) এর জন্মগ্রহণের মাত্র ৫০ কিংবা ৫৫ দিন পূর্বে মুহাররম মাসে। এই প্রেক্ষিতে এটা ধরে নেওয়া যায় যে, ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল ৫৭১ ঈসায়ী সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ ভাগে কিংবা মার্চ মাসের প্রথম ভাগে। (আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী, আর রাহীকুল মাখতূম, ঢাকা : পিস পাবলিকেশন), পৃ. ৯১-৯২) কিছু কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, রাসূল (ﷺ) এর জন্ম হস্তিবাহিনীর ১০/২৩/৪০ বছর পর। তবে উক্ত বর্ণনাগুলো দূর্বল। (আস-সীরাতুন নাবাবিয়াহ আছ-সাহীহাহ, ১/৯৭।)
পূর্বেই উল্লেখ করেছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (ﷺ) এর জন্মের দিন ছিল সোমবার, এটি নিয়ে পৃথিবীর কোন আলেমের মধ্যে মতানৈক্য নেই। কিন্তু জন্ম তারিখ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। এ মতানৈক্যের যৌক্তিক কারণও রয়েছে। যেহেতু কারো জানা ছিল না যে, এ নবজাতক অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) ভবিষ্যতে বড় কিছু হবে? অন্য নবজাতকের জন্মকে যেভাবে নেয়া হত তার জন্মকেও সেভাবে নেয়া হয়েছে। এ জন্য কারো পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ নির্দিষ্ট ভাবে নিশ্চিত করেননি। রাসূল (ﷺ) এর জন্ম তারিখ সম্পর্কে আহালুল ইমামগনের বক্তব্য থেকে পাঠকদের জন্য আমি কিছু বর্ণনা উল্লেখ করতে চাই। যেমন:
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নাওয়াউয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] যিনি ইমাম নববী নামে পরিচিত তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্ম তারিখ নিয়ে যথেষ্ট মতানৈক্য রয়েছে। কেউ বলেছেন, রবীউল আউয়ালের ২ তারিখ, কেউ বলেন ৮ তারিখ, কারো মতে ১০ তারিখ আবার কারো মতে ১২ তারিখ। তবে তাঁর মৃত্যু রবীউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ এতে কারো কোন দ্বিমত নেই। (আবু যাকারিয়া মহীউদ্দীন ইয়াহইয়া ইবনু শারফ আন-নববী। (বৈরূত দারু ইহইয়াইত তুরাছিল ‘আরাবিয়্যাহ,২য় সংস্করণ, ১৩৯২ হি., ১৫তম খণ্ড, পৃ. ১০০)। সুতরাং একথা পরিষ্কার যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্ম ও মৃত্যু উভয়ই সোমবারে হয়। তবে তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। যেমন:
.
(১) রাসূল (ﷺ) এর জন্ম তারিখ ১০ রবীউল আউয়াল। এই মতটি হুসাইন (রা.) এর পৌত্র মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-বাকের (১১৪ হি.) থেকে বর্ণিত। দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আমর ইবন শারাহীল আশ-শা‘বী (১০৪ হি.) থেকেও এই মতটি বর্ণিত। ঐতিহাসিক মুহাম্মাদ ইবনে ওমর আল-ওয়াকেদী (২০৭ হি.) এই মত গ্রহণ করেছেন। ইবনে সা‘দ তার বিখ্যাত ‘আত-ত্ববাকাতুল কুবরা’য় শুধু দুইটি মত উল্লেখ করেছেন, ২ তারিখ ও ১০ তারিখ।’ (ইবনে সা‘দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, বৈরূত: দারুল এহইয়াইত তুরাছিল আরাবী, ১/৪৭)।
(২) ইবনে কাসীর (রাহি.) বলেন, ‘কেউ বলেছেন, ৮ রবীউল আউয়াল। হুমাইদী এ বর্ণনাটি ইবনে হাযম থেকে বর্ণনা করেন। আর মালেক, উক্বাইল ও ইউনুস ইবনে ইয়াযীদ প্রমুখ এটি বর্ণনা করেন যুহরী থেকে, তিনি মুহাম্মাদ ইবনে জুবাইর ইবনে মুতঈম থেকে। ইবনে আব্দুল বার বলেন, ঐতিহাসিকগণ এ মতটিকে সঠিক বলেছেন। হাফেয মুহাম্মাদ ইবনে মূসা আল-খাওয়ারেযমী এ তারিখের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত। ইবনে দিহইয়াহ ‘আত-তানবির ফী মাওলিদিল বাশিরীন নাযীর’ গ্রন্থে এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন’। (ইবনে সা‘দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা,বৈরূত: দারুল এহইয়াইত তুরাছিল আরাবী, ১/৪৭)।
(৩). কারও মতে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম তারিখ ১২ রবীউল আউয়াল। এই মতটি হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রখ্যাত ঐতিহাসিক মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক্ব (১৫১ হি.) গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হস্তির বছরে রবীউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন।’ (ইবনে হিশাম, আস-সীরাতুন নাবাবিয়াহ, মিসর: দারুর রাইয়ান, ১ম সংস্করণ, ১৯৭৮, ১/১৮৩)।
এখানে লক্ষণীয় যে, ইবনে ইসহাক্ব সীরাতুন্নবীর সকল তথ্য সাধারণত সনদসহ বণর্না করেছেন, কিন্তু এই তথ্যটির জন্য তিনি কোনো সনদ উল্লেখ করেননি। কোথা থেকে তিনি এই তথ্যটি গ্রহণ করেছেন তাও জানাননি বা সনদসহ প্রথম শতাব্দীর কোনো সাহাবী বা তাবেঈ থেকে মতটি বণর্না করেননি। এজন্য অনেক গবেষক এই মতটিকে দুর্বল বলে উল্লেখ করেছেন। (আহমাদ মাহদী রিযকুল্লাহ, আস-সীরাতুন নাবাবিয়াহ, পৃ. ১০৯)।
(৪) অন্যমতে, তিনি রামাযান মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। ৩য় হিজরী শতকের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক জুবাইর ইবনে বাক্কার (২৫৬ হি.) থেকে এই মতটি বর্ণিত। তাঁর মতের পক্ষে যুক্তি হলো, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সর্বসম্মতিক্রমে রামাযান মাসে নবুঅত পেয়েছেন। তিনি ৪০ বৎসর পূর্তিতে নবুঅত পেয়েছেন। তাহলে তাঁর জন্ম অবশ্যই রামাযানে হবে। (ইবনে সা‘দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, ১/১০০-১০১; আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ আল-কাসতালানী, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, বৈরূত: দারুল কুতুব আল-ইলিময়া, ১ম সংস্করণ ১৯৯৬), ১/৭৪-৭৫; আল-যারকানী, শরহুল মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া,বৈরূত : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ১ম সংস্করণ ১৯৯৬, ১/২৪৫-২৪৮)
(৫) মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাতে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত ১৮ রবীউল আউয়াল। (আবুল ফিদা হাফিয ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, মিসর: দারুর রাইয়ান লিত তুরাস, ১ম প্রকাশ ১৪০৮ হি./১৯৮৮), ১/২৪২)।
৬) আল্লামা শফিউর রহমান মোবারকপুরী লিখেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কার বিখ্যাত বনু হাশেম বংশে ৯ রবীউল আউয়াল হস্তির বছর সোমবার দিন রাতের মহাসন্ধিক্ষণে সুবহে সাদিকের সময় জন্মগ্রহণ করেন। ইংরেজি পঞ্জিকা মতে, তারিখটি ছিল ৫৭১ ঈসায়ী সালের ২০ অথবা ২২ এপ্রিল। এ বছরটি ছিল বাদশাহ নওশেরওয়ার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার ৪০তম বছর। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহাম্মাদ সুলায়মান সালমান (রাহি.) এবং মাহমূদ পাশা ফাল্কীর অনুসন্ধানলব্ধ সঠিক অভিমত হচ্ছে এটাই। (আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃ. ৯৭)।
(৭) কারো মতে, ২, ৮, ১০ ও ১৩ই রবীউল আউয়াল। (ছিফাতুছ ছাফ্ওয়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪; সীরাতে সাইয়েদুল আম্বিয়া, পৃ. ১১৭,)।
(৮) আরবের গবেষক সৌরবিজ্ঞানী আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম (মৃ. ১৪১৬ হি.) লিখেছেন, ‘বিশুদ্ধ রেওয়ায়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (ﷺ) এর জন্ম হয় ২০ এপ্রিল ৫৭১ ইংরেজিতে আমুল ফিল’ এ। সুতরাং তাঁর জন্ম-মৃত্যুর দিন খুব সূক্ষ্মভাবে বের করা সম্ভব এর ভিত্তিতে। বর্ণনার বিচারে ও যুক্তির আলোকে রাসূল (ﷺ) এর জন্ম তারিখ হলো ৯ রবীউল আউয়াল হিজরী পূর্ব ৫৩ সন মোতাবেক ২০ এপ্রিল, ৫৭১ খ্রিস্টাব্দ। (তাকবীমুল আযমান, পৃ. ১৪৩)।
(৯) আল্লামা হুমাইদী, ইমাম ইবনু হাযম, ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, ইবনু কাছীর, ইবনু হাজার আসক্বালানী, বদরুদ্দীন আইনী প্রমুখের মতে, ৯ই রবীউল আউয়াল সোমবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্ম দিন। (মীলাদুন্নবী কেন বিদ‘আত, পৃ. ২০)। আর এই মতটিই বেশী গ্রহণযোগ্য।
তাছাড়া সহীহ হাদীসসমূহের বর্ণনা অনুযায়ী রাসূল (ﷺ) এর জন্ম সোমবারে হয়েছে। কোন তারিখ সেটা বলা নেই। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব মতে, ৮ হতে ১২ই রবীউল আউয়ালের মধ্যে ৯ তারিখ ব্যতীত সোমবার ছিল না। অতএব রাসূল (ﷺ) এর সঠিক জন্ম দিবস ৯ই রবীউল আউয়াল সোমবার, ১২ই রবীউল আউয়াল বৃহস্পতিবার নয়। যা প্রসিদ্ধ আছে। আল্লাহু আলাম। (সুলায়মান ইবনে সালমান মানছূরপুরী, রহমাতুল্লিল আলামীন, উর্দূ, দিল্লী: ১৯৮০ খ্রি., ১/৪০ দ্র. মীলাদ প্রসঙ্গ, পৃ. ৭; মোস্তফা চরিত, পৃ. ২২৫)।
◾তাহলে বিশুদ্ধ মতে জন্ম ও মৃত্যুর সঠিক তারিখ কোনটি?
_______________________________________
প্রিয় পাঠক! মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ১ম হস্তীবর্ষের ৯ই রবীউল আউয়াল (সুলায়মান বিন সালমান মানছূরপুরী, (মৃ. ১৯৩০ খ্রিঃ) রহমাতুল্লিল আলামীন (উর্দূ), দিল্লী: ১৯৮০ খ্রিঃ ১/৪০; আর-রাহীক্ব পৃঃ ৫৪; মা শা-‘আ ৫-৯ পৃঃ)। সোমবার সুবহে সাদিকের পর মক্কায় নিজ পিতৃগৃহে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১১ হিজরী সনের ১২লা রবীউল আউয়াল সোমবার সকাল ১০টার দিকে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর তারিখ নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। তবে যেহেতু সহীহ হাদীস অনুযায়ী রাসূল (ﷺ) এর জন্ম ও মৃত্যু দু’টিই সোমবারে হয়েছিল। (মুসলিম হা/১১৬২; বুখারী হা/১৩৮৭)। অতএব সেটা ঠিক রাখতে গেলে তাঁর জন্ম ৯ই রবীউল আউয়াল সোমবার এবং মৃত্যু ১লা রবীউল আউয়াল সোমবার হয়। কিন্তু অধিকাংশ জীবনীকারের মতে মৃত্যুর দিনটি ছিল ১১ হিজরীর ১২ই রবীউল আউয়াল মোতাবেক ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই জুন। [কাযী সুলায়মান বিন সালমান মানছূরপুরী (মৃ. ১৩৪৯/১৯৩০ খৃ:), রহমাতুল্লিল ‘আলামীন (দিল্লী: ১ম সংস্করণ ১৯৮০ খৃঃ) ২/১৬, ৩৬৮ পৃঃ; ১/৪০, ২৫১ পৃঃ)]। মোটকথা জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব মতে, রাসূল (ﷺ) এর সঠিক জন্মদিবস হয় ৯ই রবীউল আউয়াল সোমবার। অথচ ১২ রবীউল আউয়াল মৃত্যুর দিন বিদআতিরা জন্মবার্ষিকী বা ‘মীলাদুন্নবী’র অনুষ্ঠান করে থাকে। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত দান করুন। আমীন!
◾পরিশেষে রাসূল (ﷺ) এর জন্ম সংশ্লিষ্ট সমাজে প্রচলিত কিছু দলিল বিহীন কথা:
_______________________________________
রাসূল (ﷺ) এর জন্মের কাহিনীতে প্রসিদ্ধ আছে যে, (১) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খাৎনাকৃত ও নাড়ী কাটা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হন। (২) কেউ তার লজ্জাস্থান দেখেনি। (৩) শৈশবে বক্ষবিদারণের দিন জিবরীল (আ.) তাঁর খাৎনা করেন।(সিলসিলা যঈফাহ, হা/৬২৭০)। (৪) জান্নাত থেকে আসিয়া (রা.) ও মারইয়াম (রা.) নেমে এসে ধাত্রীর কাজ করেন। (৫) আবু লাহাব মৃত্যুর পরে তার পরিবারের কোনো একজনকে স্বপ্ন দেখান। তাকে বলা হয়, আপনার অবস্থা কী? তিনি বলেন, আমি জাহান্নামে। তবে প্রতি সোমবার আমার আযাব হালকা করা হয় এবং আমার এই দুই আঙুল থেকে পানি চুষে পান করি। আর এটা এ কারণে যে, নবী (ﷺ)-এর জন্মের সুসংবাদ দানের ফলে আমি আমার দাসী ছুয়াইবাহকে মুক্ত করে দিই এবং সে নবী (ﷺ) কে দুধ পান করায়। উল্লেখ্য, আবু লাহাব ২য় হিজরীতে সংঘটিত বদর যুদ্ধের সপ্তাহকাল পরে মারা যায়। আব্বাস তখন কাফের ছিলেন এবং ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের দিন মুসলিম হন। (৬) রাসূল (ﷺ) প্রসবের সময় তার মা বলছেন যে, আমার লজ্জাস্থান দিয়ে ‘নূর’ অর্থাৎ জ্যোতি বিকশিত হয়, যা শামে প্রাসাদসমূহকে আলোকিত করেছিল, উম্মাহাতুল মুমিনীন যা স্বচক্ষে দেখেছিলেন। এটি ছিল ভবিষ্যতে শাম এলাকা ইসলামের আলোকে আলোকিত হওয়ার অগ্রিম সুসংবাদ। (৭) পারস্যের কিসরা রাজপ্রাসাদ কেঁপে উঠেছিল এবং তার ১৪টি চূড়া ভেঙে পড়েছিল। আর এটি ছিল তাঁর ভবিষ্যৎ নবী হওয়ার অগ্রিম সুসংবাদ। (৮) এ সময় মাজূসীদের পূজার আগুন নিভে গিয়েছিল। (৯) ইরাকের সাওয়া হ্রদের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল এবং তার পার্শ্ববর্তী গির্জাসমূহ ধ্বসে পড়েছিল ইত্যাদি।(আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব নাজদী, মুখতাছার সীরাতুর রাসূল (ﷺ) (রিয়াদ: ১ম সংস্করণ ১৪১৪/১৯৯৪ খ্রি.), পৃ. ১৮-২০; মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম, (কুয়েত : ২য় সংস্করণ ১৪১৬/১৯৯৬ খ্রি.), পৃ. ৫৪)। (১০) ঐ সময় কা‘বাগৃহের ৩৬০টি মূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে। বলা বাহুল্য,উপরে বর্ণিত সকল বর্ণনাই ভিত্তিহীন কল্পকথা মাত্র। [সীরাতুর রাসূল ﷺ রাজশাহী: হাদীস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ), পৃ. ৫৬-৫৭-এর টীকা দ্রষ্টব্য)]।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।