প্রশ্ন: রাসূল (ﷺ) কি উম্মী বা নিরক্ষর ছিলেন? উম্মী শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা জানতে চাই।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: আরবী أُمِّيّ বা উম্মী শব্দের প্রসিদ্ধ অর্থ নিরক্ষর। আরবরা এই পদবীতে সুবিদিত।[তাফসীরে কুরতুবী,বাগভী] উম্মী শব্দের সাধারণ অর্থ হল: যে ব্যক্তি লিখতে জানে না এবং কোন গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে পারে না। এ শব্দের দ্বারা যদি উম্মী নবী উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এর অর্থ হবে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)। কারণ তিনি লিখতে বা পড়তে পারতেন না। যা কুরআন-সুন্নাহর একাধিক দলিল দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল (ﷺ) এর পড়াশোনা না জানা, এ ছিল এক বিরাট মু‘জিযা। কারণ তাঁকেই আল্লাহ আয়াত পাঠকারী এবং কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা দানকারী বানিয়ে দেন। (সূরা আলে ইমরান ১৬৪; সূরা জুম‘আহ্ ২)। আসমানের নিচে কুরআনই একমাত্র ইলাহী গ্রন্থ, যা তাওরাত ইত্যাদির ন্যায় ফলকে লিপিবদ্ধ আকারে দুনিয়াতে আসেনি। বরং সরাসরি উম্মী নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। সাথে সাথে মুহাম্মাদ (ﷺ) ই একমাত্র নবী, যিনি পবিত্র কুরআনে النَّبِيُّ الْأُمِّيُّ বা ‘নিরক্ষর নবী’ হিসাবে অভিহিত হয়েছেন। (সূরা আ‘রাফ ৭/১৫৭, ১৫৮)। কুরআন আল্লাহর কালাম হওয়ার এটাও একটি বড় প্রমাণ যে, যার মুখ দিয়ে দুনিয়াবাসী বিজ্ঞানময় কুরআন শুনেছে, তিনি নিজে ছিলেন ‘উম্মী’ অর্থাৎ নিরক্ষর ব্যক্তি এবং মানুষ হয়েছিলেন নিরক্ষর সমাজে। (সূরা জুম‘আ ৬২/২)। এমনকি আল্লাহ বলেন, وَمَا كُنْتَ تَتْلُو مِنْ قَبْلِهِ مِنْ كِتَابٍ وَلاَ تَخُطُّهُ بِيَمِيْنِكَ إِذًا لاَرْتَابَ الْمُبْطِلُوْنَ ‘আর তুমি তো এর আগে কোন বই পড়োনি এবং স্বহস্তে কোন লেখাও লেখোনি, যাতে বাতিলপন্থীরা সন্দেহ করতে পারে।’ (সূরা আনকাবূত ২৯/৪৮)। তিনি অন্যত্র বলেন, مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلاَ الْإِيْمَانُ ‘তুমি জানতে না কিতাব কি বা ঈমান কি?’ (সূরা শূরা ৪২/৫২)। তাই কুরআনের ভাষা ও বক্তব্যে নিজের থেকে যোগ-বিয়োগ করার সকল প্রকার সন্দেহের তিনি ঊর্ধ্বে ছিলেন। সূরা আরাফের ১৫৭ ও সূরা জুম’আ ২নং আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুটি পদবী ‘রাসূল’ ও ‘নবী’ এবং এর সাথে সাথে তৃতীয় একটি বৈশিষ্ট্য ‘উম্মী’ উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস বলেন, أمّي ‘উম্মী’ শব্দের অর্থ হল নিরক্ষর। যে লেখা-পড়া কোনটাই জানে না। [তাফসীরে বাগভী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেন, “আমরা নিরক্ষর জাতি। লিখা জানি না, হিসাব জানি না।” (সহীহ বুখারী: ১০৮০ মিশকাত,১৯৭১)। অপর বর্ননায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিব্রীলের সাথে দেখা করলেন। তিনি বললেন, হে জিব্রীল! আমি এক নিরক্ষর উম্মাতের কাছে প্রেরিত হয়েছি। এদের মধ্যে আছে প্রবীণা বৃদ্ধা, প্রবীণ বৃদ্ধ, কিশোর-কিশোরী। এমন ব্যক্তিও আছে যে কখনো লেখাপড়া করেনি। জিব্রীল বললেন, হে মুহাম্মাদ! (এতে ভয় নেই) কুরআন সাত রীতিতে (পড়ার অনুমতি নিয়ে) নাযিল হয়েছে। (তিরমিযী ২৯৪৪, সহীহ ইবনু হিববান ৭৩৯, আহমাদ ২১২০৪, ২১১৩২, নাসায়ী ৯৪১, আবূ দাঊদ ১৪৭৭, সহীহ আল জামি‘ ৭৮)। সাধারণ আরবদেরকে এ কারণেই কুরআন أمِّيِّنَ বা নিরক্ষর জাতি বলে অভিহিত করেছে যে, তাদের মধ্যে লেখা-পড়ার প্রচলন খুবই কম ছিল। কারও কারও মতে উম্মী শব্দটি ‘উম্ম’ শব্দের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে বলা হয়েছে। আর উম্ম অর্থ, মা। অর্থাৎ সে তার মা তাকে যেভাবে প্রসব করেছে সেভাবেই রয়ে গেছে। কারও কারও মতে শব্দটি ‘উম্মত’ শব্দের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে বলা হয়েছে। পরে সম্পর্ক করার নিয়মানুসারে ‘তা’ বর্ণটি পড়ে গেছে। তখন অর্থ হবে, উম্মতওয়ালা নবী। কারও কারও মতে, শব্দটি ‘উম্মুল কুরা’ যা মক্কার এক নাম, সেদিকে সম্বন্ধযুক্ত করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ মক্কাবাসী। (তাফসীরে বাগভী সূরা আরাফ ১৫৭ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
.
উম্মী শব্দের বিভিন্ন অর্থ থাকলেও বিখ্যাত এবং প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে যে, উম্মী অর্থ নিরক্ষর। যদিও নিরক্ষর হওয়াটা কোন মানুষের জন্য প্রশংসনীয় গুণ নয়; বরং ক্রটি হিসাবেই গণ্য। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞান-গরিমা,তত্ত্ব ও তথ্য অবগতি এবং অন্যান্য গুণবৈশিষ্ট্য ও পরাকাষ্ঠা সত্বেও উম্মী হওয়া তার পক্ষে বিরাট গুণ ও পরিপূর্ণতায় পরিণত হয়েছে। কারণ, শিক্ষাগত, কার্যগত ও নৈতিক পরাকাষ্ঠী যদি কোন লেখাপড়া জানা মানুষের দ্বারা প্রকাশ পায়, তাহলে তা হয়ে থাকে তার সে লেখাপড়ারই ফলশ্রুতি, কিন্তু কোন একান্ত নিরক্ষর ব্যক্তির দ্বারা এমন অসাধারণ, অভূতপূর্ব ও অনন্য তত্ত্ব-তথ্য ও সূক্ষ্ম বিষয় প্রকাশ পেলে, তা তার প্রকৃষ্ট মু’জিযা ছাড়া আর কি হতে পারে? পবিত্র কুরআনে একাধিকবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে উম্মী বলা হয়েছে। একই বিষয় কিছুটা ব্যাখ্যা আকারে উপস্থাপিত হয়েছে অন্য আয়াতে। আল্লাহ বলেন,وَمَا كُنتَ تَتْلُو مِن قَبْلِهِ مِن كِتَابٍ وَلَا تَخُطُّهُ بِيَمِينِكَ إِذًا لَّارْتَابَ الْمُبْطِلُونَ “আপনি তো এর পূর্বে কোনো কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় ডান হাত দ্বারা কোনো কিতাব লিখেননি। এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত।” (সুরা আনকাবুত: ৪৮)।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাচ্ছীরীন বা মুফাচ্ছীরদের সরদার আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেনঃ كان نبيكم صلى الله عليه وسلم أميا لا يكتب ولا يقرأ ولا يحسب“তোমাদের নবী (ﷺ) ছিলেন উম্মী। তিনি লিখতেন না, পড়তেন না,গণনা করতেন না।” [তাফসির কুরতুবি; সুরা আনকাবুত: ৪৮]। ইমাম কাতাদাহ ও ইমাম মুজাহিদ একই মত পোষণ করেছেন। (তাফসির তাবারি; সুরা আনকাবুত: ৪৮)।
ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ قد لبثت في قومك يا محمد من قبل أن تأتي بهذا القرآن عمرا لا تقرأ كتابا ولا تحسن الكتابة، بل كل أحد من قومك وغيرهم يعرف أنك رجل أمي لا تقرأ ولا تكتب “(আল্লাহর কথার অর্থ হচ্ছে) হে মুহাম্মদ (ﷺ), আপনি কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে আপনার কওমের নিকট জীবনের বড় অংশ পার করেছেন। আপনি কোনো বই-পুস্তক পড়েননি, লিখেননি। বরং আপনার কওমের এবং বাইরের প্রত্যেক ব্যক্তি জানে যে, আপনি উম্মী। আপনি পড়েন না, লেখেন না।” (তাফসির ইবনে কাসির; সূরা আনকাবুত: ৪৮)।
তাফসির আল জালালাইনে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, নিরক্ষর হওয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একটি বড় শ্রেষ্ঠত্ব ও বড় মােজেজা। আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুয়ত সপ্রমাণ করার জন্য যেসব সুস্পষ্ট মােজেজা প্রকাশ করেছেন, তন্মধ্যে তাঁকে পূর্ব থেকে নিরক্ষর রাখাও অন্যতম। তিনি লিখিত কোনাে কিছু পাঠ করতে পারতেন না এবং নিজে কিছু লিখতেও সক্ষম ছিলেন না। এ অবস্থায়ই জীবনের চল্লিশটি বছর তিনি মক্কাবাসীদের সামনে অতিবাহিত করেন। তিনি কোনাে সময় কিতাবধারীদের সাথেও মেলামেশা করেন নি যে, তাদের কাছ থেকে কিছু শুনে নেবেন। কারণ মক্কায় কোনাে কিতাবধারী বাস করত না। চল্লিশ বছর পূর্তির পর হঠাৎ তার পবিত্র মুখ থেকে এমন কালাম উচ্চারিত হতে থাকে, যা বিষয়বস্তু ও অর্থের দিক দিয়ে যেমন ছিল মােজেজা তেমনি শাব্দিক বিশুদ্ধতা ও ভাষালঙ্কারের দিক দিয়েও ছিল অতুলনীয়। (তাফসীরে জালালাইন,৫ খণ্ড, ১৪ পৃষ্ঠা সূরা আনকাবুত ৪৮)
বস্ত্ততঃ মুহাম্মাদ (ﷺ) ব্যতীত দুনিয়াতে এমন কোন নবী আসেননি, যার পবিত্র যবান দিয়ে সরাসরি আল্লাহর কালাম বের হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি শেষনবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর শ্রেষ্ঠত্বের একটি বড় দলীল ও একটি বড় মু‘জেযা। মানছূরপুরী বলেন, খ্রিষ্টানদের সকলে এ বিষয়ে একমত যে, তাদের চারটি ইনজীলের একটিও মসীহ ঈসার উপরে আল্লাহর পক্ষ হতে সরাসরি নাযিল হয়নি। বরং এগুলি স্ব স্ব লেখকদের দিকে সম্পর্কিত। উক্ত প্রসিদ্ধ চারটি ইনজীল হল, মথি (إِنْجِيلُ مَتَّى), মুরকুস (مُرْقُس), লূক (لُوقَا) এবং ইউহান্না (يُوحَنَّا)। এগুলির পবিত্রতার পক্ষে খ্রিষ্টানদের যুক্তি হল এই যে, এগুলি পবিত্র রূহ মসীহ ঈসা (আঃ) এর সাহায্য নিয়ে লেখা হয়েছে। তাদের এ দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে চারটি ইনজীলের পরস্পরের মধ্যে এত গরমিল কেন? যেগুলির বক্তব্যের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে খৃষ্টান পন্ডিতগণ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি আদম ক্লার্ক, নূরটিন ও হারূণ প্রমুখ খ্রিষ্টান বিদ্বানগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এই যে, ইনজীলগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের কোন সুযোগ নেই। পাদ্রী ফ্রেঞ্চ স্বীকার করেছেন যে, ইনজীলগুলির মধ্যে ছোট-বড় ৩০ হাযার ভুল রয়েছে। কথা হলো, চারটি ইনজীলের মিলিত পৃষ্ঠা সংখ্যা একশ এর বেশী হবে না।’ (রহমাতুল্লিল আলামীন ৩/২৭৩)। অথচ তার মধ্যেই যদি ত্রিশ হাযার ভুল থাকে, তাহলে বিশুদ্ধ কতটুকু আছে? আর ঐসব বইয়ের গ্রহণযোগ্যতাই বা কি? একেই তো বলে ‘সাত নকলে আসল খাস্তা’। খ্রিষ্টান ধর্মনেতাদের এইসব দুষ্কৃতির প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন,فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ- ‘ধ্বংস ঐসব লোকদের জন্য, যারা স্বহস্তে পুস্তক রচনা করে। অতঃপর বলে যে, এটি আল্লাহর নিকট থেকে আগত। যাতে তারা এর মাধ্যমে সামান্য অর্থ উপার্জন করতে পারে। অতএব ধ্বংস হৌক তারা যা স্বহস্তে লেখে এবং ধ্বংস হৌক তারা যা কিছু উপার্জন করে।’ (বাক্বারাহ ২/৭৯)।
.
নিজের জ্ঞানের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজে বলেছেনঃ إِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا“আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” [সুনান ইবনে মাজাহ; কিতাবুস সুন্নাহ]। তাই অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন না হওয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্য অমর্যাদাকর নয়। বরং এটি সায়্যিদুল মুরসালিন (ﷺ) এর মহান এবং চিরস্থায়ী মুজিযার মধ্যে অন্যতম। যিনি কখনও একটি বাক্য লিখেননি, তিনি মানবজাতিকে মূর্খতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে জ্ঞানের আলোর দিকে নিয়ে গেছেন। রাসূল (ﷺ) পড়াশোনা জানতেন না। এই মর্মে আরো দেখুন সূরা আলাক্ব ৯৬/১-৩ সহীহ বুখারী৩, ৩৩৯২, ৪৯৫৩, ৪৯৫৫, ৪৯৫৬, ৪৯৫৭, ৬৯৮২; মুসলিম ১/৭৩ হাঃ ১৬০, আহমাদ ২৬০১৮, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩)
.
উল্লেখ্য যে, যারা উম্মী দ্বারা ভিন্ন অর্থ করেন, তাঁরা প্রমাণ হিসেবে কিছু পত্র উপস্থাপন করেন এবং দাবী করেন যে, এগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিজের হাতে লেখা পত্র লিখেছেন। আবার কোনাে কোনাে আলেম প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, তিনি প্রথম দিকে নিরক্ষর ছিলেন। এরপর আল্লাহ তা’আলা তাঁকে লেখাপড়া শিখিয়ে দেন। প্রমাণ হিসেবে তাঁরা হুদায়বিয়া ঘটনার একটি হাদীস উদ্ধৃত করেন, যাতে বলা হয়েছে, সন্ধিপত্র লেখা হলে তাতে প্রথমে (আরবি) লিখিত ছিল। এতে মুশরিকরা আপত্তি তুলল যে, আমরা আপনাকে রাসূল মেনে নিলে এই ঝগড়া কিসের? তাই আপনার নামের সাথে রাসূলুল্লাহ শব্দটি আমাদের কাছে গ্রহণীয় নয়। লেখক ছিলেন আলী (রা.) রাসূলুল্লাহ ও তাকে শব্দটি মিটিয়ে দিতে বললেন। তিনি আদবের খাতিরে এরূপ করতে অস্বীকৃত হলে রাসূলুল্লাহ নিজে কাগজটি হাতে নিয়ে শব্দটি মিটিয়ে দিলেন এবং তদস্থলে (আরবি) লিখে দিলেন। এ রেওয়ায়েতে রাসূলুল্লাহ নিজে লিখে দিয়েছেন বলা হয়েছে। এ থেকে তারা বুঝে নিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ লেখা জানতেন। কিন্তু সত্য এই যে, সাধারণ পরিভাষায় অপরের দ্বারা লেখানােকেও “সে লিখেছে” বলা হয়ে থাকে। আর সেই হাদীসে রাসূলুল্লাহ শব্দটি কাটতে আলী (রাঃ) অপারগতা প্রকাশ করলে তখন রাসূল (ﷺ) বলেন” জায়গাটি আমাকে দেখিয়ে দাও!” অতঃপর দেখিয়ে দেয়ার পরে তিনি নিজ হাতে তা কেটে দিলেন। এছাড়া যদি ধরে নেওয়া হয় রাসূল (ﷺ) কারো দেখানো ছাড়া নিজেই সেটি কেটেছেন তাহলে এটাও সম্ভবপর যে, এ ঘটনায় আল্লাহর পক্ষ থেকে মােজেজা স্বরূপ। এতদ্ব্যতীত নামের কয়েকটি অক্ষর লিখে দিলেই কেউ নিরক্ষরতার সীমা পেরিয়ে যায় না। লেখার অভ্যাস গড়ে না উঠা পর্যন্ত তাকে অক্ষর জ্ঞানহীন ও নিরক্ষরই বলা হবে। রাসূলুল্লাহ লেখা জানতেন বিনা প্রমাণে এরূপ বললে তার কোনাে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয় না; বরং চিন্তা করলে দেখা যায় যে, নিরক্ষর হওয়ার মধ্যেই তার বড় শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত রয়েছে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোন পত্র নিজ হাতে লিখেছেন বলে সরাসরি কোন প্রমাণ নেই। সাহাবীদের মধ্যে যারা কাতিব বা লেখক বলে পরিচিত ছিলেন, তাঁরাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশনা অনুযায়ী পত্র লিখতেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পত্রের নিচে সীলমোহর করে দিতেন। একইভাবে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কাতিব সাহাবীদেরকে নির্দেশনা দিয়ে দিতেন। তাঁরা নির্দেশনা অনুযায়ী আয়াত লিপিবদ্ধ করতেন। যত পত্র, যত সন্ধি, যত চুক্তি, যত ফরমান সবই এভাবে লেখা হয়েছে পাশাপাশি :ما مات رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى قرأ وكتب রাসূল (ﷺ) পড়া-লেখা না শিখে মারা যাননি।’ মর্মে বর্ণিত আসারটি মওযূ বা জাল। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৪৩)। মহান আল্লাহ সবাইকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপসস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।