প্রশ্ন: মযী নির্গত হওয়া কি সিয়াম নষ্টের কারণ? সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির জন্য নিজের অথবা স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গের সময় স্ত্রীর মুখের লালা গিলে ফেলার হুকুম কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: সর্বপ্রথম আমাদের জানা উচিত মযী আসলে কি। মযী শব্দটি আরবী এর অর্থ হল কামরস, বীর্যরস ইত্যাদি। এটি দেখতে স্বচ্ছ, পাতলা, পিচ্ছিল তরল; এর কোন গন্ধ নেই। আহালুল আলেমগণ মযীর সংজ্ঞায় বলেন, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সহবাসের চিন্তা অথবা ইচ্ছা করলে উত্তেজনা বশত যে সাদা তরল ও পিচ্ছিল পানি স্ত্রী ও পুরুষ লিঙ্গ থেকে নির্গত হয় যাতে শরীরিক কোন দুর্বলতা অনুভূত হয় না, তাকে মযী বলা হয়। মযী নাপাক; এটা অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। (ইমাম নববী, আল-মাজমু ২/৬; ইবনু ক্বুদামা, আল-মুগনী ১/১৬৮; সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ১/৭২)। কারণ রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখনই তুমি মযী দেখবে তখন তোমার পুরুষাঙ্গ ধৌত করবে এবং সালাত আদায়ের জন্য ওযু করবে।’ (আবু দাউদ হা/২০৬)
.
মযী নির্গত হলে সিয়াম ভঙ্গ হবে কিনা এটি নিয়ে কিছুটা মতানৈক্য থাকলেও বিশুদ্ধ কথা হল মযী বের হলে রোযা নষ্ট হয় না। ইমাম শাফেয়ি (রহঃ)-এর মাযহাব অনুযায়ী মযী নির্গত হলে সিয়াম ভঙ্গ হবেনা। এবার চাই মযী চিন্তার কারণে বের হোক কিংবা কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে চুমো খাওয়ার কারণে বের হোক কিংবা অন্য কোন কারণে বের হোক। (ইমাম নববী আল-মাজমু খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:৩২৩)। শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেন, চুম্বন, ছোঁয়া বা পুনঃপুনঃ দৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে নির্গত মযীর কারণে রোযা ভাঙ্গবে না। এটি আবু হানিফা, শাফেয়ী ও আমাদের কিছু আলেমের অভিমত। (আল-ইখতিয়ারাত’পৃষ্ঠা-১৯৩)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, মযী নির্গত হলে সিয়াম ভঙ্গ হবেনা। এর দলিল হলো- এটা রোযাকে ভঙ্গ করবে মর্মে কোন দলিল না-থাকা। কেননা রোযা একটি ইবাদত; যা ব্যক্তি শরয়ী পদ্ধতি মেনে শুরু করেছেন। সুতরাং, আমরা তার এই ইবাদতকে কোন দলিল ছাড়া নষ্ট বলতে পারি না। (পরিমার্জিত রূপে আল-শারহুল মুমতি খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:৩৯০)
.
🔹নিজের বা অন্য কারোর থুথু বা কফ গিলে ফেলা:
_______________________________________
শরীয়তের দিক থেকে চিন্তা-ভাবনা করলে একজন সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির জন্য থুথু গিলে ফেলার সর্বমোট তিনটি অবস্থা হতে পারে। যেমন: (১). মুখের ভিতর আসা থুথু গিলে ফেলা। (২). যদি ঠোঁট পর্যন্ত থুথু চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে সেটাকে গিলে ফেলা। (৩). স্ত্রীর বা অন্য কারোর থুথু গিলে ফেলা। এবার তিনটি বিষয় বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
.
(১). মুখের ভিতর আাসা থুথু গিলে ফেলা:
.
ইসলামী শরীয়তের আইন বা বিধানগুলো জিনিসগুলিকে সহজ করার এবং অস্বাভাবিক অসুবিধা থেকে রক্ষা করার উপর ভিত্তি করে। আল্লাহ সিয়াম সংক্রান্ত আয়াতে বলেছেন; “আল্লাহ আপনার জন্য সহজ করতে চান, এবং তিনি তোমাদের জন্য কিছু কঠিন করতে চান না।”(সূরা বাকারাহ; ২/১৮৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেছেন, “আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না, তবে তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করতে চান যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।” (সূরা মায়েদাহ, ৫/৬)। তিনি অপর আয়াতে বলেছেন, “এবং (আল্লাহ) দ্বীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি।” (সূরা হজ্জ, ২২/৭৮)। সুতরাং, উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে যদি কিছু এড়ানো কঠিন হয় এবং এড়ানো যায় না, তাহলে তা রোজাকে প্রভাবিত করে না – যার মধ্যে রয়েছে রোজা রাখার সময় একজন ব্যক্তি তার লালা গিলে ফেলা।
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন- যা এড়ানো যায় না, যেমন; লালা গিললে রোজা ভেঙ্গে যায় না, কারণ তা এড়ানো কঠিন। এটি রাস্তার ধুলো এবং ময়দার ধুলোর মতো। কোনো ব্যক্তি যদি লালা জড়ো করতে দেয় এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেলে, তবুও তা তার রোজা ভঙ্গ করে না। কেননা তা জমাতে না দিলেও একইভাবে তা তার পেটে পৌঁছায়। (ইমাম ইবনে কুদামাহ আল মুগনী খন্ড:৩ পৃষ্ঠা:১৬)
.
সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ বলেছেন, রোযাদার যদি থুথু গিলে ফেলে এতে তার রোযা নষ্ট হবে না; এমনকি সে থুথু অনেক বেশি হলেও; সেটা মসজিদে হলেও কিংবা অন্য কোন স্থানে হলেও। তবে যদি কফের মত ঘন শ্লেষ্মা হয় তাহলে গিলবে না। বরং রোজাদার মসজিদে থাকলে টিস্যু পেপারে কিংবা অন্য কিছুতে থু করে ফেলে দিবে। আল্লাহ্ই তাওফিকদাতা।(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা:২৭০)
.
সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, ফজরের আযান শুনে পানি পান করার পরও তাকে থুথু ফেলতে হবে না। আমরা যতদূর জানি, সাহাবা (রাঃ) থেকে এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় নি যে- একজন ব্যক্তি যখন ভোরবেলা পান করে তখন পানির স্বাদ চলে না যাওয়া পর্যন্ত তাকে থুথু দিতে হবে। বরং এটি এমন একটি এলাকা যেখানে নম্রতা রয়েছে। (ইমাম উসামীন আশ-শারহুল মুমতি‘, খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:৪২৮)
.
(২). যদি ঠোঁট পর্যন্ত থুথু চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে সেটাকে গিলে ফেলা;
.
সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির যদি মুখের লালা ঠোঁট পর্যন্ত থুথু চলে আসার পর ভুলে অথবা অনিচ্ছাকৃত ভাবে সেটা গিলে ফেলে তাহলে সিয়াম ভঙ্গ হবেনা। কিন্তু যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে সেটাকে গিলে ফেলে; তাহলে রোযা ভাঙ্গার ব্যাপারে আহালুল ইমামগনের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যেমন:
.
শাফেয়ী ও হাম্বলি মাযহাব মতে, এর মাধ্যমে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কেননা থুথু এর স্বস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। থুথুর স্থান হচ্ছে মুখের অভ্যন্তর। তাই বেরিয়ে পড়া থুথুকে গিলে ফেলা অন্য যে কোন বিচ্ছিন্ন জিনিসকে গিলে ফেলার মত। যেই থুথু গিলে ফেললে রোযা ভাঙ্গবে না সে প্রসঙ্গে শাফিঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, “এর স্বস্থান থেকে এটাকে গিলে ফেলা। যদি মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, এরপর জিহ্বা দিয়ে কিংবা অন্য কিছু দিয়ে মুখে ফিরিয়ে নেয়; তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আমাদের মাযহাবের আলেমগণ বলেন: এমনকি যদি ঠোঁটের পিঠে বেরিয়ে আসে, এরপর মুখে ফিরিয়ে নিয়ে গিলে ফেলে; তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কারণ এই ফিরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে সেই ব্যক্তি কসুরকারী এবং যেহেতু থুথু ক্ষমার্হের স্থান থেকে বেরিয়ে গেছে। আল-মুতাওয়াল্লি বলেন; “যদি ঠোঁট পর্যন্ত বেরিয়ে যায়, এরপর মুখে ফিরিয়ে নিয়ে গিলে ফেলে; তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।” (ইমাম নববী আল-মাজমু খন্ড:৬ পৃষ্ঠা: ৩৪২)
.
হাম্বালী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ইবনে কুদামা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন; “যদি তার থুথু বেরিয়ে কাপড়ে পড়ে, কিংবা আঙ্গুলের মাঝখানে পড়ে কিংবা ঠোঁটের মাঝখানে বেরিয়ে আসে; এরপর সেটা মুখে ফিরে যায় ও সেটাকে গিলে ফেলে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কেননা সেই ব্যক্তি মুখ ব্যতীত অন্য স্থান থেকে সেটাকে গিলে ফেলেছে। তাই এটি অন্য কোন জিনিস গিলে ফেলার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।” (ইবনে কুদামাহ আল-মুগনী খন্ড:৩ পৃষ্ঠা:১৭)
.
হানাফি মাযহাব মতে, যদি থুথু মুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এরপর মুখে ফিরিয়ে নেয় তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে; অন্যথায় নয়। ফাতহুল ক্বাদির গ্রন্থে এসেছে; “যদি ব্যক্তির থুথু মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, এরপর মুখে প্রবেশ করায় ও গিলে ফেলে এবং যদি মুখের সাথে এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন না হয়; বরং মুখের ভেতরে যা আছে সেটার সাথে সংযুক্ত থাকে; যেমন- কোন সুতা থুথুকে চুষে নিল; তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে না। আর যদি থুথু মুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর সেটাকে নিয়ে মুখে ফিরিয়ে দেয়া হয়; তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। তবে কোন কাফ্ফারা আবশ্যক হবে না। যেমনিভাবে কেউ যদি অন্য কারো থুথু গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যায়। আর যদি মুখের ভেতরে থুথু জমার পর সেটাকে গিলে ফেলে তাহলে সেটা মাকরুহ। তবে এতে রোযা ভাঙ্গবে না।(ফাতহুল ক্বাদির খন্ড:২ পৃষ্ঠা: ৩৩২)
.
(৩). স্ত্রীর বা অন্য কারোর থুথু গিলে ফেলা:
.
স্ত্রীর বা অন্য কারো থুথু গিলে ফেললে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ সে তার শরীরের ভিতরে এমন কিছুকে হজম করেছে যা তার শরীরের বাইরে থেকে আগত। সুতরাং, তার অবস্থা এরূপ ব্যক্তির মতো যে ব্যক্তি কোনো কিছু খেয়েছে অথবা পান করেছে।
.
স্ত্রীর লালা গিলে ফেলার ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন, অন্যের লালা গিলে ফেলার ক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যায়। কারণ সে এমন কিছু গিলেছে যা তার নিজের মুখ থেকে আসেনি, তাই একে অন্য কিছু গিলে ফেলার সাথে তুলনা করা হয়েছে। যদি বলা হয় যে, আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রোজা রাখতেন তখন তাকে চুম্বন করতেন এবং তার জিহ্বা চুষতেন। (আবু দাউদ, ২৩৮৬ ); আমাদের প্রতিক্রিয়া হলো তা ছিল আবু দাউদ থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন এই সনদ সহীহ নয়।যারা অতিরিক্ত বাক্যাংশ “এবং তার জিহ্বা চুষুন” কে দুর্বল (দাঈফ) হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে দাঈফ সুনানে আবি দাউদে আল-আলবানী রয়েছেন।ইবনে কুদামাহ হাদীসটিকে বোঝার দুটি উপায় উল্লেখ করেছেন। যদি আমরা ধরে নিই যে এটি সহীহ: (১). যে দুটি বিষয় সংযুক্ত নয়। তিনি বললেন; হতে পারে রোযা অবস্থায় তিনি তাকে চুম্বন করতেন এবং অন্য সময় জিহ্বা চুষতেন। (২). হাদীসে লালা গিলে ফেলার কথা বলা হয়নি। তিনি বললেন; হতে পারে তিনি তা (তার জিহ্বা) চুষেছিলেন কিন্তু লালা গিলে নেয়নি, কারণ তার জিহ্বার ভেজা তার মুখে স্থানান্তরিত হয়নি। ( ইবনে কুদামাহ আল মুগনী খন্ড:৩ পৃষ্ঠা:১৭ ইসলামী সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং ৪৯০০৫)
.
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে স্বামী-স্ত্রীর কেউ যদি অপরের লালা গিলে না ফেলে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও, একজন স্বামী-স্ত্রী অন্যের জিহ্বা চুষে খাওয়া সাধারণ শিরোনামের মধ্যে আসে যা সহবাসের দিকে পরিচালিত করে এবং চুম্বন এবং অন্যান্য জিনিস যা সহবাসের দিকে পরিচালিত করে, যদি বীর্যপাতের ফলে ব্যক্তির রোজা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে তা হারাম। কিন্তু যদি সে আত্মবিশ্বাসী হয় যে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তাহলে সঠিক মত হলো এটা জায়েয তবে মাকরূহ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করতেন। (সহীহ বুখারী হা/১৯২৭, সহীহ মুসলিম হা/১১০৬)
.
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, রোযা অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীর সাথে কিংবা স্ত্রী তার স্বামীর সাথে কথাবার্তার মাধ্যমে অন্তরঙ্গ হতে দোষের কিছু নেই। তবে শর্ত হলো তারা বীর্যপাত করা থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করা। যদি তারা নিজেদেরকে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া থেকে নিরাপদ মনে না করেন; যেমন কেউ যদি তীব্র উত্তেজনার অধিকারী হন এবং স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ হলে বীর্যপাত করার মাধ্যমে নিজের রোযা নষ্ট করার আশংকা করেন, তাহলে তার জন্য এটি জায়েয হবে না। যেহেতু এটি তার রোযাকে নষ্ট করার সম্মুখীন করবে। একই বিধান প্রযোজ্য হবে যদি মযী (কামরস) বের হওয়ার আশংকা করেন। (ইমাম উসাইমীন আল-শারহুল মুমতি খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:৩৯০)
.
যে ব্যক্তি বীর্যপাত করবেন না মর্মে নিজেকে নিরাপদ মনে করেন তার জন্য চুম্বন করা ও অন্তরঙ্গ হওয়া জায়েয হওয়ার পক্ষে দলিল হচ্ছে আয়েশা (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিস। যাতে তিনি বলেন; “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা রেখে চুম্বন করতেন এবং ঘনিষ্ঠ হতেন। তিনি ছিলেন তার যৌন চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক সক্ষম ব্যক্তি।”(সহীহ বুখারী হা/১৯২৭, সহীহ মুসলিম হা/১১০৬)। অপর বর্ননায় আমর বিন সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, রোযাদার কি চুম্বন করবে? তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ইনাকে (উম্মে সালামাকে) জিজ্ঞেস কর। তখন উম্মে সালামা জানান যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটি করতেন। (সহীহ মুসলিম হা/১১০৮)। ইমাম উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন; চুম্বন ছাড়া সহবাসের আহ্বায়ক অন্য যা কিছু আছে; যেমন জড়িয়ে ধরা ইত্যাদি সেগুলোর হুকুমও চুম্বনের হুকুমের মত; কোন পার্থক্য নেই। (আল-শারহুল মুমতি খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:৪৩৪)
.
এখানে আরো একটি মাসয়ালা জেনে রাখা ভালো যে, রোযা রেখে মিসওয়াক ও টুথপেস্ট ব্যবহার করা জায়েয। তবে এর কোন কিছু গিলে ফেলা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: “কোন মতভেদ ছাড়া মিসওয়াক ব্যবহার করা জায়েয। কিন্তু সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর মিসওয়াক ব্যবহার করা মাকরূহ কিনা; এ ব্যাপারে তারা দুটো অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ দুটো অভিমতই ইমাম আহমাদ থেকে বর্ণিত আছে। কিন্তু এটি মাকরূহ হওয়ার সপক্ষে শরয়ী এমন কোন দলিল নেই; যা মিসওয়াক সংক্রান্ত দলিলগুলোর সার্বিকতাকে সংকুচিত করবে।” (আল-ফাতাওয়াল কুবরা খন্ড:২ পৃষ্ঠা:৪৭৪)
.
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: রোযাদারের টুথপেস্ট ব্যবহার করার হুকুম কি? তিনি জবাব দেন: “মিসওয়াকের মত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত পরিস্কার করলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে পেটের ভেতর কিছু চলে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে। যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন কিছু ভেতরে চলে যায় সেক্ষেত্রে তাকে রোযাটি কাযা করতে হবে না।(ইমাম বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড:১৫ পৃষ্ঠা:২৬০) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।