পীর কাকে বলে? ইসলামে পীর মুরিদের কোন স্থান আছে কি?

প্রশ্ন: পীর কাকে বলে? ইসলামে পীর মুরিদের কোন স্থান আছে কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: পবিত্র কুরআনের যে আয়াত গুলোর অপব্যাখ্যা করে প্রচলিত পীর তাদের বিনা পুঁজির ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে আজ সেই সংশয় নিরসন করব ইন শাহ্ আল্লাহ। ইসলাম মহান আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। যা মেনে চলা সমগ্র মানব ও জিন জাতির উপর ফরয। আল্লাহ যেমন এর বিধান নাযিল করেছেন, তেমনি তা বাস্তবে রূপদানের জন্য রাসূল (ﷺ) কে আমাদের মাঝে প্রেরণ করেছেন। তাঁর জীবদ্দশায়ই ইসলাম পূর্ণতা লাভ করেছে। তিনি ১০ম হিজরীর ৯ই যিলহজ্জে আরাফার ময়দানে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে যখন বিদায় হজ্জ পালন করেছিলেন তখন আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করলেন,اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْنًا، ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।’ (মায়েদা ৫/৩)। রাসূল (ﷺ) বলেন,قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا، لاَ يَزِيْغُ عَنْهَا بَعْدِيْ إِلاَّ هَالِكٌ، ‘আমি তোমাদেরকে একটি উজ্জ্বল স্বচ্ছ দ্বীনের উপর ছেড়ে গেলাম। যার রাতটাও দিনের মত (উজ্জ্বল)। ধ্বংসশীল ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই তা থেকে সরে আসতে পারে না।’ (ইবনু মাজাহ হা/৪৩)। এই পৃথিবীর বুকে একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতিটি কথা ও কাজের অনুসরণ করা আবশ্যকীয় নয়, সে যেই হোকনা কেন। একদা ইমাম মালেক (রহঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ববরের দিকে ইশারা করে বলেন, ‘এ ক্ববরের অধিবাসী ব্যতীত পৃথিবীর সকল ব্যক্তির কথা গ্রহণীয় ও বর্জনীয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিটি কথাই গ্রহণীয়।

◾পীর কাকে বলে? ইসলামে পীরের বিধান কী?
_______________________________________
পীর’ (پیر‎) শব্দটি ফারসী শব্দ। এর অর্থ বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বী, ইত্যাদি। ব্যবহারিক ভাবে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ উভয়কেই ‘পীর’ বলা হয়। মূলত সূফীবাদী বা তাসাওউফপন্থীদের গুরুকে ‘পীর’ নামে অভিহিত করা হয়। (পীরবাদের বেড়াজালে ইসলাম, পৃ. ৩৬)। তৃতীয় শতাব্দী হিজরীতে গ্রীক, পারসিক ও হিন্দু সভ্যতার সংমিশ্রণে পীর-মুরীদী প্রথার উৎপত্তি হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমরা একসময় তাদের ধর্মীয় দিক-নির্দেশনা প্রদানকারী ব্যক্তিকে ‘পীর’ নামে অভিহিত করতো। যা এখনো বহু জায়গায় প্রচলিত আছে। ১৯৮১ সালের সরকারী হিসাব মতে এদেশে প্রায় দুই লক্ষ আটানব্বই হাজার ‘পীর’ রয়েছে।যেমন, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী, রাজারবাগী, সুরেশ্বরী, ফরীদপুরী, এনায়েতপুরী, চন্দ্রপুরী, কামাল্লার ভন্ডপীর, মাইজভান্ডারী, কেল্লাবাবা, খাজাবাবা, রেজভী, লেংটা বাবা, তালা বাবা, শিকল বাবা ইত্যাদি এমন আরো বিভিন্ন নামে ঈমান বিধ্বংসী ভন্ড পীর রয়েছে। যারা আল্লাহ ও বান্দার মাঝে ‘অসীলা’ হিসাবে পূজিত হচ্ছে। তারা নিজেদের তৈরি বিভিন্ন জঘন্য বুলি, নিয়ম-নীতি ও নোংরা দর্শনের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে যেমন ধোঁকা দিচ্ছে, তেমনি ভ্রান্তিতে নিপতিত করে পকেট সাফ করছে। জীবিত হৌক বা মৃত হৌক তাদের সন্তুষ্টির উপরে মুরীদের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তি নির্ভর করে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এদের মতে পীরকে কামনা করা আল্লাহকে কামনা করার শামিল (নাঊযুবিল্লাহ)। অথচ ইসলামী শরী‘আতে পীর ধরা বা মুরীদ হওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয কাজ। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ এমনকি তাবে-তাবেঈনের যুগে পীর-মুরীদীর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। মানুষ মূলতঃ পরকালে মুক্তির অসীলা হিসাবে পীর ধরে থাকে এ বিশ্বাসে যে, তারা তাদের জন্য আল্লাহর নিকটে সুফারিশ করবে (সূরা যুমার ৩)। যে ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস করবে, সে বড় শিরকে লিপ্ত হবে, যা মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় ও তার সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যায় (সূরা যুমার ৬৫) কেননা মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কোনো পীরের অনুসরণ করার নির্দেশ দেননি। বরং মহান আল্লাহ তার ‘অসীলা’ তথা নৈকট্য অন্বেষণ করতে বলেছেন (আল-মায়েদাহ, ৫/৩৫)। পীরবাদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি এই যে, তারা মানুষকে কুরআন-হাদীস থেকে মুখ ফিরিয়ে পীরের ধ্যানে মগ্ন রাখেন। পীরের কথিত কাশফ ও কেরামত এবং ভিত্তিহীন অলীক কল্পকাহিনী সমূহ এদের নিকট প্রধান দলীল হিসাবে গণ্য হয়। যুগে যুগে মানুষকে ধর্মের নামে শিরকে লিপ্ত করেছে এই শ্রেণীর লোকেরা। অথচ কাশফ ও কেরামত ইসলামী শরী‘আতের কোন দলীল নয়। সুতরাং এসব দল থেকে মানুষকে দূরে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো আবশ্যক।
.
সুতরাং ইসলামে পীর-মুরিদীর স্থান নেই। ইসলামে রয়েছে শিক্ষক ও ছাত্রের সম্পর্ক। আলেমগণ জনসাধারণের মধ্যে ইলমে নব্বী বিতরণ করবেন। একজন আলেম বা শিক্ষক তার ছাত্র ও অনুসারীদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক দ্বীনের তালীম দিবেন, হেদায়েতের রাস্তা বাতলিয়ে দিবেন, তাওহীদ ও সুন্নাহর রাস্তা দেখাবেন, শিরক-বিদআত, কুসংস্কার, অপসংস্কৃতি ইত্যাদি থেকে সতর্ক করবেন। কিন্তু কখনো মানুষের নিকট বাইআত নিয়ে তাদেরকে মুরিদ বানাবে না। কারণ এটি একটা বিদআতি প্রথা। ইসলামে বায়‘আতের বিধান হল ইসলামী রাষ্ট্রের মুসলিম শাসকের হাতে মুসলিমদের বায়‘আত করা অপরিহার্য। ইসলামী খলীফা বা মুসলিম রাষ্ট্র প্রধান ব্যতীত অন্য কোন সাধারণ ইসলামী সংগঠনের নেতা,পীর বা আমীরের হাতে বায়‘আত করা নিষিদ্ধ। এই মর্মে দলিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার পরে কোনও নবী‎র আগমন ঘটবে না। বরং খলীফাগণ হবেন এবং তাঁরা সংখ্যায় অনেক হবেন। তখন সাহাবীগণ বললেন, ‘তাহলে আপনি (এ ব্যাপারে) আমাদেরকে কী নির্দেশ দিচ্ছেন’? তিনি বললেন, ‘যার হাতে প্রথম বায়‘আত বা আনুগত্যের শপথ করবে, তাঁরই আনুগত্য করবে এবং তাদেরকে তাদের হক প্রদান করবে। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন ঐ সকল বিষয়ে, যার দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল।’ (সহীহ বুখারী, হা/৩৪৫৫; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪২; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৭১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৯৬০)। অন্যত্রে ফিতনা ও বিশৃঙ্খলার যুগ সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে তিনি বলেন, তখন তোমরা মুসলিমদের দল ও তাঁদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে।’ আমি বললাম, ‘যদি মুসলিমদের কোন দল ও ইমাম না থাকে?’ তিনি বলেন, তখন তুমি তাদের সকল দল-উপদল ও বিচ্ছিন্নতা বাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং আমৃত্যু বৃক্ষমূল দাঁতে আঁকড়ে ধরে হলেও দ্বীনের উপর অটল থাকবে।’ [সহীহ বুখারী, হা/৩৬০৬, ৩৬০৭, ৭০৮৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৭; আবূ দাঊদ, হা/৪২৪৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৭৯, ৩৯৮১] উপরিউক্ত দুটি হাদীসে‘ ইমাম’ বলতে ইসলামী খলীফা বা শাসককে বুঝানো হয়েছে [সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৭৩৯]

প্রচলিত পীর সাহেবরা পবিত্র কুরআনের যে তিনটি আয়াতের সবচেয়ে বেশি অপব্যাখ্যা করে তাদের পীর মুরিদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে আজ আমরা সেগুলোর সঠিক ব্যখ্যা জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
_______________________________________
▪️(১) পীর সাহেবদের প্রথম দলিল: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,-مَنْ يَهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُرْشِدًا، ‘আল্লাহ যাকে সুপথ প্রদর্শন করেন, সেই-ই সুপথপ্রাপ্ত হয়। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য কোন সুপথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না।’ (সূরা কাহফ ১৮/১৭)। এই আয়াত দিয়ে পীর সাহেবরা দলিল দিয়ে বলেন, অত্র আয়াতে বর্ণিত مُرْشِدًا বলতে পীরকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং পীর কোন নতুন শব্দ নয়; বরং এর বর্ণনা কুরআনে এসেছে। (হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)।

অথচ বিশুদ্ধ তাফসীর অনুযায়ী উক্ত আয়াতে ‘মুরশিদ’ বলতে সরাসরি আল্লাহকে বুঝানো হয়েছে। এখানে মুরশিদ শব্দের অর্থ পথ প্রদর্শনকারী। উক্ত আয়াতে মুরশিদ শব্দ দ্বারা আল্লাহকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ মানুষের পথ প্রদর্শনকারী। তিনি যাকে পথ দেখান সেই কেবল পথ প্রাপ্ত হয়। পক্ষান্তরে তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ প্রদর্শন করতে পারে না। পীর-ফকীরদের উক্ত দাবী সঠিক নয়। তাদেরকেও যদি আল্লাহ সঠিক পথ না দেখান তাহলে তারাও সঠিক পথ পাবে না। অর্থাৎ সকল মানুষের মুরশিদ আল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে বলেন, আপনি যাকে পছন্দ করেন তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না; বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে থাকেন। (সূরা ক্বাসাস ৫৬)।

সূরা কাহাফের ১৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় জগদ্বিখ্যাত মুফাসসির ইবনু কাছীর (রহঃ) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বলেন, هُوَ الَّذِي أَرْشَدَ هَؤُلَاءِ الْفِتْيَةَ إِلَى الْهِدَايَةِ مِنْ بَيْنِ قَوْمِهِمْ، فَإِنَّهُ مَنْ هَدَاهُ اللهُ اهْتَدَى، وَمَنْ أَضَلَّهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ. ‘তিনিই (আল্লাহ) ঐ সমস্ত যুবকদেরকে (আসহাবে কাহফ) তাদের সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে সুপথ প্রদর্শন করেছিলেন। আর তিনি (আল্লাহ) যাকে হেদায়াত করেন সেই হেদায়াত প্রাপ্ত হন এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন হেদায়াতকারী নেই।’ (ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, সূরা কাহফ এর ১৭নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টাব্য)।

▪️(২) পীরদের দ্বিতীয় দলীল: আল্লাহ তা‘আলার বাণী أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ، ‘মনে রেখো (আখিরাতে) আল্লাহর অলী বা বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না।’ (সূরা ইউনুস ১০/৬২)। অতএব আল্লাহর অলীদের যেমন কোন ভয় ও চিন্তার কারণ নেই; তাদের ভক্তদেরও তেমন কোন ভয় ও চিন্তার কারণ নেই। আর স্বয়ং আল্লাহই তাদের অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ، ‘আর যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়েছে, তুমি তার রাস্তা অবলম্বন কর।’ (সূরা লোক্বমান ৩১/১৫)। এই আয়াত দিয়ে পীর সাহেবরা দলিল দিয়ে বলেন,আর পীরেরাই যেহেতু আল্লাহর অভিমুখী হয়েছে এবং আল্লাহর বন্ধু হিসাবে পরিগণিত হয়েছে, তাই পীরের অনুসরণ-ই পরকালে মুক্তির একমাত্র উপায়।

জবাব: প্রথমতঃ أَوْلِيَاءَ اللهِ তথা আল্লাহর অলীগণ বলতে কোন পীর-দরবেশকে বুঝানো হয়নি। বরং আল্লাহর অলী কারা তা তিনি পরের আয়াতেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ، لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ، (তারাই আল্লাহর অলী বা বন্ধু) যারা ঈমান আনে এবং সর্বদা আল্লাহকে ভয় করে। তাদের জন্যই সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। (সূরা ইউনুস ১০/৬৩-৬৪)। সুতরাং আল্লাহর অলী হওয়ার জন্য দু’টি গুণের অধিকারী হতে হয়। (১) ঈমানদার হওয়া (২) আল্লাহকে ভয় করা। সুতরাং আল্লাহকে ভয়কারী সকল ঈমানদার ব্যক্তিই তাঁর অলী বা বন্ধু। আর তাঁর অলী না হতে পারলে কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। তাই বিশেষ কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর অলীর সার্টিফিকেট না দিয়ে নিজেকে আল্লাহর অলী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অলী বা বন্ধুদের কোন ভয় ও চিন্তার কারণ নেই বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তিনি কুরআন মাজীদের কোথাও এমন কথা বলেননি যে, আল্লাহর অলী বা বন্ধুর ভক্ত বা অনুসারীদের কোন ভয় ও চিন্তার কারণ নেই। সুতরাং কোন পীরের মুরীদ হওয়ার মাধ্যমে পরকালে ভয় ও চিন্তা মুক্ত থাকার মিথ্যা আশা চরম মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। পীরের মুরীদ হয়ে নয়, বরং নিজেকেই আল্লাহর অলী বা বন্ধু হিসাবে প্রস্ত্তত করার মাধ্যমে পরকালে ভয় ও চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।

তৃতীয়তঃ সূরা লোক্বমানের ১৫ নং আয়াতে আল্লাহর অভিমুখীদের রাস্তার অনুসরণের নির্দেশ দ্বারা কোন পীর-দরবেশের অনুসরণ বুঝানো হয়নি। বরং তা দ্বারা মুমিনদের রাস্তার অনুসরণ বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা লোক্বমান ১৫নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টাব্য)। আর মুমিনদের রাস্তা বলতে পীরদের তৈরী করা ১২৬টি রাস্তা নয়; বরং মুমিনরা যে ঈমানের রাস্তায় পরিচালিত হয় সেই রাস্তার অনুসরণ করতে হবে।

▪️(৩) পীরদের তৃতীয় দলীল: আল্লাহ তা‘আলার বাণী يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ، ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর ও তাঁর অসীলা সন্ধান কর। আর আল্লাহর পথে জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সূরা মায়েদা ৫/৩৫)। এই আয়াত দিয়ে পীর সাহেবরা দলিল দিয়ে বলেন, অত্র আয়াতে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই অসীলা অনুসন্ধান করতে বলেছেন। সুতরাং পীরকে অসীলা মানার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করতে হবে।

জবাব: প্রথমত উক্ত আয়াতে বর্ণিত অসীলা বলতে কোন পীরের মুরীদ হওয়া উদ্দেশ্য নয়; বরং অসীলা হল, التي يتوصل بها إلى تحصيل المقصود، ‘যা কিছুর মাধ্যমে ব্যক্তি তার উদ্দেশ্য (আল্লাহর নৈকট্য) হাছিল করতে পারে। ’(তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা মায়েদা ৩৫নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টাব্য)। ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন,وابتغوا إليه الوسيلة أي تقربوا إليه بطاعته والعمل بما يرضيه، ‘অসীলা অনুসন্ধান করা বলতে আল্লাহর আনুগত্য ও তিনি যে সকল আমল ভালবাসেন তা পালনের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য হাছিল করা বুঝায়।’ (তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা মায়েদা ৩৫নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টাব্য)। সুতরাং অসীলা অর্থ পীর ধরা নয়; বরং সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত সহ আল্লাহর পছন্দনীয় কর্মসমূহ সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য হাছিল করাই অসীলা।

দ্বিতীয়তঃ অসীলার অর্থ পীর ধরা করলে তা পবিত্র কুরআনের অনেকগুলি আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। কেননা আল্লাহ কোন মাধ্যম ধরে তাঁকে ডাকতে নিষেধ করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ‘তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সূরা মুমিন ৪০/৬০)। এখানে তিনি কোন মাধ্যম দিয়ে ডাকতে বলেননি; বরং সরাসরি ডাকতে বলেছেন। তিনি আরো বলেন, اتَّبِعُوْا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوْا مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيْلًا مَا تَذَكَّرُوْنَ- ‘তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ হতে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য কোন অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো‌।’ (সূরা আ‘রাফ ৭/৩)। এমনকি তারা একথাও বলেন যার পীর নেই তার পীর শয়তান, (নাউজুবিল্লাহ) অথচ এটি কুফরী আক্বীদা। ইসলামে পীরের কোন অস্তিত্ব নেই। কারণ আল্লাহ ও রাসূল (ﷺ) কোন পীরের অনুসরণ করার নির্দেশ দেননি। আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তোমাদের আমীরের আনুগত্য কর।’(সূরা নিসা ৫৯)। যিনি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী তোমাদের পরিচালনা করেন। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৬২ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়)। ‘পীর’ এদেশে সুফীদের একটি উপাধি। প্রাচীন ও আধুনিককালে মুসলমানদের তাওহীদ বিশ্বাসে ফিতনা সৃষ্টির সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল ছূফীবাদ। অতএব এইসব মতবাদ থেকে সাবধান!
.
অতএব, পরকালে জান্নাত পিয়াসী প্রত্যেক মুসলিম সঠিক দ্বীন পাওয়ার জন্য পীর না ধরে বরং আল্লাহ, তাঁর রাসূল (ﷺ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে তথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসকে জীবনে চলার একমাত্র পথপ্রদর্শক হিসাবে গ্রহণ করবে। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে সেই তাওফীক্ব দান করুন।আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: