যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা

প্রশ্ন: যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদ সম্পর্কে কোন চিন্তা-ভাবনাও করেনি, সে মুনাফিক্বীর একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল। হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: যে হাদীসটি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন হাদীসটি সহীহ মুসলিমের একটি হাদীস বর্ননাটি হল, عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏:‏ ‏ “‏ مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ نَفْسَهُ بِالْغَزْوِ مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ مِنْ نِفَاقٍ ‏”‏ ‏.‏
বিখ্যাত সাহাবী আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,“যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদ সম্পর্কে কোন চিন্তা-ভাবনাও করেনি, সে মুনাফিক্বীর একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল। (সহীহ মুসলিম ১৯১০, নাসায়ী ৩০৯৭, আবূ দাউদ ২৫০২, রিয়াদুস সলেহিন ১৩৪৯ সহীহ আল জামি ৬৫৪৮, সহীহ আত তারগীব ১৩৯০)।
.
▪️হাদীসটির ব্যাখ্যা: এ হাদীসটির ব্যাপারে ‘আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন, ‘‘আমরা মনে করি এ বিধানটি বিশেষভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের জন্য খাস ছিল। অন্যান্য ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন যে, এ বিধানটি ‘আম তথা শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের সাথেই খাস নয়; বরং এ যুগেও যদি কারো মধ্যে এরূপ সমস্যা থাকে তবে তার হুকুমও একই। (শারহে মুসলিম ১৩শ খন্ড, হাঃ ১৯১০)
.
(وَلَمْ يُحَدِّثْ بِهِ نَفْسَه)
এ বাক্যের ভাবার্থ হলো, যে ব্যক্তি মনে মনেও জিহাদের দৃঢ় সংকল্প করেনি বা এ কথাও বলেনি যে, হায়! যদি মুজাহিদ হতাম! আবার কারো মতে এ বাক্যের অর্থ হলো সে কখনই জিহাদের জন্য বের হওয়ার ইচ্ছা করেনি। আর জিহাদের উদ্দেশে বের হওয়ার ইচ্ছার বাহ্যিক বহিঃপ্রকাশ হলো যুদ্ধের সরঞ্জাম প্রস্তুত করা। এ দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অর্থাৎ ‘‘তারা (জিহাদের উদ্দেশে) বের হতে চাইলে নিশ্চয় তারা এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করত, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহর মনঃপূত ছিল না, সুতরাং তিনি তাদেরকে বিরত রাখেন এবং তাদেরকে বলা হয়, যারা বসে আছে তোমরা তাদের সাথে বসে থাক’’ (সূরা আত্ তাওবাহ্ ৯: ৪৬)।
.
(مَاتَ عَلٰى شُعْبَةٍ مِنْ نِفَاقٍ)
অর্থাৎ বিশেষ এক প্রকারের নিফাকের উপর সে মৃত্যুবরণ করবে। যে ব্যক্তি এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জিহাদ থেকে অনুপস্থিত মুনাফিকদের সাথে অধিক সাদৃশ্যশীল। আর যে ব্যক্তি যে জাতির সাথে সাদৃশ্যশীল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। বলা হয়ে থাকে: এটি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগের সাথে খাস বা বিশেষিত। তবে স্পষ্ট এবং অধিকতর সঠিক কথা হলো এটি সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য। আর প্রতিটি মু’মিনের জন্য কর্তব্য হলো জিহাদের নিয়্যাত রাখা চাই সেটি (অবস্থাভেদে) ফারযে কিফায়াহ্ হোক বা ফারযে ‘আইন হোক। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৩৮১৩ নং হাদীসের ব্যাখ্যা দষ্টব্য:) অপর একটি বর্ননায় এসেছে সাহল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে শাহাদাতের মনোষ্কামনা করে; আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাহীদের মর্যাদায় উন্নীত করেন, যদিও সে স্বীয় বিছানায় মৃত্যুবরণ করে (সহীহ মুসলিম ১৯০৯, আবূ দাঊদ ১৫২০, নাসায়ী ৩১৬২, তিরমিযী ১৬৫৩, ইবনু মাজাহ ২৭৯৭, সহীহ আল জামি ৬২৭৬, সহীহ আত্ তারগীব ১২৭৬)।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: